![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি হুদা একজন পাবলিক ভাই! আমারে নিয়া লিখার মত কিছু পাইলাম না।
১৯৪৩ সালে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ আরম্ভ হয়েছে। লক্ষ লক্ষ লোক মারা যাচ্ছে। এই সময় আমি প্রাদেশিক মুসলিম লীগের কাউন্সিলের সদস্য হই। জনাব আবুল হাশিম সাহেব মুসলিম লীগের সম্পাদক হন তিনি সোহরাওয়ার্দী সাহেবের মনোনীত ছিলেন। আর খাজা নাজিমুদ্দীন সাহেবের মনোনীত প্রার্থী ছিলেন খুলনার আবুল কাশেম সাহেব। হাশিম সাহেব তাকে পরাজিত করে সাধারন সম্পাদক হন। এর পূর্বে সোহরাওয়ার্দী সাহেবই সাধারন সম্পাদক ছিলেন। এই সময় থেকে মুসলিম লীগে দুইটা দল মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। একটা প্রগতিবাদী দল, আরেকটা প্রতিক্রিয়াশীল। শহীদ সাহেবের নেতৃত্বে আমরা বাংলার মধ্যবিত্ত শ্রেনীর লোকেরা মুসলিম লীগকে জনগনের লীগে পরিণত করতে চাই, জনগনের প্রতিষ্ঠান করতে চাই। মুসলিম লীগ তখন পর্যন্ত জনগনের প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয় নাই। জমিদার, জোতদার আর খান বাহাদুর নবাবদের প্রতিষ্ঠান ছিলো। কাউকে লীগে আসতে দিতো না। জেলায় জেলায় খান বাহাদুরের দলেরাই লীগকে পকেটে করে রেখেছিলো। ........................... .........................
....................................
ইংরেজদের কথা হল, বাংলার মানুষ মরে তো মরুক, যুদ্ধের সাহায্য আগে। যুদ্ধের সরঞ্জাম প্রথম স্থান পাবে। ট্রেনে অস্ত্র যাবে। তারপর যদি জায়গা থাকে তো রিলীফের খাবার যাবে। যুদ্ধ করে ইংরেজ আর না খেয়ে মরে বাংগালী; যে বাংগালীর কোন কিছুরই অভাব ছিলো না। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী যখন বাংলাদেশ দখল করে মীর জাফরের বিশ্বাসঘাতকতায়, তখন বাংলার এতো সম্পদ ছিলো যে, একজন মুর্শিদাবাদের ব্যবসায়ী গোটা বিলাত শহর কিনতে পারতো। সেই বাংলাদেশের এই দুরবস্থা চোখে দেখেছি যে, মা মরে পড়ে আছে, ছোট বাচ্চারা সেই মরা মা’র দুধ চাটছে। কুকুর ও মানুষ একসাথে ডাস্টবিন থেকে কিছু খাবার জন্যে কাড়াকাড়ি করছে। ছেলেমেয়েদের রাস্তায় ফেলে দিয়ে মা কোথায় পালিয়ে গেছে। পেটের দায়ে ছেলেমেয়েকে বিক্রি করতে চেষ্টা করছে। কেউ কিন্তেও রাজী হয়নাই। বাড়ির দুয়ারে এসে চিৎকার করছে,
“মা বাঁচাও, কিছু খেতে দাও, মরে তো গেলাম, আর পারি না। একটু ফ্যান দাও।”
এই কথা বলতে বলতে ঐ বাড়ির দুয়ারের কাছেই পড়ে মরে গেছে। আমরা কি করবো? হোস্টেলে যা বাঁচে দুপুরে ও রাতে বুভুক্ষদের বসিয়ে ভাগ করে দিই, কিন্তু কি হবে এতে?
এই সময় শহীদ সাহেব লঙ্গরখানা খোলার হুকুম দিলেন। আমিও লেখাপড়া ছেড়ে দুর্ভিক্ষপীড়িতদের সেবায় ঝাঁপিয়ে পড়লাম। অনেকগুলি লঙ্গরখানা খুললাম। দিনে একবার করে খাবার দিতাম। মুসলিম লীগ অফিসে, কলকাতা মাদ্রাসায় আরও অনেক জায়গায় লঙ্গরখানা খুললাম। দিনভর কাজ করতাম, আর রাতে কোনদিন বেকার হোস্টেলে ফিরে আসতাম, কোনদিন লীগ অফিসের টেবিলে শুয়ে থাকতাম.....................................................................
.....................................................................প্রিন্সিপাল ছিলেন ডঃ আই.এইচ. যুবেরী। তিনিও আমাকে খুব স্নেহ করতেন।যেকোন ব্যপারে তাদের সাথে সোজাসুজি আলাপ করতাম এবংসত্য কথা বলতাম। শিক্ষকরা আমাকে সকলেই স্নেহ করতেন। আমি দরকার হলে কলেজের এসেম্বলী হলের দরজা খুলে সভা শুরু করতাম। প্রিন্সিপাল সাহেব দেখেও দেখতেন না। মুসলমান প্রফেসররা পাকিস্তান আন্দোলনকে সমর্থন করতেন। হিন্দু ও ইউরোপিয়ান টীচাররা চুপ থাকতেন, কারণ সমস্ত ছাত্রই মুসলমান। সামান্য সংখ্যক ছাত্র পাকিস্তানবিরোধী, কিন্তু সাহস করে কথা বলতো না ।
-------------------------------♣000♣000♣-------------------------
এইটুকু পড়ার পর কিছু ব্যপার নিয়ে চিন্তা করতেসিলাম। আব্বুর যে মুক্তিযুদ্ধের মুজিব বাহিনীর ট্রেনিং-এর ডায়েরীটা; ঐটাতে সম্ভবত এরকম কিছু লিখা ছিলো:
সশস্ত্র বিপ্লবের পর প্রশাসনিক কাঠামো এমনভাবে সাজাতে হবে যেনো গ্রাম, তারপর থানা পর্যায়ে সমাজতন্ত্র আস্তে আস্তে প্রতিষ্ঠিত হয়। এতে মধ্যবিত্তের আঁতে বড় ঘা লাগবে এবং তাদের মধ্য থেকেই প্রতিবিপ্লব শুরু হবে।
মধ্যবিত্তের এতে কী? উত্তরে আব্বু বলসিলেন মধ্যবিত্ত হল সচীব, চেয়ারম্যান টাইপ মানুষ। এদের হাত থেকে গরীবদের হাতে ক্ষমতা কিছুটা হস্তান্তর হতে হবে, তাই এদের সম্মানে অনেক বড় আঘাত লাগবে। এখানে আমার আইডিয়া আর আব্বুর আইডিয়াতে মিলে না। আমি বলি, "এখন তো সচিবদের গাড়ি বাড়ি কিছুর অভাব নেই। এদের মধ্যবিত্ত বলব কেন? তোমাদের আইডিয়ায় একটু ভুল আছে। আঘাত লাগবে বিত্তবান গোষ্ঠীর।"
কিন্তু উনি চিরকালই শুধু ৫০ কোটির উপরে যাদের ব্যাঙ্ক বেলেন্স তাদেরই শুধু উচ্চবিত্ত বলেন, বাকীদের উনি উচ্চ মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত এই দুই ভাগে ফেলে দেন।
এখানে শেখ মুজিবের মধ্যবিত্তের আইডিয়া দেখে মনে হয়, হয় আমার ধারনাটা ঠিক, নয়তো নবাব আর জোতদারদের তখন অসীম ধন সম্পত্তি ছিলো। তবে যতদুর আব্বুর সাথে আলোচনা করসি আর ইতিহাস ঘাঁটসি তাতে মনে হচ্ছে বঙ্গবন্ধু সশস্ত্র বিপ্লবের পর সচিব টাইপ মধ্যবিত্তের হাত থেকে ক্ষমতা গরীবের হাতে দিতে অনেক দেরী করে ফেলসিলেন। কিছুটা ভুলে গেসিলেন হয়তো ওদের চাটুকারী কথার ফাঁদে। জনগন থেকে একটু দূরে চলে গেসিলেন। সম্ভিত ফিরে পেয়ে জনগনের মাঝে আসার আগেই অনেক বড় বড় শত্রু বানিয়ে বসেছিলেন, যার মধ্যে বিশ্বের প্রধান দু'টি শক্তি হিসেবে পরিচিত পশ্চিমা দেশটিও ছিল।
আর তাই নিম্ন মধ্যবিত্ত আর গরীবরা আজো সেই মুক্তির দেখা পেলোনা, জমিদারদের হাত থেকে মুক্ত হয়ে টিএনও, সচিব আর নেতাদের হাতে এসে পড়সে শুধু!
বৃটিশ বেনিয়াদের অত্যাচারের কথা বইটা পড়লেই বুঝা যায়। কিন্তু ত্রা চলে যাবার পরো এখনো তাদের ফেলে যাওয়া নিয়মই আমরা সব জায়গায় ফলো করছি। সরকারী অফিস আদালতে এখনো তাদের দেয়া ড্রেস রুল ফলো না করলে কথা শুনতে হয় এইভাবে যে,
"আমাদের দেশে বৃটিশ রুলই ফলো করা হয়, অতএব তোমাকেও করতে হবে... বুঝলে ছোকড়া?"
ভুক্তভোগী বলেই বলছি।
থানার রেডবুকে এখনো বৃটিশ আমলের TA/DA-ই দেয়া হয় পুলিস ভেরিফিকেশনে যাওয়া অফিসার কে। (৳১৪)
বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের লীগ আর কখনো হয়নি।
©somewhere in net ltd.