নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মোঃ হাফিজুর রহমান সাগর

মোঃ হাফিজুর রহমান সাগর › বিস্তারিত পোস্টঃ

“ মায়াবতী ”

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৪৬







এই মামা ভাড়া দ্যান । যাইবেন কই ?



এমন ভাবে তাকালাম যেন জানালা দিয়ে শূন্য আকাশ দেখছি । আমার উদাস ভাব দেখে বাসের কন্ট্রাকটর বিভ্রান্ত হল না ।



মুরগীর মতো ঝিমান ক্যান ! চাল্লু করেন ।



একজন কবির সাথে কি সব ভাষা ব্যবহার করে এরা !!! অকাট মূর্খ । টাকা চিনল বাট কবি চিনল না ।

কবিরা সব পাবে ফ্রী .........

আমার ভাবনায় ছেদ পড়ল ।



ঐ মিয়া , আপনে কোন দ্যাশের জামাই ; আপনের লইজ্ঞা হারা দিন খারাইয়া থাকন লাগব ?!?!



বাড়ির জামাই হয় জানতাম কিন্তু দেশেরও যে জামাই হয় জানতাম না । তাছাড়া, কোন মেয়ের বাবা আমাকে ঠিক ভরসা করতে পারেননা । আর মেয়েরা ভাবে যতই হাতুড়ি-বাটালী চালাই এর চেহারার উনিশ-বিশ হবে না ।

সুতরাং বিয়ে.........

এবার কন্ট্রাকটরের চিৎকারে ধ্যান ভাঙল । আয় জ্বালা.........



আপনে কালা নি । এতক্ষণ চিল্লাইতেছি, ভাড়া দেওনের নাম নাই । ভাব ধরলে কাম হইব না ; ভাড়া ছাড়েন ।



বাসের অন্য যাত্রীরাও এতক্ষণে ধৈয হারিয়েছেন । যে যার মতো বলছেন ।



এসব ভাড়া না দেওনের ফন্দি আমরা জানি, কাম হইব না । গাড়ির থন নামাইয়া দিমু । ভুজুং ভাজুং ছাড়েন ।



এটা মন্দ না । তিন ভাগের দুই ভাগ পথ চলে এসেছি । পকেট এখন গড়ের মাঠ । ভাড়া দেবার প্রশ্নই আসে না । টাকা পাব কোথায় ?? !!

কিন্তু মারবেনা তো এরা ............ সামান্য ক’টা টাকা ।

একটা কিন্নর কণ্ঠ ভেসে আসলো এতো শোরগোলের মধ্য থেকেও ।



এই কন্ট্রাকটর ! এদিকে আসো । দুইটা টিকেট দাও , একটা আমার আর একটা ওনার ( আমাকে নির্দেশ করছেন) ।



আফা, আপনে আগে কইবেন না ঐ বেডা আপনের লগের !! খালি খালি দিগদারি, টাইম লস ।

যাইবেন কই ?



রোকেয়া সরণি ।



তার মানে, আমি তালতলা না নেমে রোকেয়া সরণি নামছি !! মেয়েটিকে দেখার অদম্য কৌতূহলে ঘাড় ঘোরালাম ।

হালকা আকাশী কালারের শাড়ি পড়া একজন ভদ্রমহিলা, আমার দুই সিট পরে বসেছেন । বয়স কত হবে ? ২৫-৩০ এর মধ্যে হবে । হাতে অফিস ব্যাগ, গলায় ঝুলছে আইডি কার্ড । পুরোপুরি কর্পোরেট লুক ।

কিন্তু মুখটা যেন শরতের আকাশ । এই শহরের উগ্র মেকাপের আড়ালে ঢাকা পরা মেয়েদের মুখ দেখতে দেখতে হাঁপিয়ে ওঠা আমি, এই সজীব ও প্রানবন্ত তবে সামান্য ক্লান্ত আর লাজুক মুখটা দেখে, আমার কল্পনা থেকে উঠে আসা কেউ ভেবে নিয়েছিলাম প্রায় !!!!

আমার চোখে চোখ পরতেই সামান্য হাসলেন ভদ্রমহিলা । যেন বোঝাতে চাইলেন, সব ঠিক আছে ।

মায়াবতীর সাথে একসাথে বসতে এবং কথা বলতে ইচ্ছা করছে খুব । মায়াবতীর পাশে বসা সুদর্শন ভদ্রলোককে বলতে ইচ্ছা করছে, উঠুন মশাই ! আমি ওনার পাশে বসবো । দেখলেন না উনি আমার ভাড়া দিলেন !!

বলা হল না ।

কত দিন বাসে উঠে মনে মনে প্রত্যাশা করতাম যেন আমার পাশে কোন এক সুদর্শনা বসে । প্রেম না হোক, খানিকটা পথ গল্পে গল্পে সময় কাটানো তো হবে !!

যদিও আমি জানি, পাশে কোন মেয়ে বসলে আমার মুখে আধমণি তালা লেগে যাবে । আর আমি মোটামুটি খাম্বা আকার ধারন করব ।



মেয়েটার সাথে সাথে আমিও রোকেয়া সরণি নেমে পড়লাম । একটা নির্দিষ্ট দূরত্ব রেখে হাঁটছি তার সাথে সাথে । কেন হাঁটছি ? আমি জানি না !!



ভদ্রমহিলা অবাক হলেন ।

বললেন – আপনি এ পাড়ায় থাকেন ? দেখিনি তো আগে !! আমি অবশ্য লোকাল বাসে নিয়মিত আসি না ।

তিনি স্মিত হাসলেন ।

তার হাসিতে এই কাঠ-খোট্টা শহরে জ্যোৎস্না নেবে এলো । আর আমার মাঝে ঝড় উঠল কবিতার । একের পর এক কবিতার লাইন আসতে শুরু করলো আমার মাথায় ।

এই হঠাৎ নেমে আসা অপূর্ব জ্যোৎস্নার মাঝে কবিতা সৃষ্টির এই মোহনীয় দৃশ্যকল্প আমাকে আচ্ছন্ন করে ফেললো । কিছুক্ষনের জন্য আমি আমাকে হারিয়ে ফেলেছিলাম, ভুলে গিয়েছিলাম আমি কোথায় !!

ভদ্রমহিলার কিন্নর কণ্ঠ আমাকে এবার এই পৃথিবীর অস্তিত্ব জানিয়ে দিল ।



আমি কিন্তু আমার বাসায় চলে এসেছি । আপনি কি আরও সামনে থাকেন ?

আমার কেন যেন মনে হচ্ছে আপনি কথা শুনতেও পান এবং বলতেও পারেন ।

ভদ্রমহিলার চোখে কপট রাগ ।



স্ট্রিট ল্যাম্পের আলোয় ভেসে যাচ্ছিল চারদিক । আমি অবাক হয়ে মায়াবতীর চোখের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে বুঝতে পারি, আর কিছুক্ষন ঐ চোখে তাকিয়ে থাকলে আমার চূড়ান্ত সর্বনাশ হবে।

আমি চিরকালের জন্য আটকা পরে যাবো ঐ চোখে !!!!



আমি ফিরতি পথে হাঁটতে শুরু করি । মায়াবতীর অবাক, কৌতূহলী কণ্ঠ আমাকে আটকাতে পারেনা ।

একজন সাধারন মানুষ আটকে থাকতে পারে কোন এক মায়াবতীর চোখে ; কিন্তু কোন কবি নন ।

একজন কবি হবে মুক্ত বিহঙ্গ ।



কিন্তু আমি পারিনি, আমি পারিনি মুক্ত বিহঙ্গ হতে ।

এখনও ভুল করার কাঁচা অভিনয় করে তালতলা নামার পরিবর্তে রোকেয়া সরণি চলে আসি !! হেটে হেটে ঐ পাঁচতলা বাড়ির সামনে গিয়ে দাড়িয়ে থাকি ।

আবার ফিরে আসি .........।

আর কোন দিন দেখা হয়নি তার সাথে । কিন্তু এই ভুল ভুল অভিনয় আমি প্রায়ই করি ।

কারন, ঐ অল্প সময়ে মায়াবতী তার গভীর কাল দু’চোখে যে মমতা দেখিয়েছে, আমি সারা জীবনেও নিজের প্রতি ততটুকু মমতা বোধ করিনি ।











মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:০২

মুদ্‌দাকির বলেছেন: মুক্ত বিহংগ পর্যন্তই ঠিক ছিল , সুন্দর ++

২| ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৪৫

মোঃ হাফিজুর রহমান সাগর বলেছেন: ধন্যবাদ , পরামর্শের জন্য ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.