| নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সাইফুর রহমান.
বেঁচে থাকার মহত্তম উদ্দেশ্যটা খুজে ফিরছি
পুনর্বাসনের সাধারণ পটভূমি
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্যরাত্রিতে পাকিস্তানী সামরিক বাহিনী বাংলাদেশের সর্বত্র মানবেতিহাসের জঘন্যতম হত্যাকান্ডের সূচনা করে। নিরপরাধ নিরস্ত্র জনগনের উপর বর্বর বাহিনী আধুনিক সমরাস্ত্র নিয়ে ঝাপিয়ে পড়ে। তাদের সাথে যোগ দেয় বিহারীদের একটি বড় অংশ এবং এদেশে জন্মগ্রহণকারী কিছু বিশ্বাসঘাতক দালাল।
এই হত্যাকান্ডের খবর যাতে বিশ্ববাসী জানতে না পারে, তার জন্য পাক সরকার সর্বাত্মক প্রচেস্টা চালায়। সে সময় এখানে অবস্থানরত বিদেশী সাংবাদিকদের সামরিক প্রহরাধীনে বিমান বন্দরে এনে দেশ থেকে বের করে দেয়া হয়। যাবার আগে তাঁদের কাছ থেকে প্রায় সমস্ত নোট ও ফিল্ম ছিনিয়ে নেয়া হয়। এরপর থেকে বহির্বিশ্বে সংবাদ প্রেরণ এবং বিদেশী সাংবাদিকদের এদেশে আসার উপর কড়া সেন্সরশীপ আরোপসহ বিশ্ববাসীর কাছে গোপন করার জন্য সমস্ত প্রচেষ্টা চালানো হয়।
কিন্তু হত্যাযজ্ঞে এতই ব্যাপক ও ভয়াবহ ছিল যে তা চেপে রাখা অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। যে সমস্ত বিদেশী সাংবাদিক আত্মগোপন করে বা অন্য কোন উপায়ে দেশের ভেতরে থেকে যেতে পেরেছিলেন তাঁরা এই হত্যাযজ্ঞের বিস্তৃত বর্ণনা দিয়ে মর্মস্পর্শী প্রতিবেদন লিখতে থাকেন। এছাড়া সাংবাদিকসহ অন্যান্য য়ে সমস্ত আন্তর্জাতিক প্রতিনিধি দলকে খুনি চক্র ‘প্রদেশের অবস্থা স্বাভাবিক’ বলে দেখাবার জন্য নিয়ে এসেছিল, তাঁরাও হত্যাযজ্ঞের ভয়াভহতা চাক্ষুষ দেখে এ সম্পর্কে বিভিন্ন প্রতিবেদন লিখেছিলেন। এ সমস্ত প্রতিবেদনের দু একটির অংশবিশেষ উদ্ধৃত করলেই বোঝা যাবে এই হত্যাযজ্ঞ কত ভয়াবহ ছিল। নিউজ উইক পত্রিকায় ২০ জুন সাংবাদিক ক্লিফটন লিখেছিলেন, ‘আমার কোন সন্দেহ নাই য়ে, পূর্ব পাকিস্তানের শত শত জায়গায় মাই লাই ও লিডিসের ঘটনা ঘটেছে- এবং আরো ঘটবে বলেই আমার ধারণা। দ্বিতীয় মাহাযুদ্ধে পদকপ্রাপ্ত জনৈক অফিসার গ্যালাঘার আমাকে বলেছেন, -‘আমি ফ্রান্সে যুদ্ধের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা– নরম্যান্ডির হনন কেন্দ্র দেখেছি- কিন্তু এগুলোর কাছে সে কিছুই নয়। কান্না চেপে আত্মসম্বরণ করতে আমাকে অনেক বেগ পেতে হয়েছিল।’(১)
আই, পি, এম কারগিলের নেতৃত্বাধীন বিশ্ব ব্যাংক প্রতিনিধিদলের অন্যতাম সদস্য হেনডিক ভ্যানডার হেজিডেন হত্যাকান্ডের স্বরূপ প্রকাশের জন্য কুষ্টিয়া শহরের বর্ণনা দিয়ে তাঁর আনুষ্ঠানিক রিপোর্টে লেখেন, ‘শহরটিকে দেখাচ্ছিল দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে মিত্র বাহিনীর বোমার আঘাতে বিধ্বস্ত জার্মান শহরগুলোর মত। শহরের ৯০ ভাগ বাড়ি, দোকান, ব্যাংক পুরোপুরি ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। আমরা যখন ঘুরছিলাম সবাই তখন পালাচ্ছিল। অবস্থাটা ছিল পারমাণবিক হামলার পরদিনের সকালের মত।’(২)
এই ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞের বিবরণ জানতে পেরে সারা বিশ্বের সচেতন মানুষ প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠেন। বিশ্বের বিভিন্ন নেতা গণহত্যার নিন্দা করে বক্তব্য রাখেন। এই প্রতিবাদের প্রকৃতি অনুধাবন করা যাবে জাতিসংঘের তত্কালীন মহাসচিব উথান্টের বক্তব্য থেকে। তিনি এই হত্যাকান্ডকে ‘ইতিহাসের অন্যতম করুণ ঘটনা এবং মানব ইতিহাসের অতি কলংকজনক অধ্যায়’ বলে আখ্যায়িত করেন।(৩)
১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১। ইতিহাসের জঘন্যতাম হত্যাযজ্ঞে ক্ষরিত এক সমুদ্র রক্তে স্নাত হয়ে জন্ম হল স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের। মুক্তির আনন্দে উদ্বেল হল জনতা।
কিন্তু এই আনন্দ ম্লান হয়ে যায় বিজয় লাভের মুহূর্ত থেকেই। ১৬ ডিসেম্বর থেকে এক সপ্তাহের মধ্যেই সারাদেশে অনুন্য পাঁচ হাজার বধ্যভূমি ও গণকবর আবিষ্কৃত হয়। পরবর্তী দু’মাস ধরে চলতে থাকে গণকবর আবিষ্কারের এই ধারা। অবস্থা এমন দাঁড়ায় যে দেশের প্রত্যেক ইউনিয়নে গড়ে অন্ততঃ একটি গণকবর আবিষ্কৃত হয়।
সারাদেশে আবষ্কৃত বধ্যভূমিতে অসংখ্য বিকৃত লাশের সংবাদ পেয়ে সমস্ত বিশ্ব স্তম্ভিত হয়ে পড়ে। সমগ্র মানবতার বিরূদ্ধে এই অপরাধের প্রতিবাদ জানিয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে আসতে থাকে শোকবার্তা। জাতিসংঘে গণহত্যার নিন্দা করে প্রস্তাব গ্রহণের উদ্যোগ নেয়া হয়। কায়রোতে আফ্রো-এশীয় গণসংস্থার সম্মেলনে বাংলাদেশে সুপরিকল্পিতভাবে নৃশংস হত্যাকান্ড সংঘটিত করার জন্য নিন্দা প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। মাদার তেরেসার নেতৃত্বাধীন ‘ক্রিসটাস’ সংস্থা থেকে বাংলাদেশের গণহত্যা ও নারী নির্যাতনের নিন্দা করে নির্যাতিতাদের সহায়তার জন্য মাদার তেরেসাকে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে মানবতাবাদী নেতৃবৃন্দ ও বুদ্ধিজীবীরা বাংলাদেশে আসেন। বিভিন্ন বধ্যভূমিতে অকল্পনীয় নির্যাতনের চিন্হসহ অজস্র বিকৃত মৃতদেহ এবং হাড়-কঙ্কালের স্তুপ চাক্ষুষ দেখে তাঁরা স্তম্ভিত হয়ে যান। আন্তর্জাতিক রেডক্রস, প্রতিনিধিদল এসেছিলেন মূলতঃ যুদ্ধবন্দী এবং তাদের দেশীয় দোসরদের বিচারের বিষয়ে প্রভাবান্বিত করার জন্য। কিন্তু দেশজুড়ে অসংখ্য বধ্যভূমিতে হত্যাকান্ডের ভয়াবহতা দেখে তাঁরা নিজেরাই এদের বিরুদ্ধে বিক্ষুদ্ধ হয়ে উঠেন।
বিশ্ব শান্তি পরিষদ প্রতিনিধি দলের নেত্রী মাদাম ইসাবেলা ব্লুম ২০/১/৭২ তারিখে সাংবাদিকদের বলেন, ‘শিয়ালবাড়ি বধ্যভূমিতে বাঙ্গালী হত্যাযজ্ঞের যে লোমহর্ষক নৃশংসতার স্বাক্ষর আমি দেখেছি তাতে আমি শোকাভিভূত ও সন্ত্রস্ত হয়ে গেছি। এই হত্যাকান্ড নাত্সী গ্যাস চেম্বারের হত্যাযজ্ঞের চেয়েও অনেক বিভত্স।’ তিনি দেশে ফিরে গিয়ে পরিষদের সভাপতির কাছ এই গণহত্যার জন্য আন্তর্জাতিক তদন্ত কমিশন গঠনের দাবী জানাবেন বলে জানান। (আজাদ, ২২/১/৭২)
বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধি সমন্বয়ে গঠিত দলটির অপর একজন সদস্য বলেন, ‘আমি যা দেখে এসছি তা আমি বিশ্বাস করতে চাই না। আমাকে আজীবন এই স্মৃতি মন থেকে মুছে ফেলার চেষ্টা করতে হবে।’
স্বাধীনতাযুদ্ধের সকমর্থক মার্কিন সিনেটের ডেমোক্র্যাট দলীয় সদস্য এ্যাডলাই স্টিভেনসন কুমিল্লা ও চট্টগ্রামের বধ্যভূমিগুলো দেখে এসে ৩০ জানুয়ারী বলেন, ‘বাংলাদেশে পাকবাহিনীর নৃশংসতা ছিল ভয়াবহ এবং মানবজাতির ইতিহাস তার কোন নজীর নেই। এই বর্বরতা মানুষের কল্পনাকেও ছড়িয়ে গেছে।’ (আজাদ, ৩১/১/৭২)
মার্কিন সিনেটের অপর সদস্য এডওয়ার্ড কেনেডি বলেন, ‘মানুষের মস্তিষ্কে এ’ধরনের বর্বরতার চিন্তা আসতে পারে এ’কথা ভাবতেও কষ্ট হয়।’ (আজাদ, ১৭/২/৭২)
ফরাসী সাহিত্যিক আঁদ্রে মালরো বলেন, ‘দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় নাত্সীদের নৃশংসতার নিদর্শন আমি দেখেছি, কিন্তু এখানকার নিশংসতা তার চেয়ে অনেক বেশী।’ (আজাদ, ১৩/৩/৭২)
সারা দেশে ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে যথাযথ বিচারের মাধ্যমে হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের জন্য দাবী ওঠে।
এই জঘন্য হত্যাকান্ডের খবর বিশ্ববাসীকে জানানোর জন্য এবং এর সাথে জড়িত পাক-সামরিক অফিসার ও তাদের এদেশীয় দালালদের বিচার করার জন্য দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় নাত্সীদের বিচারের উদ্দেশ্যে বার্টান্ড রাসেল, জ্যাঁ পল সার্ত, আঁদ্রে মালরো প্রমুখ বিশ্বখ্যাত ব্যাক্তিত্বের সমন্বয়ে যে ধরনের আন্তর্জাতিক কমিশন গঠিত হয়েছিল, সে ধরনের কমিশন গঠনের মাধ্যমে প্রকাশ্য বিচারের দাবী করা হয়। বিশ্বের অন্যান্য স্থান থেকেও আন্তর্জাতিক তদন্ত কমিশন গঠনের জন্য দাবী জানানো হয়।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীসহ অন্যান্য সদস্য এই হত্যাযজ্ঞকে নজীরবিহীন বর্বরতা বলে উল্লেখ করে এর বিচারের ব্যবস্থা করার আশ্বাস দেন। এই ভয়াবহ হত্যাকান্ডের জন্য দায়ী ব্যক্তিরা জেনেভা কনভেনশনের সুবিধা পাওয়ার অধিকার হারিয়েছে বলেও তারা মত প্রকাশ করেন।
কিন্তু এর ভেতর চলছিল ভিন্ন আর এক খেলা। স্বাধীনতাবিরোধী কুখ্যাত খুনী দালালদের জনরোষ থেকে বাঁচানোর জন্য আওয়ামী লীগ সরকার ১৬ ডিসেম্বর থেকেই প্রচেষ্টা চালানো শুরু করে। ১৬ ডিসেম্বর থেকে কুখ্যাত খুনী এবং দালালদের জন্য একমাত্র নিরাপদ আশ্রয়স্থল হয়ে দাঁড়ায় জেলখানা। কুখ্যাত দালালদের কাছ থেকে সে সময় আওয়ামী লীগ সরকারের কাছে ১১ হাজার লিখিত আবেদনপত্র পড়েছিল, তাদেরকে জেলখানায় সরিয়ে নেয়া জন্য। এদের বিচারের ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ সরকার কালক্ষেপণ নীতি গ্রহণ করেন।
১ জানুয়ারী ১৯৭২ তারিখে অস্থায়ী রাষ্ট্রপ্রধান সৈয়দ নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে মন্ত্রী পরিষদের এক বৈঠকে গণহত্যা তদন্ত কমিশন গঠনের সেদ্ধান্ত নেয়া হয়। হাইকোর্টের কর্মরত বা অবসরপ্রাপ্ত কোন বিচারপতি বা সমপর্যায়ের কোন মনোনীত ব্যক্তির নেতৃত্বে কমিশন পাকবাহিনী ও দালালদের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্তদের মৌখিক ও লিখিত সাক্ষত্কার গ্রহণ করে ব্যাপক রিপোর্ট পেশ করবেন বলে ঘোষণা করা হয়।
----------------------------------------------------------------------
(১) ‘বাংলাদেশের গণহত্যা দৈনিক বাংলা’, ১৬ জানুয়ারী ’৭২।
(২) প্রাগুক্ত।
(৩) প্রাগুক্ত
২|
৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১:০০
আরজু পনি বলেছেন:
হৃৎ কলম
http://hritkalom.blogspot.com/
13 সেপ্ট 2010 ... ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্যরাত্রিতে পাকিস্তানী সামরিক বাহিনী বাংলাদেশের সর্বত্র
মানবেতিহাসের জঘন্যতম হত্যাকান্ডের সূচনা করে। নিরপরাধ নিরস্ত্র জনগনের উপর বর্বর
বাহিনী আধুনিক সমরাস্ত্র নিয়ে ঝাপিয়ে পড়ে। তাদের সাথে যোগ দেয় বিহারীদের একটি
বড় অংশ এবং এদেশে জন্মগ্রহণকারী কিছু বিশ্বাসঘাতক দালাল।
হৃৎ কলম: একাত্তরের ঘাতক ও দালালেরা কে কোথায়
Click This Link
6 সেপ্ট 2010 ... ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্যরাত্রিতে পাকিস্তানী সামরিক বাহিনী বাংলাদেশের সর্বত্র
মানবেতিহাসের জঘন্যতম হত্যাকান্ডের সূচনা করে। নিরপরাধ নিরস্ত্র জনগনের উপর বর্বর
বাহিনী আধুনিক সমরাস্ত্র নিয়ে ঝাপিয়ে পড়ে। তাদের সাথে যোগ দেয় বিহারীদের একটি
বড় অংশ এবং এদেশে জন্মগ্রহণকারী কিছু বিশ্বাসঘাতক দালাল।
©somewhere in net ltd.
১|
৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১২:৩৮
সিংহমামা বলেছেন: ++++++