নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ডুমুর ফুল

মোঃ সাইদুল ইসলাম

মোঃ সাইদুল ইসলাম › বিস্তারিত পোস্টঃ

সুখের বলিদান (পার্ট-১)

০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৪:৫৪

সেদ্ধ আলুর উপকারীতা আর কেউ না জানলেও কাদের জানে। আজকালকার উচ্চমূল্যের বাজারে চাল কেনা কাদেরের জন্য একপ্রকার স্বপ্ন। ভাতের স্বাদ সে প্রায় ভুলে গেছে।



দুই তিনটার বেশী চালান করা যায় না। যাবেই বা কেমনে? ওমন শুকনো আলু সেদ্ধ গলা দিয়ে নামানো কি চাট্রিখানি কথা? তবুও চালের সাথে সব তরি তরকারী যখন দূর্মূল্যের মিছিলে শামিল তখন শুধু আলু সেদ্ধতেই শান্তনা নিতে বাধ্য।



কাদের ডাক দেয়- '' শশী, কাস্তেটা কোথায় রেখেছিস, নিয়া আয়। আমি গোয়ালে গেলাম গরু ছাড়তে। ''



কাদেরের ১০ বছরের মেয়ে শশী। কাস্তে এগিয়ে দিতে দিতে বলে- ''এত্ত সকালে মাঠে না গেলে হয়না বাবা? এখনো তো সূর্য উঠে নাই। ''

কাদের হাসে। হেসেই জবাব দেয়-

''সূর্য উঠলে তো কাজ করা কঠিন রে মা, তেজ শরীরে আগুনের মত লাগে ''

''তাহলে যে তুমি বেলা করে মাঠ থেকে ফিরে আস?''

কাদের মেয়ের প্রশ্নের উত্তর দেয় না। অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে গরু ছাড়তে থাকে। কাস্তে বগলে নিয়ে মাঠের দিকে হাটা ধরে।



দেখতে দেখতে মাঠে এসে যায় কাদের। জমির চারপাশে একবার চোখ বুলায়। সোনালী ধানে মন জুড়িয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু তা না হয়ে ভেতরে কোথায় যেন একটা বেদনার সূর হু হু করে বেঝে উঠে!



গত বছর পর্যন্ত এই জমির মালিক ছিল কাদের। বড় মেয়ের বিয়ের সময় একমাত্র এই জমিখানা বিক্রি করতে হয়েছে। যৌতুকের মোটা অংক পরিশোধ করতে বিকল্প আর কিছু ছিল না।



রোদ বৃষ্টি পিঠে সয়ে চাষ করা, ঢেলা ভাঙ্গা, আগাছা পরিষ্কার করা, সার দেয়া, তারপর বৃষ্টি হলে আবার চাষ দিয়ে বীজ বপন করা, ধান লাগানো। ধানগাছ একটু বড় হলে আবার ঘাস বাছা, সার দেওয়া, দরকার হলে সেচ দেওয়া।



এই এত কষ্টের ফসল কাদেরের একার না। জমির মালিককে অর্ধেক দিতে হবে। নিজে উপস্থিত থেকে কড়ায় গন্ডায় ভাগ করে নেয়।



একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে কাদের ভাবে, আহা! এত কষ্টের ফসলে আগের মত যদি কেউ ভাগ না বসাতো!



কাদের লুঙ্গিটা মালকোচা মারে। কাদার মধ্যে লুঙ্গি ছাড়া থাকলে কাদা লেগে লুঙ্গি ভারী হয়ে যায়। কাজ করা যায় না। তাছাড়া জোকের ভয় তো আছেই। গরু দুটাকে আগেই চারন ভুমিতে ছেড়ে দিয়েছে। এবার একটা ত্যানা দুই হাতে ভাল করে পেচিয়ে নেয়। পাকা ধানের পাতা হাত ঘা করে ফেলে। তাই জন্য এই ব্যাবস্থা। ফুলহাতা শার্ট গায়ে থাকলে হত। যেটা নাই সেটার বিকল্প সবাইকেই খুজে নিতে হয়।



সেদ্ধ আলু পেটে আবার সেদ্ধ হওয়ার আগে কাজ ভালই চলে। মাঝে মাঝে একটা বিড়ি জ্বালিয়ে শরীরকে একটু তাপ দিতে হয়, এই যা।

কাদের উঠে দাড়ায় ধীরে ধীরে। ধান অনেক কাটা হয়েছে। রোদ প্রচন্ড গরম। সহ্য সীমার বাইরে। এবার বাড়ী ফিরতে হবে। কাটা ধান মাঠেই রেখে আসে কাদের।



পড়ন্ত বিকালে বাড়ী নিয়ে আসে। বাড়ীতে এনেই তো আর কাজ শেষ না। মাড়াই করা, খড় আলাদা করা, ধান থেকে ময়লা পরিষ্কার করা তারপর শুকিয়ে ঘরে তোলা। এ কাজগুলো কিন্তু কম কষ্টের না!



ধান শুকাতে শুকাতেই জমির মালিক কাইয়ুম চৌধুরীর গোমস্তারা এসে হাজির হয়। দাড়ী কাটা দিয়ে কড়ায় গন্ডায় মেপে দুই ভাগ করে একভাগ নিয়ে যায়।



কাদের দ্বীর্গশ্বাস ছেড়ে চেয়ে থাকে সারা বছরের খাটুনির দিকে। আগে তার ক্ষেতের ধান দিয়েই মোটামুটি সারা বছরের ভাত হত। এ বছর অর্ধেক ধানের মালিক সে। বছরের মাঝামাঝি আসলে চাল কিনে ভাত খেতে হবে।



বড় মেয়ের শশুর এসেছেন। কাদেরের বেয়াই। ভালই হল। নতুন ধান ঘরে উঠেছে। মেয়েকে বাড়ি আনতে হবে। দরকারী কথা এখানে আগেই সেরে নেয়া যাবে।

'' তা কি খবর বেয়াই, আপনার দিনকাল চলছে কেমন? '' কাদের জিজ্ঞেস করে।

'' আমার দিনকাল আর! চলছে একরকম '' বেয়াই জবাব দিলেন।



এটা সেটা নিয়ে অনেক গল্প হল। একটা ব্যাপার কাদের প্রথম থেকে লক্ষ করছে। বেয়াই এর মুখে কাঠিন্য। কাদের বুঝতে চেষ্টা করেও পারছে না। যখন বুঝল একেবারে আকাশ থেকে পড়্ল!



বেয়াই দাবি করছেন যৌতুকের পাওনা বাকী টাকা। বিয়ের সময় বরপক্ষের দাবী ছিল ৫০ হাজার টাকা। কাদের সেটা তখনই মিটিয়ে দিয়েছে। কিন্তু এখন বেয়াই বলছেন তাদের দাবী ছিল এক লাখ। অর্ধেক টাকা বাকী আছে।



এখন কাদের কি করবে? ঘরে যা ধান আছে সব বিক্রী করলেও তো ৫০ হাজার হবে না। টাকা না দিলে মেয়েকে যিম্মি করা হবে। এমনটাই ইঙ্গিতে বুজিয়েছেন বেয়াই।



এরি মধ্যে দু দিন হয়ে গেছে। কাদের চিন্তা করে কোন কিনারা করতে পারে নি।

হঠাত পাশের বাড়ীর আবুল খবর আনল কাদেরে মেয়ে নাকী খুব অসুস্থ! কাদের ছুটল মেয়েকে দেখতে। গিয়ে যা দেখল! তার চোখ ছানাবড়া। হতবিহব্বল কাদের মেয়েকে আনতে চাইল। মেয়ের শশুর দিতে রাজী হল না।



কাদের রাস্তায় হাঠছে আর ভাবছে স্ত্রীকে গিয়ে কি বলবে? মেয়েকে শশুর বাড়ির লোকেরা মারধর করেছে? সত্যি কথাটা কি মা হয়ে সে হজম করতে পারবে? আজ মেয়েটা তার দুর্বলতার কারনেই মার খেয়ে বিছানায়। অতচ এদের সুখের জন্য কতবার নিজের সুখকে বলি দিয়েছে সে!!

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১:৪৪

নুর ইসলাম রফিক বলেছেন: "joutuk" khub guruttopurno ekta bisoy niye lekahar jonno apnake dhonnobad. Caliye jan perona roilo.

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১:২৬

মোঃ সাইদুল ইসলাম বলেছেন: চািলেয় যাব,,,,,,,অাপনােক ধন্যবাদ

২| ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১:৫৪

আমিনুর রহমান বলেছেন:



এই দৃশ্য আমাদের দেশে অহরহ এখনো তা সত্যিই বেদনাদায়ক।

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১:২৭

মোঃ সাইদুল ইসলাম বলেছেন: অাপিন িঠকই বেলেছন....িকন্তু অামােদর িক িকছুই করার নাই

৩| ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১:৫৫

আমিনুর রহমান বলেছেন:



এই দৃশ্য আমাদের দেশে অহরহ এখনো তা সত্যিই বেদনাদায়ক।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.