![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আইএমএফের দেওয়া ১ বিলিয়ন ডলার ঋণ পেতে সরকার ঋণের শর্ত পূরণে ভ্যাট আইন চালুতে কোঠর অবস্থান নিয়েছে। যে আইনের মুর্দা কথা হচ্ছে সকল প্রকার ব্যবসায়ীক পণ্য ও সেবা পণ্যর উপর ১৫% ভ্যাট দিতে হবে। ১লা জুলাই থেকে চালু হওয়া নতুন এ ভ্যাট আইনে পিতার অপরিশোধিত ভ্যাট তার সন্তান অথবা তার পরে প্রজন্মকে হলেও শোধ করার বিধান রাখা হয়েছে। বিষয়টা ভাবতে গিয়ে একটু হোঁচট খেতে হয়কি? যে দেশের মন্ত্রী এমপিদের কাজের দায় মুক্তি দিয়ে আইন পাশ করা হয় সে দেশের সকল ক্ষমতার উৎস সাধারন জনগণকে বংশ পরম্পরায় দায় বহনের আইন করা হয়। এ নতুন আইনে ঢালাও ভাবে সব সেবা পণ্যর উপর ১৫% ভ্যাট ধার্য করার ফলে আগে একজন ব্যবসায়ী যে পণ্য বিক্রি করত ২০০ টাকা। এখন পণ্যর ভ্যাট ৩০ টাকা এবং তার ব্যবসায়িক টার্নওভার ট্যাক্স ৩% হিসেবে আরও ৬ টাকা যোগ করে সে পণ্য বিক্রি করতে হবে ২৪০ টাকায়। ফলে অর্থনীতির ভাষায় ১লা জুলাই থেকে দেশে মূল্যস্ফীতি একধাক্কায় বেড়ে যাবে প্রায় ২০%।
এ সংক্রান্ত বিস্তারিত বলার আগে একটু ভিন্ন দিকে নজর দেওয়া যাক। বেইলি রোড এলাকার বিখ্যাত এক পেস্ট্রি শপ সারাদিনে লক্ষ টাকার ব্যবসায় করে যাচ্ছে কোন প্রকারের বিক্রয় রিসিট ছাড়াই। একটু ঘুরে প্রেস ক্লাব থেকে মতিঝিল হয়ে বঙ্গবন্ধু এভেনিউতে বিখ্যাত কোন খাবারের হোটেলে সারা দিন লক্ষ টাকারও বেশী বিক্রিতে কোন প্রকার রিসিট দেওয়া হয় না। এমন নয় যে তার ক্রেতার কাছ থেকে ভ্যাট নিচ্ছেন না। এ সকল ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের পণ্য মূল্যর সাথে ভ্যাট অন্তর্ভুক্ত। এমনও দেখা যায় যে দিনে একটা সময় এ ধরনের ব্যবসায়ী প্রতিস্থান গুলো ইসিআর (ইলেক্ট্রনিক ক্যাশ রেজিস্টার) চালু করে উল্টা পাল্টা কিছু বিলের রিসিট বের করে সেটা আবার বন্ধ করে দেয়। এমন উদাহরণ হয়তো আপনাদের চোখেও ধরা পরেছে বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে পণ্য বা সেবা গ্রহনের সময়।
সরকারের নতুন ভ্যাট আইনে ১৫% এর বেশী ভ্যাট ধার্য করলেও নিশ্চয়ই এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের কোন প্রকারের সমস্যা হবার নয়। কারন তারা সিস্টেম ধরে এখন যেমন ভ্যাট ফাঁকি দিচ্ছে সামনেও তাই করবে। মাঠে মারা পরবে ছোট ছোট ব্যবসায়ীরা। যারা এ ধরনের কোন সিস্টেমের ফাঁক ফোকর কোনটা বোঝেন না। ফলে বড় বড় যে সকল প্রতিষ্ঠান পূর্বের ভ্যাট আইনেই ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছেন তারা বরং নতুন ভ্যাট আইন দেখিয়ে ক্রেতার কাছ থেকে ঠিকই অতিরিক্ত মূল্য নেবেন আর সেটা স্বভাব সুলভ ভাবে সিস্টেমের ফাঁক দিয়ে বের করে দিবেন। একদিকে ক্রেতার কাছ থেকে অতিরিক্ত ভ্যাটের টাকায় এ ধরনের ব্যবসায়ী আরও ধনী হবে, অন্য দিকে অতিরিক্ত খচর মেটাতে গিয়ে চাপে পরে যাবে ভোক্তা পর্যায়ের মানুষ গুলো, আর ছোট ছোট ব্যবসায়ীরা প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে অর্থনৈতিক ভাবে আরও পিছিয়ে পরবে। নয়তো এখনকার বড় বড় প্রতিষ্ঠান গুলোর মতই ছোটরাও ফাঁকি দেবার ফাঁকি শিখে নেবে। সর্বপরি যারাই আইনের ফাঁক-ফোকর দিয়ে সুবিধা বের করে নিতে পারেন তাদের আয়ের পথ শুধু বড় হবে। সরকার অথবা সাধারন জনগনের নয়।
এমনিতেই এ দেশে অর্থনৈতিক ভাবে বৈষম্য প্রকট আঁকার ধারন করেছে। যার আছে তার অভাব নেই, যার নেই তার মাসের ৩০ দিনই পার হয় দুশ্চিন্তায়। প্রত্যক্ষ ভাবে ১৫% ভ্যাট এবং ৩% টার্নওভার ট্যাক্স এর টাকা দিতে হবে দেশের প্রান্তিক মানুষ গুলোকেই। এ বোঝা বহন করতে গিয়ে জীবন যাত্রার ব্যয় বেড়ে যাবে। বেড়ে যাবে প্রতিযোগিতা। অসুস্থ প্রতিযোগিতায় পরে মানুষ অতিরিক্ত অর্থ উপার্জনের চেষ্টা করবেই। সব শেষ ফলাফলে দুর্নীতিই শুধু বাড়বে।
দেশের উন্নয়নে ভ্যাট, ট্যাক্স এ কথায় কোন বিতর্ক নেই। সরকার চালনা অথবা দেশের উন্নয়নে জনগনের এ অর্থই বড় ভূমিকা রেখে চলে। যদিও এ দেশে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে কতটা উন্নয়ন আর কতটা অপচয় সেটা নিয়েও অনেক তর্ক বিতর্ক রয়েছে। কিন্তু এ ভ্যাট ট্যাক্স আদায় করতে গিয়ে তার ভার বহনে মানুষকে অতিরিক্ত অর্থ উপার্জনের দিকেই ঠেলে দেওয়া হবে। বহন করতে না পারলে পরতে হবে পিছিয়ে। এমন পরিস্থিতিতে সরকারের উচিৎ ছিল যে সকল প্রতিষ্ঠান এভাবে দিনের পর দিন ক্রেতার কাছ থেকে ভ্যাট আদায় করে নিজেরা রেখে দিচ্ছে তাদের কাছ থেকে সম্পূর্ণ ভ্যাটের টাকা আদায় করার ব্যবস্থা করা। বর্তমান কম ভ্যাট হারেও যারা সরকারের ভ্যাট ফাঁকি দিচ্ছে তারা তো ভবিষ্যতে আরও বেশী ফাঁকি দেবে এটাই স্বাভাবিক। ফলে ১লা জুলাই থেকে সরকারের ভ্যাট আদায় যে রাতারাতি আকাশ ছুয়ে ফেলবে সেটা ভাবা কতটা যুক্তি সঙ্গত সেটা সময়ই বলে দেবে। তাই অতিরিক্ত বোঝা না চাপিয়ে বিদ্যমান আইনে ক্রেতার পকেট থেকে নেওয়া ব্যবসায়ীর ভ্যাট সম্পূর্ণ রুপে আদায় করাতেই সরকারের সফলতা বলে বিবেচিত হবে।
©somewhere in net ltd.