নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সজিব তৌহিদ এর তুফান তারুণ্য

I am waiting for someone and I know she will ever come.

সজিব তৌহিদ

Student,Debater

সজিব তৌহিদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছবির ফেরিওয়ালা তারেক-ক্যাথরিন

১৯ শে আগস্ট, ২০১৫ সকাল ১০:২৪

একজন আপাদমস্তক চলচ্চিত্র পাগল মানুষ ছিলেন তারেক মাসুদ। বিয়ে করেছিলেন ক্যাথরিন নামে মার্কিন এক নারীকে। এই নারীর মাথায় কখন যে ছবি বানানোর ভূত ঢুকে গেল কে জানে? পরে দুই ‘পাগলা-পাগলি’ মিলে সারাজীবন ছবি বানানো ও ছবি ফেরি করে মানুষকে দেখানোর কাজেই ব্যস্ত ছিলেন।

বাংলা চলচ্চিত্রের প্রতি তার আবেগটা ছিল ভিন্নরকম। এই আবেগের প্রতিফলন ঘটাতে জীবনে তিনি বহুবার অর্থ সংকটে পড়েছেন।

বেঁচে থাকা অবস্থায় তারেক মাসুদ এক সাক্ষাতকারে বলেছিলেন-‘আমি মূলত প্রামাণ্য চলচ্চিত্র নির্মাণের মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরু করেছিলাম। জমি বিক্রি করে চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের জীবন ও কর্মের ওপর প্রায় সাত বছর অনেক ধৈয্য ও কষ্টের মধ্য দিয়ে প্রায় এক ঘণ্টা দৈর্ঘ্যের প্রামাণ্যচিত্র ‘আদম সুরত’ তৈরি করেছিলাম। বলতে গেলে সেটি কাউকে দেখাতে পারিনি। বিদেশি কিছু চলচ্চিত্র উৎসবে দেখানো হয়েছে। দেশে কিছু মানুষ দেখেছে। পরে আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় ছবিটি আর দেখানো সম্ভব হয়নি।

১৯৮৯ সালে নির্মিত প্রামাণ্যচিত্রটি বানিয়ে ব্যাপক ক্ষতির শিকার হন তিনি। জমি বিক্রির ঢাকায় ছবি বানিয়ে লস খেয়েছেন। সুতরাং পরিবারে তার অবস্থান কতটা নাজুক তা সহজেই অনুমেয়।

কথায় আছে-‘ন্যাড়া বেল তলায় একবারই যায়।’ কিন্তু সাহসী ‘ন্যাড়া’ যে বেল তলায় বার বার যায়, সেটা তিনি সফলভাবেই প্রমাণ করেছেন।

১৯৯৫ সালে তিনি শুরু করলেন নতুন প্রজেক্ট-‘মুক্তির গান’। আগের প্রোডাকশনের ক্ষতির বোঝা মাথায় নিয়ে এবার অপরিমেয় সাহস ও বুকভরা স্বপ্ন ধারণ করে শুরু করলেন কাজ।

‘মুক্তির গান’ প্রামাণ্যচিত্রটি নির্মাণ শেষে শঙ্কায় কাটে তার রাত-দিন; এটাও যদি আগেরটার মতো হয় তবে কি হবে?

সৌভাগ্যক্রমে ১৯৯৫-৯৬ সালে মুক্তিযুদ্ধের রজতজয়ন্তী উপলক্ষে ‘মুক্তির গান’ ব্যাপক সাড়া ফেলে দেয়। দেশের বিভিন্ন সিনেমা হলে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রামাণ্যচিত্র মানুষ এতো আগ্রহ নিয়ে দেখবে সেটা অবিশ্বাস্য মনে হয়েছে তার।

এতে বাণিজ্যিকভাবেও তিনি অপ্রত্যাশিত সাফল্য পান। আর এ সাফল্যকে তিনি ঐতিহাসিক মনে করে আগের তিক্ত অভিজ্ঞাতা ভুলে গেলেন।

এরই মধ্যে তিনি ও তার স্ত্রী ক্যাথরিন মাসুদের যৌথ পরিচালনায় নির্মাণ করেন-ভয়েসেস অফ চিলড্রেন (১৯৯৭), ইন দ্য নেইম অফ সেফটি (১৯৯৮), মুক্তির কথা (১৯৯৯) ও নারীর কথা (২০০০)।

পৈতৃক নিবাস ফরিদপুরে ছোট বেলায় তারেক পড়েছেন মাদ্রাসায়। শৈশবে পড়ার স্মৃতি আর সামাজিক পরিস্থিতি তাকে ভাবিয়ে তোলে। ষাটের দশকে পূর্ব পাকিস্তানের মাদ্রাসায় ছেলেবেলার অভিজ্ঞতার ওপর ভিত্তি করে প্রায় তিন বছর পরিশ্রম দিয়ে তৈরি করলেন তার প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘মাটির ময়না।’

ছবিটিতে ব্যবহৃত তার প্রিয়-‘ও তার ভবের বেড়ি পায়ে জাড়ানো, ধরতে গেলে উড়িয়া যায়/পাখিটা বন্দি আছে দেহের খাঁচায়’ নামে গানটি আজও সব ধরনের মানুষকে উদাসী করে ছাড়ে।

ছবিটি ২০০২ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসবে সেরা ছবির পুরস্কার জেতে। একই সঙ্গে মনোনয়ন পায় অস্কারে বিদেশি চলচ্চিত্রের ক্যাটাগরিতে। ভারতসহ ২৬টি দেশে ছবিটি বাণিজ্যিকভাবে মুক্তি দেওয়া হয়। এটি তার জীবনের শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি বলে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা মনে করেন।

তবে এই ছবির বহুমাত্রিক সাফল্যের পরও দেশের সব সাধারণ মানুষ ছবিটি দেখাতে না পেরে ভীষণ কষ্ট পেয়েছেন পরিচালক তারেক মাসুদ।

‘মাটির ময়না’ ছবি প্রসঙ্গে তিনি বলেছিলেন,‘দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য দেশে বিচিত্র রাজনৈতিক কারণে তৎকালীন সরকার ছবিটি দেশবিরোধী ও ধর্মবিরোধী বলে এটাকে নিষিদ্ধ করলো। পাঁচ মাস পর এটা আবার তারাই ছেড়ে দিলো।’

এমন পরিস্থিতিতে এই দেশের সাধারণ মানুষ সাধারণভাবে ‘মাটির ময়না’ ছবিটি আর উপভোগ করতে পারেনি। পরে দেশের কিছু জেলায় ফেরি করে স্বল্প পরিসরে প্রজেক্টরে ছবিটির প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করেন তারেক। এতে খুব অল্প সংখ্যক দর্শকই ছবিটি দেখার সুযোগ পায়।

সরল চেহারায় ক্যামেরার পেছনে থেকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে ছবির প্রতিটি মুহূর্ত অত্যন্ত দরদ দিয়ে তিনি যেন চিত্রশিল্পীর মতো এঁকেছেন। ‘মাটির ময়না’ ছবির নেপথ্য কাহিনী বা মেকিং অব মাটির ময়না প্রত্যক্ষ করলে তা স্পষ্ট হয়ে উঠে।

ছবি নির্মাণের ক্ষেত্রে গল্প, লোকেশন, সময় ও প্রেক্ষাপট সবকিছু তিনি সুক্ষ্মভাবে বিচার করতেন। সর্বশেষ নির্মাণাধীন ‘কাগজের ফুল’ ছবির শুটিং স্পট খুঁজতে গিয়েই সড়ক দুর্ঘটনায় তার সঙ্গে প্রখ্যাত ফটোগ্রাফার মিশুক মুনীরসহ পাঁচ জন প্রাণ হারান।

মিশুক মুনীর ছিলেন শহীদ বুদ্ধিজীবী ও নাট্যকার মুনীর চৌধুরীর ছেলে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা শেষ করে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিক বিভাগে শিক্ষকতা শুরু করেন মিশুক। ১৯৯৮ সালে তিনি শিক্ষকতা ছেড়ে পুরোদস্তুর সাংবাদিকতায় যুক্ত হন। ফটোগ্রাফির প্রতি তীব্র ভালোবাসর কারণেই তারেকের সঙ্গে তার রসায়নটাও ছিল অন্যরকম। একই ঘটনায় এই দুই গুণী সৃজনশীল মানুষের মৃত্যুতে কেঁদেছে লাখো ভক্ত।

মৃত্যুর আগে তারেক মাসুদ ও তার স্ত্রী মিলে ২০১০ সালে শেষ করেছিলেন ‘রানওয়ে’ ছবির কাজ। এ ছবি তৈরি করতেও তাকে অনেক কাঠ-খড় পোড়াতে হয়েছে। এক যুবকের নিরবে জঙ্গি হয়ে উঠার গল্প এই অস্থির প্রজন্মের ভালো লাগবে কি না এ নিয়ে শঙ্কায় ছিলেন।

দর্শকের উদ্দেশে বিশেষ করে ঢাকার সার্বিক পরিস্থিতির কথা ব্যাখা করতে গিয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘ঢাকা শহর হিসেবে যেমন দূষিত, সাংস্কৃতিকভাবেও দূষিত। এখানে অস্থির মানুষেরা কিছু দেখে না, শুধু তাকায়।’

তারেক ‘আদম সুরত’ তৈরি করতে বিক্রি করেছিলেন বাপের জমি। আর ‘রানওয়ে’ ছবি তৈরিতে ১৯৯১ সালে ক্যাথরিনের কেনা আড়াই কাঠা জমি বিক্রি করতে হয়। বাংলা চলচ্চিত্রের জন্য এমন নিবেদিত প্রাণ নিঃসন্দেহে ইতিহাসের প্রথম কাতারেই ঠাঁই পাবে।

ছোট বেলায় মাদ্রাসায় আর বড় হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস বিভাগের পড়া মানুষটি ভালো ভিন্ন ধারার বাংলা চলচ্চিত্র নির্মাণের পথ দেখিয়েছেন। বাণিজ্যের সঙ্গে শিল্পের একটা সেতুবন্ধন তৈরিতে তিনি আমৃত্যু চেষ্টা চালিয়েছেন।
সেই পথেই একালের একঝাঁক তরুণ পরিচালক-নির্মাতা অভিযান অব্যাহত রেখেছেন।

২০১১ সালের ১৩ আগস্ট মানিকগঞ্জ জেলার ঘিওর উপজেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় তারেক মাসুদের মৃত্যুর পর এক প্রতিক্রিয়ায় এ প্রজন্মের জনপ্রিয় নির্মাতা-পরিচালক মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেছিলেন, ‘তরুণ ও বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে তারেক ভাই ছিলেন নিরাপদ সেতু।’

আমাদের সেই সেতু ভেঙে গেছে। নিঃসঙ্গ ছবির ফেরিওয়ালা চলে গেছেন। ‘মাটির ময়না’ রয়ে গেছে। কিন্তু মাটির খোঁজে মাটির মানুষের বড়ই অভাব এই সমাজে...।

http://www.banglanews24.com/fullnews/bn/416818.html

ছবির ফেরিওয়ালা তারেক-ক্যাথরিন

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.