নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

তোমরা মানুষ, আমরা মানুষ, তফাৎ শুধু শিরদাঁড়ায়

যাযাবর চিল

i agree to disagree...

যাযাবর চিল › বিস্তারিত পোস্টঃ

রিপ্লাই টু হুমায়ুন আজাদ এর আমার অবিশ্বাস [শেষ পর্ব]

২৯ শে নভেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৫৬


ট্যাগঃ
১। শুকর নিষিদ্ধ। ২। পাথর মেরে হত্যা। ৩। হাত কাটা। ৪। ধর্মহীন শিক্ষা।
=============================================
১০১ নম্বর পাতায় তিনি ইসলামের কিছু বিধানের সমাচলোচনা করেছেন, যেমন শুকর খাওয়া নিষিদ্ধ,
“মুসলমানদের শুয়োর খাওয়া আর হিন্দুদের গরু খাওয়া পাপ; এর মূলে কোন নীতিবোধ নেই, এটা স্বেচ্ছাচারী নির্দেশ”

আবার বলত হচ্ছে ড. আজাদ এখানে ইসলামকে বা হিন্দুইজমকে বুঝতে পারেননি। হিন্দুদের বেদ বা উপনিষদ এমনকি মনুশ্রুতিতেও গরু খাওয়া নিষিদ্ধ এটা বলা হয়নি। হিন্দুরা কৃষ্ণের ছোটবেলার ঘটনা থেকে শ্রদ্ধাবশত গরু খায় না। আর ইসলামে কেন শুকর নিষিদ্ধ এটা বুঝতে আপনাকে শুকর প্রকৃতি বুঝতে হবে। শুকর সবচেয়ে নোংরা জিনিশপত্র খায়। শুকর নিজের মৃত বাচ্চাকে পর্যন্ত খায়। শুকর সব ধরণের মরা বা নোংরা প্রাণী খায়। এবং শুকরের পরিপাকতন্ত্র
খুবই দ্রুত এবং দুর্বল। মাত্র চার ঘণ্টায় খাবার পরিপাক হয়ে যায়। এজন্য শুকর যা খায় তার সাথে যে রোগ-জীবাণু থাকে তা শুকরের মাংস, চর্বিতে জমে। অর্থাৎ শুকর একটা মরা কুকুর বা মানুষের ময়লা খেল। চার ঘণ্টায় তা পরিপাক সেগুলোর রোগ মাংসে জমলো। ৮ ঘণ্টাপর কসাই শুকরটি কেটে মাংস বানালো। এরপর সেটা আপনার খাবারের টেবিলে। কতটা বিপদজনক এবং অস্বাস্থ্যকর নিজেই চিন্তা করুন। ইসলাম এজন্যই শুকর নিষিদ্ধ করেছে। ড. আজাদ ইসলাম বোঝেন না এটা তার সমস্যা। ইসলাম যে সকল প্রাণীর মাংস খাবার অনুমতি দেয় সবগুলো সবুজ ঘাস খায়। পরিপাকতন্ত্র এবং হজম প্রণালী খুবই জটিল। যেমন গরু পরিষ্কার সবুজ ঘাস খায়। এর পরিপাকতন্ত্র তিনস্তর বিশিষ্ট। খাবার হজম হতে সময় লাগে ২৪ ঘণ্টা।

ইলামের চুরি এবং ধর্ষণের শাস্তি অমানবিক বলে তিনি মত দিয়েছেন একই পৃষ্ঠায়
“চুরির অপরাধে হাত কেটে ফেলা বা অবিবাহিত সঙ্গমের জন্যে পাথর ছুড়ে হত্যা নীতির দিক থেকে অত্যন্ত শোচনীয়, কিন্তু ধর্মে একেই মনে করে হয় নৈতিকতা। ধর্ম গভীর মানবিক নৈতিকতা বোঝে না”।


ধর্ষণের শাস্তি নিয়ে আমি কিছু বলবো না। কয়েকদিন আগে পুজা নামে ৫ বছরের এক বাচ্চাকে ধর্ষণের স্বীকার হয়েছে। পুজার মা/বাবা/ভাইয়ের কাছে গিয়ে আপনার মতে যা মানবিক তার ছবক দিন আর প্রশ্ন করুন ধর্ষণের শাস্তি কি হওয়া উচিত।
আর চুরির ব্যাপারে হাত কাটার বিধান নিয়ে তিনি আসলে বিস্তারিত জানেন না। এই বিধানটি আসলে কেমন সেটা পরিস্কার করতে ৩ টি ঐতিহাসিক ঘটনা বলছি।
এক- একবার উমর রাঃ এর কাছে এক ব্যক্তি তার কর্মচারীকে ধরে নিয়ে আসেন। চুরি করার সময় হাতেনাতে কর্মচারীটি ধরা পরেছে। তখন কর্মচারী উমর রাঃ কে বলেন মালিক তাকে ঠিকমত বেতন দেয় না। উমর রাঃ তদন্ত করে দেখেন কর্মচারীর অভিযোগ সত্য। তখন তিনি কর্মচারীকে ছেড়ে দিয়ে ওই ব্যক্তিকে বলেন, যদি ঠিকমত বেতন না দাও তাহলে তোমার হাত কাটবো।
দুই- সিরিয়ার একটি শহরের নাম রাকা। সেখান থেকে খলিফা হারুনুর-রশিদের নিকট চিঠি আসলো। চিঠিতে লেখা ছিল: শহরের বিচারক এক মাস যাবত অসুস্থ,বিচার কাজ স্থবির হয়ে আছে । খলিফা যেন দ্রুত ব্যবস্থা করেন । খলিফা চিঠির জবাব পাঠালেন । আগামী সপ্তাহের মধ্যে নতুন বিচারক আসবেন । এক সপ্তাহের মধ্যে নতুন বিচারক এসে যোগ দিলেন ।
বিচার কাজ শুরু হয়েছে । স্থানীয় প্রহরীরা একজন বৃদ্ধা মহিলাকে আসামী হিসেবে দরবারে হাজির করলেন । তার অপরাধ ছিল তিনি শহরের এক রেস্তারাঁ থেকে কিছু রুটি আর মধু চুরি করার সময় হাতেনাতে ধরা পরেন ।
বিচারক: আপনি চুরি করেছেন?
- জ্বি ।
- আপনি কি জানেন চুরি করা কতো বড় অপরাধ ও পাপ ?
- জ্বি ।
- জেনেও কেন চুরি করলেন ?
- কারণ আমি গত এক সপ্তাহ যাবত অভুক্ত ছিলাম । আমার সাথে এতিম দু'নাতিও না খেয়ে ছিল । ওদের ক্ষুদারত চেহারা ও কান্না সহ্য করতে পারিনি তাই চুরি করেছি। আমার আর এ ছাড়া কোন উপায় ছিল না হুজুর ।
বিচারক এবার পুরো দরবারে চোখ বুলালেন। বললেন কাল যেন নগর, খাদ্য,শরিয়া, পুলিশ প্রধান ও সমাজের গণ্যমান্য ব্যাক্তিগন সবাই উপস্থিত থাকেন । তখন এর রায় দেওয়া হবে ।
পরদিন সকালে সবাই হাজির হলেন । বিচারক ও যথাসময়ে উপস্থিত হয়ে রায় ঘোষণা করলেন-“ বৃদ্ধা মহিলার চুরির অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় ৫০টি চাবুক, ৫০০ দিণার রৌপ্য মুদ্রা আর অনাদায়ে এক বছর কারাদণ্ড দেওয়া করা হলো। তবে অকপটে সত্য বলার কারণে হাত কাটা মাফ করা হলো। বিচারক প্রহরীকে চাবুক আনার নির্দেশ দিয়ে নিচে নেমে ঐ বৃদ্ধা মহিলার পাশাপাশি দাঁড়ালেন ।
বিচারক বললেন যে নগরে একজন ক্ষুধার্তবৃদ্ধ মহিলা না খেয়ে ক্ষুধার যন্ত্রণায় চুরি করতে বাধ্য হয় সেখানে তো সবচেয়ে বড় অপরাধী সে দেশের খলিফা। আর আমি এসেছি খলিফার প্রতিনিধি হয়ে । আমি যেহেতু তাঁর অধীনে চাকরি করি তাই ৫০টি চাবুকের ২০টি আমার হাতে মারা হউক । আর এটাই হলো বিচারকের আদেশ । আদেশ যেন পালন করা হয় এবং বিচারক হিসাবে আমার উপর চাবুক মারতে যেন কোনো রকম করুণা বা দয়া দেখানো না হয়।
বিচারক হাত বাড়িয়ে দিলেন । দুই হাতে পর পর ২০টি চাবুক মারা হলো। চাবুকের আঘাতের ফলে হাত থেকে রক্ত গড়িয়ে পরছে । ঐ অবস্থায় বিচারক পকেট থেকে একটি রুমাল বের করলেন । কেউ একজন বিচারকের হাত বাঁধার জন্য এগিয়ে গেলে বিচারক নিষেধ করেন। এরপর বিচারক বললেন “ যে শহরে নগর প্রধান, খাদ্য গুদাম প্রধান ও অন্যান্য সমাজ হিতৈষীরা একজন অভাব গ্রস্হ মহিলার ভরন-পোষণ করতে পারেন না। সেই নগরে তারা ও অপরাধী। তাই বাকি ৩০টি চাবুক সমান ভাবে তাদেরকে মারা হোক ।“
এরপর বিচারক নিজ পকেট থেকে বের করা রুমালের উপর ৫০টি রৌপ্য মুদ্রা রাখলেন । তারপর বিচারপতি উপস্থিত সবাইকে বললেন “যে সমাজ একজন বৃদ্ধমহিলাকে চোর বানায়, যে সমাজে এতিম শিশুরা উপবাস থাকে সে সমাজের সবাই অপরাধী । তাই উপস্থিত সবাইকে ১০০ দিণার রৌপ্য মুদ্রা জরিমানা করা হলো।“
এবার মোট ৫০০দিনার রৌপ্য মুদ্রাথেকে ১০০ দিণার রৌপ্য মুদ্রা জরিমানাবাবদ রেখে বাকি ৪০০টি রৌপ্য মুদ্রা থেকে ২০টি চুরি যাওয়া দোকানের মালিককে দেওয়া হলো। বাকি ৩৮০টি রৌপ্য মুদ্রা বৃদ্ধা মহিলাকে দিয়ে বললেন “ এগুলো আপনার ভরণপোষণের জন্য ।
এটা হল ইসলামের বিধান। ধরলাম আর হাত কেটে দিলাম, ব্যাপারটা এমন না।
তিন- ২০১০ সালে বাংলাদেশের শেয়ারবাজারের ধস নামে।২০ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় কিছু ব্যক্তি [ইব্রাহিম খালেদের তদন্ত কমিটির মতে ২০ হাজার কোটি]। এর প্রতিক্রিয়ায় অনেক পরিবার সর্বস্বান্ত হয়ে যায়। বেশ কয়েকজন অসুস্থ হয়ে মারা যায়। কয়েকজন আত্নহত্যা করে। এখন ধরুন এই চোরকে ধরলেন। আপনার আইনে তার অপরাধের শাস্তি কি হবে?
এরপর তিনি কিছু সমস্যার কথা বলেছেন সেগুলা কিছুটা সঠিক। যেমন বিভিন্ন ধর্মের মধ্যে সমস্যা, ধর্মের মধ্যে উপদল তৈরি হওয়া, চার্চের অপশাসন ইত্যাদি। এবং পরিচ্ছেদের শেষ লাইনে তিনি বলেছেন ধর্মের অন্ধকার থেকে মুক্ত হয়ে মানুষকে হয়ে উঠতে হবে মানুষ। বাস্তবতা হল সব সমাজেই সব সময়েই কিছু অসৎ মানুষ থাকবে। তারা ভাষা, জাতীয়তা, বর্ণ, ধর্ম, গোত্র, এলাকা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে পরিস্থির ঘোলাটে করে সুবিধা নিতে চাইবে। তবে এই সমস্যাগুলোর কথা হুমায়ুন আজাদের অনেক আগে থেকেই বিভিন্ন ধর্মীয় ব্যক্তিত্বগন বলে আসছেন। এবং তারা কার্যকরভাবেই এগুলো সমাধানে কাজ করছেন। বর্তমানে বাংলাদেশে মিয়ানমার, ভারত, নেপাল, শ্রীলংকা, চীন এসব দেশের তুলনায় সাম্প্রদায়িক সমস্যা নেই বললেই চলে। কারণ ধর্মীয় ব্যক্তিত্বগনের কার্যকর প্রচেষ্টা। ধর্মহীন করার চেষ্টা করেছিলো স্টালিন, মুসেলিনি, হিটলার, মাও সেতুং, হালাকু খাঁ। তারাই পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে বড় কসাই। ধর্ম প্রচার করে গেছেন মুহাম্মাদ সাঃ, ইব্রাহিম, মুসা, জিসাস, বুদ্ধ, অশোক, উমর, আলী, মাদার তেরেসা। সব সমালোচকের চোখেই ইতিহাসের সবচেয়ে সুন্দর এবং আলোকিত মানুষ এরাই। আমাদের ধর্মের সঠিক শিক্ষা নিয়ে আলোকিত হতে হবে।
@শেষ।
লেখার কোন স্বত্ব নেই।
#হুমায়ুন_আজাদ

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে নভেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৫:১৩

করুণাধারা বলেছেন: ভ্রান্তি দূর করার জন্য আপনি যে কাজ করেছেন তা যথেষ্ট পরিশ্রম সাধ্য। আল্লাহ এজন্য আপনাকে উত্তম পুরষ্কার দান করুন।

উত্তম কাজের পুরষ্কার উত্তম ছাড়া আর কি হতে পারে?(আর রাহমান, আয়াত ৬০)

৩০ শে নভেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:২৮

যাযাবর চিল বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.