![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সঙ্গীত গবেষক ও রাষ্ট্রচিন্তক
সাইফুল বিন হানিফ----
আমাদের এই দেশের নাম বাংলাদেশ। আর ভাষা,আমাদের চৌদ্দ কোটি মানুষের মাতৃভাষা –বাংলা ভাষা। শুধু আমরাই নই আমাদের দেশের বাইরেও কয়েক কোটি মানুষ কথা বলে এই ভাষায়। এই বাংলা ভাষায় গান ,কবিতা লিখেছেন চন্ডীদাস, আলাওল, রবীন্দ্রনাথ,নজরুল প্রমুখ। আজ আমাদের গৌরব , আমাদের ভাষার সাহিত্য পৃথিবীর প্রথম সারিতে ঠায় করে নিয়েছে।
মা-কে নিয়ে কথা বলতে কতো সুখ। তেমনি সুখ,তেমনি গর্ব আপন ভাষা নিয়ে। এ যে আমাদের মাতৃভাষা।বাংলা ভাষা আমাদের ভাষা জননী। তাই সে কারণেই তো জননীর ইজ্জত রক্ষার লড়াইয়ে বাহান্ন সালে ছেলেরা হাসিমুখে প্রাণ দিয়েছে। এই বাংলা ভাষা নিয়েই আজকের কথা।
এই ভাষার জন্ম কবে,কোথায় ,কেমন করে?
জটিল প্রশ্ন।
বাংলাদেশের সংবিধানে বলা হয়েছে- ‘প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রভাষা বাংলা’। এর অর্থ এই নয় যে, কোন একদিন প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রভাষা বাংলা হবে। এর অর্থ হচ্ছে, এখন প্রজাতন্ত্রের ভাষা বাংলা। সকল রাষ্ট্রীয় কাজে যে ভাষা ব্যবহৃত হয় তাকেই বলে রাষ্ট্রভাষা। প্রশ্ন জাগে, বাংলাদেশের রাষ্ট্রভাষা কি বাংলা? সংবিধানের আলোকে দেশে সর্বস্তরে বাংলা ভাষার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করতে ১৯৮৭ সালের ৮ মার্চ ‘বাংলা ভাষা প্রচলন আইন করা হয়েছে। এ আইনের ৩(১) ধারায় বলা হয়েছে, ‘এই আইন প্রবর্তনের পর বাংলাদেশের সর্বত্র তথা সরকারি অফিস-আদালত, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান কর্তৃক বিদেশের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যতীত অন্যান্য সব ক্ষেত্রে নথি ও চিঠিপত্র, আইন আদালতের সওয়াল জবাব এবং অন্যান্য আইনানুগ কার্যাবলী অবশ্যই বাংলায় লিখিতে হইবে। এই ধারা মোতাবেক কোন কর্মস্থলে যদি কোন ব্যক্তি বাংলা ভাষা ব্যতীত অন্য কোন ভাষায় আবেদন বা আপিল করেন তাহা হইলে উহা বেআইনি ও অকার্যকর বলিয়া গণ্য হইবে।’ আইনটি প্রণয়ন করার দীর্ঘ সময় পর ১৯৯৮ সালের শেষ দিকে ‘বাংলা ভাষা বাস্তবায়ন কোষ’ গঠন করা হয়। ‘বাংলা ভাষা বাস্তবায়ন কোষ’র প্রতিশ্রুতি ছিল ব্রিটিশ আমল থেকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও আদালতে প্রযোজ্য ইংরেজিতে প্রণীত আইন বাংলা ভাষায় রূপান্তর। কিন্তু দুঃখের বিষয় রাষ্ট্রীয় কাজ-কর্মের সঙ্গে যুক্ত প্রায় ৮০০ আইনের মধ্যে বিগত ১৫ বছরে মাত্র ১০৭টি আইন বাংলায় অনূদিত হয়েছে। ২০০৭ সালে প্রকাশিত বাংলাদেশ কোডে ১৮৩৬ থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত ২৬ খণ্ড এবং ১৯৮৭ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত ১২ খণ্ড সহ মোট ৯৫৫টি আইনের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। এর মধ্যে ২৬ খণ্ডের ৭৫০টি আইন ইংরেজি ভাষায় লেখা। এসব আইনের মধ্যে মাত্র ১০০টির মতো আইন গত ১৪ বছরে ইংরেজি থেকে বাংলায় ভাষান্তর করা হয়েছে। যে আদালত শহীদ মিনার ও ভাষাসৈনিকদের মর্যাদা রক্ষার নির্দেশনা দেয় সে আদালতেই উপেক্ষিত হচ্ছে বাংলা ভাষা। কালেভদ্রে বাংলায় রায় লেখার মধ্যেই আদালতে বাংলা চর্চা সীমাবদ্ধ থাকছে। উচ্চ আদালতের পাশাপাশি নিম্ন আদালতের বিচারকদের পদোন্নতির জন্য কমপক্ষে তিনটি মামলার রায় ইংরেজিতে লেখার নিয়ম এখনও বলবৎ রয়েছে যা সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক। আদালতে বাংলার ব্যবহার না থাকায় আইনি অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। মামলার রায় অধিকাংশ সময়ই ইংরেজিতে দেয়ার কারণে সাধারণ মানুষ রায়ের মর্ম বুঝতে পারে না। সাধারণ মানুষ যদি আইনি প্রক্রিয়া বুঝতেই না পারে, তাহলে সে আইন রাষ্ট্রের কল্যাণ কিংবা গণমানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করবে কিভাবে? আইন-আদালতকে কেবল রাষ্ট্রের একটি শ্রেণীর মধ্যে গণ্ডিবদ্ধ করে রাখলে সে আইন কিভাবে ন্যায় বিচার নিশ্চিত করবে? দেশের সর্বোচ্চ আদালতের মতো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গনে বাংলার আংশিক ব্যবহার বেদনাদায়ক।
ইউনেস্কো একুশে ফেব্রুয়ারিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস্থ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে, বাংলাদেশে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইন্সটিটিউট’ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, বিশ্বব্যাপী একুশে ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে - এসবই গর্বের বিষয় কিন্তু যে দেশ এ ঐতিহাসিক দিনটির জন্ম দিলো সে দেশে মাতৃভাষা কতটুকু প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তা মূল্যায়ণের সময় এসেছে।
©somewhere in net ltd.