নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সালমা রুহী

সালমা রুহী › বিস্তারিত পোস্টঃ

পতাকায় মুড়ানো বীরাঙ্গনার সম্ভ্রম

২৬ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ৮:৩২

"
'২৫ মার্চের রাত, জুলেখা বেগম স্বামী সন্তানকে খাবার বেড়ে দিয়ে, নিজেও খেতে বসেছেন। দেশের অবস্থা বেশি ভালো না, সবাই বলাবলি করছে যে কোনো সময় মিলিটারি বাহিনী গ্রামে এসে ঢুকবে।
চৌদ্দ বছর বয়সে জুলেখা বেগমের বিয়ে হয়েছে এই গ্রামের ফজল মিয়ার সাথে। দু'ই বাচ্চা মারা গিয়ে এখন আঠারো বছরের একটা ছেলে আছে 'সজল'।
বাপ-ছেলে দুজনই কৃষি কাজ করে, আর জুলেখা বেগম বাড়ীতে গরু, হাঁস, মুরগি পালে। খেয়ে-পরে তাদের সুখের সংসার।
জুলেখা বেগম বিয়ের আগে যথেষ্ট সুন্দরি ছিলেন, সেই রেশ এখনো রয়ে গেছে। গত ঈদে ফজল মিয়ার দেয়া বাসন্তি রঙের শাড়ীটা পরে, পান খাওয়া রাঙা ঠোট আর সিঁথি করে চুল আঁচড়িয়ে, চোখে একটু কাজল দিলে তাকিয়েই থাকতে ইচ্ছে করে। বয়সও তেমন কি হয়েছে!! সবে মাত্র বত্রিশ।

তাদের খাওয়া-দাওয়া শেষ, সজল তার রুমে ঘুমাতে গেছে। জুলেখা বেগম হারিকেনের আলোটা কমাতে উঠে গেলেন.........হঠাৎ প্রকৃতির সকল নিস্তব্ধতা খানখান করে গুলাগুলির বিকট শব্দ....
চারিদিকে চিৎকার, আর্তনাদ আর বাঁচার আকুতি!! তাহলে কি গ্রামে মিলিটারি বাহিনী ঢুকে পড়েছে??
সজল বের হওয়ার জন্য দরজা খুলছে। জুলেখা বেগম বারবার মানা করছেন, যাসনে বাবা, যাসনে.......বলতে বলতেই সজল বাইরে কি হচ্ছে দেখতে চলে গেলো। দরজা বন্ধ করে ফজল মিয়া আর জুলেখা বেগম ভয়ে কাঁপছে। বাইরে মনে হয় তারা আগুন দিয়েছে!!! গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগি সব চিৎকার করে দৌড়াদৌড়ি করছে। পটপট শব্দে আশে-পাশের সব পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছ। মানুষের চিৎকার-আর্তনাদ, বাচ্চাদের কান্না আর মহিলাদের বিলাপে যেন কেয়ামত মনে হচ্ছে..........

একটু পরেই মিলিটারিদের বুট জুতার শব্দ.......দরজায় অনবরত লাথি পড়ছে আর নির্দয় গলায় বলে যাচ্ছে,"দারওয়াজা খোল। দারওয়াজা খোল, নাহি তো তোর দেংগে।"
ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে ফজল মিয়া দরজা খুলতেই, তারা ঘরের চারদিকে একবার চোখ বুলালো, জুলেখা বেগমের দিকে চোখ পড়তেই ফজল মিয়াকে ব্রাশফায়ার করলো.........

জুলেখা বেগম মূর্ছা যাওয়ার আগে, আবছা চোখে দেখলো দুইটা হিংস্র থাবা তার দিকে এগিয়ে আসছে.......
যখন জ্ঞান ফিরলো, ততক্ষণে তার সব শেষ হয়ে গেছে......... হায়নাদের কালো থাবা তার পবিত্র শরীরটাকে অপবিত্র করে ফেলেছে!!!! আর যাওয়ার সময় বলছে, "আগ লাগা দো, বাঁচনে না পায়ে......"
জুলেখা বেগম কোনোমতে উঠে বসলো, স্বামীর নিথর দেহে চোখ পড়তেই, তিনি যেন কেঁপে উঠললেন। তার আজ আর কিছুই নাই, সব শেষ, তাহলে কিসের জন্য বেঁচে থাকা । তিনি ছেলেকে না দেখে ভাবলেন, ছেলেকেও হয়তো তারা........

হায়েনারা যাওয়ার সময় ঘরে আগুন দিয়ে দিয়েছে, চারিদিকে দাউদাউ করা আগুনের মাঝে জলেখা বেগম!! তিনি নড়ছেন না, কারণ তিনি এই আগুনেই আত্নহুতি দিবেন, অপবিত্র শরীরটাকে আগুনে পুড়ে পবিত্র করে মরবেন।

হঠাৎ 'মা' 'মা' বলে তার ছেলে সজল
এসে পাঁজাকোলা করে আগুনের মাঝ থেকে মাকে বের করে উঠোনে নিয়ে আসলো। মা চিৎকার করে বলছেন, "আমাকে কেনো বাঁচালিরে বাবা...আমার সব শেষ বাবা, আমি আর বাঁচতে চাইনা আমাকে মরতে দে...।"
মা, তুমি আমাকে এতিম করে দিওনা,,,, মা চোখ মেলে ছেলের দিকে তাকালেন, বেয়োনেটের খুঁচায় তার ছেলের সারা গা রক্তাক্ত।

কি হচ্ছে দেখার জন্য সজল বাইরে বের হয়েই ধরা পরে গিয়েছিলো মিলিটারির হাতে। মায়ের দোয়ায় কোনমতে সে বেঁচে ফিরছে।
সজল বললো, "মা, মিলিটারিরা পুরো গ্রাম জ্বালিয়ে ছাড়খাড় করে ফেলেছে, মেয়েদের উঠিয়ে নিয়ে গেছে.......পুরুষদের নির্বীচারে মেরে ফেলছে।

"মা আমি আর আমার বন্ধুরা মিলে যুদ্ধে যাচ্ছি, তোমাদের প্রতিশোধ নিবো মা।" তোর কিছু হলে আমার তো আর কেউ রইলো না।" সজল বললো, "মা তুমি দোয়া করো, তাহলেই আমার কিছু হবে না, আমি দেশ স্বাধীন করেই তোমার কাছে ফিরে আসবো।"
সজল চলে গেলো, বীরাঙ্গনা জুলেখা বেগম ছেলের অপেক্ষায় দিনরাত পথের দিকে তাকিয়ে থাকেন........
নয় মাস যুদ্ধ চলেছে, দেশ স্বাধীন হলো। মুক্তিযোদ্ধারা বীরবেশে লাল সবুজের পতাকা নিয়ে বাড়ী ফিরছে, কিন্তু তার সজল কেন ফিরছে না......???

জুলেখা বেগম সজলের বন্ধু রতনের কাছে গেলেন, "বাবা আমার সজল......... রতন হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো, "চাচী আমি মানা করেছিলাম 'অপারেশন জ্যাকপটে' না যেতে, বলেছিলাম তুই ছোট মানুষ, পারবি না।"
"নৌজাহাজে মাইন ফিট করতে সে তার জানের রিক্স নিলো। আমাকে বললো," এই বড় অপারেশনটাতে জয়ী হলে আমরা জিতে যাবো, দেশ স্বাধীন হবে, সকল মিলিটারি সমেত এই জাহাজটা উড়িয়ে দিতে পারলে আমার মা বাবার প্রতিশোধ নেওয়া হবে। জাহাজটা উড়াতে গিয়ে সে নিজেও..........।"
রতন আর কিছু বলতে পারলো না.......জুলেখা বেগমকে তাকে জড়িয়ে কাঁদতে লাগলেন।
রতন, জুলেখা বেগমের হাতে একটা লাল সবুজ পতাকা দিয়ে বললো, "চাচি, সজল বলেছিলো যদি আমি বেঁচে ফিরি, তবে নিজের হাতে আমার মা'র গায়ে এই স্বাধীনতার পতাকাটা জড়িয়ে মায়ের হারানো সম্ভ্রম ফিরিয়ে দিবো।"
রতন বললো, "চাচি আমাকে কি তুমি সজলের জায়গাটা দিবে?? আমি তোমাকে স্বাধীনতার পতাকাটা গায়ে জড়িয়ে দিবো।"

জুলেখা বেগম রতনের হাতে সজলের দেওয়া লাল সবুজ পতাকাটা দিলেন। স্বামী-ছেলে হারানোর অশ্রু, আর দেশ স্বাধীন হওয়ার অশ্রু তার দু'গাল বেয়ে পড়তে লাগলো........
তার ছেলের অর্জন করা স্বাধীনতার লাল সবুজ পতাকাটা গায়ে জড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। বীরাঙ্গনা জুলেখা বেগমের ছেলে তার মায়ের হারানো সম্ভ্রম যেন স্বাধীনতার লাল সবুজ পতাকা দিয়েই ঢেকে দিলো.....!!!"

হঠাৎ কোথাও যেন বেজে উঠলো,

"মা তোর বদনখানি মলিন হলে, আমি নয়ন......
ওমা আমি নয়ন জলে ভাসি,
সোনার বাংলা,,,,,,,আমি তোমায় ভালোবাসি.....।।।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ৮:৪৮

তারেক ফাহিম বলেছেন: জুলেখার মত এমন অনেকেই আছে।

দুঃখের বিষয়, এখনও অনেকে মুক্তিযোদ্ধাদের ওয়ারিশ হিসেবে গন্য হয়নি :(

২| ২৭ শে মার্চ, ২০১৮ দুপুর ১২:৪৮

রানা আমান বলেছেন: আপনার লেখা পড়ে মনে হচ্ছে ২৫শে মার্চের রাতেই মিলিটারী বাহিনী জুলেখা বেগমের গ্রামে হানা দিয়েছিলো , তাই কি ??

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.