![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লেখালেখি করতে অনেক বোরিং লাগে। কিন্তু ২৪ ঘন্টায় দেখা দিবাস্বপ্ন গুলোর দলিল করতেই হয়।
কিন্তু ততখনে আমি নিশাতের মুখের একদম কাছাকাছি চলে এসেছি। ও আমার চোখের দিকে তাকিয়ে কি যেন খুঁজার চেষ্টা করছে। আমি তখন ওর হালকা ভেজা মুখাবয়বে হারিয়ে গেছি। নিজেকে তুলতে যাবো তখন নিশাত একটা কান্ড করে বসলো। আমার কলার চেপে ধরে কাছে টেনে এনে ঠোঁটে ঠোঁট বসিয়ে দিলো। কতক্ষনের জন্য পৃথিবী থেকে হারিয়ে ছিলাম জানি না। মুহূর্তটার শেষ হলো ফোনের রিংটোনে।
আঙ্কেল আমাদের জন্য গাড়ি পাঠিয়ে ছিলেন। ফেরার পথে আমরা কেউ একটু টু শব্দও করি নি। একবার আড়চোখে তাকিয়ে দেখলাম নিশাত তখনো মুচকি হাসি চেপে রেখেছে। বাসায় আসার পর ভাবি এসে জিজ্ঞাসা করলেন "সময় কেমন কেটেছে ভাইজান?" উনার মুখে তখন সেই হাসি চাপা। তাহলে কি উনি প্ল্যান করেই পাঠিয়েছেন আমাকে? নিশাতও কি এই প্ল্যানের রূপকার? আমার মাথায় তখন হাজার প্রশ্ন কিন্তু উত্তর ছিল একটাই নিশাত আমাকে ভালোবাসে। আমিও যে ওকে অনেক আগে থেকেই মনে বসিয়ে নিয়েছিলাম। আমার অবাক হওয়া হা করা চেহারা দেখে উনি আর হাসি চেপে রাখতে পারলেন না। হো হো করে হেসে উঠলেন আর আমার লজ্জায় মাথা কাটার জোগাড় তখন। সকালে ব্যাপারটা আমাদের পরিবারের সবার জানাজানি হয়ে গেলো যে আমার আর নিশাতের মধ্যে কিছু একটা চলছে। এটার ক্রেডিট অবশ্য ভাবীর। বাবা যখন জানলেন তখন আমার উপর অগ্নিদৃষ্টিপাত করলেন। ফোন বের করে সরাসরি নিশাতকে বাসায় ডাকলেন। এতো বড় ব্যাপার আগে কনফার্ম করবেন নিশাতের নিজ মুখ থেকে শুনে তাই নিশাতের বাবার সাথে আগে কথা বলেন নি এমনটাই জানিয়ে দিলেন সবাইকে।
নিশাত মায়ের পাশে বসে মাথা নিচু করে আছে। বাবা যখন জিজ্ঞাসা করলেন তখন ও লজ্জায় মায়ের কাছে মুখ লুকানোর জন্য আশ্রয় খুঁজতে লাগলো। বাবার আর বুঝতে বাকি রইলো না কিছু। মা তো খবর শোনার পরই এমন হাসি দিয়ে রইলেন যেন আজ ঈদ। আমি তখনো এমনি দাঁড়িয়ে সব দেখে যাচ্ছিলাম। আসলে গতকালকের পর থেকে আমার মাথায় কিছু কাজ করছে না। বাবা আমার দিকে ফিরে তাকালেন। উনার মুখেও কিছুটা সন্তুষ্টির লক্ষণ দেখা যাচ্ছিল। আমার দিকে এগিয়ে এসে বললেন "এমন ভবঘুরে ছেলের সাথে মেয়ের বিয়ে দিয়ে আমি ওর জীবন নষ্ট করতে চাই না। বিয়ে করতে হলে কালকে থেকে সব ছেড়ে অফিসে জয়েন করতে হবে। এবার লাইফ সেটেল করার পালা"। নিশাত আমার দিকে মুখ তুলে তাকালো। সেই মুখে আমি হাজারো ভালোবাসা আর আশার আলো খুঁজে পেলাম। কিন্তু আমার মাঝে যে অন্য চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে। সব কিছু এতো জলদি হয়ে যাচ্ছে যে আমি কিছুই ধারস্ত করতে পারছি না। আমার স্বপ্ন ,আমার এম্বিশন? এগুলা কি এমনি বৃথা যাবে? আমার যে আরো হাজারো কিছু দেখার বাকি। হাজারো নতুন মুহূর্ত অনুভব করা বাকি। এসব কিছু এমনি এমনি তলিয়ে যাবে? আমি কি পারবো?
বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় কেউ আমাকে এগিয়ে দিতে আসে নি। মা আমার মুখ পর্যন্ত দেখতে নারাজ। যখন বাবা নিজের বন্ধুকে খুশির খবর দিতে যাবেন তখন আমি বললাম যে "না। আমি এই বিয়ে করতে পারবো না।" সবাই তখন একটা শকের মধ্যে চলে গেছে। একদম নিস্তব্ধ। নিশাত উঠে দাঁড়ালো তার মুখে রাজ্যের অবাক প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। চোখের কোণায় জমা পানি টুপ করে নিচে পড়লো। আমি তখন বলেই যাচ্ছি "দেখো নিশাত। আমি আমার স্বপ্ন আমার ইচ্ছাকে বছরের পর বছর চেস করছি। এটাই আমার লাইফ। আমি এটা ছাড়া থাকতে পারবো না। আমার এখনো পুরো পৃথিবীটাকে ঘুরে দেখা বাকি। আমি তোমাদের মতো কর্পোরেট লাইফ লিড করতে পারবো না। আমার দুনিয়া অন্য কোথাও এখানে না। আই এম সরি"। নিশাত আর ২ মিনিটও দাঁড়ায় নি। কাঁদতে কাঁদতে চলে গেছে। বাবা এসে কানে গালে একটা চড় বসিয়ে দিলেন। এখনো কানে তাক লেগে আছে। মা আর ভাবি নিজেদের রুমে চলে গেলেন। বাবা বের হয়ে গেলেন। শুধু আমি আর ভাই দাঁড়িয়ে ছিলাম। ভাইয়া কি করবেন তা ডিসাইড করতে পারছিলেন না বোধ হয়। সিলেটে আসার পর কেউ আমার সাথে যোগাযোগ করে নি। মাকে কয়েকবার ফোন দিলাম কিন্তু ধরেন নি। ভাইয়াও না। এখানে আমি কাজে মন বসাতে পারছি না। আমার অনেকদিনের ইচ্ছা ছিল সিলেট আসার। কিন্তু এখন যখন আমি এখানে আমার মন রয়ে গেছে আরেক জায়গায়। সারাক্ষন নিশাতের কথাই ভাবছি। না আর্টিকেল লেখতে পারছি, না হাইকিংয়ে মন বসছে। ঠিক মতো ফটো ক্যাপচার করাও সম্ভব হচ্ছে না আমাকে দিয়ে। হাত কাঁপছে। মন স্থির করে বের হলে কয়েক মিনিট পর আবার সব উল্টা পাল্টা হয়ে যেত। এদিক সেদিক হাঁটাহাঁটি করে ফিরে আসতাম। এভাবে সিলেটের পাহাড়ে শখের ক্যামেরার লেন্সটাও হারিয়ে ফেলেছি। কিন্তু আমার মধ্যে কিছুই কাজ করছিল না নিশাত ছাড়া। ১ সপ্তাহ পর রাতে ফোনে একটা মেসেজ আসলো। "পরশু আমার বিয়ে"।
বুঝতে বাকি রইলো না আর কিছু। ফোন ব্যাক করলাম। সংযোগ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালাম। মন থেকে কোনো জবাব আসছে না।
©somewhere in net ltd.
১|
২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ১০:২৮
ক্লোন বিটস্ বলেছেন: শেষ অংশ এখানে