নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সােরায়ারমামুন

আমি এ দেশের মানুষ।এ দেশ আমাকে দিয়েছে অপূর্ব এক শৈশব।বিশাল এই পৃথিবীতে ছোট্ট এই দেশটাকে আমি ভালোবাসি আমার শরীরের একটুকরো হৃতপিন্ডের মত করে !

সােরায়ারমামুন › বিস্তারিত পোস্টঃ

‍ "এক বুক ছাই নিয়ে"(প্রথম অংশ-চলচিত্র)

২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১১ ভোর ৪:১৭

“এক বুক ছাই নিয়ে”

উপস্তিত সবাই আমাকে করতাালির মাধ্যমে স্বাগত জানাল। ধিরে ধিরে আসন ত্যাগ করে ডাইসের সামনে এসে দাঁড়ালাম। মনের অজান্তেই হাত দুটো চতুর্ভুজ আকৃতির ডাইসের ওপর উঠিয়ে রাখলাম। দেখে মনে হবে যেন, আসাামি হয়ে কাঠগরায় স্বপথ নিচ্ছি।



একবুক নিঃশ্বাস আর মৃদু হাাসিমাখা চেহারা নিয়ে প্রথমে ধন্যবাদ জানালাম মর্ডারেটরকে। এরপর উপস্তিত সবার উদ্দেশ্যে বললাম “শুভবিকাল বন্ধুরা”। আমার সাথে কন্ঠ মিলিয়ে প্রায় ৩০ জন বন্ধু একসাথে জবাব দিল শুভ-বিকাল...। পরক্ষনেই হলরুমটা নিরব হয়ে গেল। মুহূর্তের জন্য মনে হল কয়েক সেকেন্ড আগে এখানে বুঝি বজ্রপাত ঘটেছিল !



আমার নাম আদর। আামি একজন এডিক্ট। আবার একবার ৩০ জন যুবকের বজ্রকন্ঠ সমর্থন জানাল আমাকে-হায় আদর ভাই।



আামি সর্বপ্রথম ধন্যবাদ জানাব মহান স্রষ্টাকে। যার দয়ার আামি আদর আজকের দিন পর্যন্ত সুস্ত ভাবে বেঁচে আাছি। সৃষ্টিকতার যদি খাস রহমত না থাকত তবে আমি যে সর্বনাসের পথে নিজের জীবন ও ইচ্ছেকে সমর্পন করেছিলাম, সেখান থেকে কোনদিনও ফিরে আসা সম্ভব ছিলনা। যে কোন একটা অঘটন বা অপঘাতে মৃত্যু হতে পারত আমার ! আবার সীকৃতি জানাই পরম-করুণাময় আল্লাহকে।



এরপর সীকৃতি জানাই ঐ সব ব্যক্তিদের যারা প্রত্যক্ষ এবং পরক্ষ ভাবে আমাকে অনুপ্রেরনা যুগিয়েছে, সুস্তভাবে বাঁচার জন্যে।



সবশেষে সীকৃতি জানাই আমার মাকে। যাকে ছারা আমার পৃথীবি জাহান্নামের সমতুল্য। আর বিশেষ-বিশেষ ভাবে ধন্যবাদ জানাব, আমার সামনে উপস্তিত মহান ফেলো বন্ধুদের। যাদের সাার্বিক সহযোাগিতার কাছে আামি চির কৃতজ্ঞ।



আজ, এখন আামি আপনাদের সাথে শেয়ার করব আমার আতীত জীবনের অধপতনের কথা। যে সময় আামি ড্রাগস্ এর কাছে অসহায় হয়ে পরেছিলাম। এবং নিজের জীবন পরিচালনায় অক্ষম ছিলাম।



আসলে, ছোটবেলা থেকেই নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি আমার কৌতুহল ছিল বেশি। তখন পঞ্চম কি ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ি। নতুন ভি, সি, ডি প্লেয়ার খুলে আাবিষ্কার করতে চাইতাম; ভেতরের রহস্যকে। একসময় ঘড়ে মেহ্মান এলে তাদের পকেট থেকে, মানিব্যগ থেকে অথবা ভেনটিব্যগ থেকে মুল্যবান জিনিসপত্র যেমন, টাকা-স্বর্ণ ইত্যাদী চুড়ি করে নিতাম। তখনো বুঝতে পারতাম না যে, আমি কত বড় অন্যায় কাজ করছি। এসব করে খুব ভাল আনন্দ পেতাম আামি।



খুবই চালাক চতুর ছিলাম বলে মা-বাবা জেরা করেও আমাকে ধরতে পারত না। ঐ সময় মাদক কি তা না জানলেও, সেই সব অপরাধমুলক কর্মকান্ডের ফলে দিন দিন আমার ভেতরে বেড়ে ওঠতে লাগল পিশাচের মত ভয়ঙ্কর একটা স্বত্বা। বিকৃত রূচি আর অশ্লিল চিন্তা আমার মেধা আর মনণ কে গ্রাস করতে লাগল।



যখন ক্লাস সেভেনে ওঠলাম ঠিক তখনি আামি আাবিষ্কার করলাম এই প্রর্থিব জগতের বাইরে-ও আলাদা একটা জগৎ আছে। কিন্তুু উপভোগ করতে পাারিনি কখনো। তখন স্কুল ছুটির পর পাড়ার বন্ধুদের সাথে মিশতে খুব ভাল লাগত। কৌতুহল-বসত দু’চারটে সিগারেট খেয়ে খুব আনন্দও পেতাম। বিশেষ-বিশেষ অনুষ্ঠান অথবা উল্লেখ-যোগ্য দিন গুলুতে আমরা দল ঁেবধে ঘুরে বেরাতাম, বাধাহীন।



সে বছর ঈদের চাঁদ দেখে ৯ জন একসাথে রওনা দিলাম আমাদের পাশের এক মহল্লায়। যদিও আজকের প্রগ্রাম সম্পর্কে, আগে থেকে কিছুই জানা ছিলনা আমার। রাজীব, সজীব আর মহীন আমাদেও কে দাওয়ত করেছে আজকের চাঁন রাতে।



জীবনের এই প্রথম নিজেকে আাবিষ্কার করলাম; সম্পুর্ণ নতুনরুপে। একটা মাাটির ঘড়। ঘড়টা ছিল ভাঙ্গা একটা মন্দিরের পাসে। বিভিন্ন গাছ-গছাালি আর বড়-বড় সব্জির মাচার আড়ালে। রাতের অন্ধকারে ঢুকতে সময় লক্ষ করেছিলাম, জোঁনাকী পেকারা অন্ধকার আকাশে তারার মতন জ্বলছে। ঘড়ের মধ্যে আমরা ৯ জন আর ওরা ৫ জন। আমাদের বৃওের মধ্যে কিছুক্ষন পর-পর মদের ছোট্ট একটা গ্লস ঘুরছে। গাঁজা ভরা সিগারেট জ্বলছে একটার পর একটা। আবদ্ধ ঘড়ে ধোঁয়া আচ্ছন্ন হয়ে ভৌতিক পরিবেশ তৈরি হয়ে গেছে। অনেক্ষন আামি হাাসি-খুশি আর স্বাভাাবিক ছিলাম। হঠাৎ করেই যেন আচম্কা সূর্যগ্রহনের মত সেই মায়াবী আর আতংকে ভরা অনুভূতিটা আমাকে গ্রাস করে নিতে চাইল। সবার মাঝে আামি নিজেকে হারিয়ে ফেললাম। এদিক ওদিক তাাকিয়ে পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করলাম। নতুন করে আবার চেনার চেষ্টা করলাম অতি পরিচিত সেই সব বন্ধুদের মুখ।



বাাড়িতে ফিরে এলাম, সম্পুর্ণ অচেনা অজানা একজন মানুষ হিসেবে। পরের দিন ঈদ কিভবে কাটল বুঝতেই পাারিনি। তারপর দিন রাস্তা-য় বেরুতেই দেখা আমার একান্ত আবেগিয় বাল্যবন্ধু ঈমণ এর সাথে। সেও গত পড়শু চাঁন রাতের নৈশসভায় ছিল। আমি জাানি এর আগেও ঈমন বহুবার নেশাপান করেছে। সুতরাং ওর কাছে বলতে কোন সংকোচ নেই। প্রচন্ড কৌতুহলের সাথে ওকে বললাম দোস্ত চাঁন রাইতের দিন মদ আর গাঁজা একসাথে খাইয়া কোন মজা পাইনাই। এই নে এই কয়টাকাই আছে আমার কাছে। তুই একটা গাঞ্জার পুরিয়া নিআয়। দু’জনে নিরিবিলি বইসা ফিলিংস্ লমুনে...



আমার মুখ থেকে এ ধরনের কথা শুনে ঈমন কিছুটা অবাক হয়ে গিয়েছিল। কারন, তখনো এতটা বখে যাইনি যে, পকেট থেকে টাকা খড়চ করবো ড্রগস্ কেনার জন্য।খাওয়া ত পরের কথা !



শুরু হয়ে গেল, নিষিদ্ধ মাদক সেবনের মাধ্যমে আমার জীবনের অজানা অধ্যায়ের অনুশীলন। প্রকাশ্যে কিংবা গোপনে, যখন যেভাবে ইচ্ছে, তখনই সে অবস্তায় থেকে ড্রাগস্ গ্রহন করতে থকলাম। নির্দিষ্ট কোন পরিমান ছিলোনা, ছিলনা কোন বাধ্যবাধকতা। দলবল সহকারে মহল্লায়, পাড়ায়-পাড়ায় ঘুড়ে বেড়াই আর আড্ডা দিতে থাাকি। ধীরে-ধীরে নিজের উঠতি বয়সের তারুন্যকে সপে দিলাম গাঁজা, মদতারী আরো অন্নান্য নেশায়। পরিবার-সমাজের বাাহিরেও আলাদা আরেকটা ভাবের জগতে বসবাস করতে থাকলাম আমি।



তিনবছড় পর এস, এস, সি পরিক্ষার সময় হল। টেষ্ট পরীক্ষায় নকলের আাশির্বাদে টিকে গেলাম ঠিকই কিন্তু বোর্ড পরিক্ষায় রেজাল্ট খারাপ হল। তখনো বুঝতে পাারিনি কেন এমন হল ? মা-বাবারও একটা বিশ্বাস ছিল আমার ওপর। স্কুলের বন্ধুরা অবশ্য দায়ী করল আমার খাড়াপ সঙ্গ আর নিষিদ্ধ মাদক সেবনের বিষয়টাকে।



এরই মধ্যে মা আর বাবা বুঝে গেছেন যে, তাদের আদড় নেশাজাত দ্রব্য পান করে। রাত ১২ টার পর চুপিচুপি প্রায়ই সে বাাড়ি থেকে বেরিয়ে পরে; ফেরে আযানের শেষে। বাবা যেহেতু অধুমপায়ী একজন ব্যাাক্তির আচরন সম্পর্কে তিনি খুব একটা সচেতন থাকতে পারতেন না। অন্যদিকে মা এসব ব্যাপারগুল ভলোই বুঝতেন। আমার নানা মারা গেছেন ক্যেন্সারে। দু’জনেই মাদক আসক্ত ছিলেন। এ জন্য মা যে কোন নেশার উপকরন দেখলেই চিনে ফেলেন। এবং একজন মাদকাশক্ত ছেলের চাল-চলনও তার কাছে গোপন কিছু নয়। প্রথম প্রথম আম্মা বেবে চিন্তে মনে করতেন ছেলেবয়সে একটু আধটু উশৃংখল থাকতেই পাাে ! বেশি খবড়দারী নজড়দারীতে ছেলে-পেলে মানুষ হয় না। তবুও আম্মা সবসময় কড়াকড়ি চোখেচোখে রাখতেন আমাকে। নিচতলাে বাথ-রুমের কর্ণার থেকে সিগারেট টেনে বেরিয়েছি এমন সময় দেখি মা দাাঁড়িয়ে আছে ! এরকম বিভ্রান্তিকর পরিস্তিতিতে যে কতবার মুখোমুখি হয়েছি তার কোন ইয়াত্তা নেই। মা যদিও তীব্র নিন্দা আর ঘৃনা প্রকাশ করত তবুও আামি বদ-অভ্যামগুলো ত্যাগ করতে পাারিনি।



(২)



মাধ্যমিক পরীক্ষায় ফেল করার পর আমার টনক নড়ল। নিজের অবস্থা বা অবস্থান সম্পর্কে ভাবতে শুরুকরলাম। আস্তে আস্তে, ধীরে-ধীরে নিজেকে গুটিয়ে ফেলতে লাগলাম আামি। নিজের সাথে নিজে যুক্তি-তর্ক ও পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নিলাম ড্রাগস এক নিয়নত্রে আনব। ড্রাগসের কারনে আমার যাতে কোন ক্ষতি না হয় সে দিকে খেয়াল রাখব। শুরু করলাম পরিকল্পনা অনুযায়ী জীবন যাপন। লেখাপড়ার পেছনে নিজের সর্বশক্তি প্রয়োগ করতে শুনু করলাম। অযথা ঘোড়াঘুড়ি আর আড্ডা দেয়া টোটাালি বন্ধ করে দিলাম। ব্যায়ামের কিছু ইন্সট্রুমেন্ট কালেক্ট করে ঘড়েই শারীরচর্চা করলাম। খুব সকালে ওঠে, বিষুদ্ধ পুরিবেশে হালকা জগিং-টগিং সেরে নাস্তা করে টেবিলে বসে পড়তাম। শুধু ঘুমের সময়টুকু বাদে হিসেব করলে ১৫ ঘন্টার উপরে সময় ব্যায় বরতে থাকলাম পড়াশোনা আর ভালো কিছু করার চিন্তাভাবনা নিয়ে।



এই সময়টা ছিল আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়। যদিও আামি সোসালভাবে তখনো ড্রাগস্ ইউজ করতা। যেমন-নির্দিষ্ট কোন দিনে প্রচন্ড ভাল লাগার কোন মুহূর্তে। অথবা যে কোন জটিল সমস্যা থেকে নিজেকে ফ্রি রাখার জন্য। খাড়াপলাগার অনুভূতিগুলিকে জয় করার চেষ্টা করতাম। যদিও প্রায় সবসময়ই কোন না কোন ড্রাগস্ আমার ঘড়ে রিজার্ভ থাকত তথাাপি আামি নিজের মনের লাগাম টেনে রাখতাম।



”যেমন কর্ম তেমন ফল”। প্রথম বিভাগে উওীর্ণ হলাম আামি। ক্যান্টনমেন্টের ভেতরে নতুন একটা কলেজে ভর্তি হতে চেয়েছিলাম আমি। কিন্তু ইন্টারভিউতে টিকলাম না। আমার সাথে ষ্টার মার্ক পাওয়া ছাএদের অনেকেই সে কলেজে টিকল না। স্বাভাাবিকভাবেই বিভ্রান্ত হলাম আামি। পরে অবশ্য জানতে পারলাম যে, রাজনৈতিক প্রভাবের কারনেই এমনটা হয়েছিল। কেননা আমার চেয়ে অনেক কম নাম্বার পেয়েও অনেক স্টুডেন্ট এডমিসন নিতে পেরেছিল।



আামি ভর্তি হলাম তেজগাঁ কলেজে। ভর্তির টাকা দেয়ার সময় মা হতাসার সুরে বলেছিল, সাবধান বাবা রাজনীতিতে জড়াস না ! যখন ইয়ার চেঞ্জ পরীক্ষার রেজাল্ট দিল তখন রেজাল্ট আনতে একদিন কলেজে গেলাম। কলেজ ছিল একেবারে ফাঁকা। মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছিল। আামি একা। আামি সাধারনত একাই আসতাম একাই যেতাম। ফ্রি টাইমে আড্ডা অথবা ক্যান্টিনে এক কাপ চাও খেতাম না। সম্ভবত বিরোধূ রাজনৈতীক দলের বড় ধরনের কর্মসূচী ছিল সেদিন। বরাবরের মতই যেটা ছিল আমার অজানা।



বৃষ্টিটা একটু কমতেই আামি রোল নাম্বার খুঁজতে বোর্ডেও সামনে এসে দাঁড়ালাম। প্রায় সাথে-সাথেই চার পাঁচজন কলেজ ড্রেস পরা ষ্টুডেন্ট; হুরোহুরি করে এসে দাঁড়াল। আামি একটু পিছিয়ে এলাম। অল্পক্ষন পরে লক্ষ করলাম, মাঝখানের ছেলেটা রেজাল্ট সিট এর প্যাপার চিমটি কাটছে ছেড়ার জন্য। তার চোখে-মুখে শয়তানির হাাসিআনন্দ। দেখতে না দেখতেই তিনটা সিটের মধ্যেরটা ছিড়ে ফেললো ছেলেটা। আামি হতবাক হয়ে প্রশ্ন করলাম-কি ব্যাপার ভাই, রেজাল্ট সিট ছিড়তাছেন কেন ? পেছন থেকে প্রশ্নটা শুনে ওরাও অবাক আর বিস্ময় নিয়ে আমাকে ফলো করল। পরক্ষনেই দু’জন এসে আমার দুইপাসের কনুই-এর ভেতরে হাত ঢুকিয়ে উল্টো দিকে হাঁটা শুরু করল। তখন আমি কোন বাধাঁ দিতে পাারিনি।



ওরা তিনজন। আমাকে ক্যাান্টিন আর কমনরুমের বাড়ান্দার কর্ণারে এনে প্রচন্ড জোড়ে ধাক্কা দিল দেয়ালের সাথে। সাথে-সাথে আামি ভড়কে গেলাম। দুষ্টমিভরা ফর্সা ছেলেটা মিটি মিটি করে হাসছে। সঙ্গের দু’জনকে চোখের ইসারায় কিছু একটা ইঙ্গিত করে সে দূরে কারো উদ্দেশ্যে হাত নেড়ে সরেগেল।



শুরু হল আমার উপর অকথ্য ভয়ংকর নির্যাতন ! সুঠামদেহের অধিকারী ছেলেটা এসে পর-পর কয়েকটা থাপ্পর বসাল আমার গালে। কলারে জাপটে জোরে ধাক্কা দিল দেয়ালের গায়ে।



চোখে সুরমাপরা লম্বামতন ছেলেটা হেচকা টানে কোমড় থেকে বের করে আনল বকলেছ আলা চামড়ার ব্যাল্টটা। আাসি ভ্যবাচেগা খেয়ে আবুলের মত দাঁড়িয়ে থাকলাম। একটার পর একটা চামড়ার ব্যল্টের বাাড়ি হজম করতে লাগলাম। আর অপেক্ষা করতে থাকলাম কখন শেষ হবে এই কিংকর্তব্যবীমুঢ় মুহূর্তগুলু।



( পরে জানতে পেরেছিলাম ঐ দুষ্ট ছেলেটার নাম ছিল রাজীব )



কিছুক্ষণ পরেই রাজীব একটা ম্যাসিন এনে শুধু-শুধু ভয় দেখাল পায়ে গুলি করে দেবার। একটা পাাতি ক্ষুড় বের করে ভয় দেখাল মাথা ন্যাড়া করে দেবার। আামি অন্যায় না করেও আন্যায় ভাবে করজোরে ক্ষমা চাইলাম তাদের কাছে। ভুল সীকার করলাম ইচ্ছের বিরুদ্ধেই।



জিলাাপির মত সাত-পাঁচ খেলা ফুরাল একসময়। ওরা আমাকে ক্যাান্টিনে বসিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন করতে লাগল। আামি স্বাভাাবিক ভাবেই তাদের কথার জবাব দিয়েছিলাম। যদিও চাপা চাপা একটা অপরাধবোদ আমার অভ্যন্তরে কাজ করছিল।



এরপর দীর্ঘ ছয়টি মাস আামি আর কলেজে যাইনি। পরে ঘটনাটা যে কোন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ফ্লাস হয়ে যায় কলেজে। আমার খুব কাছের বদ্ধু তেজগাঁ কলেজের বড় লিডার। নাম আসলাম। সে ঐ ছেলে তিনটাকে চিনতে পেরেছিল। পরে ঐ ছেলে তিনটাকে আসলাম কমনরুমে ঢুকিয়ে চাপাাতি দিয়ে কোপাতে গিয়েছিল। গুনে গুনে ব্যাল্টের বাাড়িও নাাকি ফেরত দিয়ে দিয়েছে ’ও’। কিন্তু তবুও আামি আগের মত আর সহজ স্বাভাাবিক ভাবে কলেজে যেতে পানলাম না। বাাড়ি থেকে কলেজের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে একা-একা পার্কে বসে সময়টা কাাটিয়ে দিতে থাকলাম।



ধীরে-ধীরে এই অপরাধবোধ থেকে আমার মনে একাকীত্ব আর হতাশার বোঝা বাড়তে লাগল। কমতে থাকল আতœবিশ্বস। মানুষিক চাপের ফলে রাতে আামি ঘুমাতে পারতাম না। প্রায় রাতেই মা এসে হানা দিত আমার ঘড়ে। মধ্যরাতে ঘড়ের ভেতর কুন্ডলী পাকানো সিগারেটের ধোঁয়া দেখে মা, তীব্র নিন্দা আর রাগা-রাাগি করতেন আমার সাথে । কিন্তু কে শোনে কার কথা।



বই পড়ে, টিভি দেখে, গান শুনে ইন গান লিখে লিখে নির্ঘুম রাতগুল অভিষপ্ত মনে হতে লাগল নিজের কাছে। এই জটিল অন্ধকার থেকে কিছুতেই মুক্ত করতে পারছিলাম না নিজে-নিজেকে। মানুষিক বিপর্যয় বাইরে থেকে ধরা না পড়লেও অবস্তা হয়ে গেল পাগলপ্রায়। হাসতে পারতামনা, কারো সাথে কথা বলতে ভাললাগত না। সমাাজিক কোন স্থানে নিজেকে খাপখাওয়াতে পারতাম না নিজেকে।



সে এক বিভীষিকাময় অতীত আমার !

এক রাতে মা এসে দেখল আামি ঘড়ে নেই। অপূর্ব জোৎøা ছিল তখন রাতের আকাশে। মা এসে দেখল আামি ছাদের মাঝখানে খাালি গায়ে বসে আাছি।মা কঠিন সুরে আমাকে চার্জ করলেন। আামি মার একটি প্রশ্নের ও কোন জবাব দিতে পারলাম না। শুধু বললাম ”তুমি যাও আামি ছাদেই থাকব”। মাসেই রাতের কথা আামি জীবনেও ভুলব না। কারন তখন আামি প্রচুর গাঁজা খাওয়া অবন্থায় ছিলাম। প্রচুর অনিয়মের কারনে আমার শরীরটা দুর্বল হয়ে গিয়েছিল। হঠাৎ বুঝতে পারলাম যে, বিন্দু পরিমান শক্তি আমার শরীরে অবশিষ্ট নেই। মনে হচ্ছিল যেন আামি ভিনগ্রহের অদ্ভুত কোন প্রাণী!আর ঐ মুহূতেই মা ওঠে এসেছিল ছাদের ওপর। আমার শব্দগুলো এককান দিয়ে ঢুকে অন্য কানের পর্দা ভেদ করে বেরিয়ে যাচ্ছিল। কথপোকথনের জন্য যে বাকশুক্তির দরকার হয় সেটাও বন্ধ হয়ে গিয়েছিল কিছু সময়ের জন্য। আমার ষষ্ঠ ইন্দ্রীয় খুবই তীক্ষè ছিল বিধায় শেষের কথাটা বলতে পেরেছিলাম (তুমি যাও আামি ছাদেই থাকব)।



কিছুদিন পর আবার আমার গুরুতর মানুষিক বিপর্যয় ঘটল। আামি বুঝতে পারলাম যে, আামি মানুষিক ভারসাম্য হাারিয়ে ফেলছি। আামি এখন একজন মানুষিক রুগি।



রাত তখন দ্বিপ্রহর। বায়রে একটা কুকুর করুনসুরে কাঁদছিল। গানটা ঠিক মনে নেই;সম্ভবত মান্নাদের আধুনিক গানই হবে। গানের কথাগুল আমার হৃদয়ের গভীরের অনুভুতিকে এমনভাবে নাড়া দিয়ে জাাগিয়ে তুলেছিল যে, আামি কাঁদতে-কাঁদতে গানটা গাইতে থাকলাম। গানের শেষ পর্যায়ে এসে কান্নার বৈশাখী ঝড় চুর্ণবিচুর্ণ করে দিল আমার আবেগ আপ্লুত কন্ঠকে।



আামি নিজেকে খুবই দুঃখি একজন মানুষ হিসেবে ভাবতে লাগলাম। যে মানুষটিকে কেউ ভালবাসে না ! যে মানুষটিকে কেউ বুঝতে চায় না। প্রচন্ড আতœধিক্কার থেকে, খামছে-টেনে-ছিড়তে চাইলাম জানালার নীল পর্দা। পর্দার ষ্টেন্ডের একপাস ছুটে গেল কিন্তু; পর্দা ছিড়ল না। হাঁটু গেড়ে নিচের মেঝেতে বসে পড়লাম। এবং রাতজাগা সেই কুকুরটার মতই ভেউ ভেউ করে কাঁদতে শুরু করলাম।



ছোট ভাই অপু এসে দড়জা নক করল। বাইরে থেকে সে আবল তাবোল প্রশ্ন জিজ্ঞেস করছে। কিছু পর মা এসে চিৎকার জুরে দিল। কি এক অজানা অভিমানে জাানিনা টি, ভি, র-ট্রলিটার মধ্যে প্রচন্ড এক লাাত্থি মারলাম সজোরে। কাঁচ ভাঙ্গার শব্দে মুহূর্তো জন্য রাাত্রির নিরবতা খান-খান হয়েগেল। আব্বা খুবই জেদী প্রকৃতির মানুষ অথচ একেবারে শান্তভাবে তিনি দড়জায় বার কয়েক ধাক্কা মেরে সহানুুভুতির সুরে জানতে চাইল ঃ কেউ কি তোকে কিছু বলেছে ? নাাকি কোন একসিডেন্ট করেছিস ? অথবা বাইরে কারো সাথে মারামাাড়ি গন্ডগোল হয় নাই, ত ??? ঐ সময় মনে হচ্ছিল যেন কাঁটা ঘায়ে লবণ ছিটাচ্ছে কেউ। আামি একটার পর একটা ঘরের জিনিসপত্র ভাঙ্গতে আরম্ভ করলাম। দেয়াল ঘড়ি, টেবিল লেম্প, কাঁচের ফুলদানী, এসট্রে, সুকেসের গ্লাস, মাাটির টব-লুকিং গ্লাস, ছবির ফ্রেম সবশেষে টিউবলাইট ইত্যাদী কোন কিছুরই রেহাই পেলাম না আমার আততায়ী ক্রোধের কাছে।



গা ছমছমে ভৌতিক সেই অন্ধকার ঘড়ের মেঝের উপর চিত হয়ে; অবশিষ্ট রাতটা পারকরে দিলাম গভীর তন্দ্রা আচ্ছন্ন হয়ে।

একদল বন্ধু-বান্দব ছিল আমার, চলতি পথে যাদের সাথে পরিচয়। এই গ্রুপটাই ছিল আমার চারপাসে দেখা সবচেয়ে ভয়ংকর সার্কেল। এদের মধ্যে রংবাজ, চোর, গুন্ডা, আার্টিষ্ট অথবা পুলিশের ইনফর্মার সবই আছে।সেদিন ছিল আমার এইচ, এস, সি পরীক্ষার বোর্ড ফি জমা দেয়ার ডেট। কলেজ থেকে ফিরতি পথে কৌতুহল বসত তাদের সাথে গিয়ে বসলাম। সেদিন অতিরিক্ত খড়চ করার মত টাকাও ছিল মাানিব্যাগে। তাই যতক্ষণ ছিলাম ততক্ষন মোটামুটি সবখড়চই আামি সেচ্ছায় বহন করলাম। বখাটে এইসব বন্ধুরা আমাকে পেয়ে যেন আকাশের চাঁদ পেয়েছে হাতে ! এর মধ্যে লিটন নামের এক থানার ইনফর্মার ছিল ওকে ওকে কুড়ি টাকা দিয়ে পাঠালাম একপাতা ঘুমের টেবলেট ( ১০এম, জি ) এনে দেয়ার জন্য। আড্ডা দিতে দিতে যখন দশটার কাছাকাছি তখন একটা ছেলে গীটার হাতে এসে মিথুন কে ডাকতে লাগল। মিথুন যেয়ে গিটারটা রেখে কিছুক্ষন পর ছেলেটাকে বিদায় করে দিল।



মিথুন যে, এত ভাল গীটার বাজাতে জানে তা না দেখলে কখনো বিশ্বাসই হতনা আমার।মন্ত্রমুগ্ধের মতন আামি শুনতে থাকলাম। জর্জ মাইকেল তারপর জর্জ ব্লুজ এর কয়েকটা গান গীটারের সাথে তাল মিলিয়ে এত নিখুঁত ভাবে গাইল যে, আামি ওর ভক্তই হয়েগেলাম। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হল যে, মাঝে মাঝে বাংলা বাউল গানের দু’চারটে কলি আমাদের মাঝে ভিন্নরকমের আমেজ ছড়িয়ে দিচ্ছিল। আমরা প্রত্যেকেই গরু ছাগলের মত হাম্বা হাম্বা-ম্যাএ-এ করে সমস্বরে চিৎকার করে গাইছিলাম।

সেই রাতে অনেক চেষ্টা করেও ঘুমাতে পারছিলাম না তখন ১০ এম, জি ঘুমের বরির কথা মনে হল আমার। যদিও টেবলেট খাওয়ার জটিল অভ্যাস কখনই ছিলনা আমার তবুও ঘুম না হবার জ্বালা-যন্ত্রনা সইতে না পেরে দুইপিস ইউনকট্রিন টেবলেট খেয়ে নিলাম আামি। শেষে রাতের দিকে যখন ঘুমের নেশা বাড়তে থাকল তখন হঠাৎ বামি করলাম আামি। এরপর সকালে কয়েকঘন্টা তন্দ্রানয়; ঘোড়ের মত আচ্ছন্ন হয়ে খাটে পড়ে রইলাম আামি।



দুপুর দুইটার দিকে ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়ার মত অবস্তা হল আমার। সেই সাথে শুরু হল পেট ব্যাথা এবং পুনরায় বমিবমি ভাব।

মা, কারন জানতে চাইলে বরাবরের মত সত্য কথাতেই জবাব দিলাম মাকে। এরপর তিন দিন তিনরাত আামি চা-বিস্কুট ছাড়া কিছুই খেতে পাারিনি।

(৩)



শিক্ষা সংস্কৃতির উপর আমার বিশেষ দুর্বলতা বরাবর। বিশেষ-বিশেষ করে সঙ্গীত জগৎটার প্রতি বেশি। আমার রচিত প্রায় ১০০ গান আছে নিজের। কিন্তু; দুঃখজনক হলেও সত্য, যে কোন একটি গানের সুরও আমি করতে পারিনি। মনে মনে অন্য কার সাহায্য কামনা করছিলাম। আমি বাশের বাঁশি বাজাতে পারি কিন্তু; ব্যা কোয়ালিটির গানে সুর করার ক্ষমতা আমার নেই।



একদিন ভর দুপুড়ে মিথুনের বাড়িতে চলে এলাম। গান সম্পর্কে মনের সুপ্ত বাসনা প্রকাশ করলাম ওর কাছে। কিন্তু মিথুনের মধ্যে তেমন কোন আগ্রহ দেখতে পেলাম না। তবুও খুবই ভাল লাগল ওর কথাবার্তা, ওর এটিচুড।



পরদিন আবার গেলাম ওর বাসায়। মিথুনের মাকে দেখেও খুব ভল লাগল আমার কাছে। মিথুনের গীটারটা দেখতে ভীষন চমৎকার; সচরাচর এমন একষ্টিক গীটার আমি দেখিান বললেই চলে। সিমাহীন কৌতুহল নিয়ে আমি ওর গীটারে টুংটাং বাজাতে চেষ্টা করলাম।



এরপর টানা একমাস নিয়মিত প্রাকটিস করার পর নিজেই একটা গীটার কেনার চিন্তাভাবনা করতে লাগলাম। কয়েকটা কর্ড খুবই কঠিন তাই সময় ধরে প্রাকটিসের প্রয়োজন। সময় করে একদিন দু’বন্ধু মিলে গেলাম মার্কেটে। গীটার কিনে ফিরতি পথে লক্ষ করলাম মিথুন কেমন যেন অসুস্ত হয়ে পড়েছে। আমি ওকে বার বার প্রশ্ন করতে থাকলাম; সমস্যাটা কি তা বোঝার জন্য।



পথে বেশ কিছুক্ষণ ট্রাফিক জ্যামে আটকা পরে থাকতে হল। একসময় ও অস্থিরতা আর বিরক্তিভাব নিয়ে টেক্রি থেকে নেমে যেতে চাইল। তখন আমি ওর অস্থিরতার কোন আগামাথা খুঁজে পাচ্ছিলাম না। জার্নি শেষে যখন বাড়ি ফিরছিলাম তখন ওকে বলরাম পৌঁছে দেই তোকে ? মিথুন নাকের সর্দি পরিষ্কার করে বললঃঅসুবিধা নেই, তুমি চলে যাও। আমি যেতে পারব।



’ঠিক দু’দিন পর’।

মিথুনের আম্মাকে দেখতে হুবহু আমার বড় খালাম্মার মত লাগে। মার সাথে অনেক কথা বিনিময়ের ফাঁকে জানতে পারলাম মিথুন ড্রাগ এডিক্ট। সে হেরোইনে আসক্ত হয়ে গেছে ! আমি চুড়ান্ত বিস্ময় আর এক বুক হতাশা নিয়ে চলে এলাম।



হাঁটতে-হাঁটতে কখন যে বাসষ্টেন্ডের নিকট চলে এসেছি কেয়াল করিনি। হঠাৎ পেছনে থেকে কে যেন আমার নাম ধরে ডাকল। ভাল করে নজড় করে দেখি মিথুন একটা মোটর বাইক থেকে নামছে। প্রথমে শুভেচ্ছা বিনিময় করলাম আমরা। তারপর চায়ের ষ্টলে এসে বসলাম। সবশেষে মিথুন মোটর সাইকেল যোগে আমাকে বাড়ি পৌঁছে দিল।



গতকাল মোটর বাঈকের ছেলেটা থাকায় মিথুনেকে আর এ ব্যাপারে কিছুই জি¹েস করিনি। পরদিন ফোন করে আসতে বললাম ওকে। নির্দিষ্ট সময়ের প্রায় দুই ঘন্টা পর আসল মিথুন। হাঁটতে-হাঁটতে আমরা রেল লাইনে ওঠে আমরা আস্তে-আস্তে হাঁটা ধরলাম।

মিথুন ঃ তোর পরীক্ষা কবে ?

ঃ জুলাই মাসে।

মিথুন ঃ তোর ঘুমের সমস্যা দূর হইছে ?

ঃ না। ঘুমের সমস্যা যায় নাই।

মিথুন ঃ এক্্রারসাইজ কর।

ঃ একা একা ভাল্লাগেনারে। কি যে, করি ?

( পাশাপাশি নিরবে কিছুপথ হাঁটার পর )

ঃ মিথুন, আমার গানের কি করলি ? সুর হইছে ? না করছ নাই ?

মিথুন ঃ ও, হ্যাঁ। তোর ঢাকা শহর নিয়া লেখা গানটা কম্লিট করছি। আর অভিমানি গানটা একটু চেঞ্জ করা দরকার।

ঃ কোন লাইনটা, কোন জায়গাটা বলত ?

মিথুন ঃ ’জোনাকী মেয়ে, এই কি কথা ছিল ? তবে জেনে রেখ’-এই জায়গাটায়।

ঃ প্রথম গানটায় রিদ্ম দিছ ?

মিথুন ঃ হ্যাঁ, হ্যাঁ। তোরে শাফিনের কথা বলছিলাম না। মনে আছে ?

ঃ হ্যাঁ মনে আছে। ওর শারীরিক অবস্থা এখন কেমন ?

মিথুন ঃ খুবই খাড়াপ। মনে হয় ট্রিটমেন্টের জন্য বিদেশে যাইতে হইব।

ঃ বিদেশে যাইতে হইব ?

মিথুন ঃ শাফিন তোর গানটায় খুব সুন্দর করে লিড বাজায়। আমার চেয়ে ভালই বাজায় শাফিন।



’একটা সিগারেট ধরালাম’

ঃ শাফিনরে একদিন দেখতে যাওয়ার দরকার ছিল। এতদিন গানের ব্যাপারে তোমাকে কিছু জিজ্ঞেস করিনি কারন,মনের উপর জোড় খাটিয়ে কোন লাভ হয় না। আর যে জন্যে তোমাকে আসতে বলেছি জানিনা কথাটা তুমি কিভাবে নেবে ।



মিথুন মাথার ক্যাপটা খুলে বা হাতে ওর লম্বা চুলগুল পেছনদিকে ঠেলে বললঃ কি বলবা বল; অসুবিধা নাই। এত পেচা-পেচির দরকার কি ?

লক্ষ করলাম মিথুন এখন অনেকটা স্বভাবিক।



ঃ আমার মনে হয় তুমি অনুমান করতে পারছ।

মিথুন ঃ না পারছি না। তুমি বল।

কিছুক্ষনের জন্য আমরা দুজনেই তুই থেকে তুমি সম্মোধনে চলে এলাম।

ঃ আমি তোমাকে আমার খুব ভাল একজন বন্ধু হিসেবে মনে করি। আমার মনে হয় তুমি ড্রাগ এডিক্ট! তুমি অন্য কোন নেশা কর !

মিথুন ঃ আমি বুঝতে পারছি, তোমাকে আমার সম্পর্কে কেউ কিছু বলেছে।



এরপর একটু সময় নিয়ে ও বলল-যা শুনেছ ঠিকই শুনছ। এই কথাটা আরো আগেই বলা উচিৎ ছিল আমার। কিন্তু...কতদিন যাবত খাও তুমি ?

মিথুন ঃ এক বছড়।

ঃ কোত্থেকে শিখলে ?

মিথুন ঃ আসলে আমি কাউরে এ ব্যাপারে দোষারপ করি না বা দোষ দেই না। আমি নিজে ইচ্ছা করেই হিরু খাওয়া শিখছি।

ঃ কার সাথে প্রথম ইউজ কর তুমি ?

মিথুন ঃ হাজী বাড়ীর রুবেলের সাথে প্রথমে এই ড্রাগস্টা নেই। কিন্তু ওকে কখনো দায়ী করিনা।

ঃ সেটা ঠিক আছে। তুমি নিজেকেই দায়ী কর। একবার ভেবে দেখ তোমার ফ্রেন্ড সার্কেলের মধ্যে তোমার অবস্থান কতটা নিচে নেমে গেছে। একন ঘৃণার চোখে তোমাকে...

মিথুন ঃ ধ্যাত এই সব পোলাপাইনরে গনায় ধরলে-ত। কউরে দরকার নাই আমার কিন্তু আমারে ছাড়া ওরা অচল।



হেঁটে হেঁটে অনেকটা পথ চলে এলাম; অনেক কথাও হল। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে। পাখিরা সব যারযার ঘড়ে ফিরে যাচ্ছে। এবার বিদায়ের পালা।

ঃ আবার কবে দেখা হবে তোমার সাথে জানিনা।

মিথুন ঃ চল, বাসে উঠিয়ে দেই তোকে।

ঃ তুই কোথায় যাবি মিথুন ?

মিথুন ঃ সত্য কথা কমু।

ঃ অবশ্যই।

মিথুন ঃ মাল খাইতে যামু।

ঃ আমিও যামু তোর সাথে।

মিথুন ঃ না-না, দরকার নই। তুই যাবি কেন ?

ঃ দেখমু তুই কিভাবে খাছ।

মিথুন ঃ পরে আরেকদিন দেখিস আজকে আমার টাকা সর্ট। এসব দেখার মত কিছু না।

ঃ শুনছি আমার এলাকার কয়েকজন বন্ধু নাকি এইটা আনেকদিন যাবৎ খায়। কিন্তু দেহিনাই যে জিনিসটা কেমন খায়। আমার কাছে খড়চ করার মত ১০০ টাকা আছে। চল আমিও দেখমু আইজকা।

মিথুন ঃ ঠিক আছে যাবি ভালকথা কিন্তু;খওয়ার চিন্তা-ভাবনা করিস না।

ঃ প্রথম যেদিন নেশা করেছিলাম ভৌতিক অন্ধকার-আচ্ছন্ন একটা ঘড়ে ! ঠিক একই রকম নরকীয় পরিবেশ এখানেও। এখানে পার্থক্য শুধু আপরিচিত সবাই নেশা করছে।



খেয়াল করে দেখলাম মিথুনের প্রভাব পরিচিতি এখানে খুবই ভাল।

চারপাসে ডোবা। বাঁশ-বেড়া আর তক্তার তৈরি ঘড় ভেতরে লোকজনের চাপাচাপি। দুজনকে ওঠিয়ে বসার জায়গা করে দিল ঘড়ের মালিক। উৎকট গন্ধ ঘড়ের ভেতরে। কিছুক্ষন পর তিনটা ছোট কাগজের টুকরা এনে হাতে দিয়ে গেল বাচ্চা একটি মেয়ে। এরমধ্যে সিগারেটের সিলভার পেপার পুড়ে ঘসে মেজে পরিষ্কার করে দিল একজন।



ঘড়ের মাঝখানে কুপি জ্বলছে। কেরোসিনের পোড়া ধোঁয়া আর মানুষের শরীরের তাপমাত্রায় আমি একদম ফাঁপরে পরে গেলাম। মিথুন সিগারেট এনে দেয়ার জন্য এক জনকে হাকাল। আমি টাকা দিলাম ২ টা মেঙ্গজুস আর সিগারেট আনার জন্যে। আমি মনযোগ সহকারে সবকিছু লক্ষ করছি। নিখুঁত কার-সাজিতে মিথুন সবকিছু রেডি করল। প্রথমে যে তিনটাকে কাগজের টুকরা মনে করেছিলাম সেগুলোই আসলে হেরোইনের পাতা। সিলভার কাগজের উপরে বাদামি বর্ণের পাওডারগুলো ঢেলে দিল মিথুন। দেখতে একেবারে গুলের মতন। বুঝলাম একেই বলা হয় ব্রউন সুগার।



মিথুন প্রথমে মুখে একটা আধুলি পয়সা দাঁতের ফাঁকে আটকে নিল। তারপর কাগজের তৈরি একটা পাইপ মুখে নিয়ে চিকন-চিকন কাগজের টুকরা দিয়ে ( সিলভার প্যাপারে রাখা ) হেরইনের নিচে আগুনের তাপ দিতে থাকল। প্যার-প্যার, চের-চের শব্দ হচ্ছে। কিন্তু সে কি বা কোন জিনিসটা গ্রহন করছে, আসলে আমি তার কিছুই বুঝতে পারলাম না। আশেপাশে দেখলাম সবাই একই পদ্ধতি ব্যাবহার করছে। পরে ও আসল ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলল আমাকে। তাপ দেয়ার ফলে সৃষ্ট ধোঁয়া বা নিকটিন মুখের পাইপ দিয়ে ফুসফুসে টেনে নেয়া হয়। এরকম সিগারেট টেনে টেনে নেশাকে পূর্নঙ্গ ভাবে উত্তেজিত করা হয়।



আমাকে দেখে সবাই একবার একবার কৌতুহলী দৃস্টিতে তাকা”্ছ।ে আমার মত ছেলে কেন এখানে এলাম। এটাই তাদের একমাত্র জিজ্ঞাসা। একটাই জবাব দিলাম সবার উদ্দেশ্যে, যে কৌতুহল বসত দেখার ইচ্ছায় এখানে আসা।



টানা দেড়ঘন্টা আড্ডায় বসে থেকে পর্যবেক্ষন করলাম। এখানে কারো কাছে সময়ের কোন মুল্য নেই। একসময় বোড়িং ফিল করতে থাকলাম আস্থির ভাব চলে এবেছে। কাপাকাপা গলায় হঠাৎ মিথুনের উদ্দেশ্যে বললাম-দে আমি একটা টান দেই। সাথে সাথে মিথুন না বোধক জবাবে আমাকে দিতে অস্বীকার জানাল। কিছুটা ভীত এবং লজ্জিত ভঙ্গীতে আবার অনুরোধ করলাম, আরে বেটা দেনা টেষ্ট করতে দোষ কি ?

মিথুন ঃ কোন প্রয়োজন নাই।

ঃ একদিন খাইলে কি হইব !

মিথুন তার খাওয়ার শেষ পর্যয়ে আমার হাতে পাইপ আর পয়সা দিল। অনেকবার চেষ্টা করেও দাঁতের ফাঁকে পয়সা আটকাতে ব্যার্থ হলাম আমি। পরে পয়সা ছাড়াই ডাইরেক্ট পাইপ মুখে নিয়ে টান দিলাম। প্রথম টানে কিছুই বুঝলাম না। দ্বিতীয় বারে প্রচুর ধোঁয়া গেল ভেতরে। অসম্ভব তেঁতো লাগল ধোঁয়াটা !!! সাথে-সাথে একটা কুন্ডলী পাকান ঘ্যাস পেটের মধ্যে ঢুকে এমন ভাবে জায়গা করে নিল যে, মনে হচ্ছিল পেটের ভেতরে নাড়ি-ভুঁড়ি যা আছে সব মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসবে। অবলিলায় বমি হতে থকল। বাইরে চলে এলাম। শরীরটা ভীষণ দুর্বল লাগছে। হাত পাগুলো কাপছে। কথা বলতে পারছিনা। বার বার থু থু ফেলতে হচ্ছে। মিথুন শুধু একাই কথা বলছে আমাকে তোরে না করলাম খাওয়ার দরকার নাই, খাওয়ার দরকার নাই। কি দরকার ছিল টেষ্ট করার



বেড বাউন্ডারীটা ছিল রেল ষ্টেষনের পেছনে। রেললাইনে হেটে আনেকটা পথ চলে এলাম। মিথুনের এলাকায় চলে আসার পর একটা রিক্রা ঠিক করে বাড়িতে চলে এলাম।



প্রচুর ক্ষুধার্ত ছিলাম। ফ্রিজ খুলে যা পেলাম সবই একটু-একটু করে খেলাম। খাওয়া শেষে একটা ঝিমুনি ভাব হল। এক ঘুমে পার করে দিলাম ১৬ ঘন্ট। যাকে বলে ম্যারাথন ঘুম।



ঘুম ভেঙ্গে ওঠে গেলাম।খুব ফ্রেস লাগছে নিজেকে। চেহারায় ভরাট ভরাট একটা ভাব। মনে হচ্ছে বিগত রাতের সমস্ত খাড়াপলাগা যত কষ্ট গ্লানী ছিল সব, বৃষ্টির জলে ধুয়ে মুছে পবিত্র হয়ে গেছে।



তিনদিন পর ঠিক করলাম মিথুনের বন্ধু শাফিনকে দেখতে যাব। তিন দিনের মধ্যে গত দুদিন রাতে বেশ ভাল ঘুমই হয়েছে।



রেললাইন ধরে হাঁটা মিথুনের একটা শখ। এবং দির্ঘদিনের অভ্যাস। ওকে দেখতে আজ চমৎকার লাগছে। দুধে আলতা গায়ের রং। নরমাল জিন্স, লাল শার্ট আর ঝুটিকরা বাদামি চুলগুল দেখে কারো বোঝার উপায়ই নোই যে, এই ছেলে হেরোইনে আসক্ত।

ঃ মিথুন একটা প্রশ্ন করি তোরে ?

মিথুন ঃ কি ?

ঃ গীটার কিনে আসার দিন তুই টেক্রি থেকে নেমে যেতে চাইছিলি কেন ?

মিথুন ঃ আসলে ঐ সময়টা আর এখনকার সময়টা একই সময়। এই সময়টার মধ্যে আমি ’মাল’ খাই। আর তার পাসেই একটা স্পট ছিল। এজন্য নিজেকে আর কন্ট্রল করতে পারছিলাম না। একই সময় মানে; তোর সময়মত না খাইলে কি হয় ?

মিথুন ঃ শারিরীক সমস্যা দেখা দেয়।

ঃ যেমন..

মিথুন ঃ আনেক সমস্যা হয় তুই বুঝবিনা।

ঃ রাতে তোর ঠিকমত ঘুম হয় ?

মিথুন ঃ না, ঘুমের সমস্যা হয়না। আর প্রচুর হাটা হয় আমার। তবে রাতে খাওয়ার পর পেটের মধ্যে পুটুর পুটুুর করে। শব্দ হয় আমার। এছাড়া, যে জিনিস খাই !! আর এই জিনিস খাওয়ার পেছনে পরোক্ষ কারন যেটা সেটা তোরে বলি। তুই জানসনা মনে হয়। ঐ হাউজিং এলাকার ২ নাম্বার রোডের একটা মেয়ে আমাদের পছন্দ করত। দির্ঘ এগার মাসে ওর সাথে একটা গুডটার্ম গড়ে ওঠে আমার। শেষের দিকে কাকনের ভালবাসারে আমি অপবিত্র করে ফেলি। ওর সাথে ইলিগেল সেক্্র করি। এবং ঐ দিনই আমি মিথুন এই সর্বনাশা নেশার সাথে জড়িয়ে পরি। পাপবোধের তাড়নায় ধীরে-ধীরে এই পথকে বেছে নেই। আজো নেশা কেটে গেলে মেয়েটিকে আমি গভীরভাবে অনুভব করি। যার জন্য প্রতিদিন আমাকে নেশা করতে হয়।

ঃ হেরোইনের নেশা থাকে কথক্ষণ ?

মিথুন ঃ নিচে ছয় থেকে আট ঘন্টা থাকে। ঐ ফেন্সির মতই।

একটা অপরাধবোধ থেকে এই ধংশের পথে নিজেকে সমর্পন করা কিন্তু মেনে নেয়া যায়না।

মিথুন ঃ বাদদে-এসব কথা। আমি এখন মৃত্যু পথযাএি পথিক। ‘ আই এম গোইং টু ডেট্থ ’ !



কথাটা শুনে আমার হার্টবিট বেড়ে গেল। পরক্ষনেই রেল-লাইনের একটা পাথরে, পয়ের নখে আঘাত পেলাম। সামনে থেকে একটা ট্রেন আসছে। আমরা দুজন দুপাসে সরে গেলাম। ষ্টেসন রোডের কাছাকাছি এলে পরে রাজীব বলল তুই এই দোকানে বস। আমি ঝটপট ভেতর থাইকা আসি। তোর ঐ হানে যাওয়র দরকার নাই।



আমি ঘন্টাখানেক অপেক্ষ করে ঠিক ঐ আগের ঘড়টাতে উঁকি দিলাম। দেখি ঘড় একদম ফাঁকা। মাএ দ’জন। দুজনেই ভীন্ন গ্রহের বাসিন্দা। দুজনেই মোমবাতির উপর ঝুকে রয়েছে। চোখ বন্ধ। আমি শব্দ করে ঘড়ে প্রবেশ করলাম। তবুও ওদের ঘোড় কাটেনি। জোড়েজোড়ে কাসলাম কোন লাভ হলনা। আমি হতবাক হয়ে নিস্পলক তাকিয়ে দেখলাম অপরিচিত লোকটিকে। সে মোমের উপর এতটাই ঝুঁেক পড়েছে যে, তার চুল পোড়া গন্ধ পাচ্ছি। আমি আর সহ্য করতে পারলাম না। মিথুনকে ধাক্কা মেরে বসলাম। মিথুন হচকিয়ে তাকাল।

মিথুন ঃ ও তুই, কিরে ? আইয়া পরছত। হইয়া গেছে আর অল্পখানি রইছে দোস্ত। বব

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.