নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সায়েমা খাতুনঃ নৃবিজ্ঞানী, গবেষক ও লেখক
পিছিয়ে পড়া পুরুষজাতির প্রতি জরুরী কর্তব্য
হে বিজ্ঞ পাঠকগণ, তিষ্ঠ ক্ষণকাল!
যদি অভয় দেন, বেয়াদবি না নেন, আমি বলি কি, নারীদের আপাতত আর কোন উন্নতির প্রয়োজন নাই।
ভগিনীগণ এবার থামেন!
নারীদের দিবস, নারীদের দশক, নারীদের শতক অনেক হইয়াছে। উন্নতির রকেটে চড়িয়া ভগিনীদের সাথে মহাবিশ্বে বহুদূর আগাইয়া আসিয়া এক্ষণে দেখি, আমাদের প্রেমিক, স্বামী, ভ্রাতা, পুত্র, পিতারা অনেক পিছাইয়া পড়িয়াছেন। আপনারা কি এই একবিংশ শতকের দ্বিতীয় দশকে আসিয়া পিছাইয়া পড়া পুরুষজাতির দুর্দশার বিষয় চিন্তা করিয়া দেখিয়াছেন! গত অন্তত পঞ্চাশ বছরে নারী জাতির উন্নতির জন্যে বিশ্বসমাজের নিরন্তর প্রয়াসে আমরা পুরুষজাতির উন্নতির কথা এক প্রকার বিস্মৃত হইয়াছি।
আমরা যখন সুলতানার স্বপ্নে বিভোর হইয়া জ্ঞানে-বিজ্ঞানে, শিল্প-সাহিত্য, খেলাধুলায়, কৃষি-অর্থনীতি-রাজনীতির স্বর্ণশিখরে আরোহণের পথে ছুটিতেছি, যখন আমরা ঘরে ঘরে প্রতিটি কন্যাকে বিশ্বজয়ের জন্যে প্রস্তুত করিতেছি, তখন আমাদেরই পরম আরাধ্য পুরুষজাতি বিষাক্ত পৌরুষের অহমে অভিভূত হইয়া দেশে দেশে অপ্রয়োজনীয় যুদ্ধ-বিগ্রহে লিপ্ত হইতেছে, নিউক্লিয়ার যুদ্ধের হুমকি সৃষ্টি করিয়া পৃথিবীতে চিরঅশান্তির স্থলে পরিণত করিতেছে, স্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষা তহবিল লুট করিয়া মারণাস্ত্র প্রতিযোগিতায় ঢালিতেছে, উপনিবেশের নতুন নতুন কৌশল রচনা করিয়া এক অঞ্চলের মানুষকে আরেক অঞ্চলের পদানত করিতেছে, উন্নয়নের নানা ফন্দীতে ঋণের জালে বন্দী করিতেছে, অসম বাণিজ্য চুক্তির মাধ্যমে মুনাফার পাহাড় গড়িয়া সামাজিক কল্যাণকে অবজ্ঞা করিতেছে। আমাদের অনাগত সন্তানদের জীবনকে বিপন্ন করিতেছে। সমগ্র মানব প্রজাতিকেই এক প্রকারে বিলুপ্তির দিকে ধাবিত করিতেছে। গরীব দেশের নিঃস্ব কৃষকের কন্যাদের সস্তাশ্রমে বাধ্য করিয়া অপ্রয়োজনীয় সস্তা ফ্যাশনের পোশাকের আবর্জনার স্তূপ তৈরি করিতেছে, শত-সহস্র শ্রমিককে কারখানায় বন্দী করিয়া আগুনে পুড়াইয়া কয়লা বানাইতেছে। উর্বর ফসলী ক্ষেতে, খাদ্যশস্যে বিষ ঢালিতেছে, প্রাণবৈচিত্র্য বিনাশ করিতেছে।
সব চাইতে মর্মান্তিক কথা এই যে, যাহাদের সকলেরই প্রকৃতপক্ষে প্রেমিক, যোদ্ধা ও সংগ্রামী হওয়ার কথা ছিল- ধ্যানী, জ্ঞানী, কবি ও বিজ্ঞানী হওয়ার কথা ছিল, দিনে দিনে ইহাদের অনেকে যৌন নিপীড়ক ও ধর্ষকের দলে অন্তর্ভুক্ত হইতেছে। কিভাবে প্রেমের সূচনা করিতে হয়, শ্রেষ্ঠতম সেই রোমাঞ্চকর কলা বিস্মৃত হইয়া পথচারী/কর্মরত নারীকে দুর্বল ও অসহায় নিষ্ক্রিয় যৌনবস্তু গণ্য করিয়া তাহাদের সাথে যৌন উপদ্রব ও হয়রানিকে রোমান্সের সূচনা বলিয়া বিড়ালের ডাক ডাকিয়া, নাটক লিখিয়া, সিনেমা বানাইয়া, সাহিত্য করিয়া ফাটাইয়া ফেলিতেছে। চক্ষুলজ্জা ও আত্মমর্যাদা বিস্মৃত হইয়া, আত্মিক, নিজের নৈতিক ও যৌনশক্তির উপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ হারাইয়া, নারীদের পোশাকের দীর্ঘ-প্রস্থের ইঞ্চি মাপিয়া পার পাইবার চেষ্টা করিতেছে। রাজনৈতিক ক্ষমতার অপপ্রয়োগে সঙ্ঘবদ্ধ ধর্ষণ করিয়া আবার ধর্ষিতের চরিত্রহননেও রাষ্ট্রযন্ত্রকে লইয়া লিপ্ত হইতেছে। প্রাচীনকালে মনুষ্যগণ যেমন হিংস্র শ্বাপদের ভয়ে গুহার বাইরে চলাচল করিতে ভীত-সন্ত্রস্ত থাকিত, তেমনি করিয়া নারীগণ ইহাদের আক্রমণের ভয়ে স্বাধীন দেশে রাত্রিতে, এমনকি দিনেও স্বাধীনভাবে চলাচল ও কাজকর্ম করিতে পারিতেছে না। রাষ্ট্রীয় বাহিনী, ব্যবাসায় প্রতিষ্ঠানের মালিকানা এবং অস্ত্র-শস্ত্র ব্যবহার করিয়া বলপ্রয়োগের মাধ্যমে লোকালয়ে ত্রাসের সৃষ্টি করিতেছে। এইভাবে ইহারা বিষাক্ত পৌরুষের খপ্পরে পড়িয়া ক্ষমতার মোহে অন্ধ হইয়া নিজেদের মনুষ্যত্ব হারাইতে বসিয়াছে। আক্ষেপের কথা হইল, ক্ষমতাবান নারীগোষ্ঠীও পুরুষের এই উপদ্রবের সাথে সমানভাবে সামিল হইয়া পড়িয়াছে, আবার দরিদ্র প্রান্তিক পুরুষও ইহাদের শিকারে পরিণত হইয়া পড়িয়াছে। পুরুষজাতির এই চরম অবনতি কাহারও জন্যেই সুখকর বলিয়া প্রতীয়মান হয় না।
এমতাবস্থায়, নতুন যুগের এই বিশ্বজয়ী কন্যাদের স্বার্থক সঙ্গী কাহারা হইবে আদৌ কি ভাবিয়াছেন? পশ্চাদপদ এই পুরুষজাতি হইতে আমাদের প্রতিভাময়ী কন্যাদের স্বয়ংবর সভার আয়োজন করা যাইবে কি? জগতের নন্দনকাননে পরিভ্রমণের জন্যে তাহাদের যোগ্য ও সার্থক সাথী হইতে পুরুষদের এখনও নিদেনপক্ষে একশ বছর পাড়ি দিতে হইবে বলিয়া সন্দেহ হইতেছে। বন্ধুগণ, পুরুষজাতির এহেন অবনতি দেখিয়া প্রাণ বড়ই ব্যাথিত ও পীড়িত না হইয়া পারিতেছে না। আজ হইতে শত বছর আগে অবরোধবাসিনী নারীজাতির অবনতি লইয়া যে উদ্বেগ প্রকাশ করা হইয়াছিল, তাহার পরে পদ্মা-মেঘনায় জল বহুদূর গড়াইয়া গেছে। শহর-গ্রামের ঘরে ঘরে কন্যাগণের বুদ্ধির ধার সূর্যের প্রখর আলোয় এক্ষণে খাপ-খোলা তরবারির মত ঝলকাইতেছে, ইহারা শত সমর, সহস্র জঙ্গ মোকাবেলার জন্যে দৈহিক, মানসিক, ও নৈতিক শক্তির অধিকারিণী হইয়া উঠিতেছে। হাজার বছর ধরিয়া দমন-পীড়ন-চরিত্র হনন করিয়াও কিছুতেই এই গভীর ধীশক্তির অধিকারীনী, জগতপালনকারিণীদের অজ্ঞাত, অদৃশ্য, নির্বাক ও অধীনা করিয়া রাখা সম্ভব হয় নাই। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, এই কন্যাদের গতি রোধ করবার সাধ্য কাহারও নাই।
পক্ষান্তরে, পুরুষজাতি দীর্ঘদিন আত্মম্ভরিতায় ও পুরুষ অহমের বিষাক্ত বিষে আচ্ছন্ন হইয়া আত্মবিশ্বাসীনী নারীদের পাশে অনেকে হীনমন্যতায় ভোগা শুরু করিয়াছে। ফলে সমাজে কন্যাদের যোগ্য পুরুষের সংখ্যা বিপদজনকভাবে কমিয়া গিয়াছে। ইহাকে সমাজের সার্বিক উন্নতির জন্যে সহায়ক হইবে বলিয়া মনে করা যায় কী? আপাতদৃষ্টে পুরুষজাতির এই দুর্গতিকে অগ্রাহ্য করিবার আর কোন সুযোগ নাই বলিয়াই মনে হইতেছে। ভগিনীগন, ভ্রাতাগণ, - এবার চক্ষু রগড়াইয়া, পানির ছিটা দিয়া দেখুন, পিছিয়ে পড়া পুরুষজাতির নিম্নগামী অবস্থার ফলে অগ্রসর নারীরা তাহাদের যোগ্য সহচর হইতে বঞ্চিত হইতেছে। তাছাড়া, উহারাই বা নিরাপদবোধ করিবার জন্যে বোধ-বুদ্ধিহীন, নির্বোধ নারী আর কোথায় খুঁজিয়া পাইবে? বলুন ভগিনী, উহারা আমাদেরই আদরের ভ্রাতা, প্রেমিক, স্বামী ও পুত্র! শত শত বছর ধরিয়া নারীদের উপর পদে পদে অতি নির্ভরশীলতার কারণে তাহারা আত্মবিশ্বাস হারাইয়া ফেলিয়াছে, জীবনের প্রকৃত আস্বাদ গ্রহণের সুযোগ হইতে বঞ্চিত হইতেছে। সমান মর্যাদার বুদ্ধিমান সঙ্গিনীর সাথে বসবাসের সাহস ও যোগ্যতা তৈরি করিতে ব্যর্থ হইতেছে। বন্ধুত্ব, সহযোগিতা, প্রেম, দয়া ও করুণার মত অতি জরুরী মানবিক গুণাবলী অর্জনে তাহাদের সামর্থ্য বৃদ্ধি করা বিশেষ প্রয়োজন বলিয়া প্রতিভাত হইতেছে। বহু বছর ধরিয়া এই যুদ্ধবাজী, উপনিবেশিক মনোবৃত্তি, গায়ের বা অর্থের জোরে বিবাহ ও সংসার, ব্যক্তি মালিকানার বড়াই, অতি মুনাফার লোভ- এইসব অহং হইতে ইহাদের মুক্ত করিবার জন্যে কাউকে তেমন তৎপর হইতে দেখা যাইতেছে না।
এমতাবস্থায়, পুরুষজাতির উন্নতিকল্পে কতিপয় জরুরী কর্তব্য নিয়া গভীরভাবে চিন্তিত হইবার জন্যে বিজ্ঞজনের অনুমতি সাপেক্ষে আপাতত অভাজনের পক্ষ থেকে বিনীতভাবে বিষয়গুলো নিম্নরূপে ৬ দফায় পেশ করা যাইতে পারেঃ
১। পুরুষদের শিশুকাল হইতেই জীবনে বেঁচে থাকবার প্রাথমিক দক্ষতা থেকে বঞ্চিত না করিয়া উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দেয়ার ব্যবস্থা করা হউক।নিজের বিছানা তৈরি, জামা-জুতা-চাবি-আন্ডারওয়ার-জ্যাকেট-লুঙ্গী-গামছা যথাস্থানে রাখা, ঘর-দুয়ার পরিষ্কার করা, রান্না-বান্না, সন্তানের যত্নের মত অতিশয় জরুরী, মানবিক এবং কল্যাণকর শিক্ষা হইতে যুগ যুগ ধরিয়া বঞ্চিত করিয়া ইহাদের চিরতরে নারীদের অধীনস্ত করিয়া রাখা এক গভীর ষড়যন্ত্র ছাড়া কিছুই নয়। এই বিষয়ে জরুরী কর্মসূচী ভাবিয়া দেখা যাইতে পারে।
২। এই শতাব্দীর জেন জি, জেন আলফা প্রজন্মের উচ্চতর গাণিতিক, প্রকৌশল, মহাকাশবিদ্যায় পারদর্শী, তত্ত্বজ্ঞান-দর্শন-শিল্প-সাহিত্যে দুর্ধর্ষ, বিশ্বউষ্ণায়ন নিরাময়ী বাণিজ্য পরিকল্পক অতি বুদ্ধিমান ও প্রতিভাদীপ্ত নারীদের সঙ্গ ও সান্নিধ্যে নিরাপদ বোধ করবার জন্যে উহাদের উত্তমরূপে আত্মবিশ্বাস শিক্ষা দেয়া হউক।
৪। বিষাক্ত পৌরুষের অহম ও ক্রোধ ব্যবস্থাপনায় উপযুক্ত নৈতিক, মানসিক ও আধ্যাত্মিক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের সুযোগ দেয়া হউক।
৫। যৌন শিক্ষা ও আত্মনিয়ন্ত্রণের অভাবে এবং ক্ষমতার দাপটের সম্মিলনে ইহাদের এখানে ওখানে ক্রিমিনালে পরিণত হওয়া থেকে অবিলম্বে রক্ষা করবার জন্যে স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করা হউক।
৬। প্রকৃতির ধ্বংসের মাধ্যমে বিশৃঙ্খল উন্নয়নের ধারনা থেকে উহাদের মুক্ত করিবার নিমিত্তে প্রকৃতির শক্তির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ উন্নয়নের সাথে তাহাদের পরিচয় করানো হউক। মুনাফাভিত্তিক ব্যবসা-বাণিজ্য হইতে সেবা-যত্ন-জনকল্যাণভিত্তিক অর্থনীতি জন্যে তাহাদের ক্রমান্বয়ে প্রস্তুত করা হউক।
[বেগম রোকেয়ার "স্ত্রী-জাতির অবনতি" প্রবন্ধের অনুকরণ থাকিলেও থাকিতে পারে।]
মার্চ ৭, ২০২২
উইস্কন্সিন
২| ০৮ ই মার্চ, ২০২২ সকাল ৮:৫৮
সোবুজ বলেছেন: নারী আর এগুলো কোথায়।আমরা জখন পড়াশুনা করতাম তখন বস্তার ভিতর একজনকেও দেখা যেত না।এখন বেশির ভাগ নারীকেই বস্তা পরা অবস্থায় দেখা যায়।এটা কি নারীর উন্নতি নাকি অবনতি।পুরুষদেরও একই অবস্থা।তাদের মানসিকতা দিন দিন খারাপের দিকেই।বিশেষ করে বাংলাদেশে।
৩| ০৮ ই মার্চ, ২০২২ দুপুর ১:২০
মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: সভ্যতার উন্নয়ন ও আধুনিক শিক্ষার প্রসারে এবং শারিরীক পরিশ্রমের কাজের পরিবর্তে বুদ্ধিবৃত্তিক কাজের সুযোগ বাড়ার ফলে সমাজে নারী-পুরুষের ভূমিকায় কিছুটা পরিবর্তন আসছে , এটা সত্যি ।
তবে অবনতি ? এটা হয়ত নয় তবে একটা পালাবদল হচছে -এটা ঠিক। আর এই দিনবদল তথা পালাবদলের সাথে উভয়ের ভূমিকায় কিছুটা পরিবর্তন হচছে-হবে। কাজেই উভয়কে তার সাথে সমন্বয় করার জন্য কিছুটা ত্যাগ-সমঝোতা করতে হবে নিজেদের প্রয়োজনেই। একটা উপর-নিচের ব্যাপার নয় ।আমার মতে এটা অভিযোজনের ব্যাপার।
আর পুরুষদের কল্যাণে তাদের জন্য করণীয় বিষয়ে আপনার সুপারিশের ব্যাপারে আমি একমত। সকলকেই শৈশব থেকেই নিজ নিজ করার অভ্যাসের সাথে সাথে সংযম সাধনার অভ্যাসও গড়ে তোলা উচিত। এ ব্যাপারে কারো দ্বিমত প্রকাশের অবকাশ নেই।
৪| ০৮ ই মার্চ, ২০২২ দুপুর ২:১৮
রাজীব নুর বলেছেন: এক কথায় বলি- পুরুষ হলো কুত্তার জাত।
৫| ০৯ ই মার্চ, ২০২২ সকাল ১০:০৫
সায়েমার ব্লগ বলেছেন: আপনাদের তীক্ষ্ণ পর্যবেক্ষণ ও মন্তব্যের জন্যে ধন্যবাদ!
©somewhere in net ltd.
১| ০৮ ই মার্চ, ২০২২ সকাল ৭:৪৮
ঋণাত্মক শূণ্য বলেছেন: দুনিয়া হইতে আদর মোহাব্বত সব উঠিয়া যাইতেছে। পুরুষের নাকি কাপড়-চোপড়-চাবি-আন্ডারওয়ার-জ্যাকেট-লুঙ্গী-গামছা যথাস্থানে রাখার ট্রেনিং নিতে হবে। :/ একটু আগাইয়া দিলে কি হয়?
এইটা কোন কথা?