নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার শূন্যতা গণনাহীন

স্মৃতিগুলো একপাল কুকুরের মত খিঁচিয়ে ধাড়ালো দাঁত মনের পেছনে করে তাড়া

সন্দীপ হালদার

আমি যা আমি তা। অনেক সময় আমি যা না তাও বটে ! সব মিলিয়ে আমি মনে হয় একেবারেই যা তা!

সন্দীপ হালদার › বিস্তারিত পোস্টঃ

গার্মেন্টস ফ্যাক্টরীর আভ্যন্তরীণ বিভিন্ন বিষয়: Between conformity and resistance women garment workers in bangladesh

২১ শে নভেম্বর, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:১২

Inside The factory অধ্যায়ে গবেষক গার্মেন্টস ফ্যাক্টরীর মধ্যে প্রবেশ করা এবং গার্মেন্টস ফ্যাক্টরীর আভ্যন্তরীণ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেছেন।

গার্মেন্টস ফ্যাক্টরীর মধ্যে গবেষককে সাহায্য করেণ ঐ ফ্যাক্টরীর মালিক বা ম্যানেজার। গার্মেন্টস ফ্যাক্টরীতে প্রবেশ করার সময় গবেষককে অনেক গার্ডকে অতিক্রম করতে হয়েছে এবং তিনি প্রবেশ করার পর মুহূর্তে সব গেট বন্ধ করে দেয়া হয়। গেট বন্ধ করে দেয়ার ফলে গবেষক সবসময় অস্বস্তি বোধ করতেন। কিন্তু গার্ড, ম্যানেজার বা গার্মেন্টস কর্মী সবাই গেট বন্ধ করার প্রয়োজনীয়তার কথা বলতেন। গেট বন্ধ থাকার ফলে চোর বা খারাপ লোকেরা শ্রমিকদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না বলে তারা মনে করেন। তবে ১৯৯৬ সালে ‘The Daily Star’ পত্রিকার একটা সংবাদের প্রতিবেদনে বলা হয় যে, ঐ সময় একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরীতে আগুন লাগার সময় গার্ড, ম্যানেজাররা সব পালিয়ে যায় ফলে গেট খোলার মত কেউ না থাকায় আহত ও নিহত লোকের সংখ্যা বেড়ে যায়। গার্মেন্টস মালিকেরা এই দূর্ঘটনা কবলিত মানুষদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার কথা বললেও কোন পরিবার ক্ষতিপূরণ পায় নি।

যদি আগুন লাগে তবে শ্রমিকদের ফ্যাক্টরী থেকে বের হওয়া কঠিন হয়ে যায় কারণ ফ্যাক্টরির প্রবেশদ্বার ও বের হবার রাস্তা অনেক সংকীর্ণ।

গার্মেন্টস ফ্যাক্টরীতে একটি বড় কক্ষে অনেক গুলো সেলাই মেশিন থাকে। মেশিনগুলো কয়েকটি সারিতে একটার পর আরেকটা রেখে সাজানো থাকে। একটা মেশিন নিয়ন্ত্রন করে একজন operator । অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই operator রা নারী হয়ে থাকে। সব প্রক্রিয়া সুষ্ঠ ভাবে নিয়ন্ত্রণ করে একজন সুপারভাইজর।

একটা গার্মেন্টস ফ্যাক্টরীতে cutting, wraping, আয়রণ কক্ষ দেখা যায়। আয়রণ করা হয় যে কক্ষে সেখানে শ্রমিকদের অধিকাংশই পুরুষ। মনে করা হয় যে আয়রণ করা পুরুষদের কাজ যা অনেক কষ্টসাধ্য। আবার পশ্চিমা সমাজে আয়রণ করাকে নারীদের কাজ বলে মনে করা হয়।অর্থাৎ শ্রমের লিঙ্গীয় বিভাজন যে স্থানভেদে ভিন্ন হয় তা গবেষক দেখাতে চেয়েছেন।

বেতনের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে নারী শ্রমিকরা পুরুষদের থেকে কম বেতন পায়। এখানেও কাজ করে পুরুষ আধিপত্যশীল ধারণা। গার্মেন্টসে কাজ করার ক্ষেত্রে নারীরা বৈষম্যের শিকার হয় এবং এটা তারা জানে। কিন্তু এই বৈষম্যগুলো তারা তাদের অভিজ্ঞতা দিয়ে পরিবর্তণ করতে পারে না।

দশটি কারখানা পরিদর্শনের পর গবেষক বুঝতে পারলেন যে, কারখানার মধ্যে তিনি শ্রমিকদের সাথে ঠিকভাবে কথা বলতে পারছেন না। ম্যানেজমেন্টের লোকদের কারণে তিনি শ্রমিকদের সাথে কথা বলতে অস্বস্তিবোধ করছিলেন আর ম্যানেজমেন্টের লোকেরা শ্রমিকদের উপর কড়া নজড় রাখে। তাই তিনি শ্রমিকদের সাথে কারখানার বাহিরে গিয়ে যোগাযোগ করলেন এবং তাদে সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। এর মাধ্যমে তিনি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরী, সেখানে কাজের অবস্থা এবং কাজের সম্পর্ক বিশ্লেষণ করতে চেয়েছেন।



গবেষকের নেয়া সাক্ষাৎকারে অধিকাংশ শ্রমিকদের ঢাকার ২৭০০ গার্মেন্টস ফ্যাক্টরীর যে কোন একটিতে কাজ পেতে কোন অসুবিধা হয়নি। কাজ পাবার ক্ষেত্রে তাদের আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব বা প্রতিবেশীরা সহায়তা করেছেন। নারীদের গার্মেন্টস শ্রমিক হবার ক্ষেত্রে ব্যাক্তিগত সম্পর্ক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এজন্য দেখা যায় যে, অধিকাংশ গার্মেন্টস শ্রমিকদের আত্মীয়-স্বজনদের অনেকেই গার্মেন্টস শ্রমিক হিসেবে কাজ করে। সাক্ষাৎকার নেয়া নারীদের অর্ধেকের ভাই-বোন বা কাজিনরা গার্মেন্টস শ্রমিক হিসেবে কর্মরত এবং তাদের কাজ পাবার ক্ষেত্রেও তারা সহায়তা করেছেন। দেখা যায় যে জ্ঞাতিসম্পর্ক গার্মেন্টস ফ্যাক্টরীতে কাজ পাবার ক্ষেত্র নির্ধারকের ভূমিকা পালন করে।

যে সব নারীরা নতুন শ্রমিক হিসেবে গার্মেন্টসে যোগ দেয় তারা ঐসব কারখানায় বন্ধু বা আত্মীয়-স্বজনদের কারণে স্বস্তি অনুভব করে। এখানেও জ্ঞাতিসম্পর্কের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। যে সব নারী শ্রমিকরা গ্রাম থেকে ঢাকা আসে তাদের বাসস্থান নির্ধারণের ক্ষেত্রেও জ্ঞাতিসম্পর্ক ভূমিকা রাখে। Paul-Majumder এর গবেষণায় দেখা যায় যে ৮৭% অভিবাসীরা তাদের আত্মীয়-স্বজনদের পাশেই থাকে।তবে গার্মেন্টস ফ্যাক্টরীতে যোগ দেয়ার পর শ্রমিকরা যখন দক্ষ হয়ে ওঠে তখন তখন আত্মীয়-স্বজনদের ভূমিকা কমতে থাকে। তারা নিজেরাই নতুন চাকুরী বা নতুন বাসস্থান খুঁজে নেয়। অর্থনৈতিক উন্নয়নই তখন আত্মীয়-স্বজনদের থেকে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।

গার্মেন্টসে কাজ করার সময় অনেক কর্মীর সাথে তাদের সহকর্মীদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে যা তাদের নতুন নেটওয়ার্ক হিসেবে গড়ে ওঠে এবং তাদের নতুন গার্মেন্টস ফ্যাক্টরীতে কাজ পেতে সাহায্য করে। এই নতুন নেটওয়ার্ক গড়ে ওঠে তাদের কাজের অভিজ্ঞতা ও নতুন সামাজিক অবস্থার প্রেক্ষিতে।

যদি কোন গার্মেন্টস ফ্যাক্টরীতে বেশী বেতন দেয়া হয় তখন সেখানকার নারী শ্রমিকরা অন্য কারখানার নারী শ্রমিকদের জানান। এভাবেই নারী শ্রমিকরা তাদের কারখানা পরিবর্তণ করেন। কারখানা পরিবর্তনের সাথে সাথে তারা বাসস্থান ও পরিবর্তন করে। চাকুরী খোঁজার মত migration এর ক্ষেত্রেও নতুন নেটওয়ার্ক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।নেটওয়ার্ক ছাড়া চাকুরী পাওয়া খুবই কঠিন আর কাজ পাওয়া গেলেও সেখানে খুব কম লোকই সাহায্য করে।নতুন চাকুরী পাওয়া নারীদের একটি বড় অংশ পূর্বে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করত।

নতুন চাকুরী পাবার ক্ষেত্রে শ্রমিকদের সাক্ষাৎকার দিতে হয়। তাদের কিছু সাধারণ প্রশ্ন করা হয় এবং জানতে চাওয়া হয় যে তারা ইংরেজী নম্বর পড়তে ও লিখতে পারে কিনা। অধিকাংশ নতুন চাকুরীপ্রার্থীরা চাকুরী পেয়ে যায় এবং তাদের একটি ID কার্ড দেয়া হয়। কাজের সময় এই ID কার্ড নিয়ে যেতে হয়।

এভাবে নারী শ্রমিকরা বিভিন্ন উপায় গার্মেন্টসের সাথে যুক্ত হয় এবং নানারকম অসুবিধা থাকা সত্তেও তারা নিজেদের গার্মেন্টস শ্রমিক হিসেবে পরিচয় দিতে সম্মানজনক বলে মনে করে।



শ্রমের লিঙ্গীয় বিভাজনঃ

গার্মেন্টস ফ্যাক্টরীর প্রশাসনিক কর্মকর্তারা দাবি করে থাকেন যে তারা চাকুরী প্রদানের ক্ষেত্রে কোন ধরণের বৈষম্যের চর্চা করেন না কিন্তু বাংলাদেশ সহ অন্যান্য অঞ্চলে লিঙ্গীয় বৈষম্য প্রকট ভাবে দেখা যায়। চাকুরী প্রদানের ক্ষেত্রে দেখা যায় সেলাইসহ অন্যান্য operating sector এ নারীদের নিয়োগ দেয়া হয় ঠিকই কিন্তু সেখানে ব্যবস্থাপনা সহ প্রশাসনিক কাজ করে থাকে পুরুষরা। বেতন/মজুরী প্রদানের ক্ষেত্রেও দেখা যায় নারী শ্রমিকেরাই সাধারণত কম মজুরীতে কাজ করে। যেখানে নূন্যতম মজুরীর নিচে কাজ করে গড়ে ৪২% নারী শ্রমিক সেখানে পুরুষের ক্ষেত্রে আই হার ১৭%।

লিঙ্গীয় বৈষম্যের কারণঃ

গার্মেন্টস সেক্টরে কাজের ক্ষেত্রে এ ধরণের লিঙ্গীয় বৈষম্যের জন্য কতগুলো কারণ চিহ্নিত কর যায় :

১। দক্ষতা এবং শিক্ষার অভাব

সাধারণত বলা হয়ে থাকে যে নারীদের দক্ষতা ও শিক্ষাগত যোগ্যতা কম, তাই তাদের প্রশাসনিক কাজে নিয়োগ দেয়া হয় না।

২। শারীরিক/জৈবিক অবস্থাঃ

বলা হয়ে থাকে নারীদের দেহ কাঠামো। আঙ্গুলের গড়ণ, mobility ইত্যাদি কারণে তারা সেলাইয়ের কাজে পুরুষদের তুলনায় বেশী পারদর্শী। যেখানে পুরুষ্রা তাদের স্বভাব সুলভ নেতৃত্ব ও কঠোরতার কারনে suprevising ও অন্যান্য প্রশাসনিক কাজে বেশী সাবলীল।

৩। বিদ্যমান সমাজ কাঠামো ও মতাদর্শঃ

বিদ্যমান সমাজ কাঠামো ও মতাদর্শ এই লিঙ্গীয় বৈষম্যের অনুকূলে। পুরুষ শাসিত সমাজ ব্যাবস্থায় এটা স্বীকৃত যে পুরুষরা নারীদের dominate করবে। তাই কর্মক্ষেত্রে পুরুষ কর্তৃক এই শোষণ নারীরা মেনে নেয়।

কর্মক্ষেত্রে এই অবস্থার বিশ্লেষণে কিছু গুরুত্বপূর্ণ চিন্তাধারা লক্ষ্য করা যায় –

১) Neo-classical Economic Approach:

Neo-classic অর্থনীতিবিদরা শ্রমবাজারকে ‘innocent economic phenomena’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন যেখানে এই মজুরী বৈষম্যকে তারা dynamics of market এবং imperfect compitition দ্বারা ব্যাখ্যা করেছেন।

২) Household Economic Approach:

Neo household economics একে household এর আভ্যন্তরীণ অনুশীলন দ্বারা ব্যাখ্যা করেছেন যেখানে নারীরা গৃহে অবস্থান করে ও পুরুষেরা কাজের সন্ধানে বাহিরে যান।

৩) Feminist Thought :

নারীবাদীরা উভয় ব্যাখ্যারই সমালোচনা করেণ। তারা বলেন, পরিবারের মধ্যেও ক্ষমতার সম্পর্ক , আধিপত্য। subordination strategy চর্চিত হয়। তারা লিঙ্গীয় বৈষম্যের ক্ষেত্রে ‘embeddendenss in discriminating structure’ এর কথা বলেন।

৪) Notion Of Dual or Segmented Labor Market:

শ্রমের ক্ষেত্রে এই বৈষম্যের বিশ্লেষণ হিসেবে Dual or Segmented Labor Market এর ধারণা আসে। যেখানে higher-paying ও lower-paying sector এর পার্থক্যের কথা বলা হয়। higher-paying sector belong করে ‘primary labor market’ কে আর low wage belong করে ‘secondary labor market’ কে।



কিন্তু এসকল আলোচনা সত্ত্বেও বলা যায়, labor institution সামাজিক অনুশীলন ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ দ্বারা shaped হয় এবং লিঙ্গীয় এই বিভাজনের ক্ষেত্রে skill construction এর mechanism এর কথা আসে।



নারী ও পুরুষের চাকুরীর পার্থক্যঃ

শ্রম বাজারে মহিলাদের শ্রমের মূল্য নিন্ম তাই তাদের শ্রম বাজারকে secondary labor market বলা হয়। নারী শ্রমিকরা তাদের দক্ষতা বাড়াতে চায় কিন্তু কর্তৃপক্ষ তাদের শেখার কোন সুযোগ দেয় না।

নারী ও পুরুষের চাকুরীর ক্ষেত্রে সামাজিক কিছু মতাদর্শ রয়েছে। যেমনঃ দক্ষতার ক্ষেত্রে ধরা হয় নারীর দক্ষতা পুরুষের থেকে কম। এই মতাদর্শ নারী ও পুরুষের কাজের ক্ষেত্রে পার্থক্য সৃষ্টি করে। দেখা যায় যে, নারী পুরুষ একই কাজ করা সত্ত্বেও নারীকে অদক্ষ বলা হয় এবং তাদের বেতন ও কম প্রদান করা হয়। নারী ও পুরুষের বেতনের এই পার্থক্য সামাজিক ভাবে স্বীকৃত। একারনে গার্মেন্টস ফ্যাক্টরীতে নারী শ্রমিকদের সম্মানও কম বলে মনে করে অনেক শ্রমিক।

বাংলাদেশের গার্মেন্টস ফ্যাক্টরীর নারী শ্রমিকরা অন্যান্য দেশের নারী শ্রমিকদের তুলনায় অনেক বেশী দক্ষ ও শিক্ষিত বলা হয়। তারপরও শ্রম বাজারে তারা কম মূল্যায়িত। শুধুমাত্র অশিক্ষিত নারীরাই নয়, শিক্ষিত নারীরাও বর্তমানে গার্মেন্টস ফ্যাক্টরীর কাজে যুক্ত হচ্ছে। তবে মালিকেরা শিক্ষার থেকে কাজের performance কে গুরুত্ত্ব দেন। কিন্তু শ্রম বাজারে অসংখ্য নারীর উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে শিক্ষার কারণে।আর কর্মক্ষেত্রে শিক্ষিত নারী অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।এর পরও নারীকে কর্মস্থলে subordinate করা হয়।

Turnover and Promotion:

নারী শ্রমিকদের পদোন্নতি শিক্ষা ও শ্রম বাজারের সাথে যুক্ত। সবাই চায় পদোন্নতি আর এটা নির্ভর করে সে কতটা দক্ষতা অর্জন করেছে তার উপর। আর চাকুরী পরিবর্তনের ক্ষেত্রে social interaction ও বিভিন্ন সম্পর্ক অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অধিকাংশ শ্রমিকই ভাল সুযোগ সুবিধার জন্য চাকুরী পরিবর্তন করে না বরং বন্ধু বা আত্মীয় স্বজন্দের সাথে থাকার জন্য তারা চাকুরী পরিবর্তন করে।



পদোন্নতিঃ

পোশাক শিল্পে নারীর বেতন শুধু কমই থাকে না, পদোন্নতির দিক থেকেও তারা পিছিয়ে থাকে। কর্মক্ষেত্রে পুরুষদের চেয়ে তাদের পদোন্নতি পাবার সুযোগ কম থাকে।

নারী শ্রমিকরা পদোন্নতি হিসেবে জুনিয়র ও সিনিয়র অপারেটরের পদ পেয়ে থাকে। সিনিয়র অপারেটর হবার পর তাদের বেতন বৃদ্ধি হয় কিন্তু আর পদোন্নতি হয় না। পদোন্নতির ফলে পূর্বের সহকর্মীদের সাথে তাদের সম্পর্কে কিছু নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।তবে পদোন্নতিকে তারা অত্যাবশ্যকীয় মনে করে না।



কাজের ক্ষেত্রঃ

গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে কাজের পরিবেশ সব সময় এক রকম থাকে না। এরপরও নারীরা কিছু নির্দিষ্ট সমস্যার সম্মুখীন হয়। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হল বেতন ও কাজের সময়।





বেতনঃ

যে সমস্যাটি সবচেয়ে বেশী তা হল নারী শ্রমিকরা বাংলাদেশ সরকারের নির্ধারিত বেতনের ন্যূণতম অংশও পায় না। তা সত্ত্বেও খুব কম শ্রমিক বেতনের পরিমাণ নিয়ে অভিযোগ করে। তার বদলে অধিকাংশ শ্রমিক নিয়মিত বেতন না পাওয়া নিয়ে অভিযোগ করে। ফলে তাদের মধ্যে এক ধরণের অনিশ্চয়তা বোধ তৈরি হয়।অনেক সময় শ্রমিকদের শাস্তি দেবার জন্য তাদের বেতন কেটে রাখা হয়।ফ্যাক্টরীতে দেরীতে আশা, অন্যদের সাথে কথা বলা, টার্গেট পূরণ করতে না পারলে শাস্তি দেয়া হয়।





কাজের সময়ঃ

বিশ্বব্যাপী রপ্তানি সেক্টরে কাজের সময়কাল অন্যান্য কাজের সময়ের চেয়ে বেশী থাকে। Addison এবং Demery কিছু Asian দেশ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে দেখান যে সকল দেশে রপ্তানী সেক্টরে কাজের সময় জাতীয়ভাবে প্রণীত আইনের চেয়ে বেশী থাকে। যেমনঃ থাইল্যান্ডে ১৯৮৫ সালে রপ্তানী সেক্টরে কাজের সময় ছিল সপ্তাহে ৬৬ ঘন্টা যদিও আইন অনুযায়ী কাজের সময় ৪৮ ঘন্টার বেশী হবার কথা নয়। একই দৃশ্য কোরিয়া, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরে ও দেখা যায়।

এছাড়া ফ্যাক্টরীতে overtime একটি নিয়মিত বিষয়। গার্মেন্টসে বিভিন্ন শিফটে কাজ করানো হয় কিন্তু রাতের শিফটে নারীদের কাজ করতে দেয়া হয় না। overtime নিয়ে অনেক শ্রমিক বিভিন্ন অভিযোগ করে থাকেন।

এছাড়া আরো যেসব সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় তা নিন্মে দেয়া হল।



সম্মানের অপর্যাপ্ততাঃ

নারী শ্রমিকরা মালিকদের কাছ থেকে কিছু সামাজিক দায়িত্ব প্রত্যাশা করে কিন্তু সব মালিক এই প্রত্যাশা পূরণ করতে পারে না। নারী শ্রমিকরা নিরাপত্তা ও ব্যাবস্থাপনার বিষয় অভিযোগ করে যে মালিকরা তাদের সম্মানের ব্যপারে উদাসীন।

রাস্তায় তারা নানা সস্যার সম্মুখীন হয় বিশেষত সূর্যাস্তের পর।টিজিং থেকে শুরু করে, অপহরন এমনকি ধর্ষণের মত বিষয়ের সম্মুখীন হতে হয় তাদের।প্রায় সব নারী শ্রমিক নিপীড়নের শিকার হয় কারখানার বাইরে এর জন্য তারা ফ্যাক্টরীর পরিচালকদের দায়ি করেন।

ছুটির দিন এবং পুরুষ্কারঃ

সাক্ষাৎকার প্রদানকারীরা জানায় যে তারা যে সকল কারখানায় কাজ করে সেখাঙ্কার কোথাও প্রাতিষ্ঠানিক কোন পুরুষ্কারের ব্যবস্থা নেই। তাদের বোনাসও ঠিকমত দেয়া হয় না। তবে বিদেশী মালিকাধিন কারখানায় তারা ভাল কাজের জন্য পুরষ্কার পায়।

গার্মেন্টস কারখানায় তারা খুবই কম ছুটি পায়। নারী শ্রমিকরা অভিযোগ করেন যে পুরুষ ব্যবস্থাপকরা মালিক পক্ষ থেকে তাদের সকল সুবিধা পেতে বঞ্চিত করে।



শারিরীক অবস্থা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থাঃ

কারখানায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা সন্তোষজনক নয়। সেখনে পর্যাপ্ত টয়লেট থাকে না। এমনকি শ্রমিকদের টয়লেট ব্যবহারও নিয়ন্ত্রন করা হয়। ভাল চিকিৎসা ব্যবস্থাও থাকে না।এছাড়া তাদের ক্যান্টিন নিয়েও নানান সমস্যা রয়েছে।

এধরনের বিভিন্ন সমস্যা থাকা সত্ত্বেও নারীরা গার্মেন্টস ফ্যাক্টরীতে কাজ করে যাচ্ছে।



Different spaces:

ফ্যাক্টরীতে নারী ও পুরুষ শ্রমিকদের মাঝে দূরত্ব বিরাজ করে। তাদের মধ্যে সম্পর্কের ক্ষেত্রে খুব বেশী ঘনিষ্টতা লক্ষ্য করা যায় না। নারী শ্রমিকরদের যে কটুক্তি ও অশালীন মন্তব্য করা হয় তার প্রতিবাদ স্বরূপ তারা এই দূরত্ব বজায় রাখে। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের কিছু নীতিমালা থাকলেও তারা স্বতঃপ্রনোদিত হয়ে এই দূরত্ব বজায় রাখে ও একে উৎসাহিত করে। এর মাধ্যমে নারী শ্রমিকদের মাঝে দলীয় সংহতি বৃদ্ধি পায় ও সামাজিক নেটওয়ার্ক গড়ে ওঠে।

এই দূরত্ব বজায় রাখার মাধ্যমে পর্দার নতুন সঙ্গায়নও করা হয়। সাধারাণত পুরুষ শ্রমিকদের থেকে দূরত্ব রাখার মাধ্যমে নারী শ্রমিকরা তাদের পর্দা বজায় রাখে।

The Construction Of Fictive Kinship Relation:

ফ্যাক্টরীতে শ্রমিকরা তাদের নিজেদের মাঝে পাতানো সম্পর্ক স্থাপন করেও এধরণের সম্পর্ক অ সম্বোধনের মাধ্যমে তারা তাদের কাজের পরিবেশ পরিবর্তণ করে।

ফ্যাক্টরীর মধ্যে পাতানো সম্পর্ক স্থাপনের নারী শ্রমিকরা তাদের কর্মক্ষেত্রকে একভাবে ‘desenualize’ করে। এধরণের সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে শ্রমিকদের মাঝে একাত্বতাবোধ বৃদ্ধি পায়।

ফ্যাক্টরীর বাইরেও পাতানো জ্ঞাতিসম্পর্ক চর্চার মাধ্যমে শ্রমিকরা তাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রার বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করে থাকেন। তবে এই সম্পর্কের ক্ষেত্রে সম্বোধনের মাধ্যমে সমাজে যে স্তরায়ন ও ক্রমোচ্চতা আছে তা ফুটে ওঠে। বয়সে বড় নারী operator কে আপা, পুরুষ সুপারভাইজরকে ভাই ও চাচা সম্বোধনের মাধ্যমে কর্মক্ষেত্র তাদের কাজের যে তারতম্য তা ফুটে ওঠে। শ্রমিকরা অন্য কর্মীদের এমন সম্বোধন করলেও মালিকদের sir বলে ডাকে। এভাবে সম্বোধিত জ্ঞাতিত্ত্ব পদাবলী তাদের কর্মক্ষেত্রে পদের যে স্তরায়ণ তা represent করে।

কর্মক্ষেত্রে এই পাতানো সম্পর্ক সমাজে চর্চিত লিঙ্গীয় অসমতা ও এর বিভাজনকে নির্দেশ করে। দেখা যায় পুরুষ সুপারভাইজর নারী শ্রমিককে টিজ করে থাকে এবং একে স্বাভাবিক মনে করা হয়। এছাড়াও নারী স্বত্তার যে উপস্থাপন, নারীর প্রতি সমাজের যে বিরূপ মনোভাব, নারীর উপর পুরুষের আধিপত্য চর্চা, নারীর অবদমন এর মাধ্যমে ফুটে ওঠে। আবার দেখা যায় নারী শ্রমিক তার স্বাভাবিক সৌন্দর্য দ্বারা পুরুষ শ্রমিকদের কাছ থেকে সুবিধা পেতে পারে।

এ অধ্যায়ে ফ্যাক্টরীর মধ্যে সামাজিক সম্পর্কের চর্চা ও তার সাহায্যে কাজের পরিবেশের পরিবর্তণ। বিদ্যমান সামাজিক অসমতা, লিঙ্গীয় ও অন্যান্য ক্ষেত্রে ক্ষমতার চর্চা, নারীর পরিচিতি নির্মান ও নারী শ্রমিকদের দৈনন্দিন প্রতিকূলতা ইত্যাদি বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। তবে এ ধরণের সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও পেশার ক্ষেত্রে নারীর অন্তর্ভুক্তি ক্ষমতার চর্চা, বিবাহ ও পরিবার গঠনে ও লিঙ্গীয় পরিচিতির ক্ষেত্রে পরিবর্তন এনেছে।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে এপ্রিল, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:২৫

সুজানা কন্দক বলেছেন: গার্মেন্টস নিয়ে খুব সুন্দরও সুবিন্যস্ত তথ্যগুলো দেয়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। এত কষ্ট তখনি সার্থক হয় যখন দেখি ওয়াল্ডের সেরা ১১টি ফ্যাশন ব্র্যান্ড বাংলাদেশ থেকে পোশাক ইম্পোরট করে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.