নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আঁচলের ঘ্রাণে বিমোহিত হতে মনে প্রেম থাকা লাগে। চুলের গন্ধ নিতে দুহাত বাড়িয়ে দেয়া লাগে। হাহাকার থাকা লাগে। দুনিয়া ছারখার হওয়া লাগে। সবাই আত্মা স্পর্শ করতে পারে না।আমার সমস্ত হাহাকার ছারখারে তুমি মিশে আছো।

সানবীর খাঁন অরন্য রাইডার

এক জন নিভৃতচারী

সানবীর খাঁন অরন্য রাইডার › বিস্তারিত পোস্টঃ

একজন আল্লামা শফী কীভাবে স্বাধীনতাবিরোধী হয়ে উঠা ও একটি গল্প

০৬ ই জুন, ২০১৭ ভোর ৪:০১


১৮৬৬ সালে ভারতে ‘দারুল উলুম দেওবন্দ’ মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হয়। ভারতের দেওবন্দ মাদ্রাসার আদলে ১৮৯৬ সালে আমাদের দেশে ‘দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম’ কওমী মাদ্রাসা বা হাট হাজারী মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠিত হয়। দেওবন্দ মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাকারীরা উর্দু ভাষাভাষি ছিলেন। তাই কওমী মাদ্রাসায় উর্দু ও আরবী ভাষায় শিক্ষা দেওয়া হয়। সেখানে বাংলা ও ইংরেজী শেখানো হয় না। এরা বাংলা ভাষা ও বাঙলা লোকায়িত সংস্কৃতিকে হিন্দুদের ভাষা ও সংস্কৃতি মনে করেন। এই বিশ্বাস থেকেই তারা বাংলা ভাষা ও বাঙলা লোকায়িত সংস্কৃতির বিদ্বেষী। প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকেই তারা শিরক বিদআত ও মুসলিম আকিদা পরিপন্থী সংস্কৃতির আগ্রাসন মোকাবেলার নামে বাঙালি সংস্কৃতি ধ্বংস করার কাজে লিপ্ত হয়, যা এখনও অব্যাহত আছে। ব্রিটিশ আমলে এরা ইংরেজী শিক্ষার তীব্র বিরোধিতা করে। এ কারণেই ভারতবর্ষের মুসলমানরা শত বছর পিছিয়ে পড়েছে। শুধু বাংলাদেশে নয়, ভারতবর্ষের যেখানে তারা গেছে সেখানেই লোকায়িত সংস্কৃতি ধ্বংসের চেষ্টা করেছে। বিহারের মুসলমানদের এই উগ্রবাদীতার কারণে ভারতবর্ষের কোথাও এদের ঠাঁই হয়নি। বিহার থেকে উৎখাত হয়ে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে যাযাবরের মত অভিশপ্ত জীবন যাপন করছে। দেওবন্দ মাদ্রাসার পৃষ্ঠপোষকরা হিন্দু মুসলমান ধর্মের ভিত্তিতে দেশ ভাগের ফতোয়া জারি করেন। জমিয়তে উলাম ই হিন্দ-এর নেতা মাওলানা হুসাইন আহমেদ মাদানিসহ কিছু দেওবন্দ আলেম মুহাম্মদ আলী জিন্নাহকে দ্বি-জাতি তত্ত্ব উপস্থাপনে উৎসাহিত করেন। পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা উর্দু করার পরামর্শও দিয়েছিলেন এইসব দেওবন্দ আলেমরা।

বিহার থেকে আগত আহমেদ শফী ১০ বছর বয়সে হাট হাজারী মাদ্রাসায় শিক্ষাজীবন শুরু করেন এবং ১৯৪১ সালে উচ্চ শিক্ষার জন্য ভারতের ‘দারুল উলুম দেওবন্দ’ মাদ্রাসায় ভর্তি হন। সেখানে ৪ বছর উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করেন। ভারতে থাকাকালীন সময়ে তিনি উগ্রপন্থী শাইখুল আরব ওয়াল আজম ও সাইয়্যেদ হুসাইন আহমাদ মাদানীর কাছ থেকে দীক্ষা গ্রহণ করে দ্বি-জাতি তত্ত্বেও মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে দেশে ফিরে আসেন। দেশে ফিরে দু’টি মাদ্রাসায় শিক্ষকতার করার পর হাটহাজারী মাদ্রাসাতেই শিক্ষকতা শুরু করেন।
কওমী মাদ্রাসার শিক্ষা, শায়খুল আরব ওয়াল আজম ও সাইয়্যেদ হুসাইন আহমাদ মাদানীর দীক্ষা উপরন্তু পূর্ব পুরুষ অবাঙালি হওয়াতে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা মেনে নিতে পারেন নি। তাই মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে সহযোগিতা করার জন্য তিনি মাদ্রাসার ছাত্রদের নিয়ে ‘মুজাহিদ বাহিনী’ নামে আলবদর বাহিনীর আদলে একটি কিলিং স্কোয়ার্ড গড়ে তোলেন। তার দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসাটি মুজাহিদ বাহিনীর কেন্দ্রস্থল ছিল। তিনি স্বাধীনতাবিরোধী নেজামে ইসলামের চট্রগ্রাম জেলার একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা ছিলেন। দেশ স্বাধীন হলে তিনি লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে যান। নীরবে নিভৃতে মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরুদ্ধে সংগঠিত করতে থাকেন।

২০০৯ সালের ২৯ জানুয়ারি জাতীয় সংসদে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আরম্ভ করার প্রস্তাব সর্বসম্মতভাবে পাশ হয়। ফলে জামায়াতের রাজনীতি হুমকির সম্মুখীন হলে ২০১০ সালের ১৯ জানুয়ারি মাদ্রাসার শিক্ষকদের নিয়ে আল্লামা শফী জামায়াতে ইসলামীর দ্বিতীয় ফ্রন্ট ‘হেফাজতে ইসলাম’ নামে একটি সংগঠন গড়ে তোলেন। ইসলামকে হেফাজতের কথা বলে মূলতঃ যুদ্ধপরাধীদের বাঁচানোর জন্য ২০১৩ সালের ৫ মে তারা ঢাকার শাপলা চত্ত্বরে বিভীষিকাময় তান্ডব চালায়।

বাংলাদেশ শিক্ষা ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (ব্যানবেইস) হিসাব মতে দেশে ১৩ হাজার ৯০২টি কওমী মাদ্রাসা আছে। ছাত্র-ছাত্রী সংখ্যা সংখ্যা ১৪ লাখ। মার্কিন গোয়েন্দা রিপোর্টে জানা যায় বাংলাদেশে ৩০-৩৫ হাজার কওমী মাদ্রাসা আছে। মতান্তরে কওমী মাদ্রাসার ছাত্র-ছাত্রী ২২ লাখ ও শিক্ষক ৩ লাখ ৫০ হাজার। এই বিপুল সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রীকে পাকিস্তানি ভাবধারায় গড়ে উঠার সুযোগ দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশ গড়া কখনো সম্ভব নয়। হেফাজতের দাবীর মুখে নতি স্বীকার করে মূলধারার শিক্ষাব্যবস্থাকে হেফাজতিকরণ না করে বরং কওমী মাদ্রাসাকে বিহারী তথা পাকিস্তানি ভাবধারা থেকে মুক্ত করে আধুনিক ও যুগোপযোগী করতে হবে। সরকারের উপর নির্ভর না করে দেশের সকল প্রগতিশীল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে হেফাজতি শক্তিকে মোকাবেলা করতে হবে। জয় বাংলা।

এবার ঈশপের একটা গল্প বলি-
এক ধানক্ষেতে বাসা বাঁধিছিল একটি মা এবং দুটি বাচ্চা সারস। ধানক্ষেতে সেতিদের সুখের সংসার। একদিন মা সারস গিয়াছে খাবারের সন্ধানে, এমন সময় জমিনের মালিক আসি উপস্থিত। ধান ততদিনে পেকে গিয়াছে। সিদ্ধান্ত নিল ধান কাটা আবশ্যক। দায়িত্ব দিল মজুরদিগেরে। বাচ্চা সারস দুটি ভয়ে কাঁপতিছে তখন, এই তো ভাঙি গেল সুখের সংসার। মা ফিরলে সেতিরা এই কথা বইললো, কিন্তু মা সারস ইহাতে বিচলিত হইলো না। সাতদিন চলি গেল, কেউ আর ধান কাটতি আসে না।
সাতদিন পরে জমিন দেখতি এসে মালিক রাগি গেল, এবার দায়িত্ব দিল তার ছেলেদের। মা সারস এই কথা শুনেও বিচলিত হইল না। দেখা গেল, আরো সাতদিন কাটি যাওয়ার পরেও মালিকের ছেলেরা ক্ষেতে আইসলো না।
এবার মালিক রেগে আগুন হয়ি গেল, ঘোষণা দিল আর কারো উপরে ভরসা করা নয়, আগামীকল্য নিজেই কাস্তে নিয়া ধান কাটতি আসবে। এবার মা সারসের উদ্বেগ দেখা গেল, বৈকালে বাচ্চা দুটি নিয়া উড়াল দিল নতুন আস্তানার সন্ধানে। পরদিন বিহানে দেখা গেল মালিক, মালিকের ছেলে আর মজুরদিগেরা সত্যই ধান কাটতিছে।
.
.
.
এই ঘটনার শিক্ষা হইল, নিজের কাজ নিজেই করতি হয়। আর নিজে উদ্যোগী হয়ি আগাইয়া আসলে আরো অনেকেই যোগ দেয়, প্রতিপক্ষের তখন পিছু হটতি হয়।
আমরা এইখানেই ভুল করিছি, মনে করিছি আমাদিগের কাজ আওমীলীগ করি দিবে। মৌলবাদীরা তা করেনিকো, জামাত শিবির কোণঠাসা হয়ি যাওয়ার বিকল্প ফ্রন্ট হেফাজত খুলি বসিছে।
এই কারণেই আমাদের হারি যাওয়া।

তথ্য কৃতজ্ঞতা- আনোয়ার সিদ্দিকী&Ali Akbar Tabi

সুতরাং একটা কথা মনে রাখা জরুরী নিজের যুদ্ধটা নিজেরই করতে হয়।আশা করা উচিত নয় কেউ আপনার লড়াই লড়ে দিবে।একদল বুনো শুয়ারের উপর ভরসা রাখার চেয়ে নিজে একাকি লড়াই করা ভাল।


মন্তব্য ৯ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৯) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই জুন, ২০১৭ ভোর ৬:১০

বিলুনী বলেছেন: এখন উপাই কি ? জোড় কদমে চালিয়ে যান ।

২| ০৬ ই জুন, ২০১৭ সকাল ৭:০৮

জগতারন বলেছেন: তথ্যবহুল পোষ্ট।
অনেক কিছু জানতে পারলাম মাওলানা শফি, কওমি মাদ্রাসা ও বিহারি সমন্ধে। তাইতো বলি শুধু ধর্মের জন্য দেশ ত্যাগ করে বিহারিরা বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে এমন অভিশপ্ত জীবন যাপন কেন করে? আর কওমী'রা বাংলা সংস্কৃতি এত উপেক্ষা কেন করে?
কওমী'দের গোড়া ছাড়া আর কি বলা যায় ! ইসলাম ধর্ম কি শুধু বাংলাদেশেই আছে নাকি !! পৃথিবীর অন্যান্য দেশেওতো আছে, বিভিন্ন দেশ ভ্রমন করে দেখেছি বিভিন্ন দেশের মুসলমানদের দেখেছি, তারাতো তাদের দেশের সংস্কৃতি অবজ্ঞা করে না, শুধু ইসলামের নাম নিয়া তারা নিজের দেশের মানুষদের হত্যা করে না যা পূর্ব বাংলার বা পাকিস্তান এখন বাংলাদেশের মুসলমান'রা করেছে।

তবে ভাই, সানবীর খাঁন অরন্য, এই কওমী'দের অনুপ্রেরনা থেকেই আমরা পূর্ব বংগ তথা বংগ ভংগ করতে পেরেছিলাম ও এক সময় পাকিস্তান (পূর্ব পাকিস্তান) গঠন করতে পেরেছিলাম যা এখন বাংলাদেশ নামে পরিচিত

৩| ০৬ ই জুন, ২০১৭ সকাল ৭:১৩

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: বিষফোঁড়া!

৪| ০৬ ই জুন, ২০১৭ সকাল ৯:১৩

বিজন রয় বলেছেন: আপনি কেমন আছেন? এতদিন কোথায় ছিলেন তাই বলুন!

আপনার লেখা মিস করি।
আবার নিয়মিত হবেন আশারাখি।

৫| ০৬ ই জুন, ২০১৭ সকাল ১০:৫৭

হাসান মাহবুব বলেছেন: এই তাইলে কাহিনী!

৬| ০৬ ই জুন, ২০১৭ সকাল ১১:০০

প্রথমকথা বলেছেন: খুব সুন্দর তথ্য উপস্থাপন করেছেন, খুব ভাবনায় পডে গেলাম। এত গুলো কওমি মাদ্রাসা অনেক ছাত্র শিক্ষক। কিভাবে কি করবে সরকার বুঝে উঠতে পারছিনা, তবে আমার জানামত সারা দেশে যত গুলো কওমী মাদ্রাসা আছে সব পরিচালনা অর্থ আওয়ামী পরিবার থেকে আসে, অন্য কোন দল সংগঠন থেকে তেমন আসে না। আমার বাসার পাশে একটা আছে লক্ষ লক্ষ টাকা আমাদের লোকেরাই দিতেছে।
জয় বাংলা।।

৭| ০৬ ই জুন, ২০১৭ দুপুর ১২:৫৪

প্রজ্জলিত মেশকাত বলেছেন: সম্পূর্ণ সত্য। পোস্টে +++

৮| ০৬ ই জুন, ২০১৭ দুপুর ১:০২

তানভির জুমার বলেছেন: বিদ্বেষী বানানো গল্প হিসেবে লেখাটি নিঃসন্দেহে ভালো হয়েছে। আমাদের বড় একটা সমস্যা হচ্ছে আমরা যখন কাউকে অপছন্দ করি, কেউ যখন আমাদের মতের বিরুদ্ধে কথা বলে তখন তাকে ঘায়েল করার জন্য আমরা সব ধরনের মিথ্যার আশ্রয় নিই। একবারের জন্যও জানতে চেষ্টা করি না প্রকৃত সত্যটা কি।

৯| ০৬ ই জুন, ২০১৭ রাত ৮:৪৬

রাজসিংহ বলেছেন: যা বুঝলাম বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষই উগ্রবাদী আর চেতনাবিরোধী।এক কাজ করেন ,আপনারা প্রগতিশীলরা সবাইরে ধাক্কায়া বঙ্গোপসাগরে ফালায়া দেন।কি পারবেননা??

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.