নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

তোমরা মানুষ, আমরা মানুষ, তফাৎ শুধু শিরদাঁড়ায়

যাযাবর চিল

i agree to disagree...

যাযাবর চিল › বিস্তারিত পোস্টঃ

রিপ্লাই টু হুমায়ুন আজাদ এর আমার অবিশ্বাস [দ্বিতিয় পর্ব]

২০ শে নভেম্বর, ২০১৬ রাত ৯:৫৩


[প্রথম পর্বের লিংকঃ https://goo.gl/6b9jYo]
এরপর তিনি প্রশ্ন তুলেছেন পৃথিবীতে এত ধর্ম কেন? [৭৮]
“বহু ধর্ম রয়েছে পৃথিবীতে। একটি সরল প্রশ্ন জাগতে পারে যে বিধাতা যদি থাকেন, তিনি যদি একলাই স্রষ্টা হন, তবে তিনি কেন এতো ধর্ম পাঠালেন? তিনি একটি ধর্ম পাঠালেই পারতেন, এবং আমরা পরম বিশ্বাসে সেটি পালন করতে পারতাম। তিনি কেন তা করে নি? তবে কি তিনি একলা নন?”
এটা একটা যোক্তিক প্রশ্ন। ইসলামি থিওলজি এর উত্তর দিয়েছে ,
'নিশ্চয় আল্লাহর কাছে একমাত্র গ্রহণযোগ্য ধর্ম আল্লাহের কাছে নিজের ইচ্ছাকে সমর্পণ করা ' (সূরা আলে-ইমরান-১৯)
“আর প্রত্যেক সম্প্রদায়ের একেকজন রাসূল রয়েছে” (সুরা ইউনুস ৪৭)
বহুধর্মের ব্যাপারে ইসলামের মত হল মানুষ রাসূলদের শিক্ষা কালক্রমে ভুলে গেছে এবং ধর্মে বিকৃতি ঘটিয়ে নতুন ধর্ম প্রচলন করেছে। [এ প্রসঙ্গে আলোচনা আসছে পরবর্তী অংশে।]
তিনি বলতে চেয়েছেন মানুষের আদিম বিশ্বাস অ্যানিমিজম বা সর্বাত্নাবাদ। অ্যানিমিজম থেকে ফেটিজম বা যাদুবাদ। ফেটিজম থেকে টোটেমিজম বা উৎসবস্তুবাদ। এর থেকে এসেছে ধর্ম, [৮১]
“অ্যানিমিজম বা সর্বাত্নাবাদ, যা বিশ্বাস করে প্রত্যেক বস্তুর আছে আত্না। তারা মনে করেছিলো বাতাস, জল, আর গাছ কথা বলে, তারা বিশ্বাস করেছিলো যে আকাশ ভরে রয়েছে দেবতা। তারা যা দেখেছিলো, তা ব্যাখ্যার জন্যে যুক্তির সাহায্য নেয় নি, সাহায্য নিয়েছিলো কপ্লনার। সব দেশের পুরাণেই উপাখ্যানেই মেলে মানুষের বর্বরতার কালের পরিচয়। মানুষের প্রথম উদ্ভাবিত ধর্ম সর্বাত্নাবাদ। তারা বিশ্বাস করতো প্রত্যেক বস্তুর আত্না আছে” ।
খুবই হাস্যকর ভাবে এর সাপেক্ষে রেফারেন্স দিয়ে বলেছেন “পুরাণে”অ্যানিমিজম, ফেটিজম, টোটেমিজমের অনেক নমুনা পাওয়া যায়।
“সর্বাত্নাবাদী পুরাণে পাওয়া যায় আত্না সম্পর্কে আদিম ভাবনার স্পষ্ট পরিচয়। পাওয়া যায় অনেক গল্প”
এছাড়া প্রাচীন মিসরীয়রা অ্যানিমিজমি ছিলো বলে মত দেন। আপনাকে ড. হুমায়ুন আজাদ হতে হবে না যেকোন সাধারন হিন্দুকে জিজ্ঞেস করেন সবাই জানে পুরাণের চেয়ে বেদ অনেক বেশি পুরানো। মার্কিন সংস্কৃত বিশেসজ্ঞ Wendy Doniger বলেছেন পুরাণ লেখা হয় ২০০ সাল থেকে ১০০ সাল পর্যন্ত১। থিওলজিয়ান Whitney Bauman এর মতে বেদে লেখা হয় ১৭০০ খ্রিষ্টপূর্বে২। হিন্দু থিওলজিয়ানরা দাবি করে বা সবাই মোটামুটি মেনে নেয় বেদের বয়স আসলে আরও অনেক বেশি। বলাবাহুল্য বেদ হল ধর্মীয় বই। তিনি যেহেতু পুরাণের উদাহারন টেনেছেন, তাহলে তাকে হিব্রু মিথলজিও বিবেচনায় রাখতে হবে। হিব্রু মিথলজি কয়েক হাজার বছর পুরানো। মিশরের ফারাওদের আগের ঘটনাও হিব্রু মিথলজি বর্ণনা করেছে। অর্থাৎ তিনি ফেটিজম বা টোটেমিজম ধর্মের আগে এসেছে বলে তিনি যে তত্ত্ব দিয়েছেন তা ধোপে টেকে না।

এরপর তিনি কিভাবে ধর্মের উদ্ভব হয়েছে তা ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি মত দিয়েছেন আগে ছিল পলিথিয়েজম বা বহুঈশ্বরবাদ, [৮২]
“এর পর মানুষ সৃষ্টি করে দেবতা; দেবতা এবং দেবতা; এবং দেখা দেয় বহুদেবতাবাদ। বহুদেবতাবাদে দেবতারা পরিপূর্ণ বিকশিত, ও তারা শক্তিমান”।
এরপর পলিথেয়েজম থেকে মনোথিয়েজম বা একঈশ্বরবাদের উদ্ভব, [৮৪]
“দেবতাদের কাল শেষ হয়ে আসতে থাকে; বহুদেবতাবাদের পর, তিন-চার হাজার বছর আগে মানুষ এগোয় একদেবতাবাদ বা একেশ্বরবাদের দিকে”।
আজাদ সাহেবের এই পয়েন্টটা বেশ সবল স্বীকার করতে হবে। বর্তমানে প্রচলিত ধর্মের মধ্যে হিন্দুইজম সবচেয়ে পুরাতন। এবং এটি পলিথিয়েস্টিক ধর্ম। অন্যদিকে মনোথিয়েস্টিক ধর্ম ইসলাম, খৃষ্টিয়ানিটি এবং জুডাইজম হিন্দুইজমের তুলনায় নতুন। ভসা ভাসা দৃষ্টিতে দেখলে এটাকে খুবই সলিড পয়েন্ট মনে হবে। তিনি ঋগবেদ কোট করেন, [৮৩]
“ঋগবেদ-এর ঋষিরা তৈরি করেছিলো ৩৩ টি দেবতা;- ১১ টি পৃথিবীতে, ১১ টি অন্তরীক্ষে, ১১ টি স্বর্গে; তারপর বিভিন্ন বস্তুর অধিপতি হিশেবে কল্পনা করেছিলো ৩৩ কোটি দেবতা”।
এখানে এসে আমি ঝামেলায় পড়ে গেছি। কারন তিনি ভুল তথ্য দিয়েছেন এর উত্তর দেবো নাকি পলিথিয়েজম/মনোথিয়েজম এর ব্যাখ্যা দেবো। আচ্ছা আগে একঈশ্বরবাদের ব্যাপারে আসি। যদি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেন তাহলে দেখবেন হুমায়ুন আজাদ যা দাবি করেছে সত্যটা আসলে তার ঠিক উল্টা। বহুঈশ্বরবাদ থেকে একঈশ্বরবাদ আসেনি বরং একঈশ্বরবাদ থেকে বহুঈশ্বরবাদ এসেছে। হিন্দু থিওলজির প্রভাবশালী বইগুলো যদি আমরা অধ্যায়ন করি তাহলে দেখবো হিন্দুইজম আদিতে আসলে একঈশ্বরবাদী ছিল। যেমন, ছান্দোগিয়া উপানিষদের অধ্যায় ৬, শ্লোক ২ এ ,
"এক্কাম এবাদিতিয়াম" অর্থ- ঈশ্বর এক ও অদ্বিতীয়।
শ্বেতাপত্র উপানিষদ, অধ্যায় ৬, শ্লোক ৯,
“না চাস ইয়া কাসচিজ জানিতা না কাধিপাহ” অর্থ ঈশ্বরের কোন বাবা-মা নেই, তার কোন প্রভু নেই।
যযুবেদ, অধ্যায় ৩২, শ্লোক ৩
“না তাস্তি প্রাতিমা আস্তি” অর্থ মহান ঈশ্বরের কোন প্রতিমূতি নেই।
ভাগবাত গীতা, অধ্যায় ৭ অনুচ্ছেদ ২০
''সেসব লোক যাদের বিচার বুদ্ধি কেড়ে নিয়েছে জাগতিক আকাঙ্খা, তারাই মূর্তি পূজা করে।''
এমন আরও রেফারেন্স দেওয়া যায়। হিন্দুইজমের সবচেয়ে প্রচিন এবং পবিত্র ধর্মগ্রন্থ হল ঋগবেদ। যার কোটেশন ড. আজাদ দিয়েছেন কিন্তু রেফারেন্স দেন নাই। ঋগবেদের কোথাও পলিথিয়েজম বা বহুঈশ্বরবাদের কথা নেই। ঋগবেদে বলা হয়েছে ঈশ্বরের বিভিন্ন গুনের কথা। ঋগবেদ ৩৩ টি আলাদা ঈশ্বরের কথা বলা হয়নি, ৩৩ টি গুনবাচক নামের কথা বলা হয়েছে। ৩৩ কোটি দেবতার তো প্রশ্নই উঠে না।
ঋগবেদ গ্রন্থ ১, পরিচ্ছেদ ১৬৪, অনুচ্ছেদ ৪৬
“সত্য একটাই। ঈশ্বর একজনই। তবে জ্ঞানীরা ঈশ্বরকে ডেকে থাকেন বিভিন্ন নামে”
ঋগবেদ গ্রন্থ ২, এক নং পরিচ্ছেদে ৩ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে “ঈশ্বর হল বিষ্ণু” বিষ্ণু অর্থ পালনকর্তা।
অধিকাংশ নামই ঋগবেদ গ্রন্থ ২, এক নং পরিচ্ছেদে রয়েছে। যেমন ২ নম্বর অনুচ্ছেদের ৩ নম্বর শ্লোকে বলা আছে “ঈশ্বর হল ব্রাহ্মা” ব্রাহ্মা অর্থ সৃষ্টিকর্তা।
ঋগবেদ গ্রন্থ ৮, ১ নং পরিচ্ছেদের ১ নম্বর অনুচ্ছেদ,
“Ma chidanyadvi shansata” অর্থ হে বন্ধু শুধুমাত্র তারই উপাসনা করো।
ঋগবেদর ব্রাহ্মসূত্র
"Ekam Brahm, dvitiya naste neh na naste kinchan" অর্থ- ঈশ্বর একজনই দ্বিতীয় কেউ নেই, কেউ নেই, কেউ নেই, আর কখনো ছিল না।
যযুবেদ, অধ্যায় ৪০, শ্লোক ৯
“Andhatma pravishanti ye asambhuti mupaste” “তারা অন্ধকারে যাচ্ছে যারা আসাম্ভুতির [প্রাকৃতিক বস্তু যেমন পানি,আগুন, সাপ ইত্যাদির] উপাসনা করে”
এখানে যযুবেদই চমৎকার ভাবে বহুঈশ্বরবাদের সূচনা কিভাবে হয় বলে দিচ্ছে।
ড. আজাদ একটা খোঁচা দিয়ে বলেছেন, [৮৪]
“তবে মানুষ কখনোই সম্পূর্ণরুপে একেশ্বরবাদী হয়ে ওঠে নি। একদেবতাবাদীদের ধর্মীয় ক্রিয়াকলাপে, প্রচ্ছন্ন ও স্পষ্টভাবে, বহুদেবতার মুখ দেখা যায়”।
আসলে এখানেও মূল ঘটনা উল্টা, “মানুষ কখনোই সম্পূর্ণরুপে বহুঈশ্বরবাদী হয়ে উঠেনি”। এর প্রমান বহুঈশ্বরবাদী হিন্দু ধর্মের অনুসারি কোন জ্ঞানী হিন্দুকে প্রশ্ন করুন ঈশ্বর কয়জন? উত্তর দেবে একজন। উনিশ শতকের প্রথমদিকে দেব্রেন্দ্রনাথ ঠাকুর, রামমোহন রায় প্রমুখ হিন্দুইজমের মধ্যে ব্রাহ্মসমাজ প্রতিষ্ঠা করেন, যা এখনো টিকে আছে। ব্রাহ্মসমাজ একঈশ্বরবাদী। যাই হোক ড. আজাদ খোঁচাটা দিয়েছেন আসলে খৃষ্টিয়ানিটির দিকে যদিও স্পট করে বলেন নাই। কারন খৃষ্টিয়ানিটিতে ট্রিনিটির ধারনা আছে। অর্থাৎ ঈশ্বরের ৩ রুপ, মানে প্রচ্ছন্য ভাবে পলিথিয়েজম। এখানেও যদি আমরা গভীরভাবে দেখি, ট্রিনিটির ধারনা বাইবেলের কোথাও নেই। ট্রিনিটি শব্দটা পর্যন্ত বাইবেলে পাওয়া যাবে না। এমনকি সেন্ট পলও ট্রিনিটি নিয়ে কিছু বলেন নাই। এই ট্রিনিটি ধরনাটি দ্বিতিয় শতাব্দির শেষের দশকে চালু হয়। সেন্ট আগস্টিন এবং সেন্ট টেরটোলিয়ান ট্রিনিটি ধারনাটির প্রতিষ্ঠার পেছনে সবচেয়ে প্রভাবশালি ব্যক্তিত্ব হিসেবে ধরা হয়৩। অর্থাৎ সেই একঈশ্বরবাদ থেকে বহুঈশ্বরবাদ।
অর্থাৎ তার দাবি বহুঈশ্বরবাদ থেকে একঈশ্বরবাদ এসেছে তা অসত্য, যুক্তিহীন এবং কাল্পনিক।
রেফারেন্সঃ
১। The Iconography and Ritual of Śiva at Elephanta - Charles Dillard (1988)
২। Science and Religion: One Planet, Many Possibilities- Whitney Bauman. Routledge. p. 179
৩। Stanford Encyclopedia of Religion [ওয়েব সাইট]
#চলবে
[লেখার কোন স্বত্ব নেই। কারটেসি না দিয়েও নিজের টাইম লাইনে শেয়ার করতে পারেন।]

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১১:৫০

বিবেক ও সত্য বলেছেন: ধর্মান্ধতা_বনাম_ধর্মবিশ্বাস

মিথ্যার মানদন্ড:ইসলাম কি সে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ?

কুরআনের সৃষ্টিকর্তার বিধান হওয়ার পক্ষে কুরআনের প্রমান ও তা খন্ডন

২| ২১ শে নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১:১০

জাহিদ অনিক বলেছেন: সত্য ও সুন্দর লেখা । আমি ভেবেছিলাম আপনি প্যানথিজম নিয়েও কিছু লিখবেন ।

২১ শে নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:৩০

যাযাবর চিল বলেছেন: লিখতাম। কিন্তু লেখাটা তাহলে অনেক বড় হয়ে যেত। এমনিতেই ২০ পেজের মত হয়ে গেছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.