![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পরীক্ষা !!! জীবনে যত বার যেখানেই পরীক্ষা দিতে হয়েছে বা পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছি ততবারই ব্যস্ত হয়েছি কিভাবে প্রস্তুতি আরো ভালো হয় সে চেষ্টা করায়। রাত জেগেছি, উপরের ক্লাসের বই জোগাড় করে পর্যন্ত পড়ার চেষ্টা করেছি। আমার মনে আছে আমি এসএসসি পরীক্ষায় একাউন্টিং এ ভালো করার জন্য এইচএসসির একাউন্টিং বই পড়েছিলাম। আর এখন সময় মনে হয়ে বদলেছে। এতটাই বদলেছে যে, আমরা এখন রাত জেগে পরীক্ষার প্রস্তুতি না নিয়ে ব্যস্ত থাকি কিভাবে অন্য ভাবে উত্তীর্ণ হতে পারি সেই পথ খোঁজাতে। সেই পথ খুঁজতে খুঁজতে এখন আমাদের স্কুলের, কলেজের, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসের পরীক্ষায়, অথবা ভর্তি পরীক্ষায় অথবা চাকুরীতে যোগ দানের পরীক্ষায় প্রতিযোগিতা মূলক প্রস্তুতি না নিয়ে কিভাবে একটি ফাঁস হওয়া প্রশ্ন জোগাড় করা যায় অথবা কিভাবে পরীক্ষার হলে বসেই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায় সেই চেষ্টায় ব্যাস্ত থাকি। যা বাংলাদেশের সম্পূর্ণ শিক্ষা ব্যবস্থার উপর কালি লেপন করছে নানান মাত্রায় প্রতিদিন প্রতিনিয়ত। অনেক শুনেছি মানুষের মুখে, পত্রিকায়ও পড়েছি এমন প্রশ্নপত্র ফাঁসের কথা। কিন্তু এমন কোন ঘটনা থেকে সুবিধা পাওয়া মানুষের দেখা পাইনি। আজ শুক্রবার এমনই একজনের কাছ থেকে এ সংক্রান্ত বেশ কিছু তথ্য পেলাম যা রীতি মত শঙ্কিত করেছে আমাকে। ঠিক সেই তথ্য গুলোই তুলে ধরতে চাই এখানে।
৩০ অক্টোবর ২০১৫ শুক্রবার, আজ ছিল প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা। যে কোন এক কাজে বাসে করে জাচ্ছিলাম রাত ৮টার দিকে। শুক্রবার এবং রাত হওয়াতে যাত্রীর চাপ বেশ কম ছিল বলেই বাসে উঠে বসার সিট পেয়ে যাই। সময় কাটাতে মোবাইল ফোনে ক্যান্ডি ক্রাশ গেম খেলতে থাকি। হঠাৎ কানে আসে পেছনের সিটে বসা দুই বন্ধু কথা বলছিল এবং তাদের কথার মূল বিষয় আজকের প্রাইমারী স্কুল শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা। প্রথম বন্ধুর বোনের মেয়ে এবং তার ভাইয়ের ছেলের স্ত্রী এ শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ গ্রহন করেছে। প্রথম বন্ধু দ্বিতীয় বন্ধুকে প্রথমেই বলেছিল যে, ঐ দুই পরীক্ষার্থী কোন পোশাকে পরীক্ষা দিতে গিয়েছিল জানিস? দ্বিতীয় বন্ধু উত্তর দিয়েছিল কোন পোশাকে পরীক্ষা দিতে গিয়েছে এটা বড় করে বলার কি আছে? তখন প্রথম বন্ধু তাকে জানায় যে, তারা দুজন মাথায় স্কার্ফ পরে পরীক্ষা দিতে গিয়েছেল আর তাদের কানে ছিল মোবাইলের হেড ফোন। এ কথা শুনে সে তখন অবাক হয়েই জানতে চাইল কানে হেড ফোনে দিয়ে পরীক্ষা দেবার মানে কি? তারপর তাদের দুজনের কথোপকথন থেকে জানতে পারলাম কেও একজন মোবাইল ফোনের অপর প্রান্ত থেকে উত্তর বলে দেবার চেষ্টা করেছে। এমন কথায় আমার কান খারা করে শুনতে থাকলাম মনোযোগ দিয়ে। দ্বিতীয় বন্ধুর আবার প্রশ্ন যে, উত্তর বলে দেবার জন্য তো প্রশ্ন থাকতে হবে, সেই প্রশ্ন আসলো কোথা থেকে, কারন যতটা জানা আছে সরকার আপ্রাণ চেষ্টা করছে যাতে প্রশ্ন পত্র ফাঁস না হতে পারে। এমন প্রশ্নের উত্তরে বন্ধুর ধারনা বসত উত্তর ছিল যে, পরিক্ষা দেবার জন্য কিছু ভুয়া পরীক্ষার্থী আছে, যারা পরীক্ষা হলে ঢুকে এবং সবাই মিলে ভাগ ভাগ করে প্রশ্ন মুখস্থ করে অথবা অন্য ভাবে লিখে নিয়ে পরীক্ষার হল থেকে সময়ের অনেক আগেই বেড় হয়ে গিয়ে সকল প্রশ্ন একসাথে মিলিয়ে একটি সম্পূর্ণ প্রশ্ন পত্র তৈরি করে সেটার উত্তর পত্রও তৈরি করে ফেলে। আর সেই উত্তর পত্রই পরীক্ষার্থীদের ফোনে শুধু বলে দেওয়া হয় এত নম্বর প্রশ্নের উত্তর এত। দ্বিতীয় বন্ধু প্রশ্নই করে ফেললেন যে পরীক্ষা দিতে দুর্নীতি করে লাভ কি? এতে তো আর চাকুরী হয়ে যাচ্ছেনা। উত্তরে বন্ধুটি জানালেন যে চাকুরী পেতে হলে তো আগে পাশ করতে হবে, তাই আগে পাশ করুক তার পরের ব্যবস্থা তো হবেই।
আমরা সাধারণত যে কোন ঘটনায় সরকারের উপর দোষ চাপিয়ে দিতে পারলেই বেঁচে যাই। সকল দায় যেন এক সরকারের ৩০০ এমপি মন্ত্রীর। আমি এর উল্টোটাই ভাবি সব সময়। আমরা সাধারন জনগণ খারাপ বলেই সরকার খারাপ হতে পারে। যেমনটা আমি নির্বাচনের সময়ও বলেছিলাম যে, একজন ভোটার যখন টাকার বিনিময়ে ভোট দিয়ে থাকে তখন তিনি আর জনপ্রতিনিধির কাছে সততা, ন্যায় অথবা উন্নয়ন আশা করতে পারেনা। দুর্নীতি গ্রস্থ সরকারের জন্ম হয় দুর্নীতি গ্রস্থ ভোটারদের কারনেই। আমরা সাধারণ জনগন যদি চুরি করে স্কুল কলেজ অথবা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসের পরীক্ষায়, ভর্তি পরীক্ষায়, চাকুরীর পরীক্ষায় চুরির পথ না খুঁজতাম তাহলে অন্যরা চুরির কথা মাথায় আনতে সাহস পেত না। এখন বিষয় গুলো এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে স্কুলের শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট পড়লেও স্কুল পরিক্ষার ভালো সাজেশন পাওয়া যায়। সামগ্রিক অর্থে শিক্ষা ব্যবস্থায় আজ যে অবস্থা বিরাজ করছে তাতে আর কিছু দিন পরে কেও পড়াশোনা না করে কিভাবে সার্টিফিকেট পাওয়া যাবে এবং সেই সার্টিফিকেট দিয়ে কিভাবে চাকুরী পাওয়া যাবে তার জন্য দালাল খুঁজতেই বেশী ব্যস্ত হবে। এ অসুস্থ প্রতিযোগিতার ফলে যে শিক্ষার্থী গুলো সত্যি সত্যি নিজের যোগ্যতায় পাশ করতে চায় তারা পিছিয়ে পরবে। দুর্নীতি গ্রস্থদের রেজাল্ট ভালো হবে, দুরনিতিগ্রস্থদের চাকুরী হয়ে যাবে আর পেছনে পরে থাকবে সৎ পথে থেকে নিজের যোগ্যতায় কিছু করতে চাওয়া মানুষ গুলো। ফলে এগিয়ে যেতে একসময় তাদেরও কাওকে না কাওকে ধরেই আগিয়ে যাবার চেষ্টা করতে হবে। অন্যথায় পেছনে পরে থাকা।
আজ শনিবার সকালের পত্রিকা হাতে নিতেই যে খবর গুলো চোখের সামনে চলে আসে তা অনেকটা এরকম, অনৈতিক সুবিধা দেন পিএসসির দুই সদস্য, ঢাকা ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতি বন্ধ হয়নি পাল্টেছে ধরন, প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ চট্টগ্রাম কেন্দ্রে ঢুকে প্রশ্নপত্রের ছবি তুলল ছাত্রলীগ।
আমি বাসের সামনের সিটে বসে তাদের কথা শুনছিলাম। মোবাইলে ক্যান্ডি ক্রাশ খেলা থেমে গিয়েছিল অনেক আগেই। মনে নানান প্রশ্ন উকি দিচ্ছিল বারবার। আমিও তো এখন সন্তানের পিতা। আল্লাহ্ চাইলে ভবিষ্যতে আমি তাকেও স্কুলে পাঠাবো শিক্ষা গ্রহন করার জন্য। এই যদি হয় আমাদের শিক্ষকদের নৈতিক অবস্থা, তাও আবার প্রাক প্রাইমারী স্কুলের, তাহলে জীবন শুরুতে আমাদের সন্তানেরা কার কাছ থেকে কোন নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত হবে? একজন দুর্নীতিগ্রস্থ শিক্ষকের কাছে থেকে?
২| ৩১ শে অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ১২:৪৫
বিপরীত বাক বলেছেন: আমি এর উল্টোটাই ভাবি সব সময়। আমরা সাধারন জনগণ খারাপ বলেই সরকার খারাপ হতে পারে।
বিশ্বের নোংরাতম, দুর্ণীতিগ্রস্থ জাতি হচ্ছে বাংলা বেজন্মা জাতি।
৩| ৩১ শে অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ২:২০
আমি শঙ্খচিল বলেছেন: যতদিন না এই দেশের জনগনের মূল্যবোধ উন্নত হবে ততদিন এই দেশের সমাজ ব্যবস্থা ধ্বংসর দিকেই এগিয়ে যাবে ।
৪| ০২ রা নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:১২
বিপরীত বাক বলেছেন: আমি শঙ্খচিল বলেছেন: যতদিন না এই দেশের জনগনের মূল্যবোধ উন্নত হবে ততদিন এই দেশের সমাজ ব্যবস্থা ধ্বংসর দিকেই এগিয়ে যাবে
সহমত।
©somewhere in net ltd.
১|
৩১ শে অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ১১:৩৪
প্রামানিক বলেছেন: এরকম ঘটনা অহরহ শুনছি। দেশটা যে কোথায় যাচ্ছে -- - -?