![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি সাকিব শাহরিয়ার। যেহেতু পৃথিবীর বুকে নিজের অস্তিত্ব অনুভব করি সেহেতু আমি একজন মানুষ। তবে বিবেকের কাঠ গড়ায় দাড়ালে কতটা হতে পেরেছি তা বলতে পারি না। তবুও আমি একজন মানুষ বা মানুষ হওয়ার প্রত্যাশায় তপস্যা রত এক সত্তা বলে নিজেকে পরিচয় করিয়ে দিতেই বেশি সম্মান বোধ করি।
মাইকেল এনঞ্জ্যালো বিখ্যাত ইতালিয়ান পেইন্টার একবার চিন্তা করলো এনঞ্জ্যাল মানে দেবতার ছবি আকবেন। যেই চিন্তা সেই কাজ। দেবতার ছবি তাকে আকতেই হবে। একাকী নিভৃতে বসে অনেকক্ষণ ভাবলেন কিভাবে একটা এনঞ্জ্যালের ছবি আকবেন?? কিন্তু ভেবে ভেবে কোনো কূল কিনারা করতে পারছিলোনা কিভাবে আকবে একটা দেবতার ছবি?? দেবতারা দেখতে কেমন হয়?? কিভাবে আকলে মানুষ সত্যিই একটা ছবিকে দেবতা বলে বিশ্বাস করে নেবে?? দেবতারা কি লম্বা হয় না খর্ব হয়; কালো হয় না ফর্সা হয়?? এইসব হাজারো প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিলো তার মাথায়। তবু দেবতার ছবি তাকে আকতেই হবে এই ব্রত নিয়ে সে বেরিয়ে গেলো বিশ্ব ভ্রমনে। দেবতাকে তার খুজে বের করতেই হবে। ঘুরতে ঘুরতে ক্লান্ত এনঞ্জ্যালো একদিন পেয়ে গেলো দেবতা সদৃশ কিছু একটা। ফাটাফাটি, এনঞ্জ্যালো কনভিন্সিড। এটাকে দেবতা হিসেবে আকলে সবাই বিশ্বাস করবেই যে সে দেবতা। সেটা ছিলো মায়ের কুলে শুয়ে দুগ্ধ পানরত ফুটফুটে সুন্দর একটি ছোট্ট শিশু। মাইকেল এনঞ্জ্যালো শিশুটির মাকে তার আইডিয়া খুলে বলল। মা এক মুহূর্তেই রাজি হয়ে গেলেন!! নিজের সন্তানকে দেবতা বানাতে কোন মা'ই বা চাইবে না! এভাবেই আকা হয়ে গেলো দেবতার ছবি। সমস্ত পৃথিবীজোড়া রব পরে গেলো মাইকেলের দেবতার ছবি। রেকর্ড পরিমাণ বিক্রি হলো তার ছবি। পৃথিবীময় নাম ছড়িয়ে পড়ল তার।
অনেক বছর পর। আবার এক খেয়াল চেপে বসলো মাইকেলের মাথায়। সে এবার ডেমন মানে শয়তানে ছবি আকবে। কিন্তু এইকাজটা তার কাছে খুবই চ্যালেঞ্জিং মনে হচ্ছিলো কারন কোনো মানুষকে পৃথিবীময় শয়তানের মডেল বানানো হবে এটা কেউ মেনে নিতে চাইবে না। কারন সবাই নিজেকে আপন মনে হিরোই মনে করে ভিলেন কেউ হতে চায় না। কিন্তু মাইকেল ও নাছোড়বান্দা শয়তানের ছবি তাকে আকতেই হবে। আবার সে বেরিয়ে পড়লো পৃথিবী ভ্রমণে। খুজতে খুজতে সদ্য নিষিদ্ধ পল্লী থেকে বের হওয়া প্রচন্ড রকমের বদক্ষত চেহারার এক মাতালকে তার ভালো লেগে গেলো। শয়তানের মডেল হিসেবে একদম পারফেক্ট ম্যাচ। কিন্তু মাইকেল ইতোস্তত করছেন কিভাবে তাকে শয়তানের মডেল হওয়ার জন্য অফার করবেন? তাই মাইকেল সংকোচ পদে ঘুরছেন তার পিছু পিছু। লোকটা বুঝতে পেরে তাকে জিজ্ঞেস করলো:
আমায় কিছু বলবেন স্যার?
হুম।
তো বলেন পিছে পিছে ঘুরছেন কেন?
তোমার জন্য আমার একটা প্রোপজাল আছে, যত টাকা চাও পাবে।
কি প্রোপজাল?
ইয়ে মানে….
ইতোস্তত করতে হবে না আমি জানি স্যার।
কি জানো?
শয়তানের মডেল হিসেবে আমাকে আপনার পছন্দ হয়েছে, তাই না স্যার?
হুম কিন্তু তুমি বুঝলে কিভাবে?
শুনলাম দেবতার ছবি আকা পর নাকি আপনার শয়তানে ছবি আকার খেয়াল চেপেছে!
তুমি আমকে চিনো?
হ্যা, স্যার।
কিন্তু কিভাবে?
সেইসব গল্প নাহয় পরে হবে? টাকা লাগবে না আমি এমনিতেই মডেল হতে রাজি আছি। কাজ কখন শুরু করবেন স্যার?
এখনি শুরু করি চলো।
তারপর কিছুদিন চেষ্টা করে মাইকেল এনঞ্জ্যালো সফলভাবে একটা শয়তানের ছবি আকা শেষ করল। মাইকেলকে প্রচন্ড প্রফুল্ল দেখাচ্ছিল। বাজারে ছবিটা ছাড়লে তার যে খ্যাতি ও পয়সা উপার্জন হবে সেটা ভেবে তার চোখ চকচক করছিলো। ফিনিশিং এ সে এতটাই প্রফুল্ল ছিলো যে সে তার মডেলে দিকে ভালো করে তাকানই নাই। তিনি একটা শয়তান তৈরির কাজে নিজেকে পুরু মাত্রায় মনোনিবেশ করেন। এবার তার চোখ পড়লো মডেলে দিকে। অবাক দৃষ্টিতে চেয়ে দেখলেন তার দু'চোখ দিয়ে গড়িয়ে পানি পড়ছে। মাইকেল বলল:
কি ব্যাপার কাদছো কেন? আমি তোমাক আগেই বলেছি তুমি শয়তানের মডেল।
না স্যার এজন্য কাদছি না।
তাহলে কাদছো কেন?
(পকেট থেকে পুরানো ভাজ করা একটা ছবি বের করে মাইকেলের হাতে দিয়ে বলল) স্যার ছবিটা চিনতে পারছেন?
(মাইকেলের মুখে এক চিলতে হাসি) চিনতে পারব না কেন, এটাতো আমারই আকা দেবতার ছবি।
স্যার ছবিটাকে চিনতে পারলেন আর ছবির মানুষটাকে চিনতে পারলেন না?
মানে?
মানে খুব সহজ স্যার। বিশ বছর আগে এই চেয়ারে বসিয়ে যাকে দেবতা বানিয়ে ছবি একেছিলেন। আজ বিশ বছরপর সেই একই ব্যাক্তিকে একই চেয়ারে বসিয়ে শয়তান বানিয়ে ছবি আকলেন স্যার। আমি হলফ করে বলতে পারি স্যার, আপনার আজকের আকা শয়তানের ছবিটার বাজার কাটতি কোনো অংশেই বিশ বছর আগে আকা দেবতার ছবির বাজার কাটতি থেকে কম হবে না। জানেন স্যার, আপনার দেয়া এই সৌজন্য কপিটা আমি আজ অবদি বুক পকেটে নিয়ে ঘুমাই আর ভাবি আমি একদিন সত্যি সত্যি দেবতা হব। পুন্য নদীতে স্নান করে মুছে ফেলবো জীবনের সমস্ত পাপ। কিন্তু আজ মনে হচ্ছে না স্যার, আমাদের মত কিছু শয়তানের সমাজে থাকা উচিত নয়ত কাদের ছবি একে আপনারা ব্যাবসা করবেন? কারা আপনাদের আকাশ ছুয়া খ্যাতি দিবে? এই ছবিটা রেখে দেন স্যার; এটার আমার আর কোনো প্রয়োজন হবে না। শয়তানের ছবিটার একটা সৌজন্য কপি পাঠিয়ে দেবেন স্যার, আগামীকাল থেকে সেটাই বুক পকেটে নিয়ে ঘুমাব। আসলে কি জানেন স্যার, আপনাদের পয়সা - খ্যাতি কোনো কিছুতেই কোনো ঘাটতি থাকে না, ঘাটতি থেকে যায় শুধু আমাদের দেখা স্বপ্নগুলোতে। (একটি সত্য ঘটনার আমার এডাপটেশন)
২৬ শে আগস্ট, ২০১৬ রাত ১০:২৪
সাকিব শাহরিয়ার বলেছেন: ভাবেন। ভেবে কিছু পেলে জানাবেন। ধন্যবাদ!!
©somewhere in net ltd.
১|
২৬ শে আগস্ট, ২০১৬ রাত ১০:০৯
মোঃ আক্তারুজ্জামান ভূঞা বলেছেন: ভাবাচ্ছে গল্পের থিমটা।