![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
াস্তায় বের হয়েই সজল বুজতে পারল অঘোষিত ১০ নম্বর মহা বিপদ সংকেত। অন্ধকার ছমছমে। অন্ধকার হাতড়ে ভয়কে জয় করতে হবে। এছাড়া দ্বিতীয় কোন উপায় নেই সজলের। উদ্দেশ্য আপাতত ছেলেবেলার বন্ধু রাজীবের বাড়ী। আশ্চর্য হলেও সত্যি ঘর থেকে বেরোনোর সময় সম্পূর্ণ নিরুদ্দেশ যাত্রা ছিল। এমনকি নিজেদের বাড়ীর পুকুরঘাট পেরিয়ে আলমচাচার বাড়ীর রাস্তা পর্যন্ত যাত্রাটা সজলের কাছে উদ্দেশ্যহীন ছিল। কোথায় যাচ্ছে কি জন্য যাচ্ছে জানা নেই, কিন্তু যাচ্ছে। আলম চাচার বাড়ীর রাস্তা পর্যন্ত এসেছে অন্ধকারে অজানা ভয়ে। রাস্তা পেরিয়ে মাথায় এসেছে রাজীবের কথা। অন্ধকারের ভয়টা ছাপিয়ে দেখা দিল নতুন এক ভয়। রাত প্রায় সোয়া ৩ টা। এসময় রাজীবের বাড়ী গিয়ে কি বলবে? রাজীবের বাবা মা কি ভাববেন?
বিকালের দিকে বাবা কি একটা কথার একপর্যায়ে বলেছিলেন “তুই একটা অপদার্থ, তোকে খাইয়ে শুধু শুধু আমার টাকা নষ্ট করছি”। ভীষন জেদী সজলের আত্নসম্মানবোধে চরম আঘাত হেনেছিল কথাটা। আঘাত লাগার পেছনে অবশ্য জোরালো একটা কারণ আছে। এস.এস.সি তে ভালো রেজাল্ট করে নামকরা একটা কলেজে ভর্তি হযেছিল সে। বাবার উপার্জনে সংসারই চলে না তার উপর লেখাপড়া! সজলকে লেখাপড়া ছাড়তে হয়েছিল। সজল যে লেখাপড়ায় অমনযোগী ছিল তা মোটেও না। যতেষ্ট মনযোগী আর অসম্ভব মেধাবী হিসেবে কলেজে আলাদা একটা সম্মান ছিল। প্রবল আগ্রহ থাকা সত্বেও লেখাপড়া ছাড়তে বাধ্য হয়েছিল সে শুধু অভাবের কারণে।
রাত্রে খেতে বসে বাবা যখন আবার বললেন “বাবার ঘাড়ে বসে খাচ্ছ তো তাই কিছু টের পাচ্ছ না। একবার চিন্তা করেছ খাবারগুলো আসে কিভাবে”? সজল আর নিজেকে কন্টোল করতে পারে নি। বাবাকে সংসারের খরচে সাহায্য করার জন্য বাজারের একটি দোকানে চাকুরী নিয়েছিল। বেতন ছিল যতসামান্য। খুব করে কেদেছিল বাবার কথাটা শুনে। রাতের আধারেই সবকিছু ছেড়েছুড়ে বেরিয়ে এসেছে।
বন্ধু রাজিবের কাছ থেকে সামান্য কিছু টাকা ধার নিয়ে সজল চলে আসল ঢাকায়। অজানা অচেনা শহরে প্রথম রাত কাটল রাস্তায়। যা টাকা পকেটে আছে অন্তত এক বেলা কোন সস্তা রেষ্টুরেন্টে খাওয়া যাবে। কিন্তু সজলের সিদ্ধান্ত হল এখনো তো না খেয়ে কোন মতে সম্ভব হচ্ছে, যখন অসম্ভব হয়ে যাবে তখন না হয় কিছু একটা খাবে।
কল্যাণপুরে সজলের এক বন্ধু থাকে। বন্ধুর কল্যাণে গ্যারেজে একটা চাকুরী জুটল। এত ভারী কাজ জীবনে করে নি বলে ছাড়তে হল চাকুরীটা। একবেলা খায় আরেকবেলা উপোশ থাকে। ক্ষুদার যন্ত্রনায় পেট ফেটে গেলেও কিছু করার নেই। দোকানের সামনে দাড়িয়ে মানুষের খাওয়া দেখে আর চোখের পানি ফেলে। টানা কয়েকদিন শুধু পানি খেয়ে কাটল। আবারও বন্ধুর সহযোগীতা চাইল সজল। বন্ধু অনেক খোজাখুজি করে কোথাও সজলের উপযোগী কিছু পেল না।
রিকশাই এখন সজলের উপার্জনের মাধ্যম। প্রতিদিন যা টাকা রোজগার করে রিকশা ভাড়া আর ঘরভাড়া দেওয়ার পর পেটপুরে একবেলা খাওয়ার মত টাকা থাকে না। সারাদিনের অমানুষিক খাটুনির পর গাড়ীর পুরোনো একটা সিট কাভার দিয়ে তৈরী মবিল মাখানো বিছানায় গা এলিয়ে দেয় সজল। দিনের খাটুনীতে ক্লান্তির যন্ত্রনার চেয়ে ক্ষুদার যন্ত্রনাটা বেশী থাকে তাই ঘুম আসে না। তবুও তো বেচে থাকতে হবে।
(হায় নিষ্ঠুর বাস্তবতা!)
©somewhere in net ltd.