![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
“এই মেয়ে তোকে না কতবার বলেছি আমাকে মা বলে ডাকবি না, কথা কানে যায় না, এরপর আবার ডাকলে ঘরে জায়গা হবে না।“- মেয়েটাকে এমনভাবে না বললেও পারতেন জাহানারা বেগম।
“মা” কে মা বলবে নাতো কি বলবে ? আচ্ছা “মাম্মি” বললে কেমন হয় ? না এটাও তো “মা” নামেরই পর্যায় পরে। তাহলে “aunty” কিন্তু aunty তো বাবার বোনকে ডাকা যায়, উনিতো বাবার বিয়ে করা বউ। নাহ কিছুই মাথায় ঢুকে না। তারচেয়ে বাড়িতে না এলেই ভালো হয় । মাসে যে ১/২ বার আসা হয় তাও আর আসা যাবে না। এমনি সহজ একটা উত্তর নিজের মনের মত করেই বানিয়ে নিল আপন।
প্রতিটা ক্রিয়ারই প্রতিক্রিয়া থাকে আর তাই হল, আপনের হয়ে তার ছোটবোন মায়া উত্তরটা দিয়ে দিল ঃ “ মা ! মাকে মা বলবে নাতো কি বলবে ? মাকে তো আর বাবা বলা যায় না, বাবাতো ছেলে আর মা তো মেয়ে তাহলে আপু তুমাকে কি বলে ডাকবে ?” “ এই মেয়ে এত কথা বলিস কেন ?”- বলেই ঠাস করে গালে চড় বসিয়ে দিল জাহানারা বেগম। “এত বড় মেয়ে হয়েছে এখনও আমাকে মা ডাকে, কতবার বলেছি অন্য কারও সামনে আমাকে মা ডাকবি না তাও কথা কানে যায় না..................।
আরও কিছুক্ষণ শাসিয়ে গেল জাহানারা বেগম, কিছুক্ষণ এর মধ্যেই ইকবাল হোসেন চলে আসবেন না হলে আরও কিছু বলতে পারতেন।
মায়াকে ফুপিয়ে কাঁদতে দেখে আপন তাকে কাছে টেনে বলল “তোকে মায়ের মুখের উপর কথা বলতে কে বলল ? মায়ের মুখের উপর কথা বলতে হয় না।“
“কিন্তু মা তো তার মায়ের মুখের উপর কথা বলে ?”
“তা বলুক, কিন্তু তুই বলবি না, ঠিক আছে ?
“আচ্ছা”
সন্ধ্যার একটু আগে ছাদে উঠলো আপন। বাড়িতে এলে এই ছাদটাই তার সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে। ছাদের কোণে কয়েকটা ফুলের টব আর একটা ইজি চেয়ার ছাড়া তেমন কিছুই নেই।
মন ভাল থাকলে দুপুরে রোদের মধ্যে বসে থাকে আর মন খারাপ থাকলে সন্ধ্যার দিকে ছাদে আসে। সামনের গাছে কি যেন একটা পাখি ? নামটা যে কি ? হ্যাঁ মনে পড়েছে টিক্কা ময়না। পাখিরাও কি মা ডাকে ! তাদেরও কি মা আছে ? আচ্ছা তারা চিনে কি করে কোনটা তাদের মা, সব পাখিতো দেখতে একই রকম।
হঠাৎ করেই গান শুরু করে দেয় আপন। গান গাইতে তার ভালই লাগে। মেয়েটা খুবই মজার। ওকে দেখলে মনেই হয় না ওর মনে কত বড় ধরনের কষ্ট রয়েছে। এটাকে কখনো সরানো যাবে না কিন্তু তার উপর আনন্দের পর্দাতো দেয়া যেতে পারে। তাতে করে দুঃখটা তো ভুলে থাকতে পারবে, কিন্তু সেটাও তো আর হল না, সে জন্যই হয়ত নিজ থেকেই মনে মনে আনন্দ করে। সবার সাথে শুধু আনন্দের ভাগটাই করে দুঃখটার ভাগ সহজে দিতে চায় না।
আজ তার কষ্টটা মনে হয় আবারও দেখা দিতে এসেছে। আপন ইজি চেয়ার এ বসে আছে আর গুনগুন করছে । মনের সাথে প্রচণ্ড রকম লড়াই করে চলেছে অতীতের কষ্টটা যেন কিছুতেই মনে না আসে, কাল চলে যাবে এমন সময় মন খারাপ দেখলে বাবা কান্না শুরু করে দেবে, জড়িয়ে ধরে বসে থাকবে আর একটু পর পর বলবে “তুই কেন এলি পৃথিবীতে ? এলিই যখন তোর মায়ের সাথে চলে যেতে পারলি না ?”
সন্ধ্যা কেটে গেছে, রাত নামছে নামছে। আজ অসম্ভব রকম মায়াবী জোছনা। পূর্ণিমার আলোয় নিজের ছায়াটাকে কেমন যেন ভূতুড়ে লাগছে আপনের। ছাদ থেকে নেমে যাচ্ছিল হঠাৎ কি মনে করে আবার ফিরে এল। ছাদের রেলিং ধরে দাড়িয়ে আছে সে, দৃষ্টি মাটির দিকে। দূর থেকে সাদা কাপড় পড়া মেয়েটাকে মনে হচ্ছে পূর্ণিমার আলোয় নেমে আসা অন্য কোন মানুষ, অন্য কোন ভুবনের...।
“বাবা ঠিকই বলেছে কি জন্য এসেছি ? তারচেয়ে মায়ের সাথে চলে গেলেই ভাল হতো।“ অনেক কষ্ট নিয়েও মানুষ বেঁচে থাকে তা এই শ্যামলা মায়াবী মেয়েটাকে দেখলেই বুজা যায় ।
উজ্জল চাদের দিকে তাকিয়ে আপন মনে কথা বলে, আপন। অনেকগুলো কথা বলে তার মায়ের সাথে, কত অভিযোগ , কত প্রশ্ন, কত অভিমান ? তার শেষের কথাগুলো এরকম-
“মা ! ? ও মা ? আমি মা বলার মা পাচ্ছি না, মা আমাকে মা বলতে দেয় না।“
আপনের কথাগুলো জোছনা মনে হয় বুজতে পেরেছে তাই হয়তো সেও মেঘের আড়ালে লুকিয়ে পড়ল। কাউকে জানতে দিবে না এ কথা, এত কষ্টের লুকনো ব্যাথা।
©somewhere in net ltd.