নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

তোমরা মানুষ, আমরা মানুষ, তফাৎ শুধু শিরদাঁড়ায়

যাযাবর চিল

i agree to disagree...

যাযাবর চিল › বিস্তারিত পোস্টঃ

রিপ্লাই টু হুমায়ুন আজাদ এর আমার অবিশ্বাস [চতুর্থ পর্ব]

২৪ শে নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১০:৩২


ট্যাগঃ
১। খৃষ্টিয়ানিটির সমস্যা। ২। ইসলামে প্যাগান আরবের প্রভাব। ৩। ইব্রাহিম আঃ ৪। ইসলামের ব্যাপারে পশ্চিমাদের মনোভব।
................................................................................................
এরপর তিনি খৃষ্টান ধর্মের সমস্যা নিয়ে বলেছেন। [৯১]

“আদি খ্রিস্টনরা জেসাসের মুখে অনেক কথা বসিয়েছে, ওসব কথা জেসাস কখনো বলেন নি; কেননা তিনি কখনো ছিলেন না”।

আমার মনে হয় খৃষ্টিয়ানিটির অসারতা বুঝতে আপনাকে একজন থিওলজিয়ান হতে হবে না। খৃষ্টিয়ানিটিতে কয়েকশ রকমের বাইবেল আছে। এক বাইবেল অন্যটির সাথে সাংঘ্যসিক। বাইবেলের কোথাও বাইবেল বা খৃষ্টান শব্দটি নেই, ট্রিনিটি শব্দটি নেই। এছাড়া বাইবেলে প্রচুর বিজ্ঞান বিরোধী কথা, পরস্পর বিরোধী কথা, এমনকি গাণিতিক ভুল পর্যন্ত।
হুমায়ুন আজাদ স্বভাব সুলভ ভাবে ধর্মকে আক্রমণ করেছেন মাঝে মাঝেই। যেমন- [৯৫]

“ধর্ম এবং ধর্মের বইগুলো অলৌকিক নয়, ধর্মের বইগুলো জ্ঞানের বইও নয়; পঞ্চম শ্রেণীর বই পড়লেও যতোটা জ্ঞান হয়, ধর্মের বইগুলো পড়লে ততোটা জ্ঞানও হয় না, বরং অনেক অজ্ঞনতা জন্মে”।

এটা খুবই আপত্তিকর কথা। কুরআন জ্ঞানের বই, এতে ১০০০ এরও বেশি আয়াতে বিজ্ঞান নিয়ে কথা বলা হয়েছে। এর উত্তর দিতে গেলে অনেক লিখতে হবে। আমি একটা বই রেফার করছি এই ব্যাপারে ড. মরিস বুকাইলির “বাইবেল, কুরআন এবং বিজ্ঞান” বইটা পড়তে বলবো। বিগ ব্যাং, প্রজনন বিদ্যা, ভূ-তত্ব, পানি চক্র, মহাকাশ বিজ্ঞান সম্পর্কে কুরআন ১৪০০ বছর আগে বলে দিয়েছে এটা শুধু অলৌকিক না মহা-অলৌকিক।
এরপর ড হুমায়ুন আজাদ আমার থিওলজি অর্থাৎ ইসলামকে আক্রমণ করেছেন। এবং তা খুবই কাঁচা।
এরপর [৯৭]
“ইসলামপূর্ব আরব ছিলো মাতৃপ্রধান, ইসলামে ঘটে পিতৃতন্ত্রের উত্থান”

এটা একটা ভুল তথ্য। এর সাপেক্ষে ড. আজাদ কোন রেফারেন্স দেন নাই। ইসলামপূর্ব আরবে একমাত্র খাদিজা রাঃ ছিলেন মহিলা ব্যবসায়ী। তাও তিনি সম্পদ পেয়েছিলেন তার মৃত স্বামীর কাছ থেকে। ইতিহাসে কখনো আরব মাতৃতান্ত্রিক ছিল না।

ড. হুমায়ুন আজাদ এরপরে বলেন [৯৭]
“ইসলামে হিলাল বা বাঁকা চাঁদকে পবিত্র মনে করার বিশেষ কারন রয়েছে। ইসলাম আগের আরবকে অন্ধকারের কাল বলে নিন্দিত করলেও ওই আরবে অতোটা অন্ধকার ছিলো না; চিরকালই বিজয়ীরা পরাজিতদের নামে কুৎসা রটায়”।

এটাও ভুল তথ্য। বাঁকা চাঁদের প্রতীক এসেছে অটোম্যানদের সময় থেকে। রাসুলুল্লাহ সাঃ, খোলাফায়ে রাশিদা, উমাইয়াত বা আব্বাসিয়াতরাও বাঁকা চাঁদের প্রতীক ব্যবহার করেনি। আর তার আগে আরব অন্ধকার ছিল না এটাও একটা ভুল তথ্য। ইসলামপূর্ব মক্কায় মাত্র ৪০ জন মানুষ পড়ালেখা জানতো। এর আগে আরবে কোন স্থাপনা বা বিল্ডিং ছিল না। কোন ক্যালেন্ডার ছিল না। কোন কেন্দ্রীয় শাসন ছিল না। কোনরূপ জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চা হতো না। ইসলামপূর্ব আরবে একজন দার্শনিক বা বিজ্ঞানী বা শিক্ষাবিদের নাম ইতিহাসে পাওয়া যায় না।

এরপর ড. আজাদ মক্কার প্যাগানদের থেকে ইসলাম কি কি নিয়েছে তার লিস্ট দিয়েছেন। যেমন- আল্লাহের নাম [৯৭]
“ইসলামে বিধাতার নামটিও নতুন নয়, নামটি আরবে আগে থেকেই প্রচলিত ছিলো”।
এরপর হজ্ব, কুরবানি- [৯৭]
“ইসলামপূর্ব আরব থেকে ইসলাম নিয়েছে বহু কিছুঃ পুরুষের ভুবিবাহ, সামাজিক নানা বিধি, খৎনা ইত্যাদি। ইসলাম অপৌত্তলিক; কিন্তু এর তলদেশে আরব পৌত্তলিকতার ফল্গুস্রোত সম্পূর্ণ শুকিয়ে যায় নি। তীর্থযাত্রা, পশুবলি, উপবাস, প্রায় সব ধর্মেই রয়েছে; ইসলামেও আছে। হজ ও কোরবানির মূল ব্যাপার নিয়ে আলোচনা থেকে বিরত থাকছি”।
এবং [৯৮]
“পাথরগুলো কখনো হতো মূর্তি, কখনো বিশাল পাথরখন্ড। আস সাফা ও আল মারওয়া পাহাড় দুটির নাম বোঝায় পাথর। আরবরা সৌভাগ্যলাভের জন্যে এ-দু পাহাড়ে ছোটাছুটি করে ছুতো ও চুমো খেতো দুই পাহাড়ে স্থাপিত ইসাফ ও নাইলার দুটি মূর্তি। দ্বিতীয় শতকের শেষ দিকে আলেকজান্দ্রিয়ার ক্লেমেন্ট লিখেছেন, ‘আরবরা পাথর পুজা করে’; ওই শতকেই শেষ দিকে মাক্সিমাস টাইরিউস লিখেছেন, ‘আমি জানি না আরবরা পুজো করে কোন দেবতার, যাকে তারা রুপায়িত করে একটি চতুর্ভুজ পাথর রুপে’। মুসলমানরা তীর্থে গিয়ে চুমো খায় একটি কালোপাথরকে। এটি একসময় নির্দেশ করতো উর্বরতা”।

আজাদ সাহেব এই প্যারার শেষ লাইনে বলেছেন হজ্ব এবং কুরবানির আলোচনা থেকে বিরত থাকছেন। আসলে কিন্তু তিনি তার আগের লাইনেই বলে ফেলেছেন [তীর্থযাত্রা এবং পশুবলি ই তো এবং কুরবানি]। পরে হজ্ব এবং কুরবানি কিভাবে মক্কার প্যাগানদ এবং ইহুদিদের কাছ থেকে ইসলাম নিয়েছে বলে মত দিয়েছেন।
আসলে আমি বলতে বাধ্য হচ্ছি ড. আজাদ ইসলাম বা মক্কার ব্যপারটি বোঝেন-ই নাই। ইসলাম কখনোই নতুন ধর্ম দাবি করে নি। ইসলাম মতে মক্কার নবী ছিল ইব্রাহিম আঃ এবং ইসমাইল আঃ। হজ্ব, আল্লাহের নাম, কোরবানি তাদের সময় থেকেই প্রচলিত ছিল মক্কায়। কালক্রমে ইব্রাহিম আঃ এবং ইসমাইল আঃ এর শিক্ষাদেওয়া ধর্ম বিকৃত হয়ে প্যাগানিজম ঢুকে পরে। তবে মক্কার প্যাগানিজম হিন্দুদের মত প্যাগানিজম না। তারা আল্লাহকেই ঈশ্বর বলে স্বীকার করতো। তারা সাথে এটা বিশ্বাস করতো মূর্তিগুলো তাদেরকে আল্লাহের কাছে নিয়ে যাবে। কারন তারা এত অপবিত্র সরাসরি আল্লাহের কাছে যেতে পারেন না। মুহাম্মাদ সাঃ এসে ইব্রাহিম আঃ শিক্ষা দেওয়া ধর্মের বিকৃতি মুছে তার মূল রুপে নিয়ে গেছেন। যেমন আল্লাহ কুরআনে বলেন,
“এরপর আপনার প্রতি নাজিল করেছি যে সত্যাশ্রয়ী হয়ে ইব্রাহিমের ধর্ম অনুসরন করুন, এবং তিনি (ইব্রাহিম আঃ) তাদের মধ্যে ছিলেন না যারা আল্লাহের সাথে শিরক করতো”। [সূরা নাহল ১৬: ১২৩]

ইসলামপূর্ব কাবাঘরে ইব্রাহিম আঃ এবং ইসমাইল আঃ এর মূর্তি ছিলো। এবং প্যাগান মক্কায়ও কিছু মানুষ ছিলেন যারা এক ঈশ্বরে বিশ্বাস করতেন। তারা প্যাগানিজমে বিশ্বাস করতেন না, এবং বলতেন তোমারা ইব্রাহিম আঃ এর ধর্ম বিকৃত করেছো। ইতিহাসে তাদেরকে বলা হতো হনুফা। বিখ্যাত হনুফারা হলেন যায়িদ বিন আমর বিন নুফাই, ওরাকা বিন নওফেল, উসমান বিন হুয়াইলিস, ওবাইদুল্লাহ বিন জাশ।
এবার ম্যাক্সিমাস টাইরিউসের কথায় আসি, এটা শুধু তিনি একা না। বেশিরভাগ পশ্চিমারা এটা মনে করে “Muslim pray a black box in the desert and kiss ground everyday” এবং অসাধারন ভাবে এর উত্তর আজাদ সাহেবই দিয়ে দিছেন এই বইতেই। অন্য প্রসঙ্গে, [৯৭]

“খলিফা উমর কাবার কালোপাথরকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন, ‘যদি না আমি দেখতাম মহানবি তোমাকে চুমো খাচ্ছেন, আমি নিজে তোমাকে চুমো খেতাম না’।

মুসলিমরা কাবা বা কালো পাথরকে পুজা করে না। কাবার উপরে/ছাদে মানুষ উঠে। কাবা অতীতে বহুবার ভাঙ্গা হয়েছে এবং ভবিষ্যতেও ভাঙ্গা হবে সংস্কারের জন্য। কাবা হল আমাদের কিবলা বা নামাজের দিক, মুসলিম বিশ্বের একতা নিশ্চতের জন্য প্রার্থনা করার একটা দিক নির্দিষ্ট করা হয়েছে।
#চলবে
@
[লেখার কোন স্বত্ব নেই। কারটেসি না দিয়েও নিজের টাইম লাইনে শেয়ার করতে পারেন।]

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ১০:০০

কাউয়ার জাত বলেছেন: সুন্দর একটি লেখা পোস্ট করার জন্য ধন্যবাদ। সামুতে বর্তমানে খুব বেশি পাঠক নেই। ধর্মীয় পোস্ট সেক্ষেত্রে আরও কম পঠিত। তবুও আশাকরি চালিয়ে যাবেন। একজন উপকৃত হলেও সেটা অনেক।

২৫ শে নভেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১:৪৮

যাযাবর চিল বলেছেন: ধন্যবাদ :)

২| ২৫ শে নভেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১:৪৪

এম এ কাশেম বলেছেন: যথাযথ উত্তর দিয়েছেন।

প্রিয়তে রাখলাম।
শুভেচ্ছা জানবেন।

২৫ শে নভেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১:৪৮

যাযাবর চিল বলেছেন: ধন্যবাদ :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.