নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বিবর্ন স্বপ্নাবলী নিয়ে অর্ধ জীবন্ত এক অস্তিত্ব আমি। খুব সতর্ক পায়ে হেটে চলি এই ভূমন্ডলে ও স্থির দৃষ্টিতে চেয়ে থাকি শূন্য পানে নিজের অস্তিত্বের ব্যাখ্যা খুঁজতে।

সাকিব শাহরিয়ার

আমি সাকিব শাহরিয়ার। যেহেতু পৃথিবীর বুকে নিজের অস্তিত্ব অনুভব করি সেহেতু আমি একজন মানুষ। তবে বিবেকের কাঠ গড়ায় দাড়ালে কতটা হতে পেরেছি তা বলতে পারি না। তবুও আমি একজন মানুষ বা মানুষ হওয়ার প্রত্যাশায় তপস্যা রত এক সত্তা বলে নিজেকে পরিচয় করিয়ে দিতেই বেশি সম্মান বোধ করি।

সাকিব শাহরিয়ার › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাপজানের বায়স্কোপ: হালকা নামের ভারী সিনেমা।

১৭ ই নভেম্বর, ২০১৬ রাত ৯:৫৮


মুক্তি পাওয়ার অনেক আগে থেকেই চিকামারা প্রচারণা দেখছিলাম সিনেমাটার। নামটা খুবই ভালো লেগেছিল। ভাবছিলাম দেখবই সিনেমাটা। হলে গিয়ে দেখারই প্ল্যানিং ছিল। কিন্তু নানা ব্যাস্ততায় আর হয়ে উঠে নি। সেদিন ইউটিউব এ লিংক পেলাম। সাথে সাথে দেখে ফেললাম। মুক্তিযোদ্ধ পরবর্তী সামাজিক অবস্থা একটা চরের প্রেক্ষাপটে অসম্ভব সুন্দর ফুটে উঠেছে সিমেটার গল্পে। তবে থিমটা খুব মনে নাড়া দিচ্ছিলো না। মনে হচ্ছিলো না যে এটা আমার সমাজের গল্প বরং মনে হচ্ছিলো কেউ ইগল পাখির চোখে এই সমাজটাকে দেখে এক ছু মেরে গল্পটাকে নিয়ে এসেছে সিনেমা হলে। কারন আমার জন্ম ও বেড়ে উঠা পুরাটাই বাংলাদেশে এবং গ্রামে। আমি কখনো মুক্তিযোদ্ধের বিরোধী শক্তিকে ততটা মাথা উচু করে চলতে দেখিনি যতটা দেখানো হয়েছে এই গল্পটাতে। আর একজন বায়স্কোপ ওয়ালা মুক্তিযোদ্ধের সত্যি ঘটনা বলবে আর তার প্রচারণা বন্ধ করে দিতে বলবে এত বড় বুকেরপাটা বাংলার মাটিতে কারো আছে বলে মনে হয় না। কারন আমাদের জাতিগত সর্বোচ্চ আবেগের জায়গা এটা। এখানে কেউ আঘাত করলে সাথে সাথে গনপিটুনীতে প্রান বায়ু বের হবে। তবে হ্যা এই আবেগ কে নিয়ে অনেকে রাজনৈতিক ব্যাবসায় নামে যেমন ধর্ম নামক আফিমকে নিয়ে অনেক হুজুর নামে। তাদের প্রচারনা বন্ধ করলে সাধারণ মানুষ কিছু বলে না। কারন সাধারণ মানুষ ব্যাবসা আর আবেগের পার্থক্য করতে জানে। বায়স্কোপ ওয়ালা আবেগী শ্রেণীর লোক ছিলেন ব্যাবসায়ী না। তাই তার বায়স্কোপ থামাতে বললে গ্রামের মানুষ মোড়লকে তাৎক্ষণিক গনপিটুনী না দেওয়ার, প্রশ্নই আসে না। গল্পে আর একটি লক্ষ্যনীয় দিক হচ্ছে চরের মোড়ল স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি মুক্তিযোদ্ধের চেতনার বিরোদ্ধে ক্ষেপে যায় কারন তার উপরস্থ শক্তি সিকান্দারের বিরোদ্ধে বায়স্কোপ এ প্রচারণা চলছে যা তার প্রভুর কানে গেলে সে শেষ কারন সিকান্দার সামনে নির্বাচন করবেন। কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে প্রভাবশালী সিকান্দারের বিরোদ্ধেও তো কেউ নির্বাচন করবে আর সেটা নিশ্চই কাছাকাছি ক্ষমতার কেউ। সে কেনো বায়স্কোপ ওয়ালার পৃষ্ঠপোষকতা করলো না? আমাদের সমাজের ভিলেজ পলিটিক্স গুলোতো তেমনি? না? আর তিন দিন লবন ছাড়া তরকারী খাবে পুড়া গ্রামের মানুষ শুধু মাত্র দুইজন মানুষের গোয়ার্তমির জন্য এটা অবাস্তব। হয়ত বায়স্কোপ ওয়ালা মাইর খাইতেন নয়ত মোড়ল। তাই গল্পের কাহিনীবিন্যাস গনমানুষের হয়নি হয়েছে লেখকের চাপিয়ে দেয়া ঘটনাবিন্যাস।


গল্পের সিনেমাটোগ্রাফিটা ছিল অসম্ভব নান্দনিক। চরের ওয়াইড এয়্যাঙ্গেল শটগুলো; সাসপেন্স ক্রিয়েট কররার জন্য ক্যামেরার যার্ক; শেষ মারামারির জন্য সাসপেন্স ক্রিয়েশন; মোড়লকে মোড়লের লাঠিয়াল কর্তৃক ধাওয়া; প্রচণ্ড সাসপেন্স সহ একটা দৃশ্য দিয়ে শুরু হওয়া; গ্রামের মানুষের বায়স্কোপ ওয়ালার কাছে লবণ চাওয়া ইত্যাদি দৃশ্যগুলো ধারনে চিত্র গ্রাহক মেহেদি রনি অনেক মুন্সিয়ানার পরিচয় দিয়েছেন।


এবার চরিত্র বিন্যাস ও অভিনয় প্রসঙ্গে আসা যাক। মোড়ল এর চরিত্রে শহীদুজ্জামান সেলিম কাপিয়ে অভিনয় করেছেন। বোধহয় নিজের জাতটা আবার চিনিয়েছেন। কোনো অংশে কম যায়নি তার নয়া বউও। তবে শহীদুজ্জামান সেলিম এর কস্টিউমটা তার ক্যারেক্টার এর সাথে যাচ্ছিলো না। জিন্স প্যান্ট হাফ শার্ট ইত্যাদি পরার চেয়ে লুঙ্গী পাঞ্জাবি পরলে বেশি আকর্ষণীয় হত ক্যারেক্টারটা। চোখে ভারি সুরমা আর টানা গোফও ব্যাবহারের সুযোগ ছিল। হোসেন মোল্লার চরিত্রে শতাব্দি ওয়াদুদ এর অভিনয় ও ছিলো উপভোগ্য। নতুন পরিচালকদের সিনেমাগুলো তে যে ভুলটা প্রায়ই চোখে পরে তা হচ্ছে অভিনেতাদের কাচা অভিনয় কিন্তু বাপজানের বায়স্কোপ এই দোষে দুষ্ট নয়।


এবার চরিত্র বিন্যাসের ব্যাপারে আসা যাক। বাপজানের বায়স্কোপ এর বাপজানকে প্রথমে কিছুক্ষণ পর পর পর্দায় দেখালে ও পরবর্তীতে আর বাপজানকে দেখানো হয়নি যাতে করে একটি শক্তিশালী চরিত্র মুখ থুবড়ে পরে। একটি তুচ্ছ ঘটনায় মোড়লের বউয়ের তার লাঠিয়াল এর সাথে বিছানায় যাওয়ায় চরিত্রটা অঙ্কুরে বিনষ্ট হয় যদিও চরিত্রটা অসম্ভব মাত্রায় সম্ভাবনা জাগিয়েছিল। ছবি আকা কিশোর ছেলেটাকে আর একটু প্রানচঞ্চল করে উপস্থাপন করলে শেষে সিম্পেথি বেশি পাওয়া যেত। মোড়লের সহযোগী লাঠিয়াল এর সাথে কিশোর এর তেমন কোনো ঘনিষ্ঠতা দেখা যায়নি স্ক্রিপ্ট এর শুরুর দিকে কিন্তু কিশোর খুন হওয়ার পরে নৌকার মধ্যে একটি সীন এ দেখানো হয় তার সাথে লাঠিয়াল এর খুব ভালো সম্পর্ক ছিল। এটা স্ক্রিপ্ট রাইটার এর চাপানো আবেগ বলে মনে হয়েছে। কিশোর এর মায়ের চরিত্রটাকে কিশোরের মা না হয়ে খালাম্মা বলে মনে হয়েছে। কারন কোনো মা তার সন্তানকে নিশ্চিত বিপদের মুখে ফেলতে পারে না যেটা এ সিনেমায় দেখানো হয়েছে। তাই বলা চলে চরিত্রায়নে স্ক্রিপ্ট রাইটার এর হাত অনেক বেশি পাকাতে হবে।


সবশেষে, নামকরণ প্রসঙ্গে আসা যাক। বাপজানের বায়স্কোপ নামটা খুবই অকর্ষণীয় একটি নাম। শুনলে মনে হয় সিনেমাটা কমেডি সিনে ঠাসা। কিন্তু পুরো সিনেমাটা এত্তো বেশি সিরিয়াস যে অল্পের জন্যেও ঠোট ফাক করতে পারি নি। তাই বলা চলে হালকা নামের ভারি সিনেমা এটি।




মন্তব্য ৩ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে নভেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৪০

কামরুল ইসলাম রুবেল বলেছেন: লিংকটা?

০৬ ই অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৪:১৭

সাকিব শাহরিয়ার বলেছেন: ইউটিউবে বাপজানের বায়োস্কোপ লিখে সার্চ করলেই পেয়ে যাবেন।। ধন্যবাদ ভাই।

২| ২১ শে নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ১০:৩৩

তামান্না তাবাসসুম বলেছেন: ইউটিউবে কয়দিন ধরেই দেখি সাজেশনে আসছে মুভিটা। আপনার রিভিউ পড়ে মনে হচ্ছে দেখতে হবে।

মুভি মুক্তির আগে তো তেমন প্রচারনা হয়েছে বলে মনে হয় না। কাহিনী যেমন তাতে তো সোশাল মিডিয়ায় লেখালেখি হওয়ার কথা ছিলো। বা এমনও হতে পারে আমিই শুনিনি।

সুন্দর রিভিউ :)

০৬ ই অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৪:১৯

সাকিব শাহরিয়ার বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই। দুঃখিত অনেক দেরিতে রিপ্লাই করার জন্য।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.