নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সমাজ পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখি....

মো: হাসানূর রহমান রিজভী

একদিন তুমি এসেছিলে ভবে,কেঁদেছিলে তুমি হেসেছিলো সবে... এমন জীবন করিবে গঠন,মরনে হাসিবে তুমি কাঁদিবে ভূবন......

মো: হাসানূর রহমান রিজভী › বিস্তারিত পোস্টঃ

অনুগল্প: রফিক এবং একতারা..

০৭ ই জুলাই, ২০১৭ সকাল ১১:১১



একতারার শব্দে রফিকের বুকের ভেতর ক্যামন জানি করে।রফিক ঠিক বুঝতে পারে না।কোন কিছু দম ধরে গলা বেয়ে বেরিয়ে আসতে চায়।সব সময় এমন হয় না, কিছু কিছু সময় হয়।রফিকের একতারা শোনার সৌভাগ্য সব সময় হয় না।মাঝে মাঝে হাটের দিন গাতক আসে একতারা হাতে।গান শুনে মানুষ খুশি হয়ে দু-চার টাকা দেয়।রফিক গান ভালবাসে।হাটবার গতকাল শেষ হয়েছে।গাতক আসে নাই।হাটে টিভি ভিসিডি ভরা।মোবাইলে মানুষ গান শোনে ছবি দেখে।রফিকদের বড়িতে কিছু নাই।হাট বাজারের চায়ের দোকান ভরসা।পাশের বাড়ির রহিমা দের টিভি আছে।কিন্তু রফিক কখনও রহিমা দের ঘরে টিভি দেখতে যায় না।রহিমা রফিকের সাথে একই স্কুলে ক্লাশ সেভেনে পড়ে।রহিমা কে নিয়ে রফিকের একটা খুব অস্বাভাবিক ব্যাপার আছে।রফিক সেটা কখনই কাউকে বলবে না,বলতে পারবে না।সেটা হলো রহিমা যদি রফিকের দিকে তাকায় তাহলে রফিকের একতারার সেই অনুভূতি হয়।কিছু একটা বুক থেকে দলা পাকিয়ে গলা বেয়ে উঠে আসতে চায়।রফিক ভেবে রেখেছে রহিমা যদি কখনও তাকে টিভি দেখতে ডাকে তাহলেই সে যাবে,অন্যথায় নয়।কিন্তু রহিমা তাকে কখনই ডাকে না।রফিক জানে কখনও ডাকবেও না।রফিকের বাবা দিনমজুর।অথচ রহিমারা অনেক বড়লোক।কত জমি।রফিক মনে মনে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।

পরদিন স্কুল থেকে বাড়ি আসার সময়,রফিক কৌশলে একটু তারাতারি হেটে রহিমার পাশে এসে পড়ে।
"এ রহিমা তুই কি ছয় নম্বর অধ্যায়ের সবগুলো অঙ্ক করিছিস?"
রহিমা বিরক্ত হয়ে ভ্রু কুচকে তাকায়।"ক্যান?"
রফিক দমে যায়।মিনমিন করে বলে" খাতাটা যদি দিতি,একটু টুকে নিতাম"

"পারুম না,যাহ" বলে রহিমা হন হন করে হাটতে থাকে।রফিক সরে পড়ে।বাসায় ফিরে ভাত খেয়ে জাম তলার মাচায় বসে ভাবে পৃথীবি কি অদ্ভুত।একজন খায় ইলিশ মাছ একজন খায় শুধু বেগুন ভর্তা।জাম গাছের ছায়ায় মাচায় রফিকের নিদ্রা ছন্ন ভাব হয়।

দুপুর।বৃষ্টি আসবে আসবে ভাব।আকাশের এক কোনে কালো মেঘের ঘনঘটা।পেছন থেকে' এই রফিক এই রফিক' ডাক শুনে রফিক ঘুরে তাকিয়ে দেখে রহিমা।রফিক নিজের কান চোখ কোনটাই বিশ্বাস করতে পারছে না।স্তব্দ হয়ে আছে।বাকরুদ্ধ। রহিমা আবারো ডাকলো'এই রফিক......

চোখ মেলে দেখে রফিক মাচায়,জামতলার মাচায়।ঠান্ডা বাতাস গায়ে হিম ধরাচ্ছে।রফিক দীর্ঘশ্বাস ফেলে এই জামতলার মাচা টাও রহিমা দের।

'এ রফিক...এ রফিক"
রফিক পেছনে তাকিয়ে দেখে রহিমাদের বাসায় কাজ করা খালা তাকে ডাকছে।রফিক বুঝতে পারে এজন্যই স্বপ্নে সে রহিমার ডাক শুনছিলো।
"তারাতাড়ি স্কুলে যা,দেক তো রহিমার কি জানি হয়চে,সবাই স্কুল পানি গেল"
রফিক ধরমর করে লাফিয়ে উঠে।"কি হয়চে খালা?"
উত্তরের অপেক্ষা না করে রফিক দৌড়ে বাসায় ঢোকে।কোন মতে শার্ট নিয়ে খালি পায়ে স্কুলের দিকে দৌড়ায়।

স্কুল মাঠ লোকে লোকারন্য।ভীর ঠেলে সমানে যায় রফিক।দেখে ওদের ক্লাশের সুমন কে পিছমোড়া করে বেধে মাঠে বসিয়ে রাখা।রফিক কিছুই বুঝতে পারে না।সুমনের সাথে আরে চারজন কাউকেই রফিক চিনে না। সবাই বয়সে বড়।সবাইকে এক সাথে বেধেরাখা হয়েছে।রফিকের ক্লাশমেট আজাদের সাথে রফিকের দেখা হয়।রফিক আজাদকে ধরে।
"ঐ সুমন ডাকিছিলো,কইছিলো জরুরি কথা আছে।রহিমা বাড়ি না গিয়ি সুমনের সাথে কতা কচ্চিলো।স্কুল ফাকা ছিলো,সুমন এরা মিলি কাম কইরে দেছে।"

বিকেল নামার ক্ষনে রফিকের কাছে পৃথিবীটা অন্ধকার লাগে।মনে হয় কেউ রফিকের কানের খুব কাছে একতারা নিয়ে শব্দের ঢেউ খেলছে।ঝিঁ ঝিঁ পোকার একটানা বিরক্তি কর শব্দও কানে আসে।পানি পিপাসায় বুক ফাটে।রফিক স্কুলের চাপ কলে মুখলাগিয়ে পেট ভরে পানি খায়।কানে ঝিঁ ঝিঁ পোকার ডাক বন্ধ হয়।একতারার আওয়াজ ও এখন কম শোনা যায়।সবকিছু আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হয়ে আসে........

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই জুলাই, ২০১৭ দুপুর ১২:৩০

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: দারুন গল্প।

বর্ণনা অনুভবের প্রকাশ- গভির থেকে তুলে আনা জীবনের নিজস্ব স্বাদ দেয়।

++++++++

০৭ ই জুলাই, ২০১৭ বিকাল ৩:১৯

মো: হাসানূর রহমান রিজভী বলেছেন: বিদ্রোহী ভাই,শুভেচ্ছা জানবেন।গল্প পড়ে মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

২| ০৭ ই জুলাই, ২০১৭ রাত ৮:০০

চাঁদগাজী বলেছেন:


এই লেখাটা মোটামুটি; এর আগেরটা অনেক গতিশীল

০৮ ই জুলাই, ২০১৭ রাত ১১:২১

মো: হাসানূর রহমান রিজভী বলেছেন: যাক গাজী ভাইয়ের প্রশংসা নিয়মিত মানে লেখার মান ভাল হয়েছে সন্দেহ নাই।ধন্যবাদ গাজী ভাই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.