![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি হুদা একজন পাবলিক ভাই! আমারে নিয়া লিখার মত কিছু পাইলাম না।
একটা সময় ছিলো যখন আমি আব্বুর কাছ থেকে মুক্তিযুদ্ধের গল্প শুনতে চাইতাম। কিন্তু আব্বু তেমন কিছু বলতেন না। আমার বেশ রাগ লাগতো। কারণ স্কুল কলেজে মুক্তিযুদ্ধের কাহিনী বইথেকে মুখস্ত করতে হইত, লাইব্রেরী ঘেঁটে রচনা লিখতে হত, অথচ ঘরে জলজ্ব্যান্ত একজন মুক্তিযোদ্ধা ঘুরে বেড়ায়!
সবসময় অপেক্ষা করতাম সেই দিনটার জন্যে যেদিন আব্বু আমাকে ডেকে মুক্তিযুদ্ধের গল্প বলবে। কিন্তু আব্বু আর বলেনা... এভাবে করতে করতে একসময় কৈশোর শেষ হয়ে গেলো, একসময় ধরেই নিলাম আব্বু সব ভুলেই গেছে! সবাইকে বলতে শুনতাম
"মুক্তিযুদ্ধের চেতনা অমুক তমুক..."
কিন্তু কখনো এই যোদ্ধার কাছে জিনিসটার মানে জিজ্ঞেস করার সাহস হইসে বলে মনে পড়েনা, আর বড় হতে হতে একটা দূরত্বও সৃষ্টি হয়ে গিয়েছিলো।
এই লোকের কাছে যে একাত্তরের গেরিলা ট্রেনিং-এর ডায়েরী আছে এবং তিনি সেটা যক্ষের ধনের মত লুকায় রাখেন, কাউরে দেখতে দেন না সেটা আমি জানতাম। কিন্তু মাইনকা চিপা দিয়া খালি একদিন একটা পাতা দেখার সুযোগ হইসিলো, তারপরই টান দিয়া নিয়া নিসেন উনি। কিন্তু নেয়ার আগে যে পাতাটা পড়সিলাম অতটুকুতেই বুঝে গেসিলাম যে এই মানুষ কেন আম্মুর লগে কোন রোমান্টিকতা কোনদিন দেখায় নাই। না ক্যান্ডেল লাইট ডিনার, না হানিমুন। কারণ ঐখানে লিখা ছিলো,
----"বিপ্লবীর বিপ্লবের বাইরে কোন পৃথিবী নাই।"----------
------"সৌন্দর্যের পিছনে ধাওয়া করা বিপ্লবীর জন্যে মহাপাপ।"------
এই বেদবাক্য মনে নিয়ে যে বছরের পর বছর চলসে সে আর কেমনে প্রেম করবে?
যদি কারো মনে প্রশ্ন এসে থাকে যে যুদ্ধ হইসে নয় মাস, উনারা বছরের পর বছর কি করসে তাদের জন্যে বলি।
§ যুদ্ধ দুইটা স্তরে হইসে। যারা ছাত্রনেতা এবং নিউক্লিয়াসের চেতনায় অনেক আগে
থেকেই বঙ্গবন্ধুর সাথে স্বাধীনতার প্ল্যান নিয়ে কাজ করসেন এরা প্রথম স্তর। নিউক্লিয়াস হইলো সেই সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবী গ্রুপ যারা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে সম্ভবত ১৯৬০ এর পর থেকেই স্বাধীন বাংলার স্বপ্ন বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করসেন। তো ইনারা সব জেনে শুনে অনেক বছর মেয়াদী প্ল্যান নিয়ে যুদ্ধ করসেন।
§ দ্বিতীয় স্তর হইলো আপামর কৃষক শ্রমিক। উনারা শুধু "যুদ্ধ করলেই শেষ, মুক্তি" এইটুকুই জেনে প্রথম স্তরের কাছ থেকে ট্রেনিং নিয়ে ঝাঁপায় পড়সেন। যে বিশাল বিপ্লবের রুপরেখা শেখ মুজিব এবং বিপ্লবীরা এঁকেছিলেন তারই প্রথম ধাপের একটা অংশ ছিলো আপামর জনগনের অংশগ্রহন নিশ্চিত করা। সত্যিকার বিপ্লব শুরু হবার কথা ছিলো কাগজে কলমে স্বাধীনতার পর থেকে, সেটাই ছিলো সামাজিক এবং অর্থনৈতিক মুক্তির সংগ্রাম। বঙ্গবন্ধুর "এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম" কথাটার ভেতর যে কত বড় এবং দীর্ঘমেয়াদী প্ল্যান লুকানো ছিলো সেটা অনেকেই জানেন না। মোদ্দা কথা হইলো বাপজানেরা যুদ্ধ শুরু করসিলো কমপক্ষে ১৫ বছরের প্ল্যান নিয়ে ভিয়েতনাম স্টাইলে এবং উনাদের যুদ্ধ ১৬ই ডিসেম্বরের পরও মাস খানেক গোপনে চলসে (সশস্ত্রই চলসে), এবং এরপর বিপ্লবের দ্বিতীয় ধাপ উনারা শেষ করতে পারেন নাই, এমনকি বঙ্গবন্ধুও সঠিক পথে পুরোপুরি শক্ত থাকতে পারেন নাই এবং যার ফলশ্রুতিতে কয়েক বছর চেষ্টার পর শেষমেষ কান্ডারী মুজিবের মৃত্যুর পর উনারা দুর্বল হয়ে পড়েন এবং সম্ভবত ১৯৭৬-এ মেজর জিয়া কর্তৃক কর্নেল তাহেরের হত্যার মধ্য দিয়ে এই বিপ্লব পুরোপুরি নিহত হয়।
আমার কাছের বন্ধুরা অবশ্য আমার কাছ থেকে এই কাহিনী অনেকবার শুনতে শুনতে হয়রান হয়ে গেছেন যে কিভাবে ২০ বছর বয়সে হঠাৎ একদিন বুঝতে পারলাম যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা জিনিসটা সমাজের অনেকের চেয়ে আরও গভীরভাবে আমার আত্মার সাথে মিশে গিয়েছে এবং এই প্রকৃয়াটা সেই ছোটবেলা থেকেই অত্যন্ত সুচারুরুপে আব্বু সম্পন্ন করেছেন। উনাদের থিওরীগুলাই গল্পের মত বিভিন্ন পরিস্থিতিতে শুনাইসেন এমন ভাবে যে আমি বুঝিই নাই ঐগুলাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, বিপ্লবীদের স্বপ্নের দেশের কল্পিত চিত্র।
এবং সেই থেকে তিনি এবং তার সহযোদ্ধা রাখাল চন্দ্র বনিক (কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র দখল করে মেজর জিয়ার স্বাধীনতা ঘোষনার ব্যবস্থা করা সেই বাহিনীর একজন যিনি মানুষকে বার বার এলার্ট করে দিচ্ছিলেন যে একটু পরই মেজর জিয়া শেখ মুজিবের পক্ষ থেকে স্বাধীনতার সশস্ত্র ঘোষনা দেবেন) একটু একটু করে আমার সাথে সরাসরি দেশ ও রাজনীতি নিয়ে খোলাখুলি আলাপ করতেন মাঝে মাঝে। বুঝতে পারছিলাম যে উনারা একটা পর্বের জন্যে অপেক্ষায় ছিলেন যার আগে উনারা আমাকে এগুলো বলার উপযোগী মনে করেন নি।
................................... . . . . . . . .
যাকগে! পুরান ক্যাচাল গুলা পাড়সি এতক্ষন এইকারণে যে আজ একটা বিশাল ঘটনা ঘটে গ্যাসে। অন্তত আমার জীবনের একটা ঐতিহাসিক ঘটনা তো অবশ্যই বলবো এটাকে। আব্বু আজকে দেশের পরিস্থিতি নিয়ে অনেকক্ষণ আমার সাথে আলোচনা করসেন এবং এক পর্যায়ে আলোচনাটা ইতিহাস নিয়ে আবর্তিত হইসে শেষ ঘন্টাখানেক। সম্ভবত আব্বুর কাছে মনে হইসে আজকে যে তাঁর ছেলে কিছু জানার এবং তার গৌরবের মর্যাদা উপলব্ধি করার জন্য কিছুটা প্রস্তুত।
তাই হঠাৎ নিজ থেকেই আলমিরা খুলে গোপন ড্রয়ার থেকে সেই ডায়েরীটা বের করে আমাকে দিয়ে বললেন,
"যুদ্ধের ট্রেনিং-এর কিছুই আর আমার কাছে নেই। আমার ডায়েরী লিখার অভ্যাস ছিলো, সব লিখে রাখতাম। তোমার দাদু আমার বেশিরভাগ ডায়েরীই রাজাকারদের কাছ থেকে লুকানোর জন্যে পুকুরে ফেলে দিসিলো, নইলে ওরা শুধু বাড়ী পুরিয়েই ক্ষান্ত হতো না। ওগুলো পেলে আর্মী নিয়ে এসে বাড়ীর সবাইকে মেরে ফেলতো শুধু আমি যুদ্ধে গেছি বলে। এটাতে খুব সংক্ষিপ্তভাবে মুল প্ল্যানটার কিছু অংশ লিখা আছে। ইচ্ছে হলে পড়তে পারো। তবে সাবধান। খুব যত্নে রাখবে। আমি ৪২ বছর ধরে এটা সংরক্ষন করসি।"
আমি বুঝতে পারলাম আমার ডায়েরী লিখার শখ কোত্থেকে আইসে! It's genetic!
-------------------------------------------------------------
আমাদের গ্রাম গাজীটোলার নামকরণ হয়েছে একজন গাজীর নামে। তাঁর সঠিক নাম কারো মনে নাই। আমি শুধু এটুকু জানতে পেরেছি যে তিনি কোন এক যুদ্ধে থেকে ফিরতে গিয়ে এইখানে এসে বিশ্রাম নেন এবং কোন এক অজানা কারণে তিনি তাঁর আপণ দেশে আর ফেরেন নি। পরে এখানেই তিনি থেকে যান। লোকে তারে গাজী বলেই ডাকতো। বিবাহ করে পরিবার প্রতিষ্ঠা করেন। সেই থেকে তার বাড়ীটা লোকে গাজী বাড়ি বলেই চিনে।
পুরো পৃথিবী যখন আপন গতিতে ঘুরছে তখন আমি জানি আজ তারি বংশধর গাজী চৌধুরী বাড়ীরএকটি প্রজন্ম তার বীরগাঁথা অন্য প্রজন্মের হাতে তুলে দিলো। বিপ্লব আমাদের ধমণীতে বইছে এটা ঠাহর পাইতে আমার বেশ দেরী হইসে... প্রায় ২৮ বছর। যেদিন টের পাইলাম সেদিনি একটু খোঁজ লাগায়ে এসব জেনেছি। দাদা করলেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, আব্বু মুক্তিযুদ্ধ...আর আমি?
আমার সত্যিকার শেখার দিন শুরু হল আজ। আমি গত মিনিট বিশেক ধরে ডায়েরীটার যে কয়েক পাতা পড়েছি তাযদি ভুল না হয়ে থাকে তাহলে যুদ্ধ এখনো শেষ হয়নি।
২| ২৬ শে এপ্রিল, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:১০
অনির্বাণ তন্ময় বলেছেন:
সম্ভব হলে ডায়েরীটা শেয়ার কইরেন।।
২৬ শে এপ্রিল, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:২৬
ভবগুরে ছেলেটা বলেছেন: অবশ্যই করবো ভাই। মাঝে মাঝে এক পাতা এক পাতা করে তুলে দিবো।
©somewhere in net ltd.
১|
২৬ শে এপ্রিল, ২০১৩ বিকাল ৫:৫৬
বাংলার হাসান বলেছেন: যুদ্ধ এখনো শেষ হয়নি।