নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সজিব তৌহিদ এর তুফান তারুণ্য

I am waiting for someone and I know she will ever come.

সজিব তৌহিদ

Student,Debater

সজিব তৌহিদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

‘ত্যক্ত হইতে পারো গো দয়াল উচিত কথা যদি বলি\'

১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:৫৫

রাজধানীর কুড়িল বিশ্বরোডের ফ্লাইওভারের নিচ দিয়ে রিকশাযোগে যাওয়ার সময় একতারার সঙ্গে বাউল গানের ভাববাদী সুর কানে এসে ধাক্কা খেলো।

সুরের মূর্চ্ছনায় গন্তব্যে পৌঁছার আগেই রিকশাওয়ালাকে বিদায় দিয়ে গানওয়ালাকে কেন্দ্র করে দাঁড়িয়ে গেলাম। ঝলমলে রৌদ্রজ্জ্বল এই পৌনে দুপুরে আশেপাশের বেশকিছু মানুষও মুগ্ধ হয়ে গান শুনছেন।

পরপর তিনটি গান শোনার পর গানওয়ালাকে চা ও পান খাওয়ার আহ্বান জানিয়ে জিজ্ঞেস করলাম নাম কী? জবাবে বললেন-জব্বার ভাণ্ডারি। বয়স কত? ‘সত্তুর তো অইবোই’-বললেন তিনি।

কথায় কথায় তার জীবনের আরও গহীন কথাই জানা গেল। তার বাড়ি সুনামগঞ্জে। বর্তমানে থাকেন ঢাকা ডেমরার মাতুইল এলাকায়। তার চার মেয়ে এক ছেলে, সবাই বিবাহিত। যে যার পরিবার ও সন্তান নিয়ে ব্যস্ত।

জব্বারও কারো ধার ধারেন না। সারাদিন বিভিন্ন স্থানে গান গেয়ে যে দুই থেকে আড়াইশ টাকা পান। তা দিয়ে কষ্টে-ক্লিষ্টে স্ত্রীকে নিয়ে মাতুইলের এক ভাড়া বাসায় গরিবানা হালে দিন পার করে দেন।

বয়সকালে জব্বার ছিলেন জেলে। হাওরে মাছ ধরতেন এবং তা বিক্রি করে জীবন চালাতেন। এক মাদ্রাসার শিক্ষকের অধীনে তিনি সাত বছর নৌকা চালিয়েছেন।

হাওরের নিধুয়া পাথারে নৌকা ও জলের কলকলিতে কখন যে ভাটিয়ালি, মুর্শিদী, লোকগীতি, লালন আর বাউলা গানের প্রেমে পড়েছেন তা ঠাওর করে বলতে পারেন না ভাণ্ডারি। সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার বিখ্যাত বাউল শাহ আবদুল করিম তার গানের গুরু বলেও জানান তিনি।

ভাণ্ডারি গত দু'দিন থেকে বাসা থেকে বের হয়েছেন। ফের কবে বাসায় ফিরবেন তা তিনি জানেন না। আল্লাহ যেদিন বাসায় ফেরাবেন, সেদিনই বাসায় ফিরতে চান। তার সঙ্গে এক সাদা বস্তার পুটলি আছে। তাতে যেখানে-সেখানে রাত্রিযাপন বন্দোবস্তের উপকরণ আছে বলে মনে হলো।

প্রায় তিনশো গান তার আত্মস্থ আছে। তার মধ্যে অনেক গান তার নিজের রচনা, নিজের সুর। বয়স হয়ে গেছে, তাই এখন আর আগের মতো গান মনে রাখতে পারেন না জব্বার।

তার জীবনের সেরা স্মরণীয় মুহূর্ত প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গত বছর পহেলা বৈশাখে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এক অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে নিজের রচিত গান গেয়ে শোনান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। গানটি ছিল এমন-‘বাংলাদেশে মানুষ বেশে আইলো একজনা/ তাহার নামটি বঙ্গবন্ধু শোন ঘটনা।’

শেখ হাসিনা ওই গান শুনে খুশি হয়ে তাকে ৫০ হাজার টাকা উপহার দিয়েছিলেন। গায়কি জীবনে সেটাই ছিল তার বড় প্রাপ্তি।

জব্বার ভাণ্ডারির এক সময় গানের দল ছিল। দল বেধে দেশের বিভিন্ন স্থানে গান করেছেন। এখন গানের দল নেই। কিন্তু গানের প্রতি ভালোবাসাটা ছাড়তে পারেননি। তাই নিঃসঙ্গ সারথির মতো একাই গান ফেরি করে ইতিউতি ঘুরেন।

গান শুনে এরই মধ্যে শ্রোতারা দুই/পাঁচ/দশ ও বিশ টাকা করে দিয়েছেন। ফ্লাইওভারের নিচে ভ্রাম্যমাণ চায়ের দোকানের বেঞ্চে বসে গানের আসর বেশ ভালোই জমেছিলো।

এবার উঠতে হবে, ছুটতে হবে নতুন আসরের সন্ধানে। বেঞ্চ থেকে কোমর ভাঁজ করে উঠতে উঠতে গানওয়ালা জব্বার বললেন, ‘একাত্ত‍ুরে গণ্ডগোলের সময় এই দেহে কত শক্তি-সামর্থ্য আছিলো। ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটে কত গণ্ডগোল করলাম। এহন সব নাই হইয়া গ্যাছে।’

তার মানে আপনি মুক্তিযোদ্ধা? সরকার থেকে আপনি বেতন-ভাতা পান না? ভাণ্ডারি জানালেন, ১৯৮৮ সালে তার এলাকায় ভয়াবহ বন্যা হয়েছিলো। সেই বন্যায় তার বাড়ি-ঘর তলিয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। তখনই তার মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট হারিয়ে যায়।

পরে বিভিন্ন অফিসে গিয়ে বহু ধরণা দিয়েও আর সার্টিফিকেট তুলতে পারেননি। তাই তার কপালে সরকারি কোনো সুযোগ-সুবিধা জোটেনি। কেউ আর এই হতভাগা মুক্তিযোদ্ধার খোঁজও রাখেনি।

আর্থিক অনটন আর প্রাত্যহিক জীবনের নানা সংকটে বিধাতাকেই দায়ী করে তিনি আক্ষেপ করে গান লিখেছেন-'আমার কপালে সুখ লিখিতে তোর কলমে ছিল না কালি/ ত্যক্ত হইতে পারো গো দয়াল উচিত কথা যদি বলি।'

http://www.banglanews24.com/fullnews/bn/423897.html

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.