নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মীরসরাই[email protected]

সাইমুম

শখ : অতি সাধারণ। বই পড়া আর বিদেশ ভ্রমণ।

সাইমুম › বিস্তারিত পোস্টঃ

ইতিপূর্বে বনাম ইতঃপূর্বে

০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১০ দুপুর ১২:৪১



ইতি শব্দের মূল অর্থ 'এই' বা 'এই প্রকার।' সংস্কৃত ইতঃ মানেও এই বা এই প্রকার। কিন্তু চিঠির শেষে 'ইতি' লেখার প্রচলন থেকেই ভুলক্রমে 'ইতি' শব্দের অর্থ 'শেষ' হয়ে গেছে এবং তা গৃহীতও হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে চিঠির শেষে 'ইতি' লাগানো হতো 'এই' অর্থে। এটা দিয়ে বোঝাতো 'এই পর্যন্ত, আর নয়'।



সংস্কৃতেও এটার সাক্ষ মেলে। যেমন 'ইতি উপক্রমণিকা সমাপ্তা', 'ইতি ত্রিকাণ্ড শেষ'; 'ইতি অব্যয়বর্গ: সমাপ্ত'। এই কথা কয়টিতে 'ইতি' মানে 'শেষ' নয়।



বরং 'সমাপ্তা', 'শেষ' ও 'সমাপ্ত' মানে শেষ।



ইতি শব্দের অর্থ যে প্রকৃতপক্ষে 'শেষ' নয়, তার প্রমাণ পাওয়া যায় 'ইতিমধ্যে' আর 'ইতিপূর্বে' শব্দ দুটির মাঝে।

কিন্তু কেউ কেউ ইতিমধ্যে আর ইতিপূর্বের পরিবর্তে 'ইতোমধ্যে' ও 'ইতঃপূর্বে' চালুর জন্য উঠে পড়ে লেগেছেন। এটা নিতান্তই অপ্রয়োজনীয়। কারণ এসব শব্দকে সংস্কৃতের নিক্তি দিয়ে মেপে ঠিক করতে গেলে 'নিন্দুক', 'হিংসুক', 'অবহেলা', 'সহায়ক', 'পদাতিক', 'দশমিক'সহ অনেক শব্দই শুদ্ধ করে নিতে হবে। কারণ সংস্কৃত ব্যাকরণ অনুযায়ী এসব শব্দ হবে যথাক্রমে 'নিন্দক, হিংসক, অবহেল, সাহায়ক, পাদাতিক, দাশমিক। অথচ আমরা এটা বিবেচনায় আনতে চাই না যে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সুনীতিকুমার, ললিতকুমার আর ক্ষিতিশচন্দ্রের মতো প্রাজ্ঞরা 'ইতিমধ্যে' আর 'ইতিপূর্বে' মেনে নিয়েছেন।



ক্ষিতিশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের 'শব্দ কথা প্রথম আশ্বাস' গ্রন্থটি প্রকাশিত হয় ১৯৪৬ সালে। বইটিতে তাঁর মতো একজন সংস্কৃত পণ্ডিত লিখেছেন, 'ইতিপূর্বে, ইতিমধ্যে প্রভৃতি প্রামাদিক বটে, কিন্তু এস্থলে প্রমাদ গুরুতর নহে আর পদগুলি ভাষায় বেশ চলিয়া গিয়াছে। এইগুলিকে বর্জন করিয়া পাণ্ডিত্যগন্ধী উৎকট ইতঃপূর্ব ও ততোহধিক উৎকট ইতোমধ্যকে ভাষার রাজ্যে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করিবার যুক্তিসঙ্গত কারণ আছে বলিয়া মনে হয় না। ইতি শব্দ যখন নিপাত, আর মহর্ষি যাস্কই যখন বলিয়াছেন, 'উচ্চাবচেস্বর্থেষু নিপততন্ত্রীতি নিপাতাঃ' তখন উহা স্বচ্ছন্দে ইতঃ শব্দের অর্থ প্রকাশ করিতে পারে। দুরাগ্রহের ফল সাধারণত ভাল হয় না, এ স্থলেও ইতঃপূর্বে ভূমিষ্ট থুড়ি পত্রস্থ হইবার অল্প দিন পরেই ইতোমধ্যের পদাঙ্ক অনুসরণ করিয়া ইতোপূর্বের হইয়া গেল। এখন বল মা তারা, দাঁড়াই কোথায়?' (১১৮ পৃষ্ঠা)।



বিজন বিহারী ভট্টাচার্য তার 'বঙ্গভাষা ও বঙ্গসংস্কৃতি' (১৯৭৫) গ্রন্থে লিখেছেন, 'আমরা অনেক সময় রক্ষণশীলতাবশত ব্যাকরণকে যতটা আঁকড়ে থাকতে চাই ততটা উচিত কিনা তা ভাবার সময় এসেছে। ঊনবিংশ শতাব্দীর গোড়া থেকে তথাকথিত অশুদ্ধ শব্দ দুটি (ইতিমধ্যে; ইতিপহৃর্বে) ভাষায় স্থান পেয়ে গেছে। শতাব্দীর চতুর্থ দশকে আমরা শিক্ষকের আসনে বসে ছাত্রদের বলেছি, 'ইতঃপূর্বে', 'ইতোমধ্যে' চলিত ভাষায় ব্যবহার করা যাবে না। সাধু ভাষাতেও নিতান্ত দরকার না হলে প্রয়োগ না করাই ভাল।' (পৃষ্ঠা ১২১-১২৪)।



অন্যদিকে সংস্কৃত পণ্ডিত ললিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় 'ইতিপূর্বে' ও 'ইতিমধ্যে' কে শুদ্ধ মনে করেন। তিনি লিখেছেন, 'কেউ কেউ 'ইতিমধ্যে' 'ইতিপূর্বে ' অশুদ্ধ বলেন, 'ইতোমধ্যে', 'ইতঃপূর্বে' শুদ্ধ বলেন। কেন, তাহারাই জানেন'।

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১০ দুপুর ১২:৪৮

জামিনদার বলেছেন: ধন্যবাদ।

০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১০ দুপুর ১:০৫

সাইমুম বলেছেন: ওয়েলকাম।

২| ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১০ দুপুর ১:৩৫

রেনেসা বলেছেন: ইতিপূর্বে আমরা আপনার ভাষাজ্ঞান সম্পর্কে অবগত হয়েছি।

০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১০ দুপুর ১:৪৮

সাইমুম বলেছেন: বলেন কি!! ভাষাজ্ঞান? নারে ভাই, ভাষাজ্ঞান থাকার মতো যোগ্যতা আমার হয়নি। শব্দ নিয়ে একটা বই লিখতে চাই। এ কারণে কয়েকটা বই নাড়াচাড়া করতে হয়। এই আর কি!!

ইদানিং আপনাকে ব্লগে কম দেখছি।

৩| ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১০ দুপুর ১:৫৪

শাহরিয়ার নাহিদ বলেছেন: ভাল লিখেছেন।
পরবর্তী লেখার অপেক্ষায় রইলাম।

০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১০ দুপুর ২:০৮

সাইমুম বলেছেন: অপেক্ষার প্রহর খুব লম্বা হবে না। ধন্যবাদ।

৪| ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১০ রাত ৮:১৮

প্রভাষক বলেছেন: ভাই... একটা বই পড়েছিলাম... শব্দের খেলা... দেখেছেন???...

ভালো লেগেছে... ধন্যবাদ...

০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১০ দুপুর ১২:২৫

সাইমুম বলেছেন: শব্দের খেলা বইটির নাম শুনেছি। তবে পড়িনি। ড. পার্বতীচরণ চট্টোপাধ্যায়ের 'শব্দের জগৎ' ব্ইটি সংগ্রহে রয়েছে।
'শব্দের খেলা' লেখক, প্রকাশনার নাম জানানো সম্ভব হলে জানাবেন দয়া করে। ধন্যবাদ।

৫| ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১০ দুপুর ২:০৮

ইসতিয়াক-চৌধুরী বলেছেন: জানা ছিলানা জানলাম........ধন্যবাদ...

০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১০ দুপুর ২:১৩

সাইমুম বলেছেন: ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.