![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
I am the slave of my baptism. Parents, you have caused my misfortune, and you have caused your own... - Arthur Rimbaud
[The Hunter Gracchus গল্পটা অনুবাদের চেষ্টা। মূলত দুটি ইংরেজি অনুবাদ অনুসরণ করা হয়েছে, বিশেষ করে Ian Johnston এর অনুবাদটা, এছাড়া Willa and Edwin Muir এর অনুবাদও, কাফকার সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং গল্পগুলোর মধ্যে একটা... ]
শিকারী গ্রেকাস
- ফ্রানৎ্স কাফকা
জেটির দেয়ালে হেলান দিয়ে দুটি ছেলে পাশা খেলছে। মনুম্যান্টের সিঁড়িতে বসে, তলোয়ার বাগিয়ে ধরা বীরের ছায়ায় আরাম করে বসে সংবাদপত্র পড়ছে আরেকটি লোক। বালতি ভরে ঝর্ণার জল তুলে নিচ্ছে একটি মেয়ে। ফলবিক্রেতা লোকটি তার ফলের পাশে শুয়ে সমুদ্র দেখছে। শুঁড়িখানার প্রবেশদ্বার আর জানালা বরাবর তাকালেই দেখা যায় ভেতরে শান্ত ভাবে বসে মদ গিলে যাচ্ছে দুইজন লোক। তাদের সামনেই একটা টেবিলে বসে ঝিমুচ্ছে শুঁড়িখানার মালিক। নিঃশব্দে ছোট একটি নৌকা এসে ভিড়ল ছোট জেটিটার পাশে, যেন জলের উপর দিকে একে টেনে আনা হয়েছে। নীল জ্যাকেট গায়ে এক লোক তীরে লাফিয়ে উঠে আংটার ভেতর দিয়ে দড়ি টেনে ধরল। তার পেছনে রুপালি বোতাম দেয়া কালো কোট গায়ে আরও দুজন লোক একটি শবাধার বয়ে নিয়ে এল। যার উপর, ফুলের নকশাকরা, পাড়দেয়া সিল্কের বড় একটি কাপড় জড়িয়ে শুয়ে আছে একটা মানুষ।
জেটির কেউই নবাগত এই দলটিকে নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে না, এমনকি যখন তারা মাঝির অপেক্ষায় শবাধারটি নামিয়ে রাখল, যে কিনা তখনও ব্যস্ত তার দড়ি নিয়ে, কেউ তাদের দিকে এগিয়ে গেল না, কেউ কিছু জিজ্ঞেসও করল না, ঠিকমত তাকিয়েও দেখল না কেউ।
বাচ্চাকোলে এলোচুলের এক মহিলাকে দেখা যাচ্ছে ডেকের উপরে, যার কারণে মাঝি লোকটার আরও কিছুটা দেরি হয়ে গেল। অতঃপর হলদে রঙের দোতলা একটি বাড়ির দিকে আঙুল নির্দেশ করে এগিয়ে গেল মাঝি, সাগরের ঠিক বাম পাশে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে বাড়িটি। লোকগুলো কফিনটি তুলে নিল, নিচু আর সুন্দর খুঁটি দিয়ে বানানো একটি দরজার ভেতরে বয়ে নিয়ে গেল।
ঠিক সেই মুহূর্তেই জানালা খুলে ছোট একটি ছেলে ঘরের ভেতর দলটিকে অদৃশ্য হয়ে যেতে দেখল, ঝট করেই আবার জানালা বন্ধ করে দিল সে। দরজাটাও বন্ধ এখন; কালো ওক কাঠে বেশ মজবুত করে বানানো দরজাটি। পায়রার একটি ঝাঁক গির্জার ঘন্টাঘরের চারপাশে দল বেঁধে উড়াউড়ি করছিল, বাড়ির সামনের রাস্তায় নেমে এল তারা। দরজাটির সামনে এমনভাবে জড়ো হতে লাগল যেন ঘরের ভেতরেই জমা আছে তাদের খাবার। একটা উড়ে গিয়ে দোতলায় জানালার শার্সিতে ঠোকরাতে লাগল। উজ্জ্বল রঙের, পরিপাটি আর প্রাণচঞ্চল এই প্রাণিগুলি। নৌকার উপর থেকে মহিলাটি কিছু দানা ছুঁড়ে দিল, সেগুলো মুখে পুড়ে নিয়ে মহিলার দিকে উড়ে গেল তারা।
হ্যাট মাথায় কালো ব্যাজ পড়া এক লোক নেমে এল জেটির দিকে এগিয়ে যাওয়া সরু আর খাড়া গলিগুলির একটিতে। চারদিকে সতর্ক দৃষ্টি বোলাচ্ছে সে। সবকিছুই তার বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এক কোণায় জমিয়ে রাখা আবর্জনা দেখে মুখ বাঁকিয়ে তুলল সে। মনুম্যান্টের গোড়ায় কিছু ফলের খোসা পড়ে ছিল। পেড়িয়ে যাওয়ার সময় হাতের লাঠি দিয়ে দূরে ছুড়ে মারল সেগুলো। ঘরের দরজায় টোকা দিল সে, মাথার টুপি খুলে হাতে নিল, কালো দস্তানায় ঢাকা হাত দুটি তার। দরজা খুলে গেল সাথে সাথেই, এবং প্রায় পঞ্চাশটির মতো ছোট ছোট ছেলে এসে হলঘরে জমায়েত হল, দুই সাড়িতে দাঁড়িয়ে লোকটিকে নমস্কার করল তারা।
সিঁড়ি বেয়ে নেমে এল নৌকার মাঝি, লোকটির সাথে দেখা করে, উপর তলায় নিয়ে গেল তাকে। লোকটিকে সাথে নিয়ে উঠোন ঘিরে রাখা সুন্দর একটি বারান্দা পেড়িয়ে গেল। কাছেই ভিড় করে থাকা ছেলেদের দলটিকে রেখে, পেছন দিকের ঠান্ডা আর বড় একটি ঘরে ঢুকে পড়ল দুইজন। কেবল একটি পলেস্তারা-খসা, ধূসর-কালো পাথুরে দেয়াল ছাড়া আশেপাশে কোনও বাড়িঘর চোখে পড়ে না সেই ঘরটি থেকে। শববাহকেরা ব্যস্ত ছিল কফিনের সামনে মোমবাতি জ্বালিয়ে সাজিয়ে রাখতে। যদিও যথেষ্ট আলো দিচ্ছে না সেগুলো, অনড় ছায়াগুলোকে দেয়াল জুড়ে নাচিয়ে বেড়াচ্ছে কেবল।
শাবাধারের উপর থেকে কাপড়টি সরিয়ে ফেলা হয়েছে। তার মাঝে শুয়ে আছে একটি লোক, জটপাকানো চুল-দাঁড়ি, বাদামি চামড়া—ঠিক একজন শিকারীর মতোই দেখতে। অচল অবস্থায় শুয়ে আছে, নিঃশ্বাসও নিচ্ছে না যেন, চোখ বন্ধ তার; যদিও কেবল সাজপোশাক দেখলেই মনে হতে পারে লোকটি হয়তোবা মৃত।
নবাগত লোকটি শবাধারের কাছে গিয়ে তাতে শায়িত মানুষটার কপালে হাত রেখে হাঁটু গেড়ে বসে প্রার্থনা করতে লাগল। নৌকার মাঝি শববাহকদের ঘর থেকে বেরিয়ে যাবার ইশারা করলে তারা ঘর ত্যাগ করে, এবং ঘরের বাইরে ভিড় করে থাকা ছেলেদের তাড়িয়ে দিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়। কিন্তু তাতেও যেন লোকটি সন্তুষ্ট হল না, মাঝির দিকে তাকালো সে। মাঝি সেই দৃষ্টির মানে বুঝতে পেরে পাশের কোনও একটা দরজা দিয়ে অন্য ঘরে গিয়ে ঢোকে। ঠিক সেই মুহূর্তেই শবাধারে শুয়ে থাকা লোকটি চোখ মেলে তাকাল, অনেক কষ্টে মুখে একটা হাসি ফুটিয়ে তুলে অপর লোকটির দিকে মাথা ঘুরিয়ে জিজ্ঞেস করল, ‘‘আপনি কে?” লোকটির মাঝে কোনও ভাবান্তর দেখা গেল না, শান্তভাবে উঠে দাঁড়িয়ে উত্তর দিল, ‘‘রিভার নগরপ্রধান’’।
শবাধারে শায়িত লোকটি মাথা নাড়ল, দুর্বল হাতের ইশারায় একটি চেয়ারের দিকে নির্দেশ করল, তার কথামত নগরপ্রধান সেই চেয়ারে গিয়ে বসলে বলে উঠল সে, ‘‘হ্যা, আমি জানি, কিন্তু চোখ মেলবার পর প্রথমবার চারদিকে তাকিয়ে কিছুই মনে করা যায় না, চারপাশের সবকিছুই ঘুরতে থাকে, সুতরাং যে কোনও কিছুই জিজ্ঞেস করে জেনে নেয়াই ভাল, এমনকি সবকিছু জানা থাকলেও। আপনিও হয়তো জানেন যে আমি শিকারী গ্রেকাস।’’
‘‘অবশ্যই’’ নগরপ্রধান উত্তর দিল, ‘‘আপনার পৌছানোর খবর রাতের মধ্যেই আমাকে জানানো হয়েছে। ঘুমাচ্ছিলাম আমরা। প্রায় মাঝরাতের দিকে আমার বউ চিৎকার করে উঠল, ‘সালভাতোর’—এটা আমার নাম আরকি—‘জানালায় বসা পায়রাটাকে দেখো’ সত্যিই সেটা পায়রা ছিল, কিন্তু ঠিক একটা মোরগের মতই বিশাল। আমার উপর দিয়ে উড়ে গেল সেটা, আর কানে কানে বলল, ‘‘আগামিকাল আগমন ঘটবে মৃত শিকারী গ্রেকাস-এর; এই শহরের পক্ষে তুমি বরণ করবে তাকে।’’
শিকারী মাথা নাড়ল, জিবের ডগা দিয়ে ঠোঁট চেটে নিল: “হ্যা, পায়রাগুলো আমার আগেই এখানে পৌছে গেছে। কিন্তু আপনার কি মনে হয়, আমার রিভায় থেকে যাওয়া উচিত?”
“সেটা আমি এখনও বলতে পারছি না”, নগরপ্রধান উত্তর দিল, “আপনি কি মৃত?”
“হ্যা,” শিকারী বলল, “ব্যাপারটা এরকম, অনেক অনেক কাল আগে, অবশ্যই বেশ অনেক কালই হবে, ব্ল্যাক ফরেস্টে পহাড় থেকে নিচে পড়ে যাই আমি—সেটা ছিল জার্মানিতে—হরিণের পেছনে ছুটছিলাম। সেই থেকেই আমি মৃত।”
“কিন্তু আবার জীবিতও”, বলল নগরপ্রধান।
“কিছু কিছু ক্ষেত্রে”, শিকারী বলতে থাকল,“কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখলে বেঁচেও আছি আমি। আমার মরণতরী তার পথ হারিয়েছে, হালের একটি ভুল বাঁক, একটি মুহূর্তের জন্যে নাবিকের অমনোযোগ, প্রিয় স্বদেশে ফিরে আসবার আকুলতা, আমি জানি না কিসের জন্যে। শুধু জানি, আমি এই পৃথিবীতেই রয়ে গিয়েছিলাম, আর সেই থেকে আমার জাহাজ এই পৃথিবীরই জলের উপর ভেসে চলেছে। ফলে আমি, যে তার অতি আপন পাহাড়গুলোর মাঝেই কেবল বেঁচে থাকতে চেয়েছিল, নিজের মৃত্যুর পর চষে বেড়িয়েছি পৃথিবীর প্রত্যেকটা দেশ।”
“তাহলে আপনি কোনওভাবেই অপর জগতের অংশ না?”, ভ্রু বাঁকিয়ে প্রশ্ন করল নগরপ্রধান।
শিকারী উত্তর দিল, “চিরদিনের জন্যেই আমি সেই সুদীর্ঘ সিঁড়ির উপরে রয়ে গেছি, অপর জগতে উঠে গেছে যেটা। অন্তহীন প্রসস্থ সেই সিঁড়ির মাঝেই আমি ঘুরে মরেছি কখনও উপরে কখনও নীচে, কখনো ডানে, কখনওবা বায়ে, কেবল ঘুরেই মরছি। শিকারী থেকে পরিণত হয়েছি প্রজাপতিতে, আবার হাসাহাসি করবেন না যেন।”
“হাসছি না”, বলল নগরপ্রধান।
“সে আপনার কৃপা”, শিকারী বলতে থাকলো, “সারাক্ষণই ঘুরে মরছি আমি। যখনই একটা বিরাট লাফ দিয়ে উঠে যাই, আর দেখি আমার সামনেই ঝলমল করছে সেই তোরণ, পরক্ষণেই দেখতে পাই সেই পুরোনো জাহাজের মাঝেই জেগে উঠেছি আমি; অসহায় ভেসে চলেছি পৃথিবীরই কোনও বিস্তৃত জলরাশির উপরে। মৃত্যু সময়ের সেই সামান্য ত্রুটিই কেবিনের মাঝে আমার দিকে চেয়ে ভেংচি কাটছে। নাবিকের বউ, জুলিয়া—দরজায় টোকা দিয়ে কফিনের ধারে আমার জন্যে সকালের শরবত এনে রাখে, যেসব দেশের উপকূল ঘেঁষে ছুটে চলেছি আমরা সেখান থেকেই আসা এই শরবত।
কাঠের পাটাতনের উপর শুয়ে আছি আমি, শরীরে জড়িয়ে আছে, নোংরা একটা চাঁদর, দেখে মোটেও ভাল লাগবার কথা নয় আমাকে। হালকা পাক ধরা কালো চুল-দাঁড়ি পরস্পর জট পাকিয়ে আছে, লম্বা পাড় দেয়া, ফুলের নকশা করা মেয়েদের বড় একটি সিল্কের চাঁদর দিয়ে ঢাকা আছে পা। মাথার সামনে একটি জ্বলন্ত মোমবাতি আলোকিত করছে আমাকে। উল্টো পাশের দেয়ালে ছোট একটি ছবি টাঙানো, দেখেই বোঝা যায় কোনও এক ব্যবসায়ী লোকের, আমার দিকে একটি বর্শা তাক করে আছে, সুন্দর দেখতে একটি ঢালের আড়ালো নিজেকে লুকিয়ে রেখেছে যতোটা সম্ভব। জাহাজের উপরে অনেক হাস্যকর ভঙ্গিতেই ছবি তুলতে পারে মানুষ, কিন্তু এর চেয়ে হাস্যকর কিছু আর হতে পারে না। এসব ছাড়া আমার এই কাঠের খাঁচাটি একেবারেই খালি। পাশের একটি ছিদ্র দিয়ে উষ্ণ রাতের দখিনা বাতাস প্রবেশ করছে, আর আমি শুনতে পারছি পুরোনো জাহাজটির গায়ে জল আছড়ে পড়ার শব্দ।"
“আমি—তখনও জীবিত শিকারী গ্রেকাস—ব্ল্যাক ফরেস্টে হরিণের পিছু নিতে গিয়ে যখন পড়ে গেলাম—তখন থেকেই শুয়ে আছি এখানে। যেভাবে যা হওয়ার কথা তাই হল, আমি কেবল অনুসরণ করে গেছি, নিচে পড়ে যাওয়া, গিড়িখাতে পড়ে থেকে রক্তক্ষরণ হতে হতে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাওয়া, অতঃপর মৃত্যু, এবং আমাকে এই জাহাজের বয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা অন্য দুনিয়ায়। এখনও মনে আছে এই পাটাতনের উপরে প্রথমবারের মতো নিজের দেহটা টেনে সোজা করতে পেরে কত খুশিই না হয়েছিলাম। আমার এমন সুর ওই পাহাড়গুলোও কখনও শুনেনি, যেমনটা এই ছায়াচ্ছন্ন দেয়ালগুলো শুনেছে। বেঁচে থাকতে পেরে আমি খুশি ছিলাম, খুশি ছিলাম মরে গিয়েও। জাহাজে আসার আগে, আনন্দের সাথেই ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিলাম সমস্ত গোলাবারুদ, আমার ঝোলা, এমনকি আমার সেই গর্বের সম্পদ, শিকারী বন্দুকটাও। গিয়ে ঢুকেছিলাম দুমড়ানো এই চাঁদরের ভেতরে যেমন করে মেয়েরা গায়ে জড়িয়ে নেয় তাদের বিয়ের পোশাক। আমি শুয়ে ছিলাম, অপেক্ষা করছিলাম, আর তারপরই এই দুর্বিপাক।”
“কী ভয়ানক দুর্ভাগ্য”, প্রত্যুত্তরে বলে উঠল নগরপ্রধান, “অথচ এর পেছনে আপনার কোনও দোষ ছিল না?”
“না”, শিকারীর উত্তর। “আমি একজন শিকারী; এর মাঝে দোষের কিছু আছে? শিকারী হিসেবেই আমি বড় হয়েছি ব্লেক ফরেস্টে, সে সময়ে তখনও সেখানে নেকড়ে পাওয়া যেত। আমি ওৎ পেতে বসে থাকতাম, গুলি করতাম, টার্গেটকেও লাগাতে পারতাম, তারপর তার চামড়া ছাড়িয়ে নিতাম: এর মাঝে দোষের কিছু কি আছে? আমার পরিশ্রমও সার্থক হয়েছে। ‘ব্ল্যাক ফরেস্টের বিরাট শিকারী’ এই নামেই ডাকা হত আমাকে। এর মাঝে দোষের কিছু আছে?’’
“তা বলার কোনও এখতিয়ার আমার নেই”, নগরপ্রধানের উত্তর, “কিন্তু আমার মতেও এর মাঝে দোষের কিছু নেই। কিন্তু দোষটা তাহলে কার?”
“নাবিকের”, শিকারী বলতে থাকলো, “আমি এখানে যাই লিখে যাই না কেন কেউ পড়বে না, কেউ আমাকে সাহায্য করতেও আসবে না। যদি তাদের উপরে সে দায়িত্ব চাপিয়েও দেয়া হত, প্রতিটি ঘরের সবকটি দরজাই বন্ধ হয়ে যেত, বন্ধ হয়ে যেত সবকটি জানালা, চাঁদরে মাথা ঢেকে প্রত্যেকেই বিছানায় পড়ে থাকত, সমগ্র পৃথিবীই পরিণত হত রাতের হোটেলঘরে। আর এটাই হবার কথা, যেহেতু কেউ-ই আমার সম্পর্কে জানে না, আর যদিবা জেনেও থাকে, আমার অবস্থান সম্পর্কে কোনোরূপ ধারণা পাবার কোনও সম্ভাবনাই তার ছিল না, আর যদিবা সে সেটাও জানতো, তারপরও আমাকে চিরদিনের জন্যে কিভাবে সেখানে রেখে আসা যায় তা তার জানার কথা নয়, সুতরাং আমাকে সাহায্য করার কোনও উপায়ই তার ছিল না। আমাকে সাহায্য করার চিন্তাটাই একটা অসুখ, আর এর একমাত্র উপশম বিছানায় শুয়ে আরাম করা।”
“আমি তা জানি, আর একারণে সাহায্যের আশাও করিনি আমি, এমনকি যখন আমার নিজের উপর কোনও নিয়ন্ত্রণই ছিল না, এই যেমন এখন, এই ব্যাপারে আমি গভীরভাবে ভেবেছি। কিন্তু এই ইচ্ছাকে দূরে সরিয়ে রাখতে আমি কেবল নিজের চারপাশে চোখ বোলাই আর মনে করার চেষ্টা করি কোথায় রয়েছি আমি, কোথায়—আর আমি নিশ্চিতভাবেই বলে দিতে পারি—শত শত বছর ধরেই আমি বেঁচে আছি।”
“অসাধারণ”, নগরপিতা বলে উঠল, “অসাধারণ, তাহলে এখন আপনি আমাদের সাথে রিভায় থেকে যেতে চাচ্ছেন?”
“সেরকম কোনও ইচ্ছা আমার নেই”, মুচকি হেসে শিকারী বলল; কথায় কৌতুকের সুর ফুটিয়ে তুলে নগরপ্রধানের হাঁটুর উপরে নিজের হাতটা রাখল সে। “ আপাতত এখানেই আছি, এর বেশি কিছু আমি জানি না। এর বেশি কিছু আমি করতেও পারব না। হালছাড়া নৌকা আমার—ভেসে চলেছে বাতাসের সাথে আর বয়ে চলেছে মৃত্যুর সুগভীর অঞ্চলে।”
২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ২:৩৩
তানভীর আকন্দ বলেছেন: তাতো অবশ্যই, ধন্যবাদ ভ্রাতা....
২| ২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:৫১
হাসান মাহবুব বলেছেন: আরেক বার পড়তে হবে
অনুবাদ ভালো হয়েছে।
২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ দুপুর ২:৪২
তানভীর আকন্দ বলেছেন: পুরো গল্পটা একটু জটিল, কী ঘটতেছে না ঘটতেছে বুঝা মুশকিল, একবার ধরতে পারলেই মজাটা টের পাওয়া যায়, একটা হিন্টস দেই, হ্যাভেন, হেল আর পারগেটরির ব্যাপারটা বিবেচনায় রাখতে পারেন।
অনুবাদ বেশ সাবধানতার সাথে করেছি, তবে ভাষাগত দিক দিয়ে আরেকটু আকর্ষণীয় করা যেতো, সেটা আস্তে আস্তে এডিট করব...
©somewhere in net ltd.
১|
২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ভোর ৫:২১
রক্তিম দিগন্ত বলেছেন:
কাফকার লেখা পড়া সবসময়ই মুগ্ধকর।
আপনার অনুবাদও বেশ ভাল হয়েছে। তবে, আরো চেষ্টা করে যান। অনুবাদের ক্ষেত্রে চর্চার কোন বিকল্প নেই।