![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
রাশি এবং রাশিরত্ন পাথর, এ দুটি বিষয় নিয়ে আমাদের মাঝে বিভিন্ন জন বিভিন্ন রকম চিন্তা করে থাকেন। জ্যোতিষরা বলার চেষ্টা করে পাথরে ভাগ্য বদলায়, কিছু কিছু মানুষ বলে ফেলেন পাথর ব্যবহার গুনাহ অথবা শিরিক। আসলে বিষয়টা কি? রাশিরত্ন পাথর মহান আল্লাহ সৃষ্টি এক নেয়ামত। যার কথা তিনি সরাসরি পবিত্র কোরআন শরীফের ৫৫ নং সূরা "আর-রহমান" এ উল্লেখ করেছেন। তাই আল্লাহর নেয়ামত মানুষের উপকার ছাড়া ক্ষতি করতে পারে এমন ভাবতে পারিনা। তবে এ নেয়ামত মানুষের ভাগ্য বদলে দেবে এমন কথা কোথাও উল্লেখ নেই। মানুষ অসুস্থ হলে ওষুধ খাবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সেই ওষুধ খাবার সময় অবশ্যই আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতে হবে। অন্যথায় যদি আমরা মনে করি নাপা খেলেই জ্বর ভাল হয়ে যায় তাহলেই আমরা গুনাহ করে ফেলছি, কারন নাপা ওষুধের নিজের কোন ক্ষমতা নেই। ঠিক সেই ভাবে যদি কেও মনে করে যে পাথর ব্যবহার করলে এটা হবে ঐটা হবে তাহলেই গুনাহ হয়ে যাবে। কারন একটাই, পাথরেরও কোন ক্ষমতা নেই আল্লাহ ছাড়া। মানুষ অসুস্থ হলে যেমন আল্লাহর উপর আস্থা রেখে ওষুধ খেতে পারেন ঠিক সেই ভাবে আল্লাহর উপর আস্থা রেখে তার নেয়ামত রাশিরত্ন পাথর ব্যবহার করা জেতেই পারে। এখানে কোন গুনাহর কিছু নেই। আমরা জ্যোতিষীর ক্ষুদ্র স্বার্থে পাথরকে ভুল ভাবে গ্রহন করে থাকি। নানা রকম প্রলোভনে আমরা মনেই করি পাথর আমাদের সরাসরি বিপদ থেকে উদ্ধার করে দেবে। যার ভাবা বোকামি ও গুনাহ।
ইসলামের দৃষ্টিতে রত্ন পাথরের নিরাময় ও আধ্যাত্মিকতা মূল্য।
লিখেছেনঃ কাজী ডঃ শাইখ আব্বাস বোরহানি
Phd (USA), NDI, Shahadat al A’alamiyya (Najaf, Iraq), M.A, LLM (Shariah)
Mushir: Fed.Sariat Court of Pakisthan
Member: Ulama Council of Pakistan
অনুবাদঃ Rashi Ratno (রাশি রত্ন)
Published in Daily News, Pakistan, ‘Mag Weekly’ Pakistan, Yemen Times, Yemen & in ‘Badre Muneer, India on March 2010
গবেষণা মূলক এই কাজের দ্বারা কাওকে জ্যোতিষ শাস্ত্র, সংখ্যা তত্ত্ব, রত্ন পাথর বিশারধ অথবা এই সম্পর্কিত কোন বিজ্ঞানে উৎসাহিত করা হচ্ছেনা। এর উদ্দেশ্য শুধু মাত্রই সৃষ্টির আশ্চর্য ক্ষমতা এবং সেই সৃষ্টির স্রষ্টার প্রতি বিশ্বাস আনয়ন করা , জিনি তার বিভিন্ন সৃষ্টির আশ্চর্য ক্ষমতা দ্বারা মানুষের জীবনকে প্রভাবিত করেছেন। শুধু মাত্র মানুষের উপকারে জন্য মহান আল্লাহ তার বিভিন্ন সৃষ্টির মধ্যে বিভিন্ন ধরনের ক্ষমতা দিয়েছেন। তিনি মানব কল্যাণে বিভিন্ন ধরনের খনিজ পদার্থ সৃষ্টি করেছেন তার মধ্যে রত্নপাথর, গ্যাস, পেট্রলিয়াম, ইত্যাদি। এই সকল কিছুই নানা ভাবে মানুষের উপকারে এসে থাকে। আল্লাহ তার পছন্দের মানুষদেরই এলেম দান করেন। রত্ন পাথর আল্লাহ্রই নিয়ামত। যা কিনা আল্লাহতালা পবিত্র কোরআন শরিফের সূরা আর-রহমান এর ২২ নং আয়াতে উল্লখে করেছেন “উভয় দরিয়া হইতে উৎপন্ন হয় মিক্তা ও প্রবাল” এবং ২৩ নং আয়াতে মানুষ ও জীন জাতিকে জিজ্ঞেস করেছেন “সুতরাং তোমরা উভয়ে তোমাদের প্রতিপালকের কোন অনুগ্রহ অস্বীকার করবে?”
সূরা আল জাজিয়া এর ১৩ নং আয়াতে বর্ণীত আছে, “আর তিনি তোমাদের কল্যাণে নিয়োজিত করিয়াছেন আকাশমণ্ডলী পৃথিবীর সমস্ত কিছু নিজ অনুগ্রহে, চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য ইহাতে তো রহিয়াছে নিদর্শন” এই আয়াত আমাদের সিক্ষা দেয় যে সৃষ্টির সকল জিনিসই মানুষের ব্যবহারের জন্য। সকল কিছুই নির্ভর করে মানুষের প্রজ্ঞার উপর যারা কিনা আল্লাহর আদেশ, নিষেধ এবং নিয়ম কানুন মেনে চলে। আমিরুল মুমেনিন আলি ১৫ প্রকারের রত্নপাথর সম্পর্কে আলোচনা করেছিলেন। ফাতেমি ইমাম ৯ম, আল শাক্স আল ফাজিল, সাহেব আল রাসাইল, ইমাম আহম্মদ আল মাসতুর “Risalah Takwin al M’adin” বইতে প্রায় ৯০০ প্রকারের খনিজের কথা আলোচনা করেছেন। তার মধ্যে কিছু কিছু রত্নপাথর পাওয়া যায় সমদ্রের নিচে, আবার কিছু পাওয়া যায় পাহাড়ে আর কিছু পাওয়া যায় মাটিতে।
মানুষের জীবনে রত্ন পাথরের ভূমিকা বিশাল এবং আংটি পরা পৃথিবীর একটি পুরন ঐতিহ্য। আমরা একজন মুসলিম হিসেবে অসংখ্য বার “হাজরে আসওয়াদ বা কালো পাথর” এর কথা শুনেছি। যখন কোন মুসলিম হজ্ব বা উমরাহ্ পালনের জন্য নিয়ত করে, সে হাজরে আসওয়াদ এর কাছে থেকে তার হজ্বের আনুষ্ঠানিকতা শুরু করে যেখানে “হাজরে আসওয়াদ বা কালো” স্থির হয়ে আছে। আলি ইবনে আবি তালিব বলেছেন, “কেয়ামতের দিন মহান আল্লাহর সামনে এই কালো পাথর সাক্ষি দেবে কে কে তাঁকে সম্মানের ও নিষ্ঠার সাথে চুম্বন করেছে”।
কেও একজন বলেছিলেন যে রত্নপাথর উপকার করেনা, এমনকি কোন অপকারও করেনা। আলি (রাঃ) একথা শোনার সাথে সাথে তা বাতিল করে দিয়ে বলেন যে, যারা বিশ্বাস করবে তাদের জন্য যেমন অনেক উপকারী আর যারা অবিশ্বাসীদের জন্য তেমনি অপকারী। (সুত্রঃIdib)
মোসলমানেরা অত্যন্ত সম্মানের সাথে “আল হাজর আল আসওয়াদ (কালো পাথর)” চুম্বন করে থাকে। এর এতই শক্তি যে আল্লাহর ইচ্ছায় এটা মানুষের সব পাপ ধুয়ে পরিষ্কার করে দেয়। মানুষ নানা ধরনের রত্ন পাথরের সৌন্দর্য, দ্যুতি এবং মূল্য জন্য তা পাওয়ার জন্য অস্থির হয়ে থাকে। প্রশ্ন হচ্ছে যে কোন রত্ন পাথর কোন মানুষের জন্য সঠিক? এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার জন্য আমাদের যাত্রা করতে হবে শিক্ষার পথে।
Dr.Robert Frost, a Doctor of Medicine, Basle, Switzerland, সাম্প্রতিক সময়ে রত্নপাথরের উপর বৈজ্ঞানিক ভাবে গবেষণা করেছেন এবং দেখার চেষ্টা করেছেন রত্ন পাথরে কি কি নিরাময় ক্ষমতা রয়েছে। তিনি তার ক্লিনিকাল গবেষণায় দেখেছেন যে সঠিক রত্নপাথর ব্যবহারে ব্যাথা কমে যায়, এলারজি প্রকপ কমে যায়, শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গের মধ্যে বন্ধন দৃঢ় হয় এবং পেশীর শক্তি বৃদ্ধি পায়।
পৃথিবীতে নানা ধরণের ধাতু পাওয়া যায় যেমন স্বর্ণ, সাদা স্বর্ণ, প্লাটিনাম, ষ্টীল, রুপা সহ অন্যান্য। কিন্তু স্পষ্ট হাদিস দ্বারা পুরুষের জন্য শুধু মাত্রই রুপা ব্যবহারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যা কিনা “Da’aim al Islam”, Syedna Qazi an Nauman, vol II, Qahera” হাদিস গ্রন্থ সহ অন্যান্য হাদিস শরীফে উল্লেখ রয়েছে। বর্তমান বিজ্ঞান দ্বারাও প্রমাণিত হয়েছে যে স্বর্ণ স্ত্রীলোকের শরীর থেকে বিভিন্ন রোগ জীবাণু গ্রহন করে এবং ঋতু চক্রের সময় রক্ত স্বল্পতা দূর করতে সাহায্য করে যাহা কিনা রাসুলুল্লাহ (সাঃ) ১৪৩০ বছর আগেই বলে গেছেন। রত্ন পাথরের মধ্যে মানুষের শারীরিক এবং মানুষিক রোগ নিরাময়ের ক্ষমতা। বেশীরভাগ মানুষ রত্ন পাথর ব্যবহার করা পছন্দ করে, কিন্তু তারা এর ফলাফল সম্পর্কে তেমন অবগত নয়। একই রত্ন পাথর একজনের জন্য উপকারী হলে অন্য জনের জন্য ক্ষতির কারন হতে পারে। মহান আল্লাহ তার জ্ঞান বিজ্ঞানের সকল কিছুই ওহীর মাধ্যমে তার প্রাণের বন্ধু রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর উপর নাজিল করেছেন। আর তা পরবর্তী কালে “Ahl al Bait” দ্বারা নানা ভাবে ব্যাখ্যা হয়েছে।
সহি বুখারি মতে রাসুলুল্লাহ (সাঃ)একটি সীলমোহর স্বরূপ আংটি ব্যবহার করতেন যাতে ইথিউপিয়ার লাল আকিক পাথর বসানো ছিল। তিনি তার ডান হাতের কনিষ্ঠ আঙ্গুলে এই আংটি ব্যবহার করতেন এবং তা তাঁর হাতের তালুর দিকে ঘুরানো থাকতো। একটি সঠিক রত্ন পাথর মানুষের জীবনে পরিবর্তন বয়ে আনতে পারে এবং সঠিক পথের দিকে অবস্থার উন্নতি সাধন করে। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বা হাতে আংটি ব্যবহারের নিষেধ করেছেন, এবং তিনি (সাঃ) পরিষ্কার ভাবে নিষেধ করেছেন মদ্ধমা(মাঝের) আঙ্গুলেও কোন আংটি না পরার জন্য। “Tradition transmitted from Ali Ibn Abi Talib” এ উল্লেখিত, পীর দরবেশদের পরামর্শ অনুযায়ী কখনই অন্যর ব্যবহার করা আংটিতে পাথর লাগিয়ে ব্যবহার করা উচিৎ নয়।
“Tradition transmitted from Ali Ibn Abi Talib” থেকে পাওয়া যায় রাসুলুল্লাহ (সাঃ) নকল বা ইমিটেসন এর গহনা পুরুষ অথবা মহিলা উভয়ের পরিধান করা সরাসরি নিষেধ করে দিয়েছেন। যখন (সাঃ) একজন মুসলিমের হাতে স্টিলের আংটি দেখতে পান তখনি তিনি তাকে এই বলে সতর্ক করেন যে, এগুলো নরকে থাকা মানুষের অলংকার। তখন সেই ব্যক্তি তার হাতের আংটি খুলে একটি স্বর্ণের আংটি পরিধান করেন। অতপর সেই স্বর্ণের আংটি দেখার সাথে সাথে (সাঃ) বলেন যে তার হাতের ঐ আঙ্গুল ততক্ষণ পর্যন্ত নরকের মধ্যে থাকবে যতক্ষণ সেই আংটি তাঁর হাতে থাকবে। “Da’aim al Islam” এর বিজ্ঞ লেখক “সাইয়েদেনা কাজী আন নুমান” উল্লখে করেছেন যে, সেই ঘটনার পরে সেই মুসলিম নবী করিম (সাঃ) কে জিজ্ঞাসা করিলেন আমার কি কোন আংটি পরাই উচিৎ নয়? নবী করিম (সাঃ) নির্দেশ দিলেন “তুমি শুধু মাত্রই রুপা দিয়ে আংটি ব্যবহার করতে পারবে এবং তাঁর নির্দিষ্ট ওজনের অতিরিক্ত নয়”। (সুত্রঃ Da’aim al Islam”, Syedna Qazi an Nauman, vol. II, Qahera; also quoted by Tirmizi, Abu Dawood & Nisai)
আবি আব্দুল্লাহ ইমাম জাফার আসাদ্দিক বলেছেন, “রাসুলুল্লাহ (সাঃ) হাতের প্রথম আঙ্গুলে আংটি পরিধান করতেন এবং মধ্যের আঙ্গুলে আংটি পরিধান করতে নিষেধ করেছেন। আঙ্গুলের শেষ সীমানায় আংটি পরা উচিৎ যা ফলে আংটি হাতের তালুর কাছা কাছি থাকে”। এর মানে হচ্ছে যদি রত্নপাথর সহ কোন আংটি কনিষ্ঠ আঙ্গুলে পরা হয় তাহলে এটা অবস্থার পরিবর্তনে সাহায্য করে। কনিষ্ঠ আঙ্গুল সরাসরি হৃদয়ের সাথে সংযোগ রাখে, এবং আংটিতে রত্ন পাথর এমন ভাবে বসানো উচিৎ যাতে করে রত্ন পাথরের নিচের অংশ সরাসরি শরীরে সাথে লেগে থাকে। যার ফলে সূর্য সহ বিভিন্ন গ্রহের রশ্মি ঐ রত্নপাথরের উপর পরলে সেটার প্রভাব এবং শক্তি নিয়ে শরীরে প্রবেশ করাতে সাহায্য করে।
রত্নপাথরের প্রভাব এবং উপকারের জন্য নুন্নতম তিন ক্যারেট ওজনের রত্ন পাথর পরার জন্য বলা হয়েছে। রত্নপাথরের মূল্য শুধু মাত্রই সেই ব্যক্তিরা বুঝবে যারা এর উপকার এবং ক্ষতির দিক সম্পর্কে অবগত। রত্নপাথর বিচার করা, ব্যবহার করা এবং সংরক্ষণ করা খুব সহজ নয়। সবসময় খালি চোখে দেখেই আসল রত্ন পাথর চেনা যায়না। সে কারনে মাঝে মাঝে পরীক্ষা যন্ত্রের সাহায্য নিয়ে পাথরের কোন প্রকারের ক্ষতি না করে পাথর সম্পর্কে সঠিক তথ্য বের করা হয়।
Syedi Hasan Fir as Shahid বলেন; “রত্ন পাথরের দ্বারা আশ্চর্য ক্ষমতা অর্জন করা সম্ভর যদি সেটা সঠিক ভাবে তৈরি করা হয়। প্রতিটা রত্নপাথর মালায়েক এর নির্দেশে কাজ করে থাকে, যে কিনা আল্লাহর ইচ্ছায় সকল প্রকার রত্ন পাথরের মধ্যে ক্ষমতা দান করেন। (সুত্রঃ Khawas ul Jawahir”, a manuscript written under instruction of the Ismaili Musta’alavi Wali al Hind, Syedi Hasan Fir, d.1392 [A.D] Denmal, Gujrat, India)
1. রুবিঃ
মহান আল্লাহ মানব জীবনের জন্য পৃথিবীতে হাজারো নিয়ামত অর্পিত করেছেন। রাশিরত্ন পাথর তাদের মধ্যে একটি নিয়ামত। এই নিয়ামতের মধ্যে কিছু কিছু রত্ন পাথর অনেক মূল্যবান আবার কিছু কিছু একেবারেই সাধারন। মহান আল্লাহতালা “রুবি পাথরের” গুনের কারনে পবিত্র কোরআন শরিফে সূরা “আর-রহমান” এর ৫৮ ও ৫৯ নং আয়াতে রুবি কে নিয়ামত হিসেবে উল্লেখ করেছেন বলেছেন —-“ইহা যেন এক একটি প্রবাল ও রুবি, সুতরাং তোমরা (মানুষ ও জীণ) তোমাদের মালিকের (আল্লাহ্র) কোন কোন নিয়ামত অস্বীকার করবে”?
মুহাম্মাদ বাকির মাজলিসি (১৬১৬-১৬৯৮) এর হাদিস থেকে পাওয়া যায়, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ “সকলের জন্য এই পাথর (রুবি) সব থেকে উপকারী”।
আবি আব্দুল্লাহ ইমাম জাফর আসাদ্দিক হতে বর্ণীত “এটা (রুবি) দারিদ্রতা এবং দুশ্চিন্তা দূর করে”। আল শাখস আল ফাজিল সাহেব আল রাসাইল ব্যাখ্যা করেছেনঃ “রুবি হচ্ছে সকল রত্ন পাথরের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। এবং বিশ্বাস করা হয় রত্ন পাথরের মধ্যে রুবি সর্বপ্রথম আল্লাহর তাওহীদ বিশ্বাস করে। এমন কি কথিত আছে যে রুবি ব্যবহারকারীর শারীরিক অবস্থার উপর নির্ভর করে রুবি পাথরের রঙ পরিবর্তিত হয়।
রুবি পাথরের রঙের মধ্যে কবুতবের রক্তের মত রঙের রুবি সাহসিকতা ও বীরত্বের প্রতিক। আনুমানিক দুইশত বছর পূর্বে ভারত উপমহাদেশে ইসলামিক বিজ্ঞানের মহান সাধক “সাইয়েদি ইব্রাহিম সাইফি” রুবি পাথরের সৃষ্টি সম্পর্কে বলেছেন—-“আদম (আঃ) জান্নাত থেকে পৃথিবীর যে স্থানে অবতরন করেন সেটা ছিল শ্রিলাঙ্কা। তিনি শ্রিলাঙ্কার একটি পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থান করেন।তার পবিত্র পায়ের স্পর্শে সৃষ্টি হয় রুবি পাথর”। “মাকতাল আবি আব্দুল্লাহ ইমাম আল হুসাইন” থেকে বর্ণীত—-“১০ মুহাররাম ইমাম হুসাইন (রাঃ) এর শাহাদাতের দিন তার হাতে রুবি পাথরের আংটি পরা ছিল”।
“Tradition of Ahl al Bait” এর থেকে বর্ণীত যে, রুবি পাথর ব্যবহারে দুশ্চিন্তা কমে যায় এবং দুঃসময় কমতে থাকে।
সাইয়েদি ইব্রাহিম সাইফি তার “মারিফাত আল জাওয়াহির” বইতে রুবি পাথরের বিভিন্ন উপকারিতার কথা উল্লখ করেছেন—-
• রক্ত স্বল্পতা দূর করে, রক্ত বাহিত রোগ নিরাময় করে এবং রক্ত ক্ষরণ রোধ করে।
• হৃদরোগে উপকার করে।
• “Ahl al Bait” বই অনুসারে যদি আমরা রুবি পাথরের উপকারে কথা হিসাব করি তাহলে সকল রত্ন পাথর থেকে এর উপকার বেশি হবে।
• স্বামী-স্ত্রী এর মধ্যে একান্ত আনন্দের সময় দীর্ঘ করে।
• পুরনো জ্বর ভালো করে এবং দুঃস্বপ্ন দূর করে।
• আশেপাশের মানুষের মধ্যে সম্মান এবং প্রতিপত্তি বৃদ্ধি করে এবং সমস্যা সমাধানে সাহায্য করে।
• “সাহেব আল কারাতিস আল ইয়ামেনিয়া” এর মতে বিরোধ ও যুদ্ধের সময় নিরাপত্তার জন্য যোদ্ধারা রুবি পাথর ব্যবহার করত। এমনকি আরব যোদ্ধারাও রুবি এমন ভাবে রুবি পাথর ব্যবহার করত যাতে তা শরীর স্পর্শ করে শক্তি ও সম্মান বৃদ্ধি করে।
• রুবি পাথর কামসক্তি উদ্দিপ্ত ও দীর্ঘাইত করে।
• এটা ব্যবহারে আকর্ষণ করার ক্ষমতা বারে এবং প্রেম ও বন্ধুত্ব বজায় রাখে।
• রুবি ব্যবহারে ব্যবহারকারী বিপদের জন্য সতর্ক থাকে।
• সাস্থ ও সুখ বজায় রাখে।
• শিশুদের গলায় রুবি পাথর পরিয়ে দিলে রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যায় এবং মেয়েদের কোমরে রুবি ব্যবহার করলে দুর্ঘটনা জনিত গর্ভপাতে বাধা দেয়।
• উল্লেখিত সকল প্রকার উপকার নির্ভর করে মহান আল্লাহর ইচ্ছার উপর। তাই আল্লাহর নিয়ামত ভেবে শুধু মাত্র আল্লাহর উপর ভরসা করে রত্নপাথর ব্যবহার করা উপকারী। এখানে কোথাও উল্লেখ নেই যে রত্নপাথর ভাগ্য বদলে দেয়।
2. নীলাঃ
সব থেকে সুন্দর নীলা হচ্ছে গাড় নীল রঙের এবং নীলা পাথর শনিগ্রহ দ্বারা প্রভাবিত হয়ে থাকে। অনেক কাল আগে উৎকৃষ্ট নীল রঙের নীলা পাথর পাওয়া যেত কাশ্মীর, শ্রিলাঙ্কা এবং বার্মাতে। নীলা পাথর ব্যবহারে ব্যক্তির জ্ঞান গাম্ভীর্য ধারাবাহিক ভাবে বৃদ্ধি পেতে দেখা যায়। আসল নীলা পাথর হার্ট এবং পাকিস্থলির সমস্যায় উপকারী। শনিগ্রহের ভালো প্রভাব প্রাচুর্যতা আনয়ন করে কিন্তু পাশাপাশি অতিরিক্ত ভোগপ্রবণতা কমাতে সাহায্য করে। “Old Testament” এ নীলা সম্পর্কে বলা হয়েছে— “রাজ সিংহাসন নীলা পাথরের মতই”।
নীলা পাথরের কিছু উপকারিতা নিম্নরূপঃ
• জ্বরে আক্রান্ত কোন ব্যক্তির বুকের উপর যদি নীলা পাথর রাখা যায় তাহলে মহান আল্লাহর ইচ্ছায় জ্বরের তিব্রতা কমে আসে।
• যদি নীলা সহ্য হয়, তাহলে যে ব্যক্তি নীলা ধারন করবে তার দারিদ্রতা খুব অল্প সময়ের মধ্যে আল্লাহর ইচ্ছায় বদলে সম্ভাবনায় রুপ নিবে।
• আসল নীলা পাথর শয়তানের খারপ ইচ্ছা থেকে মুক্ত রাখতে সাহায্য করে।
• নীলা পাথর ধারনে অবৈধ যৌন সম্পর্কের ইচ্ছা নষ্ট হয়ে যায়।
3. পান্নাঃ
ইংরেজি “Emerald” এর বাংলা হল পান্না। পান্না পাথরের অপর নাম হচ্ছে “জমরুদ”। বর্তমানে পৃথিবীর সব থেকে ভাল মানের পান্না পাথর পাওয়া যায় কলোম্বিয়া, ব্রাজিল, জাম্বিয়া, তাঞ্জানিয়া, মাদাগাস্কার, দক্ষিন আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, রাশিয়া এবং এমেরিকার নর্থ ক্যারোলিনা রাজ্যে। “Tradition of Ahl al Bait” পান্না পাথর সম্পর্কে উল্লেখ করেছে—“পান্না পাথর ব্যবহারে দারিদ্রতা দূর হয় এবং আর্থিক দিকে উন্নতি সাধিত হয় এবং যে পান্না পাথরের আংটি ব্যবহার করবে সে আর্থিক দুর্দশা থেকে মুক্ত থাকবে যদি মহান আলাহতালা ইচ্ছা করেন”।
• আমির উল মোমেনিন, আলি ইবনে আবি তালিব থেকে বর্ণীত যে, আল্লাহর ইচ্ছায় পান্না পাথর সকল প্রকার বাধা-বিপত্তি দূর করে থাকে। (সুত্রঃ “Huliyat al Muttaqin”, Muhammad Baqir Majlisi, Iran)
• আলি ইবনে আবি তালিব থেকে বর্ণীত যে পান্না পাথর রাতের দুঃস্বপ্ন দেখা থেকে নিরাপদ রাখে। (সুত্রঃ “Tuhfah-e-Aalam Shahi”, by: Hakim Muhammad Sharif Khan, during the era of shah Alam II, Delhi, India)
• পান্না পাথর ধারনে সাপ, বিচ্ছু সহ অন্য সকল বিষধর প্রানি দূরে থাকে। (সুত্রঃ Marifat al Jawahir, Syedi Ibrahim Saify)
• পান্না পাথর ব্যবহারকারী যদি কোন প্রকারের বিষাক্ত খাদ্য গ্রহন করে ফেলে তাহলে অবিলম্বে তার মুখে ঘাম দেখা দিবে।
• পান্না পাথর ব্যবহারে শত্রুদের পরাজিত করতে সাহায্য করে।
• ইব্রাহিম (আঃ) কে তার শত্রুরা আগুনে নিক্ষেপ করার আগ মুহূর্তে জিব্রাইল (আ)তাকে একটি পান্না পাথরের আংটি উপহার দেন, যার মধ্যে বিভিন্ন কালেমা লেখা ছিল।
• পান্না পাথর ধারনে দুশ্চিন্তা দূর হয় এবং এটি কুষ্ঠ রোগ নিরাময়ে সাহায্য করে।
• “Marifat al Jawahir” হতে বর্ণীত যে, পান্না পাথরের সবুজের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলে চোখের দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধি পায়।
• পান্না পাথর ধারনে মাথা ঠাণ্ডা থাকে যাতে করে দন্দ-বিরোধ কমে আসে।
• যদি স্বামী-স্ত্রী একে অপরের ব্যবহার করা পান্না পাথরের আংটি অদল-বদল করে ব্যবহার করে তাহলে তাদের পারস্পরিক আকর্ষণ বৃদ্ধি পায়।
• পান্না পাথর মৃগী রোগে উপকারী, এমনকি সন্তান প্রসবের সময় পান্না পাথর ধারন সন্তান প্রসব সহজ করে।
4. মুক্তা
পবিত্র আল-কোরআনের ৫৫ সূরা “আর-রাহমান” এর ২১ ও ২২ নং আয়াতে আল্লাহতালা প্রবাল পাথরের কথা উল্লেখ করেছেন—“যার মাঝ থেকে এসেছে মুক্তা ও প্রবাল” “সুতরাং তোমরা আমার (আল্লাহ্র) কোন কোন নিয়ামতকে অস্বীকার করবে?
মুক্তা পবিত্রতা এবং মাতৃত্বর সাথে যুক্ত। “Marifat al Jawahir” এর বিজ্ঞ লেখক “Syedi Ibrahim Saify, manuscript” নিন্মের বিষয় গুলো উল্লেখ করেছেন—-
• মুক্তা পাথর ধারনে আকর্ষণী করে তলে এবং আধ্যাত্মিকতার উন্নয়ন ঘটায়।
• দায়িত্ব ও কর্তব পালনে উৎসাহিত করে তোলে।
• একজনের ব্যবহার করা মুক্তা অন্য কারো ব্যবহার করা উচিৎ নয়। কারন পূর্বে ব্যবহার কৃত ব্যক্তির শরীরের ক্ষতিকর বিষয় গুলো নতুন ব্যক্তির শরীরে প্রবেশ করাতে উদ্বুদ্ধ করে থাকে।
• মুক্তা পাথর গর্ভপাত থেকে রক্ষা করে।
• যৌন রোগে মুক্তা উপকারী।
5. প্রবালঃ
আল-কোরআনের ৫৫ নং সূরা “আর-রাহমান” এর ২১ ও ২২ নং আয়াতে আল্লাহতালা প্রবাল পাথরের কথা উল্লেখ করেছেন—“যার মাঝ থেকে এসেছে মুক্তা ও প্রবাল” “সুতরাং তোমরা আমার (আল্লাহ্র) কোন কোন নিয়ামতকে অস্বীকার করবে?”
পবিত্র কোরআন শরিফে প্রবাল পাথরের বর্ণনা থাকার কারনে ইসলামের সেই শুরু থেকে মুসলমানদের নিকট প্রবাল পাথর খুব গুরুত্ব বহন করে আসছে। “Mrifat Al Jawahir” বইয়ের বিজ্ঞ লেখকের মতে প্রবাল পাথরের অনেক উপকার নিহিত রয়েছে। তার মধ্যে থেকে কিছু নিম্ন রুপ—
• প্রবাল যে কোন প্রকারের খারাপ প্রভাব থেকে রক্ষা করে, আজও আরবের পেনিন্সুলা নামক অঞ্চলের মায়েরা তাদের সন্তানের গলায় প্রবাল পাথর বেধে দেয় খারাপের থেকে রক্ষা পাবার জন্য।
• প্রবাল ব্যবহারে সম্প্রীতি, বন্ধুত্ব, সৌন্দর্য ও ঐক্য বৃদ্ধি পায়।
• ইমাম হাসান (রাঃ) সবসময় প্রবাল পাথরের তজবি পাঠ করতেন।
• প্রবাল পাথরের আংটি হিট স্ট্রোক থেকে বেঁচে থাকতে সাহায্য করে।
• প্রবাল দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধি করে।
• আল্লাহ সহায় হলে প্রবাল ব্যবহারে সফলা অর্জন করা সম্ভব হয়।
6. আকিক পাথরঃ
“Al Majalis al Hatimiyyah”3rd এর বিজ্ঞ লেখক “আল দাই আল ফাতেমি” ও “সাইয়েদনা হাটিম মহিউদ্দিন” (হুতাইব, ইয়ামেন) তাদের বইতে উল্লেখ করেছেন —“আমরা কি কেও জানি যে হযরত আদম (আঃ) আকিক পাথরের আংটি ব্যবহার করতেন এবং তার রঙ ছিল লাল?”
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর অনেক সাহাবায়ে কেরাম পাথর ব্যবহার করতেন।বিভিন্ন উদাহরণ থেকে জানা যায়, জিব্রাইল (আঃ) আমাদের নবী করিম (সাঃ) কে আকিক পাথর উপহার দিয়েছেন। একদিন জিব্রাইল (আঃ) রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর সাথে দেখা করতে এসে তাঁকে লাল রঙের একটি আকিক পাথর উপহার দিয়ে সেটা ব্যবহার করতে বলেন এবং তাঁর উম্মতদের এর উপকার সম্পর্কে বলতে বলেন। সেখান থেকেই আকিক পাথরের আংটি ব্যবহার করা সুন্নত হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।(সুত্রঃ Tradition of Ahl al Bait)।হাদিসে উল্লেখ রয়েছে—আকিক ব্যবহার কর এবং দারিদ্রতা দূর কর। (সুত্রঃ হাদিস)
“Tradition of Ahl Al Bait” বইয়ের উল্লেখ অনুসারে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) লাল রঙের আকিক পাথর ধারন করতেন, সাইয়েদা ফাতিমা ধারন করতেন হলুদ আকিক এবং আমির-উল-মোমেনিন ধারন করতেন সাদা আকিক।“Al Majalis al Saifiyah” তে Abi Jafar Imam Mohammad al Baqir উল্লেখ করেছেন—“ যদি কোন ব্যক্তি আকিক পাথরের আংটি হাতের তালুর দিকে ঘুড়িয়ে পরিধান করে তার দিকে তাকিয়ে ৯৭ নং সূরা আল কদর পাঠ করবে, সেই সময় থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মহান আল্লাহতালা তাকে সকল প্রকার বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা করবেন এবং অলি-আল্লাহরা তাকে পথ দেখাবেন”।
“Khawas ul Jawahir” a manuscript, written under instruction of the Ismaili Musta’alavi Wali Al Hind, Syedi Hasan Fir, d 1392(A.D) Denmal, Gujrat, India তে উল্লেখ রয়েছে যে, বিখ্যাত গ্রিক দার্শনিক “আফলাতুন” বলেছেন, সাদা আকিক স্মরণ শক্তি বৃদ্ধি করে, হলুদ দিপদ-আপদ দূর করতে সাহায্য করে এবং লাল আকিক সম্মান বৃদ্ধি করে। আম্বিয়া বনি ইসরাইলরা আনন্দের সহিত আকিক পাথর ব্যবহার করতেন। ইহুদী, খ্রিষ্টান, এবং মোসলমান সকলেই আকিক পাথরের আধ্যাত্মিক, অতিপ্রাকৃতিক এবং নিরাময় ক্ষমতা বিশ্বাস করেন।
“Marifat al Jawahir” এর বিজ্ঞ লেখক “Syedi Ibrahim Saify” আকিক পাথর বিভিন্ন উপকারের কথা উল্লখে করেছেন—-
• আকিক পাথর সবসময় ব্যবহারের রাগ প্রশমিত হয় এবং মাথা ঠাণ্ডা থাকে।
• রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন আকিক পাথর ব্যবহার করা বরকতময়। (হাদিস শরিফ)।
• খারাপ পরিবেশে এবং প্রতিযোগিতায় জয় পেতে সাহায্য করে।
• কঠিন পরিস্থিতিতে রক্ষা করে এবং দুঃখ কমাতে সাহায্য করে।
• আকিক পাথর ধারনে প্রসব বেদনা দ্রুত নিরাময় হয়।
• যখন কেও আকিক পাথর ধারন করে তখন তার শত্রুরা ভিত থাকে।
• আকিক পাথর মানুষের ইচ্ছা পূরণে শক্তি যোগায় এবং দারিদ্রিতা দূর কর।
• আকিক পাথর ধারন হার্টের জন্য উপকারী, বুক ব্যাথা কমাতে সাহায্য করে এবং হজম শক্তি বৃদ্ধি করে।
• পোকামাকড়ের বিষক্রিয়া কমাতে আকিক পাথর সাহায্য করে।
• আকিক পাথর মনে প্রসান্তি আনে এবং মানসিকতা উন্নত করে।
• যে কোন যাত্রায় আকিক পাথর ধারন সৌভাগ্য সূচিত হয়।
• আকিক পাথর ধারনে মনোযোগ বৃদ্ধি পায়।
• আকিক পাথর ধারন কিডনি ও লিভাবের সমস্যায় উপকারী।
• পেশাগত জীবনে আকিক ধারন সফলতা বয়ে আনে।
• আকিক পাথর লক্ষ্য নির্ধারণ এবং সিদ্ধান্ত গ্রহনে প্রভাব রাখে।
• আকিক পাথর ধারণে শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি পায়, গর্ভ ধারনে সাহায্য করে এবং পুরুষত্বহীনতা দূর করতে সাহায্য করে।
7. Firuzah/Turquoise:
উৎকৃষ্ট মানের ফিরোজা পাথরের রঙ হচ্ছে আকাশি নীল। ইরানের নিশাপুরি অঞ্চলের ফিরোজা পাথর পৃথিবী বিখ্যাত। যেখান থেকে “শাজারি ফিরোজা” পাওয়া যায়। হাদিস থেকে পাওয়া যায় “ফিরোজা পাথর হাতে দিয়ে মোনাজাত করলে আল্লাহতালা খালি হাতে ফিরিয়ে দেনা না” (সুত্রঃ “Tuhfah-e-Aalam Shahi”, by: Hakim Muhammad Sharif Khan, during the era of Mughal Emperor Shah Alam II, Delhi, India)
“Kit’ab al Farhat” এর লেখক উল্লেখ করেছেন, “আমির উল মুমেনুন” বলেছেন—“ফিরোজা পাথর ইসলামে বিশ্বাসীদের ভুল পথ থেকে রক্ষা করে”।
আবি আব্দিল্লাহ ইমাম জাফার আসাদ্দিক তার “Kanz al Haqaiq” বইতে উল্লেখ করেছেন যে, “ইমাম হাসান (রাঃ) ফিরোজা পাথর ব্যবহার করতেন”।“ফিরোজা পাথর দারিদ্রতা দূর করে এবং আর্থিক কষ্ট দূর করে”।তিনি সাইয়েদেনা মুফাদ্দালকে উপদেশ দেন ফিরোজা পাথরের আংটি ব্যবহার করতে এবং বলেন “এটা চোখের জ্যোতি বাড়ায়, হৃদযন্ত্র সুস্থ রাখে এবং বুক প্রশস্ত করে”।
আবি আব্দিল্লাহ ইমাম জাফার হতে বর্ণীত—“যে ফিরোজা পাথর ধারন করবে সে কখনই অন্যর উপর নির্ভরশীল হবেনা এবং দারিদ্রতা দেখবেনা”।
“Marifat al Jawahir” (Marifat al Jawahir, Syedi Ibrahim Saify, manuscript) থেকে বর্ণীত ফিরোজা পাথরের বিশেষ কিছু উপকারিতা-
• ফিরোজা পাথর জাদুটোনা, শয়তান,বিষাক্ত পোকামাকড় ও কু দৃষ্টি থেকে রক্ষা করে।
• যদি কেহ ঘুম থেকে উঠেই ফিরোজা পাথর দেখে থাকে তাহলে সকল প্রকার ষড়যন্ত্রকারীর ষড়যন্ত্র থেকে নিরাপদে থাকবেন। মহান আল্লাহ তাকে সকল প্রকার বিপদ থেকে রক্ষা করবেন।
• ফিরোজা পাথর চোখের দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধি করে এবং জিবনী শক্তি বৃদ্ধি করে।
• হয়রানি থেকে রক্ষা করে এবং শত্রুদের মাঝে জয়ী হতে সাহায্য করে।
• ফিরোজা পাথর ধারণে উন্নত চরিত্র দ্বারা সুনাম অর্জনে সাহায্য করে থাকে।
• হার্টের সমস্যা,ম্যালেরিয়া এবং বিষণ্ণতা দূর করে ফিরোজা পাথর।
• এই পাথর পাইলস রোগের নিরাময়ে সাহায্য করে।
8. পোখরাজঃ
পোখরাজ পাথর সাধারণত সোনালি হলুদ রঙের হয়ে থাকে। এটি বৃহস্পতি গ্রহের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে পরামর্শদাতা, আশাবাদী ও আদর্শবাদী করে তোলে। বিভিন্ন তথ্য থেকে জানা যায় যে কোন প্রকার বিষের উপস্থিতিতে পোখরাজ পাথরের রঙ বদলে যায়। “Tradition of Ahl al Bait” থেকে পাওয়া যায়, যে ব্যাক্তি পোখরাজ পাথর ব্যবহার করবে সে কখনই দরিদ্র হবেনা কারন এটি সম্পদের সাথে সম্পর্কিত।
• পোখরাজ পাথর ধারণে অন্যকে উজ্জীবিত করার শক্তি বেড়ে যায় এবং নিজের আত্মপ্রকাশের শক্তি বেড়ে যায়।
• এই পাথর শরীরকে গরম রাখে।
• চর্মরোগ সারাতে সাহায্য করে, বিশেষ করে কুষ্ঠ রোগে পোখরাজ পাথর উপকারী।
• গর্ভ কালীন অবস্থায়, প্রসব বেদনায় জিহ্বার নিচে পোখরাজ পাথর রাখলে উপকার পাওয়া যায়।
• রক্তের রোগে উপকারী, বিশেষ করে রক্তের ক্যান্সারে উপকারী।
• সকল পরকার কোষ্ঠ কাঠিন্য ও পাইলসে পোখরাজ উপকারী।
• এটা শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে এবং বুদ্ধি-বিচক্ষণতা বাড়াতে সাহায্য করে।
• কিডনিতে হওয়া পাথরকে প্রসাবের সাথে বের হয়ে জেতে পোখরাজ পাথর সাহায্য করে থাকে।
9. Yashab/Jesper:
কিছু কিছু ঐতিহাসিক দলিল থেকে জানা যায় পৃথিবীর বিভিন্ন শাসনামলে জেসপার নামক পাথর ব্যবহার করা হত। এই রত্ন পাথর দেখতে অনেকটাই আকিক পাথরের মত, এবং বেশীর ভাগ সময় জেসপার পাথর আকিক নামেই বিক্রি হয়ে থাকে। বিখ্যাত ঐতিহাসিক “Muqrizi” (“Ittiaaz al Hunufa”, by Muqrizi, Taqiuddin Ahmad ibn Ali (1364-1442), famous Egyptian Historian) এর আলোচনা থেকে জানা যায় বনি ফাতিমাহ তাদের অনেক ব্যবহার্য জিনিস তৈরি করতেন জেসপার দিয়ে। পানির পাত্র তৈরিতে সব থেকে বেশি ব্যবহার করা হত জেসপার পাথর। প্রথম দিকে এটা শুধু মাত্র বনি আব্বাসের রাজা-রানীরা ব্যবহার করতেন। কিন্তু ফাতেমি যখন জোর করে বাগদাত দখল করে নেয় তখন সেগুলো ফাতেমির কোষাগারে জমা হয়। এই পাথরের নিরাময় ক্ষমতার কারনে ধনীরা এর ব্যবহারের প্রতি আকৃষ্ট হন। মোঘল আমলের রাজা-বাদশাহ শুধু মাত্র নিরাময় ক্ষমতার জন্যই জেসপার ব্যবহার করতেন। মনে রাখা ভাল যে বর্তমান যুগে ইউরোপ এবং বিশেষ করে লন্ডনের মানুষ হার্টের সমস্যা থেকে মুক্তি পাবার জন্য জেসপার ব্যবহার করে থাকে।
• যদি কেও সবসময় গলায় জেসপার পাথর ব্যবহার করেন লকেট করে তাহলে সে মস্তিষ্কের রোগ থেকে মুক্ত থাকে। এমনকি মানুষিক ভারসাম্য ঠিক থাকে।
• জেস্পার ব্যবহারে হার্টের সমস্যা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। এমন কি কেও পূর্বে হার্টের অসুখে ভুগে থাকলে পরবর্তী কালে সে অসুখ থেকে রক্ষা পেতে সাহায্য করে।
• এটা প্রসবকালীন সময় প্রসব বেদনা কমাতে সাহায্য করে।
• জেস্পার পাথর ব্যবহারে পাইলস রোগ সহ লিভার ও পাকস্থলির রোগ নিরাময় হয়।
• এটি ব্যবহারে উচ্চ রক্তচাপ কমে স্বাভাবিক হয়ে আসে।
A Tradition transmitted by Syedna Abuzar al Ghifari, রত্ন পাথরের আংটি পরার কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন,“ একদিন তিনি রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর ইমামতিতে নামাজ পড়ছিলেন, সেই সময় মসজিদ আল নববিতে এক ভিক্ষুক আসে। সেই সময় কেহই তার ডাকে সারা না দিলে তিনি তার দুই হাত আকাশের দিকে তুলে দিয়ে বলতে থাকেনঃ হে আল্লাহ্ তুমি সাক্ষি থেকে যে আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর মসজিদে আসলাম কিন্তু কেও আমাকে কিছু দান করলনা”।
আমিরুল মুমেনিন আলি (রাঃ) সেই সময় রুকুতে ছিলেন। তিনি লক্ষ্য করলেন যে তার ছোট আঙ্গুলে একটি আংটি রয়েছে। তখন তিনি তার হাতের আংটিটি খুলে সামনে থাকে ভিক্ষুক কে দান করে দেন। যখন এই ঘটনা রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর সামনে বয়ান করা হয় তখন (সাঃ) তার মুখ আকাশের দিকে তুলে দোয়া করলেনঃ “O Lord! my brother Musa begged You: My Lord, Delight my heart and make my task easy and lose the knot of my tongue so people might understand me, and appoint from among my relations, Harun, my brother, as my Vazir, and strengthen my back with him and make him partner in my mission, so that we may glorify you and remember you more frequently. Certainly you see us-and you inspired him”.
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) তার দোয়া চালিয়ে গেলেন এই বলেঃ “Delight my heart and make my task easy and appoint from among my family Ali as my Vazir and strengthen my back with him”.
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) যেই মাত্র তার দোয়া শেষ করলেন সাথে সাথে আল্লাহর তরফ থেকে জিব্রাইল (আঃ) সূরা “আল মাইদাহ” এর ৫৫ নম্বর আয়াত নাজিল করেন, “তোমাদের একমাত্র অবিভাবক হচ্ছেন আল্লাহ্ তাআলা, তার রসূল, এবং সেই সব ঈমানদার লোকেরা যারা নামাজ প্রতিষ্ঠা করে এবং জাকাত আদায় করে”।
পবিত্র কোরানের তাফসীরকারীগণ সর্বসম্মত হয়েছেন যে, এই আয়াত হযরত আলি (রাঃ) এর উদ্দেশ্যে নাজিল হয়েছেন যখন তিনি তার মূল্যবান আংটিখানা ভিক্ষুক কে দান করেন। যে আংটির ওজন ছিল ৪ মিস্কাল (Misqal) এবং যার মূল্য ছিল পুরা সিরিয়ার করের সমান, সেই সময়ে যা ৩০০টি উট বোঝাই রুপা অথবা ৪টি উট বোঝাই স্বর্ণের সমতুল্য ছিল। উল্লেখিত আংটিটি ছিল “তাওক বিন হাররান” এর হাতে। আমিরুল মোমেনিন তাকে হত্যা করে সেই আংটি নবী করীম (সাঃ) কে উপহার দেন এবং সেই আংটি পরে আলি (রাঃ) কে নবীজি উপহার দেন।
ভাষান্তর করেছে Rashi Ratno(রাশি রত্ন)
লেখাটি সংগ্রহ করা হয়েছে http://www.rashiratno.com থেকে।
view this link
২| ২৪ শে জুন, ২০১৭ বিকাল ৩:৫৯
পাগল রাজপুএ বলেছেন: এসব পাথর মূলত বিভিন্ন মৌলের যৌগ। যেমন, রুবি পাথর হলো অ্যালুমিনিয়ামের যৌগ। মূলবান হিরা হলো কার্বন। মুক্তা হলো ক্যালসিয়ামের যৌগ। পাথরে বিভিন্ন ধাতুর উপস্থিতির কারণে এরা বর্ণে ও গঠনে আলাদা। প্রাচীনকাল থেকেই এসব পাথরের দুষ্প্রাপ্যতার কারণে এদের আর্থিক মূল্য ছিল বেশি। ধনাঢ্য মানুষেরা এগুলোর ব্যবহার করে আভিজাত্যের প্রতীক করেছে। সাধারণের কাছে করেছে লোভনীয়। যেমন, হিরা যদি লোহার মতো সহজলভ্য হতো, তাহলে হিরার প্রতি মানুষের উচ্চাকাঙ্ক্ষা থাকত না।
কসময় চিকিৎসাবিজ্ঞান আধুনিক ছিল না। দুষ্প্রাপ্য পাথরকে মানুষ রোগমুক্তির জন্য ব্যবহার করে মানসিক তৃপ্তি পেত। ধনাঢ্য ব্যক্তিরা পাথরে খুঁজে পেল অর্থপ্রাপ্তির মানসিক আস্থা। দরিদ্র সমাজে তাই পাথর হয়ে গেল ধনী হওয়ার উপায়। মূলত এটা আসে দারিদ্র্য মুক্তির আকাঙ্ক্ষা থেকে। আংটি পরে কপাল খুলে গেছে, এমন গল্পের শেষ নেই।
সকল পাথর, বিভিন্ন রাসায়নিক যৌগের মিশ্রণ। ভাগ্য পরিবর্তনের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই। নিজেকে অলংকৃত করতে পাথর কিংবা আংটি ব্যবহার করা যায়। তবে এসব ব্যবহারে ধনী হওয়া, রোগমুক্তি, ভাগ্য বদলানোর যে গল্প প্রচলিত সেগুলো শুধুই রূপকথা। নিউটন, রবীন্দ্রনাথ, আইনস্টাইন, নীলস বোর, বিল গেটস কিংবা স্টিভ জবসের আংটি বা পাথর ব্যবহারে ভাগ্য বদলায়নি।
বি দ্র ঃ অনেকে মহানবী (সাঃ) এর আংটিতে পাথর ব্যবহারের উদাহরণ দিয়ে থাকেন। মহানবী সাঃ আংটিতে পাথর ব্যবহার করতেন সত্যি। কিন্তু তা ব্যবহার করতেন সিল হিসাবে।
©somewhere in net ltd.
১|
১৪ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ১২:১৩
নতুন বলেছেন: সবই ভুল ধারনা। পাথরে কোন কাজ হয় এটার কোন প্রমান নাই। আমাদের দেশে যা হচ্ছে তা সম্পূন প্রতারনার সামিল।
অন্যথায় যদি আমরা মনে করি নাপা খেলেই জ্বর ভাল হয়ে যায় তাহলেই আমরা গুনাহ করে ফেলছি, কারন নাপা ওষুধের নিজের কোন ক্ষমতা নেই।
প্যারাসিটামল ওষুধ কাজ করে ব্যাথার বোধ হয় যেইখানে সেখানে। তাই প্রায় শতভাগ ভাগ ক্ষেত্রেই কাজ হবে যদি না অন্য কোন কারন থাকে। এবং এটা প্রমানিত।