![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লেখালেখি করতে অনেক বোরিং লাগে। কিন্তু ২৪ ঘন্টায় দেখা দিবাস্বপ্ন গুলোর দলিল করতেই হয়।
কংক্রিটের ব্রিজটা পার হয়েই আমাদের জলপাই রঙের জীপটা কাঁচা রাস্তায় যুদ্ধের সম্মুখীন হলো। এদিকটা থেকেই আনন্দনগর অঞ্চলের শুরু। দু বছর পর আবার ফিরে আসা এখানে। হেলেদুলে চলা জীপটার অবস্থা তখন গরুর গাড়ির মতোই। সেই লেভেলের বৃষ্টিতে রাস্তার অবস্থাও যাচ্ছে তাই। যদিও এখানে বছরের বেশির ভাগ সময়ই বৃষ্টি হয়। জীপের পিছনে বসে এমন পরিবেশের মজা নেয়ার ক্ষমতা শুধু আমারই আছে। তবে ইভান আর প্রীতির কাছে ব্যাপারটা তেমন আয়েশের ঠেকছে না বলে মনে হয়। তাদের হিটলার দা এর মত লুক ঐটাই জানান দিচ্ছে। ব্রিজের উপর উঠার পর ইভান অনেকটা হাসিমুখেই চায়ের ফ্লাক্সটা হাতে নিয়ে ছিল। বাকিটা ইতিহাস। ঢাকা থেকে এতো দূর জার্নি করাটা সহজ ব্যাপার না। ইভান আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু। আর প্রীতির সাথে খুব বন্ধুত্ব থাকলেও ব্যাপারটা এখন কেমন জানি একটু কমপ্লিকেটেড। ইভানকে আমি সাথে জোর করে নিয়ে আসলেও প্রীতি নিজ থেকেই আসবে বলে জেদ ধরে ছিল। কি মনে করেছিল? প্যারিসে আইফেল টাওয়ার দেখতে যাচ্ছি? আন্টি অর্থাৎ প্রীতির মায়ের সাথে আমার খুব ভালো একটা সম্পর্ক। নিজের ছেলের মতোই আদর করতেন। তাই যখন ইচ্ছে গিয়ে লাঞ্চ,ব্রেকফাস্ট, ডিনার সেরে আসতাম। আন্টির সামনে আমি আর প্রীতি ঝগড়া বাঁধিয়ে দিলে আন্টিও আমার পক্ষ নিতেন। এভাবে প্রীতির ব্যবহারটা কেমন পাল্টাতে শুরু করে। ঝগড়ায় নিজেই পরাজয় স্বীকার করে নিতো, ফাইজলামি করে কিছু বললে আগের মতো তেড়ে না এসে লজ্জা পেত ইত্যাদি। কিন্তু এসবের মাঝে চিঠিতে যখন আমাকে জানান দেয়া হলো যে যেভাবেই হোক ২ দিনের মধ্যে আনন্দনগর আসার জন্য তখন মনে একটা অজানা ভয় চেপে ধরলো। চিঠিতেও বিস্তারিত কিছু ছিল না। শেষে শুধু লেখা ছিল "তোমার দাদার হাতে বেশি সময় নেই"
জীপটা থামতেই ইভান লাফ দিয়ে বের হয়ে গেলো। কিন্তু নেমে যা দেখলাম তাতে ইভান কেন আমারও মুখ বাংলার পাঁচের মতো হয়ে গেল। সামনের রাস্তার অনেকখানি জায়গা ভেঙে সেখান দিয়ে পানির তীব্র স্রোতের সৃষ্টি হয়েছে। চারপাশের জমিগুলা জলাতে রূপান্তরিত হয়েছে। অতিবৃষ্টির ফল। মাঝে মাঝে লম্বা বাঁশ দেয়া আছে সাপোর্টের জন্য। এটার মধ্যে দিয়ে কোনো ভাবেই জীপ ঐপাড়ে ভিড়তে পারবে না। বৃষ্টি যদিও থেমে গেছে। ইভান ড্রাইভারের সাথে রীতিমত বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হয়েছে জীপ সামনে যাবে কিনা এই নিয়ে। যুক্তি পাল্টা যুক্তিতে ঝগড়া যখন তুমূলে ড্রাইভার সাহেব তখন ভাড়া আদায় করে জীপ ব্যাক গিয়ারে ফেলে পগার পার। হাতে বেশি সময় নেই জানা ছিল এখানে অন্ধকার খুব তাড়াতাড়ি নেমে আসে। সুতরাং নিজ দায়িত্বেই এটা পার করতে হবে। ব্যাগ কাঁধে নিয়ে কিছু না বলেই প্রীতির হাত ধরে নেমে পড়লাম পানিতে। আমি যে খুব বাহাদুর এমন কিছুই না। আসলে পানিতে নেমে আমার হার্টবিট ভয়ে লাফালাফি শুরু করেছিল। পিছনে ইভান বুকসমান পানিতেই হাবুডুবু খাচ্ছে। প্রীতি আমাকে বেশ ভালোভাবেই আঁকড়ে ধরে আছে আর আমি একহাতে বাঁশে সাপোর্ট নিচ্ছি। মেয়েটার জন্য বেশ মায়া হচ্ছিলো, কি সবে ফেঁসে গেল। ৩০ মিটার এই পথ পাড়ি দিতে প্রায় ৪৫ মিনিট সময় লেগে গেল। পানি থেকে উঠে প্রীতি ঠান্ডায় কাঁপাকাঁপি শুরু করে দিয়েছে। ইভান পারছিল না পথেই শুয়ে পড়ে। অলওয়েজ ওভারএকটিং! আমি আমার জ্যাকেটটা খুলে প্রীতিকে পড়িয়ে দিয়ে টাফ এক্ট করার ট্রাই করলাম। ঠান্ডায় নিজের কাঁপাকাঁপি লুকাতে দাঁতে দাঁত চেপে আছি কিন্তু আমার হাঁটু ব্র্যাক ডান্স করা শুরু করলো। প্রীতি আমার অবস্থা বুঝে মুখ চেপে হাসছে এরপর জ্যাকেটটা খুব আয়েশ করে পড়ে হাটা শুরু করলো।
সামনের পাহাড় থেকে ঠান্ডা বাতাস বয়ে আসছে। আজকে শিওর ১০৪ ডিগ্রি জ্বর বাঁধবে। যখন জমিদার বাড়ির সামনে আসলাম, ততক্ষনে চারদিকে সেই লেভেলের অন্ধকার। এদিকটায় বিদ্যুতের কোনো ব্যবস্থা নেই। এখানে দাঁড়িয়েই মা মা বলে ডাকা শুরু করলাম।
একটুপর গোটা গ্রামের মানুষ জড়ো হয়ে গেল আমাদের আপ্যায়ন করার জন্য। আমার থেকে সবার এট্রাকশন বেশি আমার সাথে জিন্স- জ্যাকেট আর কাঁধে ব্যাগ নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটির দিকে। কেউ কেউ তো বলা শুরু করলো বাড়ির ছোট বাবু বউ নিয়ে আসছে। দাদা যখন নিজের কামরা থেকে বের হয়ে আসলেন তখন উনাকে দেখে একটুর জন্যও মনে হয় নাই যে উনি উনার শেষ সময় গুনছেন বরং এমন মনে হচ্ছিল এখন যদি উনার সাথে কাবাডি খেলতে নামি উনি আমাকে মাথার উপর তুলে আছাড় মারতেও সক্ষম হবেন। উনি এসে আমার আর ইভানের একদম সামনে দাঁড়ালেন। দাদা যেহেতু অনেক বদমেজাজী ছিলেন আর লাস্ট টাইম উনার সাথে ভাব দেখিয়েই বাড়ি ছেড়েছিলাম সেহেতু মনে মনে গুষি বা লাথি কিছু একটার আশঙ্কা করছি। পাশে তাকিয়ে দেখি ইভানেরও আমার মতো ঘাম ছুটছে। ইভানের এসবকিছু জানা আছে। দাদা আমাদের সামনে দিয়ে প্রীতির সামনে গেলেন। প্রীতি বিলম্ব না করে পা ছুঁয়ে দাদাকে সালাম করে নিলো। দাদা যে এতে পুরোপুরি ইমপ্রেসেড তা বুঝতে সময় লাগলো না। "কালু! ছোট বউয়ের বস্তা আর মালপত্র গুলা ভিতরে নিয়ে যা! আর ছোট বৌমা! তোমার ছেলের বউকে ভিতরে নিয়ে আসো। কাক ভিজা ভিজে গেছে একদম" আদেশ দিয়ে উল্টা পথে আবার নিজের কামরায় গিয়ে ঢুকলেন। সবাই প্রীতিকে নিয়ে হৈহুল্লোড় করে ভিতরে চলে গেল। আমি আর ইভান তখনো উঠানে হা করে দাঁড়িয়ে আছি। কি হচ্ছে এসব?
জামাকাপড় পাল্টে রান্নাঘরে চুলোর পাশে বসে আছি। আগুনের উত্তাপ আর হাতে বড় বড় স্টিলের গ্লাসে রং চা, আমার আর ইভানের জন্য এর থেকে ভালো কিছু হতেই পারে না। কিছুক্ষন পর দেখলাম মা প্রীতিকে নিয়ে এসেছে। মায়ের শাড়ী পড়েছে আর তার উপর মায়ের প্রিয় শালটা জড়িয়ে আছে। মা সত্যি সত্যি ওকে বৌমা ভাবছে! পাজিটাও কিছু বলছে না, ভালোই মজা নিচ্ছে। মায়ের ইশারায় ছোট চাচী বড় একটা পাত্র থেকে ধোঁয়া উঠা খিচুড়ি বাড়তে লাগলেন সাথে ভর্তা। আমার আর ইভানের মুখ দিয়ে ততক্ষনে হাফ লিটার লালা ঝরে গেছে। মা আমাকেই আগে দিবে মনে করে আগে আগে হাত বাড়িয়ে দিলাম। কিন্তু খিচুড়ির প্লেটটা প্রীতির হাতে গিয়ে ল্যান্ড করলো। "মা, আপনি খাবেন না?" প্রীতির এই প্রশ্নে মা ইমোশনাল হয়ে গেলেন আর প্রীতির মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। এর মাঝে মা আমাকে আর ইভানকে ভুলেই গেলেন। জেলখানার কয়েদির মতো নিজেই প্লেট তুলে খিচুড়ির পাতিলের সামনে সিরিয়াল দিতে হলো শেষে।
চলবে.
০৬ ই নভেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১:৩৮
ক্লোন বিটস্ বলেছেন: ধন্যবাদ পয়েন্ট আউট করে দেয়ার জন্য
©somewhere in net ltd.
১|
০৬ ই নভেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১২:২৬
আহা রুবন বলেছেন: চলুক। লেখা দু-বার কপি হয়েছে।