নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

I have nothing left to offer you but the melancholy of my cheerless dreams...

তানভীর আকন্দ

I am the slave of my baptism. Parents, you have caused my misfortune, and you have caused your own... - Arthur Rimbaud

তানভীর আকন্দ › বিস্তারিত পোস্টঃ

টি. ই. হিউমের কবিতা

৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ৮:৫১

বিশ শতকের শুরুর দিকে এজরা পাউন্ড, হিল্ডা ডলিংটন, রিচার্ড আলডিংটনের হাত ধরে চিত্রকল্পবাদী (imagism) আন্দোলনের মাধ্যমে ইংরেজি কবিতা আধুনিকতার পথে যাত্রা শুরু করে এবং এই আন্দোলনকেই বলা হয় আধুনিকতাবাদী কবিতার প্রথম সংগঠিত কোনও আন্দোলন। পাউন্ড চিত্রকল্পবাদী কবিতার যেই বৈশিষ্ট্যগুলো চিহ্নিত করেন তার সূত্রপাত মূলত দেখা যায় টি.ই. হিউম নামক আরেক কবির কবিতায়ই। হিউমের খুব বেশি কবিতার সন্ধান পাওয়া যায় না, জীবিত অবস্থায় পাঁচটি কবিতা নিয়ে তিনি প্রকাশ করেন The Complete Poetical Works of T.E. Hulme. ( যা পরে একই শিরোনামে এজরা পাউন্ড তাঁর Ripostes গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত করেন।) এ পাঁচটি কবিতা এবং ছড়ানো ছিটানো আরও কয়টি কবিতা মাত্র পাওয়া যায় হিউমের। কৌশলগত দিক থেকে হিউমের কবিতায় চিত্রকল্পগুলো উপমা নির্ভর। এদিক থেকে আমাদের জীবনানন্দ দাশের সাথে হিউমের একটা মিল রয়েছে। তবে জীবনানন্দ দাশ হিউমের লেখার সাথে পরিচিত ছিলেন কিনা তা নিশ্চিত করে বলা যায় না। আধুনিক ইংরেজি কবিতার ইতিহাসে হিউমের নামটা বেশ পরিচিত হলেও তাঁর কবিতা তেমনভাবে পঠিত নয়, খুব একটা সহজলভ্যও নয়। তবে কবি হিউমের গুরুত্ব অস্বীকার করার কোনও উপায় নেই কোনওভাবেই।

পুরো নাম টমাস আর্নস্ট হিউম (Thomas Ernest Hulme), জন্ম ১৬ সেপ্টেমবর ১৮৮৩ সালে ইংল্যান্ডে। ক্যামব্রিজের সেন্ট জন'স কলেজে গণিত বিষয়ে পড়াশোনা শুরু করলেও কিছুদিনের মধ্যেই বহিস্কৃত হন ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ আর নারীঘটিত কেলেঙ্কারির কারণে। ছাত্রাবস্থায়ই দর্শনের উপর তাঁর আগ্রহ জন্মে এবং হেনরি বার্গসন, জর্জ সোরেল প্রমূখের দার্শনিক রচনাসমূহের অনুবাদ শুরু করেন। হিউমের চিন্তাধারায় বার্গসনের বিস্তর প্রভাব লক্ষ করা যায়। একটা সময় কবিতার প্রতি আগ্রহ জন্মালে কবিতা লেখা শুরু করেন তিনি। যদিও খুব কম পরিমানেই লিখেছেন। লন্ডনে প্রতিষ্ঠিত পোয়েট'স ক্লাবের প্রথম সেক্রটারী করা হয় তাঁকে। যেখানে তিনি ১৯০৮ সালে 'A Lecture on Modern Poetry' শিরোনামের পেপার পাঠ করেন। এই পোয়েট'স ক্লাব এর কবিতা সংকলনেই তাঁর দুটি কবিতা প্রকাশিত হয়, যে দুটিকে বলা হয় প্রথম প্রকৃত চিত্রকল্পবাদী কবিতা। যদিও চিত্রকল্পবাদী আন্দোলনের সাথে হিউমের সরাসরি কোনও যোগাযোগ ছিল না।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় বৃটিশ সেনাবাহিনীতে গোলন্দাজ হিসেবে যোগদান করেন তিনি। সে যুদ্ধেই ১৯১৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর গোলার আঘাতে তাঁর মৃত্যু হয় মাত্র ৩৪ বছর বয়সে। তাঁর অন্যান্য উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে আছে গদ্যগ্রন্থ 'Speculations: Essays on Humanism and the Philosophy of Art' ।




হিউমের কিছু কবিতার অনুবাদ দেয়া গেল -


১. স্কার্টের উড়ন্ত প্রান্ত

[The flounced edge of a skirt]

স্কার্টের উড়ন্ত প্রান্ত গুটিয়ে যাচ্ছে
বাঁধের গোড়ায় গুটিয়ে যাওয়া জলের ঢেউয়ের মতো ।

২. শান্ত মাঠের মাঝে

[In the Quiet Land]

শান্ত মাঠের মাঝে আছে
গোপন আগুন এক, অচেনা।
সহসা পাথরগুলো গলে যাবে,
পুরোনো পথের নিশানা চলে যাবে ভুলপথে।

চেনা পথে আছে এক
গভীর ফাঁটল। আমাকে থেমে যেতে হবে, যেতে হবে ফিরে।
শীতল মাঠের মাঝে আছে
গোপন আগুন এক।

৩. কাকের বাসায় সেই লোকটি ( সাবধান!)

[The Man in the Crow's Nest (Look-out Man)]

কী অদ্ভূত লাগে, মাস্তুলশীর্ষে বেয়ে বয়ে চলে
যে বাতাস শোনা যায় ধ্বনি তার, সঙ্গহীন রাতে
হয়তো সাগরই বাজাচ্ছে বাঁশি- লুকিয়ে রাখতে
তার ভয়, করে পুলকের ভান
সমাধিপ্রাঙ্গন পেরিয়ে যাবার কালে
গেয়ো বালকটি যেভাবে কেঁপে কেঁপে উঠে।

৪. চিত্রকল্প

[ Image]

পুরোনো বাড়িগুলো একদা ভারারঘর হয়ে গিয়েছিল,
আর শিশ দিয়ে উঠেছিল চাষীরা।



৫. সুসান এন এবং অমরত্ব

[Susan Ann and Immortality]

মাথা তার ঝুলে আছে নীচে
তাকিয়ে মাটির পানে, ঠায় দৃষ্টি তার,
যেন এক খরগোশ নকুলের পানে,
যতক্ষণ না মাটি হয়েছে আকাশ
সবুজ আকাশ,
ভেসে যায় পিঙ্গল মেঘ,
যেইভাবে ধনুকের মতো নুয়ে আসে আখরোট পাতা মাটির পানে।

৬. হেমন্ত

[ Autumn]

হেমন্তের রাতে শীতের স্পর্শ-
আমি হেটে যাই দূরে,
দেখেছি রক্তিম আভা চাঁদ হেলে পড়ে বেড়ার উপরে
লালমুখো কৃষকের মতো।
কিছু বলার জন্যে থামিনি আমি, তবে করেছি প্রণাম,
এবং বিমর্ষ তারারা চক্রাকারে ঘুরে
শহুরে শিশুদের মতো ফ্যাকাশে মুখ নিয়ে।

৭. এমব্যাঙ্কম্যান্ট (তিক্ত শীতরে রাতে এক পতিত ভদ্রলোকের জল্পনা-কল্পনা)

[The Embankment (The fantasia of a fallen gentleman on a cold, bitter night)]

বেহালার সুনিপুণ কৌশলে শান্তি পেয়েছি খুঁজে আমি,
কনক্রিট ফুটপাতে স্বর্ণালী জুতোর ঝলকে।
এইতো দেখছি আমি
সেই উষ্ণতাভরা কাব্যের উপাদান।
ওহ্ ঈশ্বর, সুপ্রাচীন তারাখেকো আকাশের কম্বলটিকে
করে দাও ক্ষুদ্র আরও,
শরীরে জড়িয়ে নিয়ে শান্তিতে ঘুমোতে পারি যাতে।

৮. কবি

[poet]

একটি বিরাট মসৃণ টেবিলের ওপর পরম আবেশে হেলে আছে সে
স্বপ্নের মাঝে।
বনের ভেতরে গিয়েছিল সে, হেটে হেটে কথা কয়েছিল গাছেদের সাথে।
পৃথিবীকে ছেড়ে গিয়েছিল,
আর ফিরে এসেছিল রত্ম এবং বর্ণিল-
পাথর ও গোলকের ছবি হাতে, কঠিন ও দ্ব্যর্থহীন।
এইসব নিয়ে খেলা করেছিল মসৃণ টেবিলের 'পরে,
স্বপ্নের মাঝে।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ৯:০৯

মেহেদী রবিন বলেছেন: এরকম লেখা আরো চাই।

৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:৫৫

তানভীর আকন্দ বলেছেন: ধীরে ধীরে আরও অনেককিছুই দেব...

২| ০২ রা অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ১১:৪৮

হাসান মাহবুব বলেছেন: অসাধারণ!

০২ রা অক্টোবর, ২০১৬ বিকাল ৩:১৮

তানভীর আকন্দ বলেছেন: অনুবাদগুলো বেশ আগের করা, তেমন একটা সুবিধার না, নতুন করে আর এডিট করবার ইচ্ছা হল না। আসলে পাউন্ড এলিয়ট যতোটা পরিচিত হিউম এতোটা না, কোনও সংকলনে তাঁর কবিতাও স্থান পায় না, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো হয় না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তাঁর নামই উল্লেখিত হয় না। অথচ এটা বলা হয় যে, স্বয়ং টি. এস. এলিয়ট তাঁর কাছে কবিতার দীক্ষা নিয়েছিল...

৩| ০২ রা অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১০:১০

পুলহ বলেছেন: শেষের কবিতাটা ঘোরলাগা সুন্দর। অনুবাদগুলো সম্ভবত আপনারই করা (২ নং প্রতি মন্তব্য) , সে হিসেবে হ্যাটস অফ।
পোস্ট সংগ্রহে রাখলাম।
শুভকামনা জানবেন।

০৩ রা অক্টোবর, ২০১৬ বিকাল ৩:০৩

তানভীর আকন্দ বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে, হ্যা অনুবাদ আমারই করা। এছাড়া বারীণ ঘোষালের কিছু অনুবাদ পাবেন। সৈয়দ তারিক ও করেছিলেন কয়েকটা, সৈয়দ তারিখের অনুবাদটাই সেরা মনে হয়েছে আমার....

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.