![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বড় সখ ছিলো মজিদের লাল শাড়িটা পরিয়ে বউকে সামনে বসাবে। লাল রঙের টিপটা বুড়ো আঙ্গুলের মাথায় বসিয়ে বউয়ের কপালে পরিয়ে দিবে। এরপর দুই বছরের রুপসির হাতে খেলনা বন্দুকটা ধরিয়ে দিয়ে বলবে, তোমার লাল মাকে গুলি করো। বন্দুক দিয়ে গুলি বের হবেনা। বের হবে পানি। বউটা বিরক্ত হয়ে বলবে, আহ মেয়েকে এসব কি শেখাও? মজিদ হাসতে হাসতে বলবে, গুলি আর পানির পার্থক্য শেখাই। বউটা আরেকটু বিরক্ত হবে কিন্তু রাগটা ধরে রাখতে পারবে না। তারপর দুজন মিলে হাসবে, প্রাণখুলে হাসবে।
আজ ঢাকা মেডিক্যালের গেট দিয়ে বের হয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে ফ্যাকাশে হাসি দেয়
মজিদ। পরক্ষনেই কলিজার মধ্যে শকুনের নখ খামচে ধরে। ডানহাত দিয়ে বুকটা চেপে ধরতে গিয়ে একধরনের শূন্যতা অনুভ’ত হয়। হাতটাতো কনুয়ের নিচ থেকে কাটা। সাদা ব্যান্ডেজের ওপর লোহার মরচের মত একছোপ রক্তের দাগ। আবার মজিদের হাসি পায়।বামহাতে বুকটা চেপে ধরে ফুটপাতের ওপর বসে পড়ে। এবার চোখদুটো ঝাপসা হয়ে আসে।
সেদিনটা ছিলো মেঘলা। আকাশভরা মেঘ মাথার উপর নিয়ে হাটতে খুব ভালো লাগে মজিদের। দিনটা আরো বেশি ভালো লাগায় ভরে ওঠার কারণ ওদের একমাত্র মেয়ে রুপসি। ওর আর বউয়ের অনেকদিনের সখ ছোট রুপসিকে নিয়ে চিড়িয়াখানা যাবে। কিন্তু কোনভাবেই ছুটি ম্যানেজ করা যাচ্ছিলো না। বেসরকারি অফিস যেদিন মজিদের ছুটি সেদিন চিড়িয়াখানা বন্ধ। আজ বাধ্য হয়ে সাজিয়ে গুছিয়ে মিথ্যা বানিয়ে অফিস থেকে আগে বের হয়েছে মজিদ। বউটা বেশ চটপটে। মজিদের ফোন পেয়ে সেজেগুজে রুপসিকে কোলে নিয়ে উঠে পড়েছে বাসে। মিরপুর দশ নাম্বারে ওরা একসাথ হয়ে চিড়িয়াখানার দিকে রওনা হবে। মেয়েটর মুখটা মনে হওয়াতে হাটার গতি বাড়িয়ে দেয় মজিদ। এত মজার হয়েছে মেয়েটা, প্রতিদিন অফিস শেষে বাড়ি ফিরতে যত রাতই হোক দরজা খুললেই দেখবে রুপসি দাঁড়িয়ে। বাবার বুক ছাড়া মেয়েটা ঘুমুতেই চায়না। যত আল্লাদি বাবার সাথে। বাবার বুকে ঢুকে আধো আধো বলে গুটগুট করে কথা বলবে। কি যে ভালো লাগে মজিদের। রুপসি বলে
Ñ বাবা তিরিয়াখানা দাবা না?
- যাবো মা।
- বাঘুমামা তিরিয়াখানায় আতে?
- আছে মা, বাঘুমামা, সিংহমামা, হাতিচাচা সবাই আছে।
- হি হি হি হাতিতাতা
- হ্যা মা হাতিতাতা, তুমি ঘুমাবা না?
- হু.. আমি দুমাই... তুমিও দুমাও।
আজ মজিদের বেশ হালকা লাগছে। মেয়ের শখ পূরণ হচ্ছে। তাই মিথ্যা বলে অফিস থেকে বের হওয়ায় বেশি দোষের মনে হচ্ছেনা। হাটতে হাটতে মিরপুর দশের চত্বরটার কাছে চলে আসে মজিদ। কাল আবার হরতাল। বিকেল বিকেল বাড়ি ফিরতে হবে। ধুর.. হরতাল হলেই কি, আর না হলেই বা কি? আজ যতক্ষণ খুশি বাইরে ঘুরবে।
দোকানের সামনে দাড়ায় মজিদ। মেয়েটার জন্য এক প্যাকেট জুস কিনে। মেয়েটার লাল রঙ খুব পছন্দ। সবকিছুতে লাল খোঁজে । তাই লাল রঙের ছোট জুসের প্যাকেট কিনে মজিদ। দুপুরের খাবার কি নেয়া যায় ভাবতে ভাবতে মোবাইলে ফোন আসে। ফোন রিসিভ করে দোকান থেকে বের হয়ে ফুট ওভারব্রিজের দিকে এগোয় মজিদ।
- হ্যালো, তোমরা এখন কোথায়?
- আমরা বাসে। ড্রাইভার বলছে যারা দশ নাম্বার নামবে তাদের নেমে পড়তে হবে।
- কোথায় নেমে পড়তে হবে?
- রাস্তার উপর। বাস চক্কর ঘুরে চলে যাবে। দাঁড়াবে না। সমনে নাকি গাড়ি ভাঙ্গচুর হচ্ছে!
মজিদ ফুট ওভারব্রিজের সিড়িতে পা রেখে নামিয়ে ফেলে।
- রাস্তার মধ্যে নামাবে কেনো ? এটা কেমন কথা, একপাশে থামায় নামিয়ে দিতে বলো।
- লাভ নাই, অনেক বলেছি শোনে না। শোন এই আমাদের বাস চক্কর ঘুরছে। তুমি কই? আমরা নামছি।
- মজিদ, হ্যা দেখতে পেয়েছি নামো আমি আসছি।
লাইন কেটে যায়। মজিদ বাসটাকে দেখতে পায়। আজ গাড়ির চাপ অন্যদিনের চেয়ে কম। মজিদ দেখতে পায় বাসটা চক্কর ঘোরার মাঝে বউ রুপসিকে নিয়ে নেমে পড়ে। বাহ লাল রঙে রাঙ্গা বউটিকে আজ বেশ লাগছে। সাথে দুই ঝুটি বাধা সাদা ফ্রকে রুপসিকে যেন মনে হচ্ছে একটা অ্যানজেল। বাসটা ঘো ঘো শব্দে চত্বর ঘুরে পাগলা ষাঁড়ের মতো বের হয়ে যায়। মজিদ ওদের দিকে দ্রুত এগোতে থাকে। রুপসি বাবাকে দেখে মায়ের কোলে ছটফট করে ওঠে।
- বাবা দুস.. আমাল লাল দুস.. দাও বাবা..।
মাথার উপর ওভার ব্রিজ। হঠাৎ মজিদের চোখের কোন ভেসে ওঠে একটা হাত। হাতে ধরা একটি কাপড়ের ব্যাগ। ব্যাগটা ব্রিজের ওপর থেকে কেউ আলগোছে ছেড়ে দেয়। একি... ব্যাগটাতো সরাসরি রুপসির মাথার দিকে এগিয়ে আসছে। শরীরের সব শক্তি দিয়ে লাফ দেয় মজিদ। ডান হাতে ব্যাগটা সরিয়ে বামহাতে বউকে ধাক্কা মারে। এরপর শব্দ, বিকট শব্দ। মুহূর্তে আকাশভরা মেঘগুলো কেমন ধোঁয়ার মত ভেসে বেড়ায়। কোথাও কোন শব্দ নেই নিরবিচ্ছিন্ন নিরবতা। এর মাঝে একটি দুষ্ট ঝিঝিপোকা খুব সুক্ষœ স্বরে সুর বাজিয়ে যায়। রাস্তার উপর ডান গাল ঘেষটে মাথাটা একটু ঘোরাতে পারে মজিদ দেখতে পায় বউটা লাল আঁচল বিছিয়ে আকাশের দিকে চেয়ে শুয়ে আছে। আর অ্যানজেলটা বসে বাবার দিকে বড়বড় চোখে চেয়ে আছে। ও চোখে জল টলমল করে। বড় অভিমান ভরা দুচোখ। চোখ থেকে দৃষ্টি নিচের দিকে নামায় মজিদ। অ্যানজেলটার বাম বুকের ওপর সাদা ফ্রকটার গায়ে চিকন লাল রঙের ধারা গড়িয়ে পড়ে। মনে হয় লাল প্যাকেটের লাল জুস। রঙের ধারাটা সাদা ফ্রকের বুকে আকিবুকি কেটে নিচের দিকে নেমে আসে। কি যে সুন্দরই না লাগে অ্যানজেলটাকে। হঠাৎ মজিদের মনে হয়। জুসের প্যাকেটটাা কই! যতদুর দেখা যায় তার মাঝে লাল প্যাকেটটা দেখতে পায় না সে। বড় করে দম নিতে ইচ্ছে করে মজিদের। দুচোখভরে রুপসিকে আরেকবার দেখতে ইচ্ছে করে।
মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবি কবরস্থানের দারোয়ান শমশের হোসেন নামাজ পড়ে বাদ মাগরিব মসজিদ থেকে বের হয়। আকাশে মেঘ থাকায় সন্ধার অন্ধকার আজ বেশ ঘন। এই বর্ষাকালটায় শিয়ালগুলো বেশি উৎপাত করে। বৃষ্টির কারণে কবর ভেঙ্গে গেলে লাশগুলো নিয়ে টানাটানি করে। শমশের মিয়া হাতের টর্চ আর একটা লাঠি হাতে এই সময় পুরো কবরস্থান একবার চক্কর দেয়। সেদিন তেমন এক অন্ধকার সন্ধায় শমশের হোসেন কবরস্থানের ডান কোনায় নড়াচড়া দেখতে পায়। হাতের লাঠি আর টর্চটা সজোরে বাগিয়ে ধরে শমসের সন্তপর্নে কবরটার দিকে এগিয়ে যায়। আজ সুযোগ পাওয়া গেছে। লাঠির বাড়িটা মাথা বরাবর নামাতে পারলে শালার শিয়াল বেটা কুপোকাত। বাঁশের চাটাই ঘেরা দুটো কবর। শমশের হোসেন অন্ধকারে জায়গাটা আরেকবার ঠাওর করে নেয়। সব ঠিক আছে। শিয়াল চাইলেও তার উপর ঝাঁপাতে পারবে না। কারন বাঁশের বেড়া। টর্চটা হাতে ধরে লাঠিটা মাথার উপর তুলে টর্চটা জ্বালে শমশের হোসেন। পরক্ষণেই লাঠিটা মাথার উপর তোলাই থাকে, টর্চটা সে বন্ধ করে দেয়। আকাশে বিজলি চমকায়। শমশের হোসেন দেখতে পায় একজন হাত হাতকাটা লোক দুটো কবরের মাঝে শোওয়া। কাটা হাতটার বাহু ছোট কবরটার উপরে। ওই বাহু দিয়েই লোকটি কবরটিকে আঁকড়ে ধরে বুকের ভেতর টানছে। যেন কবরটিকে বুকের মধ্যে ঢুকিয়ে নিতে চাচ্ছে... আর বিড়বিড় করে বলছে, মা মাগো, জুস খাবানা মা? তোমার লাল প্যাকেটের লাল জুস। খাবানা মা ও মা ... ... ..
১১ ই মার্চ, ২০১৪ সকাল ১১:২২
সাঈদসুমন বলেছেন: সুখের গল্প পড়বেন? তাও আছে। কিন্তু জীবনটাকে কফি হাউসের আড্ডার মতো কীভাবে দেখে আমি ঠিক জানিনা। সমাজে ঘটে যাওয়া ঘটনার রিফ্লেক্সে অনেক লেখাই চলে আসে। চারিদিকে চেয়ে দেখুন এদেশে সুখ বলতে আপনি কি বোঝেন? টিভি মিডিয়ার নাটকগুলি কি দেখেন? সস্তা বিনোদনের খোঁজে প্রকৃত সুখ পেছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে গেছে। তীব্র দু:খের অনুভূতি না থাকলে সুখ অনুভবের গভিরতা কতদুর যাবে বলুনতো? যাহোক, লেখাটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ। পড়ে বিরক্ত হবার জন্য আরেকবার ধন্যবাদ.হা.হা হা।
২| ১১ ই মার্চ, ২০১৪ সকাল ৭:০৭
উদাস কিশোর বলেছেন: মন খারাপের গল্প
দারুন লিখেছেন
১১ ই মার্চ, ২০১৪ সকাল ১১:২৩
সাঈদসুমন বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।
৩| ১১ ই মার্চ, ২০১৪ সকাল ১০:৪৬
আমিনুর রহমান বলেছেন:
অনেকদিনের লালিত স্বপ্ন মুহুর্তেই শেষ
মন খারাপের গল্পে +++
১১ ই মার্চ, ২০১৪ সকাল ১১:২৫
সাঈদসুমন বলেছেন: আসলেই তাই। আমরা এমন একটা সমাজে বাস করি যেখানে প্রতিদিন এমন না জানি কতো স্বপ্ন নিমিষেই শেষ হয়ে যাচ্ছে। ধন্যবাদ।
৪| ১১ ই মার্চ, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:০১
শাবা বলেছেন: গল্পে ভীষণ গভীরতা রয়েছে। শিশুদের প্রতি ভালবাসা, মমতা জন্ম নিবে। এটা তৈনি হলেই মানুষ শিশুদের জন্য নিরাপত্তার জন্য কাজ করবে। পশুরাই জননিরাপত্তার কথা চিন্তা করে না। এ ধরনের গল্প-লেখালেখিই পারে মানুষের পশুত্বকে চিহ্নিত করতে।
চমৎকার গল্পের জন্য ধন্যবাদ।
১১ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ৯:০৭
সাঈদসুমন বলেছেন: আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ।
৫| ১১ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ১১:৫১
নাভিদ কায়সার রায়ান বলেছেন: Sumon vai, I really appreciate that you let me know about this nice story of yours.
Our lives have become so uncertain that sometimes it feels like a bad dream. The sufferings seems to be endless.
I had written almost a same story, if you have time please check this out -
Click This Link
(I don't always have much time for commenting from pc and I can't write bangla from my ph.)
©somewhere in net ltd.
১|
১১ ই মার্চ, ২০১৪ ভোর ৫:৪৮
নিয়েল হিমু বলেছেন: আপনারা লেখকরা কি সুখ নির্ভর কিছু লিখতে পারেন না ? জীবনটা সবসময় কফিহাউজের আড্ডার মত দেখতে ভালবাসেন কেন ?