![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমরা নানা সময় নানা ভাবে বিভিন্ন মৃত্যুতে তার জন্য দায়ী ব্যক্তিটির শাস্তি দাবী করে থাকি। কিন্তু বাংলাদেশে বছরের পর বছর ধরে জাকাতের কাপড় দেবার নাম করে দরিদ্র মানুষগুলোকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া হয় যার কোন বিচার যেমন চাওয়া হয়না, তেমনি কোন বিচারও হয়না। ময়মনসিংহ শহরের অমৃত বাবু রোড এলাকার বাসিন্দা নূরানী জর্দা ফ্যাক্টরির সত্ত্বাধিকারী শামীম তালুকদার হতদরিদ্রদের মাঝে জাকাতের কাপড় দেবার নামে কমপক্ষে ২৫ জন মানুষকে হত্যা করলেন। হ্যাঁ, আমার চোখে এটি হত্যা কাণ্ড ছাড়া আর কিছুই নয়। যেখানে ডান হাতের দান বাঁ হাতের জানার কথা নয়, সেখানে লোক দেখানোর জন্য বাজার থেকে সস্তায় সব থেকে খারাপ "জাকাতের কাপড়" নামক কাপড় কিনে সেগুলো বিতরণে এমন মানুষ হত্যা বন্ধ হোক। এভাবে পরে থাকা লাশ গুলোর দায়িত্ব কে নেবে?
বাংলাদেশের মানুষের আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে দিন দিন। এ দেশে ধনীর সংখ্যা বাড়ছে সেই ভাবে প্রতিনিয়ত। যার সাথে সাথে যাকাত দেবার হারও বেড়ে যাবে এটাই স্বাভাবিক। প্রকৃত পক্ষে যাকাত মানে কি? যাকাত মানে ঠ্যাকায় পরে কাওকে কিছু দেওয়ার নাম তো নয়। যাকাত হচ্ছে গরীবের হক। এই যাকাত দিতে গিয়ে আমরা বর্তমানে ময়দানে ময়দানে বিশাল আয়োজন করে লোক দেখানোর ব্যবস্থা করি। আর এই সব আয়োজনে যে কাপড় গুলো দেওয়া হয় তা যাকাতের কাপড় নামেই তৈরি করা নিম্ন মানের কাপড়। যার একটাই উদ্দেশ্য, কত কম দামে বেশী সংখ্যক কাপড় কেনা যায়। ঢাকা সহ আসে পাশের শহর গুলোতে রোজার মাসে নতুন নতুন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে যারা শুধু মাত্র যাকাতের কাপড় নামক কাপড় বিক্রি করে থাকে। এই কাপড়ের মান কতটা নিম্ন মানের হতে পারে সেটা ঐ সকল প্রতিষ্ঠানের কাপড়ের নামেই ফুটে ওঠে। বিষয়টা কতটা হীন তা যারা এমন কাপড় বিক্রি করছেন তারা সহ যারা যাকাত দেবার নামে বাজার থেকে সব থেকে সস্তায় কাপড় কিনে থাকেন তাদের কে বুঝিয়ে দেবে? আর সেই সস্তায় একটি কাপড়ের জন্য যখন একটি প্রান ঝড়ে যায় তখন সস্থা ঐ কাপড়ের মূল্য অনেক অনেক বেশী দাড়িয়ে যায় মানবতার কাছে।
যাকাতের কথা আসে যাদের যাকাত দেবার সামর্থ্য রয়েছে তাদের জন্য। কিন্তু আমরা সাধারণ মানুষ গুলো রোজার মাসে কি করি তা যদি একটু দেখার চেষ্টা করি। কথা ছিল এ মাসেই আমাদের নৈতিকতা হবে বলিষ্ঠ। বাস্তবে আমাদের নৈতিকতার কতটা উন্নতি হয় এই রোজার মাসে? বাস্তব হল, রোজার মাসে আমাদের দেশের মানুষ সব থেকে বেশী মিথ্যা কথা বলে থাকে, সব থেকে বেশী মুনাফায় ব্যবসা করে, কথিত আছে রোজার মাসে বাংলাদেশের কাপড় সহ ঈদের দরকারি পণ্যর ব্যবসায় করে বাকি ১১ মাসের মুনাফাও এক মাসে করে ফেলে আমাদের দেশের ব্যবসায়ীরা। এ মাসেই আমরা খাবারের পেছনে স্বাভাবিকের থেকে অনেক অনেক বেশী খরচ করে থাকি, বাহারি সব মুখরোচক ইফতারের পসরা সাজিয়ে বসে ব্যবসায়ীরা, আর আমরা স্বাভাবিক সময়ের থেকে বেশী মূল্যে ঐ সব ইফতার কিনে থাকি। শুধু ইফতার কেনার কথা কেন, প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায় কে কত বেশী সংখ্যক, কত বেশী মূল্যর ঈদের পোশাক কিনতে পারি। এ সময়েই আমরা বাড়তি খরচ বহনে বেশী বেশী ঘুষ গ্রহন করি, আর এ সব কিছু একত্রে মিলে বাকি ১১ মাসের থেকে বেশী ধনী গরীবের বৈষম্য সৃষ্টি করে ফেলি আমরা। যে রোজা আল্লাহর এইবাদত, যে রোজার মাধ্যমে আমরা নিজেদের সঠিক পথে ফিরিয়ে আনবো, যে রোজার মাধ্যমে গরীবের ক্ষুধার জ্বালা বুঝবো, যে যাকাতের মাধ্যমে ধনী গরীবের বৈষম্য কমিয়ে আনবো সেই রোজায় আসলে আমরা দিন দিন উল্টা পথে হেঁটে চলছি। আল্লাহ আমাদের সঠিক ভাবে রোজা বুঝে চলার তৌফিক দান করুন।
ছবিটি বাংলানিউজ২৪ ডট কম থেকে সংগ্রহকৃত।
©somewhere in net ltd.