নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সায়েমা খাতুনঃ নৃবিজ্ঞানী, এথনোগ্রাফার এবং গল্পকার

সায়েমার ব্লগ

সায়েমা খাতুনঃ নৃবিজ্ঞানী, গবেষক ও লেখক

সায়েমার ব্লগ › বিস্তারিত পোস্টঃ

নজরদারী ও দেশের মাঠে বায়োপলিটিক্সের খেল

১৪ ই মে, ২০২০ সকাল ১০:২৬

২ মে, ২০২০ শুক্রবার রাত বারোটায় কুড়িল বিশ্বরোডের উপর দুই কিলোমিটার রাস্তা ধরে হাজার হাজার কর্মহীন মানুষের ত্রাণের আশায় বসে ছিল, যাদের না আছে সঞ্চয়, না আছে খাবার, কতজনের জন্যে কি ত্রাণ আসবে- কেউ জানে না। প্রতিদিন এ রকম অসংখ্য রিপোর্ট কী এক কৃত্রিম দূর্ভিক্ষের আভাস দিচ্ছে না? কোথায় কতজন নারী-পুরুষ-শিশুর কি পরিমাণ ত্রাণ প্রয়োজন তা নিয়ে যেন সরকারের কাছে পর্যাপ্ত তথ্য নেই। বিশৃংখল সমন্বয়হীনতা ও অব্যবস্থাপনার মধ্যেই অনাহারী লকডাউন জীবন কাটাচ্ছে কমপক্ষে দেশের দুইকোটি দরিদ্র পরিবার। সারাদেশের খবরের ভিত্তিতে স্বেচ্ছাসেবী অনুসন্ধানী প্রতিবেদক, গবেষক, বিশেষজ্ঞেরা তথ্যহীনতাকে সমন্বয় করে দূর্যোগ পরিস্থিতির পরিষ্কার চিত্র তুলে ধরতে এগিয়ে আসেন। ফেব্রুয়ারি থেকেই বিভিন্ন বিষয়ে মহামারির বিভিন্ন প্রবণতা নিরূপণে সরকারী সহায়তা ছাড়াই বিশেষজ্ঞেরা বিনা বেতনে খেটে মহামারি মোকাবেলায় রাতদিন অক্লান্ত গবেষণা করে জরুরী তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করে সংক্রমণের বিস্তার, করোনার লক্ষণ হিসাব, মৃত্যুর সংখ্যা, হাসপাতালভিত্তিক ও এলাকাভিত্তিক তথ্য, পরিসংখ্যান, সারণী, ইনফোগ্রাফ উপস্থাপন করেছেন। কতখানি ত্রাণ বরাদ্দ প্রয়োজন, নগদে না প্রয়োজনীয় দ্রব্যে সেই ত্রাণ দিলে উপকার, মাঠ পর্যায়ে ত্রাণ পৌঁছানোর জেলাওয়ারী তথ্য, কিভাবে খাদ্যগুদাম গড়তে হবে, বোরো ফসল তুলতে মজুর সরবরাহ, কৃষিপণ্যের সাপ্লাই চেইন অব্যাহত রাখার বিষয়ে দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন। কিন্তু সেসবের প্রতি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো আদৌ মনোযোগ দিয়েছে বলে মনে হয় না। এর মধ্যে ত্রাণবন্টনে স্বজন-প্রীতি ও দূর্নীতির মানচিত্র তৈরি করেও প্রশাসনের সুবিধার জন্যে দেয়া হচ্ছিল। সবচাইতে কম ক্ষতিতে লকডাউন আরোপ ও তুলে নেয়ার সঠিক সময় ও কৌশল পেশ করা হয়েছে। কিন্তু তথ্য-উপাত্তের এই হাতিয়ারকে মহামারি মোকাবেলার সহায়ক হিসেবে গ্রহণ না করে উল্টো বৈজ্ঞানিক তথ্যভিত্তিক গবেষণা ও তদন্তমূলক প্রতিবেদনের প্রতি খড়গহস্ত হতে দেখা যাচ্ছে।

কোভিড-১৯ অতিমারি নিয়ন্ত্রণের পশ্চিমা চিন্তুকেরা বায়োমেট্রিক ডেটা ব্যবহার করে নজরদারি নিয়ে গোড়া থেকেই সতর্কবার্তা দিয়েছেন। জন্ম-মৃত্যু-বিয়ে নিবন্ধন, ভোটার তালিকায় আঙ্গুলের ছাপ নেয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশও বায়োপলিটিক্সের হাতিয়ার প্রস্তুত করেছে। সার্বক্ষণিক নজরদারিতে বশ্যতার প্রক্রিয়া আশির দশকেই খোলাসা করেছেন ফরাসী দার্শনিক মিশেল ফুঁকো। বয়স-লিঙ্গ, জন্ম-মৃত্যু, জন্ম-নিয়ন্ত্রণ, টীকা, রোগ সংক্রমণের মত জৈবতথ্যগুলোর নিবন্ধন এবং শাসনের প্রয়োজনমাফিক ব্যবহারে যে বায়োপলিটিক্সের খেল, বাংলাদেশের মাঠে তার চেহারা পাল্টে গেছে। আধুনিক শাসন প্রণালীতে রাষ্ট্রগুলো বায়োমেট্রিক রেকর্ড ব্যবহারের মাধ্যমে নজরদারি করে, বাংলাদেশ করে না করার মাধ্যমে কিংবা আংশিক করার মাধ্যমে। তাই এখানে প্রায় কোন কিছুরই হালনাগাদ ডেটাবেজ পাওয়ার উপায় নাই। রেকর্ড রাখা নিয়ে বিচিত্র কৌশলে শিথিলতা, গড়িমসি, টাল-বাহানা চলতে থাকে। নাজুক নাগরিকদের কৌশলে তালিকা থেকে সরিয়ে বা অনুপযুক্তদের ঢুকিয়ে রাষ্ট্রীয় ও প্রাতিষ্ঠানিক সুযোগ-সুবিধা, মর্যাদা, অনুদান, ত্রাণ, বরাদ্দ, ভাতা, তহবিল, প্রণোদনার অপব্যবহারই স্বাভাবিক হয়ে পড়েছে।

নীতি-প্রণয়নে তথ্য-উপাত্তকে আমল না করা, গবেষণাকে অস্বীকার, ফলাফল মনঃপুত না হলে হয়রানি, ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীদের অভিজ্ঞতাকে আমলে না নেয়া, টেস্ট না করে সংক্রমণ ও মৃত্যুকে অস্বীকার করবার নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। গণস্বাস্থ্য সস্তা টেস্ট কিটের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের পরেও সেটার চূড়ান্ত পরীক্ষা ও অনুমোদন নিয়ে কালক্ষেপণ চলছে। বিএমএমইউর চিকিৎসক ও শিক্ষকদের গণমাধ্যমে কথা বলতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হল। লেখক, সাংবাদিক, গবেষক, ত্রাণকর্মী, স্বেচ্ছাসেবীদের প্রতিপক্ষ হিসেবে গণ্য করে উপকারী ভিন্নমত দমনে শক্তি প্রদর্শনের পথে গেল সরকার।সুবিধা মত ত্রাণ-স্বেচ্ছাসেবাকে সন্দেহের চোখে দেখে ত্রাণ-দূর্নীতিকে না দেখার নীতি গ্রহণ করল।

গত কয়েকদিন ধরে সংবাদমাধ্যম কর্মী, লেখক, ত্রাণ সংগঠক, কার্টুনিস্ট, ফেসবুকের পোস্টদাতার ধরে নিয়ে যাওয়া, নিখোঁজ হয়ে যাওয়া, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ এর মামলার একের পর এক ঘটনাগুলো আমাদের প্রশ্ন করতে বাধ্য করে যে, অতিমারিকালে রাষ্ট্রের কাজ কী জনসাধারণের দেখভাল করা, নাকি তাদের স্বাধীনচিন্তায় ও মতপ্রকাশে অনাকাঙ্খিত নজরদারি করা?

৮ মে, ২০২০

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই মে, ২০২০ দুপুর ১:০৫

রাজীব নুর বলেছেন: দেশের সরকার বুদ্ধিমান না হলে তার খেয়সারত দিতে হয় জনগনকে।

২| ১৪ ই মে, ২০২০ বিকাল ৪:৪০

ইব্‌রাহীম আই কে বলেছেন: বিশ্বে ৮১ কোটি মানুষ না খেয়ে ঘুমাতে যায়। করোনায় অর্থনৈতিক মহামন্দায়, পঙ্গপালের আক্রমণে, খাদ্যপণ্যের যথাযথ গুদামজাত কথারণ ও অপব্যবহারের কারণে নতুন করে আরো ১৩ কোটি মানুষ না খেয়ে ঘুমাতে যাবে। ~দুর্ভিক্ষে পতিত হবে।

৩| ১৫ ই মে, ২০২০ রাত ৮:১৫

মুজিব রহমান বলেছেন: মত প্রকাশ কঠিন হয়ে গিয়েছে। শতবার ভাবতে হয়, লেখায় কে কোথায় কোনভাবে অনুভূতিঘাতে আক্রান্ত হয় কি না? এভাবে আসলে লেখা যায় না, মত প্রকাশ চলে না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.