নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ১১ টি। (৮টি কবিতার বই, ২টি উপন্যাস ও একটি ছোটগল্পের বই।)

সানাউল্লাহ সাগর

সৃজনশীল লেখালেখি, গবেষণা ও সম্পাদনা

সানাউল্লাহ সাগর › বিস্তারিত পোস্টঃ

একাকিত্বকে ছেড়ে কোথাও যাওয়া যায় না...

২২ শে জুন, ২০১৬ বিকাল ৩:৫৯



আমাদের উঠোনটা খুব একটা চওড়া ছিলো না। যতটা না পেট মোটা ছিলো তাঁর থেকে দীর্ঘদেহী । এই উঠোনে আমার বাবা কুতকুত খেলতেন, আমার ফুফু কানামাছি খেলতেন। আমার দাদা কিংবা তার বাবা হয়তো তাঁর দাদাও ছি বুড়ি খেলতেন। কিন্তু তাঁর দাদা’র পা এ উঠোনে পড়েছে কিনা অামরা জানি না।
আমাদের জানা বলতে হাজি বু মানে সেজো দাদী। আমার দাদারা ছিলো সাত ভাই। আর হাইজ্যা বু ছিলেন সেজো দাদার বৌ। আমাদের প্রজন্ম পূর্বপুরুষের গল্প বলতে ওই হাইজ্যা বু পর্যন্ত। দাদাদের লাঠি খেলার সুনাম, হা-ডু-ডু খেলার সুনাম আর লাঠিয়াল হিসেবে দশগ্রামের পরিচিতি পালোয়ান হিসেবে বংশটাকে আরো উজ্জ্বল করেছিলো।
বাবা-চাচারা সে সুনাম ধরে রাখতে পারেনি। কাজের কাজ যেটা করেছে -এক বাড়িতে তিনজন শিক্ষক আছে। তাঁর কারণে এ বাড়ির সব ছেলে-মেয়েরা পড়া লেখা শিখে। ছোট থেকেই বুঝে এটা একটা পাঠশালা, যেখানে পড়ার বিকল্প নেই।
আমিও এক শিক্ষক বাবার সন্তান। বলতে পারেন অবাধ্য সন্তান। ছোট সময় বাবা-মায়ের কড়া শাসনের জন্য যেসব দুষ্টমী করতে পারিনি। এই বুড়ো বয়সে বেশি বেশি করে পুষিয়ে নিচ্ছি। ছোট সময় থেকে যে স্বাধীন ভাবনা-স্বাধীন জীবনের কথা ভেবেছি। বড় হয়ে জেনেছি মুক্তচিন্তা! এখন কোন মুক্ত চিন্তা করতে আর বাঁধা নেই। কিন্তু আমার সব চেয়ে বড় বাঁধা আমি নিজেই! নিজেকে টেনে নিতে নিতে হাফিয়ে উঠছি। বাড়ি ভরা মানুষ- হৈচৈ- সারাদিন ক্রিকেট , সাত চারা, গোল্লাছুট, ফুটবল, কানামাছি থেকে দূরে যেতে যেতে মানুষ থেকে এতো এতো দূরে চলে এসছি যে এখন পায়ের সামনের মাটি ছাড়া আর কিুই দেখতে পাই না। বাঁকা ঘাঁড় ঠিক বাঁকাই আছে অথবা আরো বাঁকা হচ্ছে! কিন্তু নিজের মাথার চুলগুলো মাঝে মাঝে অচেনা হয়ে যাচ্ছে।সমাজ- পরিবার এখন আর টানে না। কিইবা টানে আমাকে! সেটাও আর বুঝতে পারি না। শুধু বুঝতে পারি বাঁচতে হলে দৌঁড়াতে হবে। শুধু সামনে দৌঁড়াতে হবে। পিছনে ফিরে তাঁকালে হোচট খেতে হবে।সময়ের সাথে দৌঁড়াতে পারি না। দৌঁড়ের প্রতিযোগীতায় থাকা পাগুলোর দিকে তাঁকিয়ে থাকি। আর নিজের মধ্যে বেড়ে ওঠা একাকিত্বকে ছেনে ছেনে খামির তৈরি করি। ভাবি একসময় রুটি তৈরি করে জটপট খেয়ে ফেলবো। সমস্ত নিঃসঙ্গতা। জীবনের কাছে কি চাওয়ার আছে। আমার কাছে আমার কি চাওয়া আছে! যেখানে পাশাপাশি সব লাল হাসি কালো হয়ে যাচ্ছে। মধুর মতো দৃষ্টি তীর হয়ে বিঁধে যাচ্ছে ভাবনার গহীনে।
আমার পূর্বপুরুষেরাও হয়তো এমনই ছিলেন। এখন আর একটি প্রজাপতিও আর অবশিষ্ট নেই। যারা শরীর ছুঁয়ে জীবনের হিস্যা করতে পারি। ছিঁড়ে গিয়ে জোড়া লাগতে পারি নিজে নিজেই। একা থাকি। নিজের পেখম তুলি আর ভাবি শূন্যতাই আমার বড় সম্পদ। এই একাকিত্ব কখনোই আমাকে ছেড়ে যাবে না।
...................................................................................
০৩-০১-১৬ খ্রিঃ,ইস্টার্ণ হাউজিং, পল্লবী, ঢাকা।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.