![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আজকের আকাশটা কি অন্যসব বিকেলের মতোই সাধারন? হতেই পারেনা! আজ আকাশটাকে আরও খানিকটা স্বচ্ছ,নীল লাগছে। সেই জমাট নীলের নিচ দিয়ে ভেসে বেড়ানো মেঘে কে যেন খানিকটা আবীর ছড়িয়ে দিয়েছে। দূরে উচু উচু ভবনগুলোর ছাদে মানুষের অবয়ব, হাসপাতালের এই অপরিসর চার দেয়াল- সবকিছুকে কোন একটা পশ্চিমা সিনেমার অংশ বলে মনে হচ্ছে।
সায়েরী যতবারই তার ডানপাশের অনেকটা ঝুলানো ছোট্ট বিছানার দিকে তাকাচ্ছে, ততবারই তার চোখ ভিজে উঠছে। বুকের মধ্যে জমানো মমতার পাহাড় যেন তরল হয়ে চোখ দিয়ে নেমে আসতে চাচ্ছে।
তার অপার আনন্দ হচ্ছে। আনন্দে চিৎকার করতে ইচ্ছে করছে। আবার খুব লজ্জাও লাগছে! মনে হচ্ছে কেউ আড়ালে দাড়িয়ে তার মাত্রারিক্ত আনন্দ দেখে মুচকি হাসছে! সায়েরীর একা থাকতে ভাল লাগেনা। তাকে এখন থেকে আর একা থাকতেও হবে না। একা থাকার কষ্ট থেকে এই ছোট্ট পুতুলটা তাকে মুক্তি দিয়েছে। ওটি থেকে বেরুবার পর থেকে এখন পর্যন্ত আবিরের সাথে দেখা হয়নি। আবিরকে দেখতে ইচ্ছে করছে,তার লুকায়িত আনন্দ দেখতে ইছে করছে। আবির কি বলবে তাকে? সেই বা কি বলবে আবিরকে? কিছু কিছু মুহুর্তে আদতেই কি কিছু বলার দরকার হয়!
সায়েরী আবার ছোট বিছানাটার দিকে তাকালো। ছোট ছোট হাত-পা নিয়ে কি বেঘোরেই না ঘুমুচ্ছে বাবুটা! হাসছে মাঝে মাঝে, হাসির সাথে সাথে যেন আলো ঠিকরে বেরুচ্ছে।
এখনও পশ্চিম আকাশে খানিকটা আলো আটকে আছে। সন্ধ্যা হবে হবে করেও হচ্ছে না। হবারই বা কি দরকার!
সায়েরী গুনগুন করে গান গাইতে শুরু করলো।
পেট ক্ষুধায় চো চো করছে। পকেট গড়ের মাঠ। ক্ষুধা চেপে রাখার একটাই উপায়, কঠিন কোন বিষয় নিয়ে ভাবতে থাকা। তেমন কঠিন কোন বিষয়ও মাথায় আসছেনা। পা আর চলছে না, তারপরও আরও মিনিট তিরিশেক হাটতে হবে। স্টুডেন্ট এর বাসায় গেলে হয়ত কিছু খাবার পাওয়া যেতে পারে! তাও সবদিন তারা নাস্তা দেয় না। আজই যেন সেই কুফা দিন না হয়।
নাহ, না জিরিয়ে আর পথ চলা দায়। নাসিম রাস্তার দিকে পা ঝুলিয়ে ফুটপাথে বসে পড়ল। ডান পাশে টং দোকান, চা-বিস্কিট, রুটি,কলা বিক্রি হচ্ছে দেদার। সে লোভির মতো কলা,রুটি দেখছে আর নিজেকে গালি দিচ্ছে! বসার আর জায়গা পেল না!!
রোদের তেজ কমে আসছে। আরেকটা কঠিন দিন বিদায় নেবে কয়েক ঘন্টা পরেই। হয়ত আরও কঠিন দিন তার জন্য অপেক্ষা করছে। নাসিম আলগা ভাবে আকাশের দিকে তাকালো। সব মানুষই বোধ হয় কষ্ট আর সুখে আকাশে আশ্রয় খোঁজে। ধবধবে নীল আকাশ। এই আকাশের দিকে চোখ পড়লে চট করে চোখ নামিয়ে নেয়া মুশকিল। সাদা মেঘ তুলোর মতো উড়ছে। নাসিমের ১৬-১৭ বছরের জীবনটার কথা মনে পড়তে লাগলো! ভাবনাহীন ছিল যে জীবন। নাসিমের একটা সাইকেল ছিল তখন। এমন ঢিলে হয়ে যাওয়া রোদে শরতের আকাশটা মাথায় নিয়ে সারা শহর চষে বেড়াতো সে। সন্ধ্যার আগে আগে উপস্থিত হতো নদীর পাড়ে। ঘোলা নদীর পানিও আকাশের নীলের তেজে নীলচে হয়ে যেত।
শরীরটা বর্তমানে আর চেতনা অতীতে থাকলে গড়িয়ে যাওয়া সময় টের পাওয়া যায়না। নাসিমের যখন চমক ভাঙ্গলো তখন সন্ধ্যা শহরে কড়া নাড়ছে। অথচ এই স্বল্পজীবি সন্ধ্যার শৈশবও আকাশের নীল গ্রাস করতে পারেনি এখনও! এই অতিপ্রাকৃতিক সময়, ঘোর লাগা অবস্থার মধ্যেও নাসিমের মনে পড়ল টিউশানিতে দেরি করে যাওয়া ঝুকিপূর্ন। পেটের ক্ষুধা চাপা দিয়ে সে দ্রুত পা চালাতে লাগলো।
কঠিন বাস্তবতাজর্জরিত এক যুবক এই শহরের একটি সাধারন অথবা অসাধারন সন্ধ্যায় মিশে গেল।
©somewhere in net ltd.