নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সায়েমা খাতুনঃ নৃবিজ্ঞানী, এথনোগ্রাফার এবং গল্পকার

সায়েমার ব্লগ

সায়েমা খাতুনঃ নৃবিজ্ঞানী, গবেষক ও লেখক

সায়েমার ব্লগ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছড়া কাটায় জিব কাটাঃ বাংলা সাহিত্যে ফ্যালাসের লীলা

১৬ ই মার্চ, ২০২২ রাত ৮:২৬

বাংলার সাহিত্যের অমর কবি লীলাবতীর (খনা) জিব কাটার ঘটনাটি মোটামুটি ৮০০-১২০০ সালের বলে অনুমান করা হয়। চন্দ্রাবতীর রামায়ণ ষোড়শ শতকের লেখা যেটি ১৯৩২ সালে প্রথম প্রকাশ করেন মহান সাহিত্য সাধক দীনেশ চন্দ্র সেন। একবার এই দীনেশ চন্দ্র সেন নাকি বঙ্কিম চন্দ্রের সাথে দেখা করতে গিয়েছিলেন। অমূল্য "ময়মনসিংহ গীতিকার" সংগ্রাহক দীনেশ। বঙ্কিমচন্দ্র এঁকে সাহিত্য আলোচনার যোগ্য মনে করলেন না। তিনি বাঙ্গাল দীনেশের সাথে ধানের ফলন নিয়ে কথাবার্তা শুরু করেন। কলকেত্তে বাবুরা একসময় পূর্ব বঙ্গীয় সমাজকে নিম্নস্তরের বুদ্ধিবৃত্তির পর্যায়ে বিচার করতেন। কে কাকে সাহিত্য আলোচনার যোগ্য মনে করেন, সাহিত্য রচনার যোগ্য মনে করেন, সেটা একটা দর্পণের মত আমদের দেখায় সমাজে অধিপতি কে? কে বিচার করে উঁচু নিচু ? যোগ্য-অযোগ্য?

একসময় মুসলমান সঙ্গীত,শিল্প, সাহিত্য যশপ্রার্থীরা নিজেদের হিন্দু ছদ্মনামে আত্মপ্রকাশ করতেন। স্বনামে মুসলমান আব্বাসউদ্দিনের কণ্ঠে জসিম উদ্দিনের গীতি কবিতায় জনপ্রিয় হওয়া গান পশ্চিমবঙ্গের মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিতে একটা বৈপ্লবিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছিলো। আরও বহু আগে একসময় শুদ্রদেরও জন্মসুত্রে বেদ, বিদ্যা, শিল্পকলায় অযোগ্য বলে প্রচার করা হয়েছিল। মেয়েরা গায়েত্রী মন্ত্র পাঠেরও অধিকারী ছিল না। আধুনিক যুগের প্রিন্ট মিডিয়ায় শুরুতে মেয়েরা লেখালেখি করতে ছদ্মনামের আশ্রয় নিতেন। কেন? ভয়ভীতি দেখানোর কোন শেষ নেই! লেখা প্রকাশ হলে সতীত্ব যাবে, স্কুলে গেলে বিধবা হবে। এমন কি বাংলা বর্ণমালা শিখতেও শত গোপনীয়তার আশ্রয় নিতে হয়েছিল। শতকোটি মিথ্যায়, ভুতপ্রেতের গল্পে বিবশ করা হয়েছে মেয়েদের আত্মা। এখনও কেবল ফেসবুকে সাদামাটা পোস্টের জন্য অনেক পরিবারে অনেক অশান্তি হতে দেখেছি। মেয়েরা সর্বদা সেন্সরের মুখে। ঊনবিংশ শতকে নারীশিক্ষা আন্দোলনের গোড়ার দিকে মেয়েদের কবিতা-উপন্যাস পড়তে উৎসাহ দেয়া হলেও গণিত শিক্ষার অযোগ্য মনে করা হতো। মেয়েদের মস্তিকের নিকৃষ্টতা প্রমাণে বহু সিউডো সায়েন্টিফিক গবেষণা হয়েছে। খুব বেশী আগের কথা নয়, হিলারি ক্লিনটনের নাসায় মহাকাশ গবেষণায় যোগদানের আবেদন নাকচ করে দেয়া হয়েছিল। আফ্রিকার কালো মানুষদের মগজ নিয়েও এ ধরণের বহু পণ্ডিতি আলোচনা আছে। এমন ধারণা প্রচলিত আছে যে, ওরা স্পোর্টসে ভালো, মিউজিকে ভালো, জ্ঞানে-বিজ্ঞানে ওদের জায়গা নেই।

জিব কেটে নিলে তো সাহিত্য, গণিত, জ্যোতির্বিদ্যা কোনটাই অভ্যাস করা সম্ভব নয়। এর পেছনে আছে সিস্টেমিক ভায়োলেন্স। সত্যি কথা বলতে কি, কবিতা লেখা তো দূর কি বাত, কেবল কথা বলা, আত্মপ্রকাশের স্বাধীনতা কোথায় আছে মেয়েদের? না পরিবারে, না পাবলিকের দরবারে? সত্যি বলতে কি, টুঁ শব্দ না করে জীবন পার করতে শেখানো হয়েছে মেয়েদের। হা হা করে হাসার পারমিশন আছে কি? প্রতি মুহূর্তে নিজের অস্তিত্বের প্রকাশকে দমন করে করে চলতে শিখেছে যে মেয়ে, তার জন্যে প্রতিভার যাদুর দরজা খোলা এক সাংঘাতিক বিষয়। শাদাদের স্কুলে কালোদের ভর্তি হওয়ার মত। বাংলাদেশের জন্মের পরে ৪৬ বছরে মেয়েদের মধ্যে বিশ্বমাপের সাহিত্যিক প্রতিভা যে আত্মপ্রকাশ করেনি, (পুরুষদের মধ্যেই বা কোথায় সেই যুগ বদলে দেয়া লেখক? হুমায়ূন আহমেদ? ), সেটা সিস্টেমিক ভায়োলেন্স এর অস্তিত্বকেই প্রমাণ করে। এতে কাউকে ফ্যালাসিয় সুখ পেতে দেখে করুনা করা ছাড়া আর কিছুই করা উচিত না। ভাষা খুব বড় মঞ্চ যেখানে ভায়োলেন্স অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিদিন। বাংলা সাহিত্যের দরজায় শিক্ষিত ভদ্রলোক শ্রেণির পুরুষ সাহিত্যিকের দারোয়ানগিরি ফ্যালাসের আস্ফালন। জিব কেটে ফেলা তো রাজা মাহিরের আত্মবিশ্বাসকে প্রমাণ করে না, প্রচণ্ড ইনসিকিউরিটি প্রকাশ করে। নিজের প্রতিভায় চরম আস্থাহীন, ভীত, ঈর্ষাপরায়ণ, হীনমন্য , হিংসুটে , নীচ মনের পরিচয় দেয়। কাদম্বরী দেবী ছিলেন বাংলার বিশ্বপ্রতিভার প্রথম স্বীকৃতি দানকারী, বিবি খাদিজা ছিলেন ইসলামের প্রথম স্বীকৃতি দানকারী। অপরের প্রতিভায় স্বীকৃতি দেয়া, সম্ভাবনাকে পরিচর্যা করা কিম্বা নিজের প্রতিভার ফুল ফোটানো কোনটাতেই চুপচাপ নয় এরা।

বাংলা সাহিত্যে পুরুষ মাহরামের দিন শেষ। কেবল এক "তালাশ" (শাহিন আখতার, ২০০৬) ই তো বাংলা সাহিত্যে ফ্যালাসের বাঁধ ভেঙ্গে দিয়েছে; রাষ্ট্র, যুদ্ধ, রাজনীতি, প্রেম, দেশপ্রেমের প্রচলিত ইমাজিনেশনের খোলনলচে বদলে দিয়েছে। ঠিক এমন মুহূর্তেই আলোর গতিতে যুগের বদল ঘটে যায়। কোন এক সকালে নতুন দিনের শুরু হয়। বাংলাদেশের বাংলা সাহিত্যে নতুন যুগের উদয় ঘটে গেছে। অদিতি ফাল্গুনী, উম্মে মুসলিমা, শাহনাজ মুন্নি, রাশিদা সুলতানা, নভেরা হোসেন, আফসানা বেগম, বদরুন নাহারদের হাতে বাংলা সাহিত্যের সোনার ফসল ফলতে থাকবে। এর জন্য কারও পারমিশনের কিংবা অনুমোদনের কোন প্রয়োজন নেই। সবই এই অনন্ত ব্রহ্মাণ্ডে অপ্রতিরোধ্য মানুষের সৃষ্টিশীল ফুল ফুটানোর খেলা!

মার্চ ১৬ ২০১৭
উইস্কন্সিন, যুক্তরাষ্ট্র

মন্তব্য ১ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই মার্চ, ২০২২ রাত ১২:৫৪

রাজীব নুর বলেছেন: আপনার জন্য ধাঁধা-

রফিক সাহেব কিছু খরগোশ নিয়ে বাগানে বেড়াতে গেছেন। তার এক বন্ধু তখন পাশ দিয়ে যাচ্ছিল, সে জিজ্ঞাসা করল, আপনার কয়টি খরগোশ? রফিক সাহেব একটি ধাঁধার মাধ্যমে উত্তর দিলেন, তিনি বলেন, “দুইটি খরগোশের ডানে দুটি খরগোশ, দুইটি খরগোশের বামে দুটি খরগোশ, দুইটি খরগোশের সামনে দুটি খরগোশ, দুইটি খরগোশের পিছনে দুটি খরগোশ।"

তখন তার বন্ধু সাথে সাথে উত্তরটি সঠিক ভাবে বলে দিলেন।
বলুন তো রফিক সাহেব এর কয়টি খরগোশ? আর তার বন্ধুই বা এত দ্রুত উত্তর কিভাবে দিলেন?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.