![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
- এটা দেখ তো মা, তোকে দারুণ মানাবে। রাহেলা বেগম তার মেয়েকে বললেন।
রাহেলা বেগম মেয়ে সাবিহাকে নিয়ে মার্কেটে এসেছেন। অনেক্ষণ ঘুরাঘুরি শেষে একটি দোকানে এসে চাহিদা মত ড্রেস দেখে মেয়েকে ডাকলেন। সাবিহা এগিয়ে এসে জামা উল্টে মূল্য দেখল। অনেকটা আয়ত্বের ভিতরে আছে।
- তোমার পছন্দ হলে নিতে পার মা। সাবিহা জবাব দিল।
রাহেলা বেগম মেয়েকে নিয়ে বেরিয়ে এলেন। একটা জামা কিনেই শেষ। আর কিছু কেনার সামর্থ নেই। সাবিহার বাবা মারা গেছেন গত বছর। বাবা বেচে থাকলে অনেক কিছুই কিনত সে। মায়ের টানাটুনির সংসার। সাবিহা এবার কলেজে ভর্তি হয়েছে। টুকটাক হাতের কাজ করে যা পান তাই দিয়ে রাহেলা বেগম তার লেখাপড়া আর সংসার চালিয়ে যাচ্ছেন। সাবিহা এটা বুঝে।
- তোমার জন্য কিছু কিনলে না, মা? সাবিহা জিজ্ঞেস করে।
- আমার কিছু লাগবে না। রাহেলা বেগম উত্তর দেন।
- তাহলে আমার জন্য জামা কিনলে কেন? আমি এটা পরব না।
- পাগলামো করিস না তো! তোর মামা গতবছর আমাকে যে শাড়ীটা দিয়েছিল সেটা পরা হয় নি। খামোখা আবার জামা-কাপড় কিনে টাকা নষ্ট করব কেন?
সাবিহা চুপ করে যায়। অনেক কষ্ট করে রাহেলা বেগম একটা দ্বীর্ঘশ্বাস গোপন করেন। সাবিহা বুঝতে পারে না।
আসলে রাহেলা বেগম একটু ভুল বলেছেন। ঠিক ভুল না, একটা সত্যি কথা বলেননি এই আরকি। গত বছর ভাইয়ের কাছ থেকে পাওয়া শাড়ীটা পছন্দ হয়নি বলে তুলে রেখেছেন। যেটা কেউ জানে না। না সাবিহা না তার মামা। কাউকেই বুঝতে দেননি রাহেলা বেগম। এখন একটা শাড়ী কেনার প্রবল ইচ্ছা ছিল। কিন্তু সেই প্রবল ইচ্ছাটাকে আরও প্রবলভাবে দমিয়ে রেখেছেন। না হলে এক মাস চাল কেনা থেকে বিরত থাকতে হবে।
নিউ মার্কেট থেকে আজিমপুর সাবিহাদের বাসা পায়ে হেটে মাত্র পাঁচ ছ মিনিটের রাস্তা। কিন্তু ভীড়ের কারণে এই পাঁচ ছ মিনিটের রাস্তা অনেক লম্বা হয়ে গেছে। কমপক্ষে আধাঘন্টা লাগবে বাসায় পৌছাতে। সাবিহা আর তার মা হাটা শুরু করলেন।
ঈদ অর্থ খুশি কিন্তু আজকাল কেনাকাটাও ঈদের সমার্থক। ঈদ এলেই শহরের বিপনী বিতানগুলোতে কেনাকাটার ধুম লেগে যায়। রমজান অর্ধেক শেষ হওয়ার আগেই শহরের মানুষেরা কেনাকাটা শুরু করে দেন। অবশ্য যাদের অবস্থা সাবিহাদের মত তারা বাদে। এদের কেনাকাটা সংক্ষেপ। ঝটপট মার্কেটে গিয়েই ফিরে আসে। কিন্তু যারা আর্থিক দিক দিয়ে পাহাড়সম তাদের কেনাকাটা অন্যরকম। কারও ডবল কারও ট্রিপল কারওবা তার চেয়েও বেশী। এরা ইফতারের পরই মার্কেটের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। সারা রাতভর এ মার্কেট ওমার্কেট ঘুরে ঘুরে সাহরীর আগে এসে বাসায় পৌছায়। সাহরী শেষ করেই ধুম ঘুম। শুধু যে ভাল মানুষেরা মার্কেটে যায় তা নয়। এই ভীড়ের মধ্যে আছে ধান্ধাবাজ, পকেটমার, বদমায়েশ, চুর আরও কত...।
- ও মা গো!!!
হঠাত চিতকার শুনে রাহেলা বেগম থমকে দাড়ালেন। রাহেলা বেগম আগে আগে আর তার পেছন পেছন হাটছিল সাবিহা। ইতিমধ্যে অনেক মানুষের ভীড় জমে গেছে সাবিহাকে ঘিরে। অনেকেই অনেক কথা বলাবলি করছে। মেয়েটার কী হল? এরকম চিতকার করল কেন? মেয়েটার সাথে কি কেউ আছে? ইত্যাদি ইত্যাদি।
একটা চিতকার দিয়েই মাটিতে বসে পড়েছে সাবিহা। দুহাত দিয়ে বুক চেপে ধরে রেখেছে।
- কিরে মা কি হইছে? মেয়ের কানের কাছে মুখ নিয়ে জিজ্ঞেস করলেন রাহেলা বেগম। কিছু বলছে না দেখে আবারও জিজ্ঞেস করলেন, ব্যথা পেয়েছিস?
- হ্যা! ছোট্র করে কোন মতে গোঙ্গানীর মত করে জবাব দিল সাবিহা।
- কীভাবে পেয়েছিস?
- একটা লোক...! আর কিছু বলে না। ফুপিয়ে কেদে উঠে।
সাবিহার বাম স্তনটা লাল হয়ে গেছে। ভীড়ের মধ্যে কাউকে কিছু বলে নি। আর বললেই বা কী হত? যে পশুটা স্তনের মধ্যে চাপ দিয়েছিল সে তো উদাও হয়ে গেছে। কিংবা ভীড়ের মধ্যেই আছে। এখন বললে উপস্থিত সবাই শুধু আহ উহ করত আর তাদের তাদের অসহায়ত্ব নিয়ে নানা জনে নানা কথা বলত।
মেয়ের মাথায় শান্তনার হাত বুলান রাহেলা বেগম। আর বলেন-"বুঝলি রে মা, দুনিয়াতে মেয়ে হয়ে জন্ম নেয়াটা একটা পাপ। সারা জীবন এই পাপের প্রায়শ্চিত্য করতে হয়"
রাহেলা বেগম মেয়েকে ডাকেন- আয় মা, সাহরীর সময় চলে যাচ্ছে। কিছু মুখে দেই চল। রাহেলা বেগমের ডাক ছাপিয়ে ভেসে আসে মোয়াজ্জিনের ডাক- আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার।
২২ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৩:৩৩
মোঃ সাইদুল ইসলাম বলেছেন: Tnks
২| ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৫:৫২
নুর ইসলাম রফিক বলেছেন: Click This Link
©somewhere in net ltd.
১|
০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:০৯
নুর ইসলাম রফিক বলেছেন: apnar manobik dristis prosonsha korchi.