![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সঙ্গীত গবেষক ও রাষ্ট্রচিন্তক
সাইফুল বিন হানিফ
ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতায় অমর একুশে বইমেলা এখন বাঙালির প্রাণের মেলা। সারা বছর আমাদের কবি, লেখক, প্রকাশক, বইপ্রেমী লাখ লাখ মানুষ ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি ও অমর একুশে বইমেলার জন্য গভীর আগ্রহে অপেক্ষা করেন। বাংলা একাডেমিতে অনুষ্ঠিত অমর একুশে বইমেলায় না গেলে যেন আমাদের পেটের ভাত হজম হতে চায় না।
প্রতি বছর ১ লা ফেব্রুয়ারি সরকার প্রধান হিসাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অমর একুশে বইমেলা'র শুভ উদ্বোধন করেন। তারপর পুরো ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে কবি, লেখক, প্রকাশক পাঠক ও বইপ্রেমীদের উচ্ছ্বাসে জমে ওঠে আমাদের প্রাণের বইমেলা। অমর একুশে বইমেলা এখন আমাদের ঐতিহ্যের অংশ।
কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে আমরা লক্ষ্য করছি, যে উদ্দেশ্য নিয়ে বাংলা একাডেমি সৃষ্টি হয়েছিল, যে একাডেমিকে আমরা বলি জাতির মননের প্রতীক, সেই একাডেমিতে কিছু ভূতের আছর লেগেছে। ২০০৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অমর একুশে বইমেলা থেকে ফেরার পথে ডক্টর হুমায়ুন আজাদের উপর হামলা হয়েছে। ২০১৩ সালে আমাদের প্রাণের বইমেলায় আগুন দেওয়া হয়েছে। ২০১৫ সালে মৌলবাদীদের উস্কানিতে একাডেমি রোদেলা প্রকাশনীর স্টল বন্ধ করে দিয়েছে। আর মেলার শেষের দিকে ২৬ ফেব্রুয়ারি বিজ্ঞান লেখক অভিজিৎ রায় ও তাঁর স্ত্রী লেখক বন্যা আহমেদের উপর সন্ত্রাসীদের নৃশংস হামলা হয়েছে। সেই হামলায় অভিজিৎ রায় নিহত হয়েছেন। বন্যা আহমেদ মৃত্যুর ঘর থেকে ফিরে এসেছেন। একই ধারায় অভিজিৎ রায়ের বইয়ের দুই প্রকাশক জাগৃতি'র ফয়সল আরেফিন দীপন ও শুদ্ধস্বরের আহমেদুর রশীদ টুটুলের উপর তাঁদের প্রকাশনা কার্যালয়ে সন্ত্রাসীদের নৃশংস হামলা হয়েছে। সেই হামলায় ফয়সল আরেফিন দীপন নিহত হয়েছেন। অপর হামলায় শুদ্ধস্বরের অফিসে আহমেদুর রশীদ টুটুলের সঙ্গে দুইজন লেখক রণদীপম বসু ও তারেক রহিম গুরুতর আহত হয়েছেন। বন্যা আহমেদের মত এই তিনজনও মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে এসেছেন। সেই সব নৃশংস হামলার এখনো কোনো বিচার হয়নি। রাষ্ট্র অনেকটা নিরব ভূমিকায় রয়েছে।
লেখক ও প্রকাশকদের উপর মৌলবাদীদের জঘন্য নৃশংস হামলার পরেও বাংলা একাডেমি কোনো ধরনের উচ্চবাচ্য করেনি। শোক দেখায়নি, কাউকে সমবেদনা পর্যন্ত দেখায়নি। উল্টো এ বছর অমর একুশে বইমেলা শুরু হবার আগেই বাংলা একাডেমি'র মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান সাহেব প্রকাশকদের জন্য এক কঠোর সবক দিয়েছেন। উস্কানিমূলক কোনো লেখা যেন কোনো প্রকাশক না ছাপায়। যদি কেউ দায়িত্ব নিয়ে কারো উস্কানিমূলক লেখা ছাপায় তাহলে রোদেলা প্রকাশনীর মত ভাগ্য বরণ করতে হবে তাদের। এখন পর্যন্ত একাডেমি'র মহাপরিচালক সাহেবের এই বক্তব্যের কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ কোনো প্রকাশক বা প্রকাশনা সংঘ থেকে কেউ করেননি। বিচ্ছিন্নভাবে অনেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় খান সাহেবের কথার জবাব দিয়েছেন। কিন্তু কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ এখন পর্যন্ত হয়নি। যা বাঙালি জাতির জন্য এই মুহূর্তে এক চরম লজ্জার বিষয়!
অমর একুশে বইমেলার জন্য আমার দুটি প্রস্তাব আছে। লিটল ম্যাগাজিন চত্বরকে ‘লেখক অভিজিৎ রায় চত্বর’ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জাগৃতি প্রকাশনী'র চত্বরকে ‘ফয়সল আরেফিন দীপন চত্বর’ ঘোষণা করা হোক। এই দুটি চত্বর একুশে বইমেলার প্রথমদিন থেকেই করা হোক।
এবার আসি জনাব শামসুজ্জামান খান সাহেবের কারবারিতে। একুশে পদকপ্রাপ্ত শামসুজ্জামান খান সাহেবকে ২০০৯ সালে বাংলা একাডেমি'র মহাপরিচালক হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয়। তিন বছরের মেয়াদ শেষ হয় ২০১২ সালে। তখন তাঁকে আবার পুনঃনিয়োগ দেওয়া হয়। ২০১৫ সালে দ্বিতীয়বারের মেয়াদ শেষ হলে ১৫ জুলাই ২০১৫ সালে তাঁকে তৃতীয়বারের মত পুনঃনিয়োগ দেওয়া হয় একাডেমির মহাপরিচালক হিসাবে। এর আগে তিনি বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি'রও মহাপরিচালক ছিলেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে তিনি সম্ভবত প্রথম ব্যক্তি যিনি সরকারকে তৈলমর্দনে একজন যোগ্য চ্যাম্পিয়ন হবার গৌরব লাভ করেছেন। নইলে এক ব্যক্তি তিনটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে পাঁচবার কীভাবে মহাপরিচালকের দায়িত্ব পান? আমি তাঁর এই বিরল চ্যাম্পিয়নশিপকে গিনিজ ওয়ার্ল্ড বুক অব রেকর্ডে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য বিনীত অনুরোধ করছি!
অমর একুশে বইমেলায় উস্কানিমূলক বই প্রকাশ করা যাবে না বলে খান সাহেব আমাদের কীসের ইঙ্গিত দিচ্ছেন? খোদ বাংলা একাডেমি সৃষ্টি হয়েছে 'রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই' উস্কানিতে। নইলে জিন্নাহ সাহেব উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার জন্য তাঁর পরিষদ খাজা নাজিমুদ্দিন গংরাসহ একপায়ে খাঁড়া ছিলেন। বাংলার দামাল ছেলেরা রফিক, শফিক, বরকত, জব্বার, সালামরা বুকের তাজা রক্ত দিয়ে আমার মায়ের ভাষাকে সেদিন বাঁচিয়েছিলেন। বাংলা একাডেমি একটি সুস্পষ্ট উস্কানির ফসল। সেই উস্কানি বাঙালি জাতির গর্বের, বাঙালির গৌরবের। বাংলা একাডেমি এখন বাংলাদেশের একটি ঐতিহ্যের নাম। বাঙালি জাতির মননের প্রতীক।
মুক্তচিন্তা বিজ্ঞানমনস্কচিন্তা, প্রগতিশীলদের সোচ্চার হবার এখনি সময়।
আসুন রুখে দাঁড়াই।
লেখকঃ রাষ্ট্রচিন্তক ও সঙ্গীত গবেষক ।
©somewhere in net ltd.