![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি সাকিব শাহরিয়ার। যেহেতু পৃথিবীর বুকে নিজের অস্তিত্ব অনুভব করি সেহেতু আমি একজন মানুষ। তবে বিবেকের কাঠ গড়ায় দাড়ালে কতটা হতে পেরেছি তা বলতে পারি না। তবুও আমি একজন মানুষ বা মানুষ হওয়ার প্রত্যাশায় তপস্যা রত এক সত্তা বলে নিজেকে পরিচয় করিয়ে দিতেই বেশি সম্মান বোধ করি।
এই তোকে তো কাল টিভিতে দেখলাম।
হুম, লিপস্টিকটা খুব সুন্দর ছিল না? সাদা শাড়ি লাল পাড়ের সাথে লাল লিপস্টিক ফাটাফাটি লাগছিল না?
ধুর, রাখ তোর ফাটাফাটি। এমন করে মান ইজ্জত মারতে পারলি?
ইজ্জত মারলে যদি কারো দু’পয়সা ইনকাম হয় তো ইজ্জত মারতে সমস্যা কি? আমি তো আর ইজ্জত সর্বস্ব প্রাণী না, তাই না?
আমি তোর সাথে বিতর্ক প্রতিযোগিতা করতে আসি নি।
তাইলে কেনো এসেছিস তা সোজাসুজি বলে ফেল।
আচ্ছা আমি যে তোকে কাল রাতে পঁচিশ বার ১৪২৫, ১৪২৫ লিখে নববর্ষের শুভেচ্ছা পাঠালাম, সেটা তুই ভুলে গেলি কিভাবে?
কে বললো ভুলে গেছি? আমিও তো তোকে কার যেন একটা মেসেজ কপি করে পাঠালাম?
আরে তা না গাধী কোথাকার, আমি সেটা বলি নি।
তাইলে কি বলেছেন পন্ডিত মশাই?
কাল টিভি ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে এমন হাবলার মত জিগ্যেস করলি কেন, “এই এটা জানি কত সাল?” আর তুই বাংলা ঋড়ঋতুর নাম জানিস না?
আহ্, তা- আমি ভাবলাম কি না কি! না জানার কি আছে?
তাইলে কাল বললি না কেন টিভি ক্যামেরার সামনে?
বললে কি আমাকে টিভি তে দেখাত?
দেখাত না মানে?
মানে খুব সহজ। মিডিয়ার দরকার এমন কিছু মানুষ যারা বাংলা সাল ও ঋড়ঋতুর নাম জানে না অথচ পহেলা বৈশাখ পালন করে। কারন এসব মানুষ নিয়ে নিউজ করলে দর্শক খাবে ভালো। আর দর্শক খেলে বাড়বে চ্যানেলের ব্যাবসা। আমারে হাবলা বানিয়ে যদি কেউ একটু ব্যাবসা করতে পারে তো করুক না, ক্ষতি কি? তাদেরও লাভ আমারও লাভ। উইন উইন ডিল বুঝলি, হাদারাম?
না, বুঝলাম না তুই কিভাবে উইন করলি?
আরে, আমার মত সাধারণ একটি মেয়ে খবর হয়ে গেলো। সোস্যাল মিডিয়ায় আমি ভাইরাল। আর কি উইন চাই তোর।
অহ, এই যদি তোর উদ্দেশ্য হয় তো তোর জন্য আর একটা বুদ্ধি আছে নিবি?
দে দে।
সামনে চার রাস্তার মোড়ে দিগম্বর হয়ে দাঁড়ায় থাক, দেখবি একটা না দেশের সবক’টা চ্যানেল তোকে লাইভ দেখাচ্ছে। তুই হয়ে যাবি আজকের তাজা খবর।
অহ, এই বুদ্ধি? না, এটা এখন ইমপ্লিম্যান্ট করা যাবে না।
কেনো?
কারন এটা এখন ইমপ্লিম্যান্ট করলে মানুষ পাগল বলবে।
অহ আচ্ছা, তাইলে কখন দিগম্বর হলে মানুষ সুস্থ বলবে?
আচ্ছা, তুই তো বিজনেস ফেকাল্টির স্টুডেন্ট, বলতো কখন একটা প্রোডাক্ট এর দাম বাড়ে?
যখন তার মধ্যে নতুন ভ্যালু ক্রিয়েট হয়।
গুড, তাই আমি তখন দিগম্বর হব যখন আমার দেহে সেলিব্রিটির ভ্যালু ক্রিয়েট হবে। কারন তখন শুধু আমি দিগম্বর হব না; দিগম্বর হবে একজন সেলিব্রিটি। একজন দিগম্বর মানুষ মূল্যহীন হতে পারে কিন্তু দিগম্বর সেলিব্রিটির মূল্য কোটি টাকা।
বাহ্, বিলিয়ন ডলার বিজনেস প্ল্যান। আচ্ছা তখন দিগম্বর হলে তোকে পাগল বলবে না কেন?
আর্কিমিডিস ইউরেকা ইউরেকা বলে দিগম্বর হয়ে যখন রাস্তায় দৌড়াল তখন কেন জানিস তাকে সবাই পাগল বললো?
কেনো?
কারন তিনি তখনো সেলিব্রিটি হননি। যদি সেলিব্রিটি হতেন তো সবাই ভাবত তিনি ঠিকি আছেন। হয়তোবা নতুন কিছু নিয়ে গবেষণা করার জন্যে তিনি রাস্তায় নেমেছেন। বুঝলি?
হুম বুঝলাম। তার মানে ভবিষ্যতে তোরও দিগম্বর হয়ে রাস্তায় নামার সম্ভাবনা আছে, তাই না?
তুই এত ক্ষেত কেন রে রাফতি?
এখানে ক্ষেতের কি পাইলি মলি?
এখন রাজনৈতিক নেত্রীরা ছাড়া কেউ রাস্তায় দিগম্বর হয়? আমি কি নারী নেত্রী নাকি যে হরতাল এ ইচ্ছে করে পাতলা কাপড় পরে আসব আর পুলিশের সাথে ধস্তাধস্তি করে রাস্তায় তা ছিঁড়ে দিগম্বর হব? নাহ্, রাস্তায় দিগম্বর হওয়ার পাত্রী আমি না।
অহ, আপনি তো বড় মাপের সেলিব্রিটি হবেন তাই রাস্তায় দিগম্বর হওয়া আপনাকে মানায় না; আপনি তো দিগম্বর হবেন বড়বাবুদের বেডরুমে, তাই না?
আরে ধ্যাতেরিকা, সেটা তো বাজার রক্ষা করার জন্যে কত জনে হয় কে কার খবর রাখে? বেড রুমে দিগম্বর হলে কি কেউ দেখতে পাবে নাকি?
তাইলে আপনি কোথায় দিগম্বর হবেন শুনি?
সিনেমার পর্দায়।
মানে?
হুম, দেখিস একদিন আমি হার্টথ্রব নায়িকা হবার।
তারপর?
তারপর যখন আমার জনপ্রিয়তা কমতে থাকবে তখন কোন একটা মুভিতে আমি দিগম্বর হব।
তাই নাকি!
হুম, চারদিকে আমায় সবাই ছিঃ ছিঃ করতে থাকবে। মৌলবাদীরা আমাকে পাগলের মত খুঁজবে মারার জন্য। আমার মস্তকের দাম হবে লাখ টাকা। সমাজের সবচেয়ে বোকা শ্রেণীর মানুষ এরা যারা ফ্রি তে আমাদের মত মানুষকে সেলিব্রিটি বানিয়ে দেয়। আর আমাদের মত চতুর মস্তিষ্কের একদল লোক ঠকিয়ে রূপালী পর্দায় ঝলমলে আলোতে নিজের চেয়ার পোক্ত করে।
বুঝলাম, তারপর কি হবে?
তারপর একদল প্রগতিবাদী আমার পক্ষ নেবে। যদিও তারা সংখ্যায় কম কিন্তু ভোকাল অনেক বড়। সোস্যাল মিডিয়ায় আমাকে নিয়ে ঝড় উঠবে। আমার উপর আবার পড়বে আমার প্রত্যাশিত সে আলো। বড় বড় চ্যানেলে আমার টক শো প্রচারিত হবে। আমি দম্ভ করে বলব আমরা বাঙালি রা বাঙাল থেকে গেলাম আজীবন। অথচ এটা স্বীকার করব না যে আমরা বাঙাল বলেই আমার মত শরীর সর্বস্ব প্রাণীরা সেলিব্রিটি হয়। বরং বলব, আমরা চিন্তা চেতনায় আধুনিক হতে পারব না কখনো যেন আমাদের আধুনিক চিন্তা চেতনা সব নগ্নতায় নিবদ্ধ। তারপর বলবো, “ফিল্ম এ্যাসথেটিকস” এর জায়গাটা আমরা ধরতে পারি না এটাই আমাদের সমস্যা। এই দৃশ্যটা নগ্নতা ডিমান্ড করে তাই আমি নগ্ন হয়েছি। তবে এখানে আর একটা মজার ব্যাপার কি আছে জানিস? মলি রফতি কে জিজ্ঞেস করে।
কি? রাফতি জানতে চায়।
সিনেমাটি রিলিজ হবে। চারিদিকে তর্ক-বিতর্কের হিড়িক পড়ে যাবে। আর এ বিতর্ক হুড়মুড় করে মানুষ কে সিনেমা হল মুখী করবে। প্রডিউসার এর পকেট ভারী হবে। হল মালিকদের মুখে হাসি ফুটবে। যারা আমার নগ্নতা নিয়ে ফেসবুকে আমার চৌদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করেছে তারাই চুপি চুপি দেখবে নগ্ন আমাকে কেমন লাগে। ইউটিউব এ ভিউ বাড়বে। ইন্ডাস্ট্রি তে বাড়বে আমার কদর। ব্যবসা বুঝলি সবই ব্যবসা; আর এ ব্যবসার প্রধান হাতিয়ার হচ্ছে আমাদের মত সুন্দরীদের শরীর।
সত্যিই, আমারা সবাই অবচেতন মনে পাপের চাষ করছি কিন্তু মূল উৎপাটন করছি না কেউ। তাই হয়তো খারাপ খবর গুলো বেশির ভাগ সময় পত্রিকার হেডলাইন হয়।
ধুর, তুই আবার কঠিন কথা শুরু করলি কেন? বাদ দে। দিন শেষে সবার পকেটে পয়সা দরকার। সেটা হলেই তো হয়। এত কিছু চিন্তা করে লাভ আছে? যে সমাজে শিক্ষকের চেয়ে ফিল্ম স্টারের দাম বেশি সে সমাজে নীতি-নৈতিকতার বাণী কামাড়ের দোকানে কোরআন পড়ার মতোই! যাইহোক, কাল ক্যাম্পাসে আসিস নাই কেন?
অফিস ছিল।
পহেলা বৈশাখে অফিস!
হুম। বস ভাষণ দিলেন, “ আমরা আজকে দেশের বুকে নাম্বার ওয়ান কোম্পানি কেন জানেন? কারন আপনারা, হ্যাঁ আপনাদের অক্লান্ত পরিশ্রম এর কারণেই আমরা আমাদের সুনাম যুগ যুগ ধরে অক্ষুন্ন রাখতে পেরেছি। আমরা সবাই হার্ড ওয়ার্কিং পার্সন, কি বলেন সবাই?”
সমস্বরে সবাই হ্যাঁ বলে উঠে। কারন যারা হার্ড ওয়ার্কিং পার্সন না, তাদের জায়গা কর্পোরেট না। তাই না বললে চাকরি থাকবে না।
কাজই তো আমাদের জীবনের মূলমন্ত্র, তাই না? বস আবার জিজ্ঞেস করেন।
হ্যাঁ, সবাই সমস্বরে।
না, সাউন্ড পাচ্ছি না সেরকম।
এবার সবাই জুড়ে চিল্লায়, হ্যাঁ।
ইয়েস, দ্যাটস দ্যা সাউন্ড আই ওয়ান্টেড টু হেয়ার ফ্রম ইউ বয়েজ। আচ্ছা তাইলে পহেলা বৈশাখে তো কাজ করতে কারোর কোনো সমস্যা নেই, তাই না?
কার ঘাড়ে মাথা কয়টা! তাই সবাই চিল্লায় সমস্যা নাই বস। আর এ সমস্যা নাই এর সমস্যায় আটকে যায় সবাই কাল। বুঝলি?
বুঝলাম। আচ্ছা তুই বেতন পাস কত তারিখে?
২৫ তারিখ।
ইংরেজি না বাংলা মাসের?
ও মা, তুই কি মঙ্গল গ্রহে থাকিস নাকি? বাংলা মাস ধরে কেউ বেতন পায়?
হা হা হা। সেজন্যই তো আমারা বাংলা মাসের নাম ভুলে যাই। বুঝলি?
না, বুঝি নাই। বেতনের সাথে মাসের নাম মনে রাখার সম্পর্ক কি?
আছে রে আছে। যদি বাংলা মাসে বেতন হত তবে মানুষ তারিখ সহ বাংলা মাসের নাম মনে রাখত। আচ্ছা এবারের পহেলা বৈশাখে ক’জনকে বাংলা ক্যালেন্ডার উপহার দিয়েছিস বা পেয়েছিস?
এভাবে ভেবে দেখিনি।
সেটাই তো সমস্যা রে দোস্ত। কেউ কেউ খুব সচেতন মনে, অতি সংগোপনে বিজাতীয় সংস্কৃতির বীজ বপন করছে আমাদের চারপাশে আর সে বীজ থেকে যখন চারাগাছ জন্ম নেয় তখন তাকে আমরা বনসাই ভেবে যত্ন নিতে থাকি। আস্তে আস্তে বনসাই বটবৃক্ষে রূপান্তরিত হয়। আমরা আহ্লাদে ফেটে পড়ি। তারপর এ বিজাতীয় সংস্কৃতির বটবৃক্ষ যখন আমাদের অস্তিত্ব স্বরূপ আবাসস্থলে হেলে পড়ে; আমরা তখন আমাদের ভুল বুঝতে পেরে চিৎকার শুরু করি। কেউ কেউ আবার সে চিৎকারে মজা পায়; আরামসে সে প্রকাণ্ড বটবৃক্ষের তলায় বসে বাঁশি বাজায় কারন গাছ উল্টায় পড়লে প্রতিবেশীর বাড়ির উপর পড়বে, তাতে তার কি? আর মিডিয়া গুলো “বনসাই থেকে বটবৃক্ষ” টাইপ চটুল নিউজ করে খবরের ভিউয়ার বাড়ায়। কিন্তু বিজাতীয় সংস্কৃতির বটবৃক্ষের বীজ বেচা-কেনা বন্ধ হয় না। বন্ধ হয় না তাদের রূপন। কারন এসব বন্ধ হলে ব্যবসা করবে কি নিয়ে? দেশে চোর না থাকলে তালা-চাবির ব্যবসা চলবে?
ঠিক বলেছিস মলি।
আচ্ছা বলতো বাংলা কত তারিখে একুশে ফেব্রুয়ারি হয়েছিল?
জানি না। এই তুই আবার সাংবাদিক হয়ে গেলি নাকি? কোন গোপন ক্যামরা আছে নাকি তোর কাছে আবার ফেসবুকে ভাইরাল করে দিবি না তো?
হা হা হা। অবস্থা টা এমন যে নাঙ্গা হয়ে দাঁড়িয়ে আছি সেটা লজ্জার না কিন্তু কেউ দেখে ফেললে লজ্জা! আমি ইচ্ছে করে কাল টিভি ক্যামেরার সামনে মজা করেছি। এ মজার একটা সাহিত্যিক নাম আছে, যার নাম “ব্ল্যাক কম্যাডি” বাংলায় কি বলে জানি না। আমি চেয়েছি শিল্প সংস্কৃতির ধারক ও বাহকেরা দেখুক কেমন অন্তঃসারশূন্য একটা বাঙালি জেনারেশন সৃষ্টি করছে তারা।
তাই?
হুম।
আচ্ছা বললি না তো, মলি।
কি?
বাংলা কত তারিখে ভাষা আন্দোলন হয়েছিল?
৮ ই ফাল্গুন সম্ভবত।
সম্ভবত কেন? তুই না বি সি এস দিবি? আর বি সি এস দিলে এইসব মুখস্থ থাকতে হয়। আর হয়ে গেলে পরে ভুলে গেলেও চলে। একটা জিনিস অবাক লাগছে কি জানিস?
কি?
আচ্ছা, আমরা ভ্যালেন্টাইন’স ডে বলে ১৪ এপ্রিলকে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস হিসেবে পালন করতে পারলাম আর ভ্যালেন্টাইন সাহেব কে কি করতেন তার সব ফিরিস্তি এক নিমেষে শিখে ফেললাম অথচ ৮ই ফাল্গুনকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে পারলাম না, ২১ শে ফেব্রুয়ারি'র আশ্রয় নিতে হলো!
এটার একটা কারন আছে, কি জানিস?
না, কি?
কারন আমরা বাঙালি এবং আমাদের জাতিসত্তায় মুনাফেক।
১৬ ই মে, ২০১৮ রাত ১১:৫১
সাকিব শাহরিয়ার বলেছেন: হয়ত বা।
২| ০৩ রা মে, ২০১৮ রাত ১০:২৯
বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: অসাধারণ স্যাটায়ার...
১৬ ই মে, ২০১৮ রাত ১১:৫২
সাকিব শাহরিয়ার বলেছেন: ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১|
০৩ রা মে, ২০১৮ রাত ৮:৪৭
রাজীব নুর বলেছেন: মুহাম্মদ (সাঃ) আক্ষেপ করে তাঁর সাহাবীদের বলেছেন তাঁর মৃত্যুর পরে এমন একটি সময় আসবে যখন আল্লাহর আকাশে নীচে ও জমিনের উপরে সব থেকে খারাপ মানুষ হবে আলেমারা। কেন মুহাম্মদ (সাঃ) চোর, সুদখোর, ঘুষখোর, রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীদের খারাপ বললেন না। বললেন আলেম সমাজ কে । আমার মনে হয় সেই কঠিন সময় উপনীত হয়েছি।