![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
হুমায়ুন আজাদ ভাষাবিজ্ঞানী হিসেবে কালজয়ী। তার কবিতাগুলা অসাধারন। তার উপন্যাসগুলোও সমকালীন বস্তাপচা উপন্যাসের ভীরে অনন্য। তবে তার থিওলজি নিয়ে সমালোচনা করে লেখাগুলো বেশ সমস্যাপূর্ণ। আমার অবিশ্বাস বইটা পড়লাম কয়েকদিন আগে। এই বইয়ে তিনি কিছু লিখেছেন যা বেশ বিভ্রান্তিকর, বেশকিছু ভুল তথ্য দিয়েছেন, এবং কিছু ঐতিহাসিক সত্যকে অবলীলায় এড়িয়ে গেছেন। তবে সবচেয়ে বিপদজনক ব্যাপার হল এই বইটা তুমুল জনপ্রিয়। তাই মনে হল এটার একটা উত্তর দেওয়া দরকার। পুরো বইয়ের উত্তর দিতে আমারও একটি বই লিখতে হবে। সেটা সম্ভব না। আমি এই লেখায় তার ধর্ম নিয়ে লেখা পরিচ্ছেদের উত্তর দিচ্ছি। প্রথমে বইয়ের লেখা হুবহু দিচ্ছি, তারপর তার উপর কমেন্টারি লিখছি। এই পরিচ্ছেদ তিনি শুরুই করেছেন ধর্মকে আক্রমন করে। [৭৭]
“আদিম মানুষের অন্ধ আদিম কল্পনা, আর পরবর্তী অনেকের সুপরিকল্পিত মিথ্যাচার, কখনো কখনো মত্ততা, নানাভাবে বিধিবব্ধ হয়ে নিয়েছে যে-বিচিত্র রুপ, তাই পরিচিত ধর্ম নামে”
এরপর তিনি বলেছেন ধর্মের ব্যাপারে অভিযোগ করা শুরু করেছেন ঢালাও এবং যথেচ্ছভাবে, [৭৭]
“ধর্ম বিশ্বাস করতে পারে শুধু লোভী এবং ভীত মানুষ। মানুষ সম্পর্কে খুবই নিম্ন ধারনা পোষণ করে। ধর্মগুলো ধরে নিয়েছে যে মানুষ লোভী ও ভীত; তাই তাদের লোভ দেখাতে হবে। রাখতে হবে সন্ত্রস্ত করে। ধর্মগ্রন্থ পড়ার সময় ধার্মিক মানুষ বারবার লোভে পড়ে, আর ভয়ে কেপে উঠে; তাই ধার্মিক মানুষের পক্ষে সুস্থ থাকা সম্ভব নয়, লোভ ও ভয়ের মধ্যে বাস করে তারা হয়ে পড়ে বিকলংরস্থ। ধার্মিকেরা খুবই অমানবিক; তারা নিজেদের ধর্ম ও ধর্মের বই ছাড়া অন্য কোনো ধর্ম ও ধর্মের বইকে মর্যাদা দেয় না। এক ধার্মিক অন্য ধর্মের পবিত্রগ্রন্থ ও গৃহকে অবলীলায় অপমানিত করতে পারে, যা নাস্তিকেরা কখনো করে না। যে-কোনো নির্বোধের পক্ষে ধার্মিক হওয়া সহজ কিন্তু শুধু জ্ঞানী ও মানবিক ব্যক্তিই হতে পারে নাস্তিক। নাস্তিক হত্যা করে না; কিন্তু ধার্মিক সব সময় হত্যা ও ধ্বংসের জন্য ব্যগ্র থাকে; তারা ইতিহাসের পাতাকে যুগে যুগে রক্তাক্ত করেছে। প্রত্যেক ধর্মে রয়েছে অসংখ্য সন্ত, যারা ঠাণ্ডা মস্তিস্কের হত্যাকারী”।
তার সবগুলো পয়েন্টের কমেন্টারি দিচ্ছি,
এক- মানুষ সম্পর্কে খুবই নিম্ন ধারনা পোষণ করে।
ইসলামি থিওলজিতে মানুষকে বলা হয়েছে আশরাফুল মাখলুকাত বা ঈশ্বর যা কিছু সৃষ্টি করেছেন তার মধ্যে শ্রেষ্ঠ। এছাড়া আল্লাহ কুরআনের ৯৫ নম্বর সূরার ৪ নম্বর আয়াতে বলেছেন,
“আমি মানুষ সৃষ্টি করেছি সুন্দরতম অবয়বে”
অন্যদিকে আজাদ সাহেব নিজে এই বইয়েরই ষষ্ঠ পরিচ্ছেদে ১০৪ পেজে বলেছেন,
“মানুষ একটা তুচ্ছ প্রাণী”।
দুই- ধর্ম মনে করে মানুষ লোভী ও ভীত।
এখানে ডঃ আজাদ খুবই নেতিবাচক ভাবে ধর্মের একটা অসাধারন সাইকোলজিকাল দিক উপস্থাপন করেছেন। একটা ক্লাসে কোন কোন ছাত্র পাঠকে ভালবেসে পাড়া শিখে আসে। কেউ কেউ স্যারের বকা খাওয়ার ভয়ে পড়ে আসে। আবার কেউ পরীক্ষায় প্রথম হওয়ার জন্য পড়ে আসে। এটা আমাদের সাইকোলজি। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সাইকোলজি সম্পর্কে সবচেয়ে ভাল জানেন। তাই তিনি এভাবে, কোথাও সত্যের পক্ষে দাঁড়াতে বলেছেন এমনি, কোথাও জান্নাতের পুরুস্কারের কথা বলেছেন, কোথাও বলেছেন জাহান্নামের শাস্তির কথা।
তিন- ধর্ম মানুষকে অমানবিক করে।
পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে মানবিক শাসন ছিল ৬২৩ সাল থেকে ৬৫৩ পর্যন্ত এরাবিয়ান পেনিনস্যুলাতে। খোলাফায়ে রাশেদার শাসন। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন নমুনা পাওয়া যাবে না পৃথিবীর ১/৩ অংশের সম্রাট মাএ একজন দেহরক্ষী আর একটা উট নিয়ে কয়েক হাজার মাইল রাস্তা যাচ্ছে। তার মধ্যে আবার অর্ধেক রাস্তা দেহরক্ষী উটের পিঠে গেছে অর্ধেক সম্রাট। এমনটা আমাদের চিন্তা করাও অসম্ভব। এমন কোন উদাহারন আর নেই। আমাদের দেশের সহ বেশিরভাগ দেশের সংবিধানে এমন বিধান আছে রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে মামলা করা যাবে না। ৬৪০ এর দশকে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সাম্রাজ্য ছিল খেলাফাত। সেই খলিফার বিরুদ্ধে একজন ইহুদি মামলা করেছে এবং কোর্ট খলিফার বিরুদ্ধে রায় দিয়েছে। চিন্তা করেন তো রশিয়ায় পুতিনের বিরুদ্ধে মামলা বা ইউএসে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে। বর্তমান রাশা বা ইউএসের চেয়ে খেলাফত অনেক বড় এবং ক্ষমতাবান ছিল।
চার- অন্য ধর্মকে শ্রদ্ধা করে না।
এর উত্তর আল্লাহ কুরআনের ৬ নম্বর সূরার ১০৮ নম্বর আয়াতে বলেছেন,
“অন্য ধর্মাবলম্বীরা আল্লাহকে বাদ দিয়ে যাদের উপাসনা করে সেসব দেব-দেবীকে তোমরা গালি দিও না। তাহলে তারাও সীমালংঘন করে অজ্ঞতাবশত আল্লাহকে গালি দেবে”।
জেরুজালেম নিয়ে বিভিন্ন ধর্মের মধ্যে ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সমস্যা হয়েছে এবং সেটা এখনো চলমান। ইতিহাসে একমাত্র মুসলিম শাসন আমলেই সবধর্মের মানুষ স্বাধীনভাবে জেরুজালেমে ধর্ম পালন করতে পারতো। এছাড়া দুনিয়ার সবচেয়ে অদ্ভুত ধর্ম বিশ্বাসের জন্ম ইসলামি খেলাফতেই, তা টিকে ছিলো এবং এখনও মুসলিম দেশগুলোতেই আছে যেমন দ্রুজি, আলওয়াতি, ইয়াজিদি ইত্যাদি। খৃষ্টান ধর্মের লুপ্ত প্রায় সম্প্রদায়গুলোও মুসলিম দেশগুলোতেই বাস করে যেমন সিরিয়াক খৃষ্টান, আর্মেনিয়ান অ্যাসট্রোল, ইস্ট্যান ক্যাথোলিক ইত্যাদি। অর্থাৎ ইসলাম অন্য ধর্মকে শ্রদ্ধা করে না, এটা একটা মিথ্যা অভিযোগ।
পয়েন্ট পাঁচ- ইতিহাসজুরে ধর্ম রক্তপাত করেছে।
পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি মানুষ হত্যা করেছে যে ব্যক্তি সে হল হিটলার। হিটলার প্রায় ৬০ লক্ষ ইহুদিকে হত্যা করে। এরপর জোসেফ স্টালিন। স্টালিন ক্রিমিয়া এবং মধ্যএশিয়ার কয়েক মিলিয়ন মানুষ হত্যা করে সোভিয়েতের সংহতি রক্ষার নামে। এছাড়া ইতালির মুসোলিনি, চীনের মাও সেতুং, হালাকু খাঁ, চেঙ্গিস খাঁ, সম্রাট অশোক [বুদ্ধ ধর্ম গ্রহনের পূর্ব পর্যন্ত], বুশসহ আমেরিকার বিভিন্ন প্রেসিডেন্ট। এরা কেউই ধর্মপ্রান ব্যক্তি ছিল না। আর যুদ্ধের কথা ধরলে, পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা গেছে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে। প্রায় সারে আট কোটি মানুষ মারা যায় এই যুদ্ধে। এরপর প্রথম মহাযুদ্ধ ১.৬ কোটি। এই দুই মহাযুদ্ধের সাথে ধর্মের দূরতম সম্পর্কও নেই। এরপর আমেরিকা-ভিয়েতনাম যুদ্ধ, আমেরিকার ইরাক হামলা, মোঙ্গলীয়দের ইসলামি খেলাফতে হামলা, আমেরিকার আফগানিস্তান হামলা, পাকিস্তানের বাংলাদেশ হামলা, কলিঙ্গের যুদ্ধ, দুই কোরিয়ার যুদ্ধ ইত্যাদি। এই যুদ্ধগুলোর কোনটির সাথে ধর্মের কোন রকম যোগ নেই। আমি সত্যকে অস্বীকার করছি না, ধর্ম নিয়ে মুসলিম এবং খ্রিষ্টানদের মধ্যে ক্রুসেড হয়েছে দুই বার। ১০৯৯ সালে প্রথম ক্রুসেডে খ্রিষ্টানরা জেরুজালেম দখল করে মুসলিম এবং ইহুদিদের উপর হত্যাযজ্ঞ চালায়। প্রায় লক্ষাধিক মুসলিমকে তারা হত্যা করে। এর ৮৮ বছর পরে ১১৮৭ সালে সালাহ উদ্দিন আইয়ুবি দ্বিতীয় ক্রুসেডে জেরুজালেম মুক্ত করে। সালাহ উদ্দিন প্রথম ক্রুসেডের প্রতিশোধ নেননি বা কোন রক্তপাত করেননি। দুই ক্রুসেড মিলিয়ে কয়েক লক্ষ মারা গেছে। এটা মহাযুদ্ধ দূরে থাক আফগান বা ইরাক যুদ্ধের কাছেই শিশুমাত্র।
তবে এখানে আপনি বলতে পারেন, আসলে ড. আজাদ বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থার কথা বলেছেন। এটা ঠিক না। তার কথার ধরন সার্বজনীন। আর বাংলাদেশে নাস্তিকদের রাজনৈতিক শক্তি বা জনসমর্থন কতটুকু? বলতে গেলে নেই। তারপরও ব্লগে, এমনকি ফেসবুকে পর্যন্ত ইসলাম বা মুহাম্মাদ সাঃ কে নিয়ে যে জঘন্য ভাষায় অশ্লীল পর্ণ গল্প লেখে...। যদি রাজনৈতিক শক্তি আসে তাহলে স্ট্যালিন যা করেছিলো, এরাও তাই অথবা তার চেয়েও খারাপ করবে এটা হলফ করে বলা যায়। স্ট্যালিন মসজিদগুলোকে আস্তাবল বানিয়েছিলো, বাংলার নাস্তিকরা মসজিদকে পাবলিক টয়লেট বানানোর দাবি করে।
#প্রথম_পর্ব
#চলবে
[লেখার কোন স্বত্ব নেই। কারটেসি না দিয়েও শেয়ার করতে পারেন।]
২| ১৮ ই নভেম্বর, ২০১৬ দুপুর ২:৫২
আহা রুবন বলেছেন: @হাবিব শুভ: আপনার কথা ঠিক হলে তো বলতে হয়, পাঠকেরা তাইলে সব নাস্তিক?!
১৮ ই নভেম্বর, ২০১৬ রাত ৮:৩৩
যাযাবর চিল বলেছেন: আহা ভাই, আমিও তো বইটা পড়েছি। আমাকে আপনার নাস্তিক মনে হচ্ছে?
৩| ১৮ ই নভেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৪:৩৬
করুণাধারা বলেছেন: ভাল লাগল। পরের কিস্তির অপেক্ষায় থাকলাম।
৪| ১৯ শে নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১২:২৪
আহা রুবন বলেছেন: "আহা ভাই, আমিও তো বইটা পড়েছি। আমাকে আপনার নাস্তিক মনে হচ্ছে?"
না। আপনার উদ্দেশে কিছু বলিনি। আমি অবাক হয়েছি হাবিব শুভর মন্তব্যে। কেউ পাঠক বাড়াতে নাস্তিকতার ভান করবে এটা অস্বাভাবিক। বরং আমাদের সমাজ বাস্তবতায় যদি জানা যায় অমুক লেখক নাস্তিক তার বই অনেকেই কিনবে না। হুমায়ুন আজাদ নাস্তিক হয়েছেন ধর্মের প্রতি অনাস্থা থেকে, পাঠক বাড়াতে নয়।
©somewhere in net ltd.
১|
১৮ ই নভেম্বর, ২০১৬ দুপুর ২:১২
হাবিব শুভ বলেছেন: অধিকাংশ লেখক ই নাস্তিক হয়ে সমালিচত হতে চেয়েছেন। এর দুই টা দিক আছে। ১) সমালিচত হওয়ার মাধ্যমে নিজের পাব্লিসিটি বাড়ানো । আর ২) উনি যে বই গুলো লিখেন সে বই গুলো বিক্রি হওয়ার জন্য । এটা উনার ইনকামের একটা উৎস।