![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি হুদা একজন পাবলিক ভাই! আমারে নিয়া লিখার মত কিছু পাইলাম না।
শাহাবুদ্দীন সাহেব, মাওলানা তর্কবাগীশ ও লাল মিয়াঁ সাহেবকে নিতে খুলনায় এলাম। খুলনায় তমিজুদ্দিন সাহেব সরকারী লঞ্চে আমাদের জন্যে অপেক্ষা করছেন।আমি লঞ্চে উঠলাম এবং জানতে চাইলাম, কেন তিন দিন পূর্বে কনফারেন্স বন্ধ করতে বললেন? জিজ্ঞেশ করে জানতে পারলাম, জনাব ওয়াহিদুজ্জামান কিছুদিন পূর্বেও হক সাহেবের সাথে ছিলেন, সদ্য মুসলীম লীগে যোগদান করেছেন, তিনি সহ্য করতে পারছিলেন না যে আমি চেয়ারম্যান হয়েছি আর গোপালগঞ্জে কনফারেন্স হবে।
……………………… .................................... .....................
.............................. ................................................
সভা হবে, কিন্তু প্যান্ডেল গত রাতে ঝড়ে ভেঙ্গে গিয়েছে। নৌকার বাদামগুলি ছিঁড়ে টুকরা টুকরা হয়ে গেছে। সেই ভাঙ্গা প্যান্ডেলে সভা হল। রাতেই সকলে বিদায় নিলেন। আমার অবস্থা শোচনীয় হয়ে গেলো। এতো তাকা আমি কোথায় পাব? বাদামগুলি ছিঁড়ে গেছে, এখন তো কেউ এক টাকাও দিবেনা। নেতারাও কেউ জিজ্ঞেস করলেন না। যাদের বাদাম এনেছিলাম তারা অনেকেই আমাকে স্নেহ করতো। তারা অনেকেই অর্থশালী, আর তাঁদের ছেলেরা প্রায়ই আমার দলে। অনেকে ছেঁড়া বাদাম নিয়ে চলে গেলো, আর কিছু লোক উসকানি পেয়ে বাদাম নিতে আপত্তি করলো। তারা টাকা চায়, ছেঁড়া বাদাম নেবেনা, আমি কি করবো? মুখ কালো করে বসে গেছি। অতিথিদের খাবার বন্দোবস্ত করার জন্যে আমার মা ও স্ত্রী গ্রামের বাড়ি থেকে গোপালগঞ্জ বাড়ী এসেছে তিন দিন হলো। আমার শরীরও খারাপ হয়ে পড়েছে অত্যাধিক পরিশ্রমে। বিকালে ভয়ানক জ্বর হল। আব্বা আমাকে বললেন, “তুমি ঘাবড়িয়ে গিয়েছ কেন?” আব্বা পূর্বেও বহু টাকা খরচ করেছেন এই কনফারেন্স উপলক্ষে। .......................................
................................. একজন ব্যবসায়ী যার আট দশটা বাদাম নষ্ট হয়েছে তিনি পুরা টাকা দাবী করলেন, না দিলে মামলা করবেন। ..........................................
.................. আমার জ্বর ভয়ানকভাবে বেড়ে গেছে। শেষ পর্যন্ত ভদ্রলোক উকিলের নোটিশ দিয়েছিলেন। কিন্তু সাহস করে আর মামলা করেন নাই।
রেনু কয়দিন আমাকে খুব সেবা করল। যদিও আমাদের বিবাহ হয়েছে ছোটবেলায়। ১৯৪২ সালে আমাদের ফুলশয্যা হয়। জ্বর একটু ভালো হল। কলকাতা যাবো, পরীক্ষাও নিকটবর্তী। লেখাপড়া তো মোটেও করি না। দিনরাত রিলিফের কাজ করে কুল পাই না। আব্বা এসময় আমাকে একটা কথা বলেছিলেন, “বাবা রাজনীতি কর আপত্তি করবো না, পাকিস্তানের জন্যে সংগ্রাম করছো এতো সুখের কথা, তবে লেখাপড়া করতে ভুলিও না। লেখাপড়া না শিখলে মানুষ হতে পারবে না। আর একটা কথা মনে রেখো, ‘Sincerity of Purpose and honesty of purpose’ থাকলে জীবনে পরাজিত হবা না। ”
একথা কোনদিন আমি ভুলি নাই।
আরেকদিনের কথা, গোপালগঞ্জ শহরের কয়েকজন গন্যমান্য ব্যক্তি আমার আব্বাকে বলেছিলেন, আপনার ছেলে যা আরম্ভ করেছে তাতে তার জেল খাটতে হবে। তার জীবনটা নষ্ট হয়ে যাবে, তাকে এখনি বাধা দেন। আমার আব্বা যে উত্তর দিয়েছিলেন তা আমি নিজে শুনেছিলাম। তিনি বলেছিলেন,
“দেশের কাজ করছে, অন্যায় তো করছে না।; যদি জেল খাটতে হয় খাটবে; তাতে আমি দুঃখ পাব না। জীবনটা নষ্ট নাও তো হতে পারে, আমি ওর কাজে বাধা দিব না। আমার মনে হয় পাকিস্তান না আনতে পারলে মুসলমানদের অস্তিত্ব থাকবে না।”
------------------------♠000♠000♠--------------
এগুলা পড়ি যখন খালি প্রশ্ন জাগে, এখনকার ছাত্র রাজনীতির নেতারা কি এমন উদার হয়ে মানূষের জন্যে করে? ঠিক একই পরিস্থিতি যদি এখনকার একজন ছাত্রনেতা পায় সে প্রথমে তার গডফাদার 'অমুক' নেতার কাছে যেয়ে বলবে রিলিফের জন্যে আর দলের বড় বড় নেতা সহ খোদ দলনেত্রীকে আনতে হবে, টাকা দরকার। দলনেত্রীর কাছে এই ফরমায়েশ যাবে। এক কাঁড়ি টাকা আসবে এলাকায়।
১০ ভাগের
১ ভাগ দিয়ে কেনা হবে কিছু রিলিফ।
২ ভাগ যাবে 'অমুক' ভাইয়ের ঘরে উপহার হিসেবে,
১ ভাগ ছাত্রনেতা আর ১ ভাগ কর্মীদের মালপানি আর লালপানির জন্যে।
আর বাকী ৫ ভাগ দিয়ে বিশাল জাঁকজমক করে দলের নেতৃবৃন্দকে সম্বোর্ধনা আর ভুরিভোজ করানো হবে।
আরও কিছু চিন্তা করি অবশ্য, যেমন তখন বাঙ্গালী কত গরীব ছিলো! একটা সভা করার তেরপল ছিলোনা! নৌকার বাদাম দিয়ে নেতাদের কনফারেন্স হত, নেতারা ঐসব কনফারেন্সে আসতেন !!! বৃটিশরা কত নাজুক হাল করে দিসিলো আমাদের!
©somewhere in net ltd.