![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি হুদা একজন পাবলিক ভাই! আমারে নিয়া লিখার মত কিছু পাইলাম না।
মাঝে মাঝে সিঙ্গাপুর থেকে সুভাষবাবুর বক্তৃতা শুনে চঞ্চল হয়ে উঠতাম। মনে হত, সুভাষবাবু আসলে তো পাকিস্তান হবে না। পাকিস্তান না হলে দশ কোটি মুসল্মানের কি হবে? আবার মনে হত, যে নেতা দেশ ত্যাগ করে স্বাধীনতার জন্যে সর্বস্ব বিলিয়ে দিতে পারেন তিনি কোনদিন সাম্প্রদায়িক হতে পারেন না। মনে মনে তাই সুভাষবাবুকে শ্রদ্ধা করতাম।
অখন্ড ভারতে মুসলমানদের অস্তিত্ব থাকবে না এটা আমি মন প্রান দিয়ে বিশ্বাস করতাম।পাকিস্তানের বিরুদ্ধে হিন্দু নেতারা ক্ষেপে গ্যাছেন কেন? ভারতবর্ষেও মুসলমান থাকবে এবং পাকিস্তানেও হিন্দুরা থাকবে। সকলেই সমান অধিকার পাবে। পাকিস্তানের হিন্দুরা স্বাধীন নাগরিক হিসেবে বসবাস করবে। ভারতবর্ষের মুসলমানরাও সমান অধিকার পাবে। পাকিস্তানের মুসলমানরা যেমন হিন্দুদের ভাই হিসেবে গ্রহন করবে, ভারতবর্ষের হিন্দুরাও মুসলমানদের ভাই হিসেবে গ্রহন করবে। এই সময় আমাদের বক্তৃতার ধারাও বদলে গেছে। অনেক সময় হিন্দুদের সাথে বসে ঘন্টার পর ঘন্টা এ নিয়ে আলোচনা হত। কিছুতেই তারা বুঝতে চাইতো না। ১৯৪৪-৪৫ সনে ট্রেনে-স্টীমারে হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে তুমুল তর্ক বিতর্ক হত। সময় সময় এমন পর্যায়ে আসতো যে, মুখ থেকে হাতের ব্যবহার হবার উপক্রম হত। এখন আর মুসলমান ছেলেদের মধ্যে মতবিরোধ নাই। পাকিস্তান আনতে হবে এই একটাই স্লোগান সকল জায়গায়।
একদিন হক সাহেব আমাদের ইসলামিয়া কলেজের কয়েকজন ছাত্র প্রতিনিধিকে খাওয়ার দাওয়াত করলেন। দাওয়াত নেব কি নেব না এই নিয়ে দুই দল হয়ে গেল। শেষ পর্যন্ত আমি বললাম,
“কেন যাব না? নিশ্চয়ই যাব। হক সাহেবকে অনুরোধ করবো মুসলিম লীগে ফিরে আসতে। আমাদের আদর্শ যদি এত হালকা হয় যে, তাঁর কাছে গেলেই আমরা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে চলে যাবো, তাহলে সে পাকিস্তানের আন্দোলন না করাই উচিৎ।” ........................ ........................... ..........................................
........................ শেরে বাংলা আমাদের নিয়ে খেতে বসলেন এবং বললেন, “আমি কি লীগ ত্যাগ করেছি? না, আমাকে বের করে দেয়া হয়েছে ? জিন্নাহ সাহেব আমাকে ও আমার জনপ্রিয়তাকে সহ্য করতে পারেন না। আমি বাঙ্গালী মুসলমানদের জন্যে যা করে ছি জিন্নাহ সাহেব সারা জীবনেও তা করতে পারবেন না। বাঙ্গালীদের স্থান কোথাও নাই, আমাকে বাদ দিয়ে নাজিমুদ্দিনকে নেতা করার ষড়যন্ত্র ।” আমরাও আমাদের মতামত বললাম। একরামুল হক বলল, “স্যার আপনি মুসলিম লীগে থাকলে আর পাকিস্তানকে সমর্থন করলে আমরা বাংলার ছাত্ররা আপনার সাথে না থেকে অন্য কারো সাথে থাকতে পারিনা। পাকিস্তান না হলে মুসলমানদের কি হবে?” শেরে বাংলা বলেছিলেন, “১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাব কে করেছিলো, আমিই তো করেছিলাম! জিন্নাহকে চিনতো কে ?” আমরা তাঁকে আবার অনুরোধ করে সালাম করে চলে আসলাম। আরও অনেক আলাপ হয়েছিলো, আমার ঠিক মনে নাই। তবে যেটুকু মনে আছে সেটুকু বললাম।
............................. ......................................... .....................................
শহীদ সাহেব ছিলেন উদার, কোন সংকীর্ণতা ছিলো না তার কাছে। কিন্তু অন্য নেতারা কয়েকদিন খুব হাসি তামাশা করেছেন আমাদের সাথে। আমি খুব রাগী আর একগুঁয়ে ছিলাম, কিছু বললে কড়া কথা বলে দিতাম। কারো বেশি ধার ধারতাম না। আমাকে যে কাজ দেয়া হত আমি তা নিষ্ঠার সাথে করতাম। ভীষনভাবে পরিশ্রম করতে পারতাম, সেইজন্যে আমি কড়া কথা বললেও কেউ কিছু বলতো না আমাকে। ছাত্রদের বিপদে আপদে তাদের পাশে দাঁড়াতাম আমি। কোন ছাত্রের কি অসুবিধা হচ্ছে, কোন ছাত্র হোস্টেলে জায়গা পায় না, কার ফ্রি সিট দরকার, আমাকে বললেই প্রিন্সিপাল ডঃ জুবেরী সাহেবের কাছে হাজির হতাম। আমি অন্যায় আবদার করতাম না। তাই শিক্ষকরা আমার কথা শুনতেন। ছাত্ররাও আমাকে ভালোবাসতো। হোস্টেল সুপারিন্টেন্ডেন্ট সাইদুর রহমান সাহেব জানতেন, আমার অনেক অতিথি আসতো। বিভিন্ন জেলার ছাত্রনেতারা আসলে কোথায় রাখবো, একজন না একজন আমার সীটে থাকতোই ! কারণ সীট না পাওয়া পর্যন্ত আমার রুমই তাদের ফ্রি রুম।
একদিন বললাম , “স্যার, কোন ছাত্র রোগগ্রস্ত হলে যে কামরায় থাকে, সেই কামরাটা আমাকে দিয়ে দেন। সেটা অনেক বড় কামরা। দশ-পনেরো জন লোক থাকতে পারে।”
বড় কামরাটায় একটা বিজলী পাখাও ছিল। নিজের কামরাটা তো থাকলোই।
তিনি বললেন, “ঠিক আছে, দখল করে নাও। কোন ছাত্র যেন নালিশ না করে।” বললাম, “কেউই কিছু বলবে না। দুএকজন আমার বিরুদ্ধে থাকলেও সাহস পাবে না।”
♣♣♣♣♣♣♣♣♣♣♣
ইনারা পাকিস্তান আনার জন্যে এরকম পাগল হয়ে গেসিলেন... হিন্দুরা মনে হয় খুব বেশিই Discrimination and domination করত! তবে কামরা দখলের ব্যাপারটা ঠিক ভালো লাগলো না। উনার এইরকম একগুঁইয়েমীর কারণেই উনার বদনাম হয়েছে পরে।
©somewhere in net ltd.