নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সায়েমা খাতুনঃ নৃবিজ্ঞানী, গবেষক ও লেখক
বাংলাকে কি ইংরেজিতে ভালবাসা সম্ভব?
এবারে আমেরিকা থেকে দেশে ফিরে ৮ জানুয়ারিতে ঢাকা লিট ফেস্ট ২০২৩ এর শেষ দিনটা ধরতে পারলাম। ২০২০ এ কোভিড মহামারী ছড়িয়ে পড়বার মাঝামাঝি সময়ে দেশ ছাড়ছিলাম।আড়াই বছর পর জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে সূর্যের আলোবিহীন কুয়াশাছন্ন শৈত্য প্রবাহের মধ্যে দেশে ফিরে তিন দিন কাটিয়ে আমার ১৪ বছরের কন্যা আলিনা এবং ১৮ বছরের ভাগ্নে বিস্ময়ের বিপুল আগ্রহে এবং চাপে সুদূর উত্তরা থেকে দক্ষিণে বাংলা একাডেমীতে সারাদিনের জন্যে লিট ফেস্টে থেকে গেলাম। আমার পরিবারের এই প্রজন্মের বাচ্চাগুলো পিচ্চি কাল থেকেই সাহিত্য চর্চায় আগ্রহী কেমনে হইল, আমি নিজেও জানিনা। ঘরে অবস্থা এমনই যে, লিট ফেস্টে না নিয়া গেলে আমার খবরই আছে। ফ্রোজেন শোলডারের ব্যাথা উপেক্ষা কইরা হাসতে হাসতে আমি লিট ফেস্ট গেলাম এবং সন্ধ্যা পর্যন্ত কোক স্টুডিও বাংলার কনসার্ট শুইনা আলিনা, বিস্ময় এবং তাদের এক দঙ্গল বন্ধুরা ব্যাপক আমোদিত হইল।নাসেক নাসেক আর বাগিচায় বুলবুলিতে তারা মনমুগ্ধ। কাবাব-পরোটা, পিঠা, স্যান্ডুইচ, আইসক্রিম - যা ইচ্ছা খাইল।সকালে মন লাগিয়ে শুনল আব্দুল রাজ্জাক গুরনিয়ার সরাসরি আলোচনা, হালআমলের বিশ্বসাহিত্যের লেখকদের বই কিনল।আমি নিজে ঢাকার নব্বই দশকের বাচ্চা হিসাবে বিশেষ সাহিত্য অনুরাগী হইলেও, বিশবিশের এই জমানার ইন্সটা বাচ্চাদের যে সাহিত্যের অনুরাগী করে গড়ে তোলা সম্ভব, সেই প্রত্যয় আমার ছিল না। কিন্তু আমার সন্দেহ ও অবিশ্বাসকে মিথ্যা প্রমাণ কইরা আমাদের পরিবারের দুই বাচ্চা ইতিমধ্যেই সাহিত্য চর্চায় সিরিয়াসভাবে উৎসাহী হয়ে উঠছে।কেমনে কি হইল, বলতে পারব না, তাদের সাহিত্যে উৎসাহিত করবার যথেষ্ট সময় আমরা দিতে পারছি বইলা মনে করতে পারি না।কিন্তু তাদের এই আগ্রহ আমাকে ভবিষ্যতের জন্যে আশা-ভরসা ও বর্তমানে গভীর আনন্দ দেয়।আমি ইনাদের মত আগামীর এই উদীয়মান কচিকাঁচা সাহিত্যিকদের খাদ্য-পুষ্টি জোগান দেয়ার জন্যে সব কিছু করতে প্রস্তুত। এর পর তারা বাংলায় লিখবে না ইংরেজি, সেটা তাদের প্রস্তুতি, পছন্দ এবং অভিরুচির ব্যাপার। পড়ুক, লিখুক, জানুক, জীবনকে তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করুক, ইহাদের জন্যে এই আমার কাম্য!
এখনও বিশ্বাস হয় না যে, আলিনা লেখালেখির জন্যে গত বছর আমেরিকাতে জাতীয় পর্যায়ে স্বর্ণ পদক লাভ করছে।বিস্ময় বেশ কিছু দেশি-বিদেশি পত্রিকা এবং পোর্টালে ইংরেজিতে বিভিন্ন ঘরানার লেখা প্রকাশ করতেছে।দুই জনেই এখন মানুস্ক্রিপ্ট তৈরির প্রস্তুতি নিতেছে।দুইজনই ঢাকা লিট ফেস্ট একদিনও মিস করতে চায় না।কোভিডের আগের বছর ২০১৯ এ আমরা প্রতিদিনই আলোচনা শুনতে গিয়েছিলাম।এই কিশোর লেখক-সাহিত্যিকদের চাপে লিট ফেস্টে এই বছর জীবনে প্রথম কোন নোবেল বিজয়ী সাহিত্যিককে দেখে ও শুনে চক্ষু-কর্ণ ধন্য হইল।আবদুল রাজ্জাকের ষাটের দশকের লন্ডন জীবনের বয়ান শুনে আমার নিজের শূন্য দশকের নিউইয়র্কে প্রথম অভিবাসী জীবনের বিচ্ছিন্নতার ভাষা খুঁইজা পাইলাম।আমিও রাজ্জাকের মত রাস্তার দোকানের বড় বড় জানালায় নিজের প্রতিচ্ছবি দেখে চমকে উঠছি, এই আমি এখানে কেন, ও কিভাবে? এই শাদা শাদা মানুষ, কালো কালো মানুষের মধ্যে এই বাদামী আমিটা কে? আমারও এমন অনেক গল্প আছে, যা কোনদিন লিখবার ভাষা খুঁজে পাইনি। আজ একটা পথের দিশা পাইলাম।
আলিনা আর বিস্ময় তাদের ইংরেজি মিডিয়ামে পড়া বন্ধুদের সাথে পছন্দের বিভিন্ন মঞ্চে ঘুরে নানা বিষয়ে আলোচনাগুলো শুনতে লাগলো।অনুবাদ নিয়ে আলোচনার প্যানেলে আমাদের বন্ধু, তাদের খালামনি এই সময়ের প্রখ্যাত লেখক আফসানা বেগমকে দেখে এবং তাঁর বক্তব্য শুনে তারা গর্বিত ও উৎসাহিত হইল।আমার জন্যে আমেরিকায় জন্ম ও বেড়ে ওঠা ইংরেজিভাষী আলিনার বাংলাদেশের সাহিত্যের ইংরেজি ধারার সাথে নিজের পরিচয়কে চিহ্নিত করতে দেখা এক গভীর আনন্দের অভিজ্ঞতা।আলিনা তার মায়ের ভাষা বাংলাকে ইংরেজিতে ভালবাসতে শিখেছে।রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, মানিক, শরৎচন্দ্রে না মজেই যে আমার মেয়ে বড় হয়ে যাচ্ছে, সেই শূন্যতা, সেই বিচ্ছিন্নতা, সেই কষ্ট কিছুটা ভুলিয়ে দিয়েছে।
আমি লনে দাঁড়িয়ে বন্যা মীর্জার সঞ্চালনায় শুনলাম পৌরুষ ও পুরুষতন্ত্র নিয়ে একটা প্যানেল।আলোচনার সাথে আমার মেলা মতভেদ এবং চিন্তার পার্থক্য আছে। বর্ধমান হাউজের চত্বরে শুনলাম অনুবাদ নিয়ে আলোচনা, আরও সব প্যানেল শুনবার ইচ্ছা থাকলেও পথিমধ্যে মেলা প্রিয় মানুষের দেখা হয়ে যাওয়াতে সেই পথ ভুলে গেলাম।আলোকচিত্রী শহিদুল আলম, সাইফুল হক অমি, আমার প্রাণের অধ্যাপকবৃন্দ সাঈদ ফেরদৌস, মীর্জা তাসলিমা, মানস চৌধুরীদের সপরিবারে ও সবান্ধব দেখা-সাক্ষাৎ, খাওয়া দাওয়ায় এক আলাপমুখর সময় কাটালাম।
২০১৫ সাল থেকে উইসকনসিনে আমরা বাংলা কমিউনিটি বাঙালি, বাংলা ভাষাভাষী পরিবারে জন্ম নেয়া বাচ্চাদের দ্বিতীয় ভাষা হিসাবে বাংলা ভাষা শেখানোর জন্যে অক্ষর বাংলা স্কুল গড়ে তুলেছি। আমি কাজ করছি স্কুলটির অধ্যক্ষ হিসেবে।সারা আমেরিকার এমন ১৪ টি বাংলা স্কুলের এক অ্যালায়েন্স ফ্রেন্ডস অব বাংলা স্কুল দুই বছর হয় বাংলাভাষীদের মিলন মেলার আয়োজন করছে। বাংলায় পড়া, লেখা ও চর্চার চেষ্টা করছে। বাঙালি পরিবারগুলোর পক্ষে বাংলা ভাষাকে আমেরিকার মাটিতে চর্চা করা, ধরে রাখা, পরের প্রজন্মের চর্চার মধ্যে রাখা এক কঠিন ও জটিল সাংস্কৃতিক সংগ্রাম। বাংলাভাষা এবং বাংলাদেশকে এনারা যদি ইংরেজি ভাষার বাহনেও জানাবোঝার চেষ্টা করে, কিছু শেখে ও চর্চা করে, তাতে মঙ্গল ছাড়া অন্য কিছু দেখি না।গত পনের বছরের আমেরিকান অভিবাসী জীবনে বাংলা ডিয়াস্পরা সমাজকে গভীরভাবে দেখেছি এবং জেনেছি।বাংলাদেশ থেকে বসে ফেসবুকের জানালা দিয়ে যে চকচকে জীবনের পোস্টগুলো দেখা যায়, বাংলা অভিবাসীদের সংখ্যাগরিষ্ঠ জীবনের সংগ্রাম তার চেয়ে অনেক জটিল ও বর্ণিল।অন্তত দুইটা সম্প্রদায়, বাংলাদেশে বড় হওয়া ইংলিশ মিডিয়ামের প্রজন্ম আর বিদেশে বড় হওয়া বাংলা ভোলা প্রজন্মের জন্যে দেশে ইংরেজির বাহনে একটা সাহিত্য উৎসব খাদ্য-বস্ত্র-বাসস্থানের চেয়ে কম জরুরী না।এই ফেস্টের মত কর্মসূচিগুলোতে তারা মানসিকভাবে দেশে প্রত্যাবর্তনের একটা বুদ্ধিবৃত্তিক স্পেস ও সুযোগ পায়।বাংলাদেশের সাহিত্য ও সংস্কৃতির সাথে নিজের হাইব্রিড আইডেন্টিটি ও সাংস্কৃতিকভাবে উন্মূল মানস জগতের সাথে আত্মীয়তা করতে পারে।বাংলা কেবল ভৌগলিক কেন হবে? বাংলার বাইরে ছড়িয়ে পড়া বাংলা পরিবারগুলো ইংরেজির বাহনে বৈশ্বিক বাংলার সাথে যুক্ত হতে পারবে না কেন? ইংরেজি ভাষায় তাঁদের জীবন অভিজ্ঞতাভিত্তিক সাহিত্য চর্চা করা যাবে না কেন? বাংলা সাহিত্যের সভাই বা কেন বসে না, কেউ কি জানে? ঢাকার মত একটা কসমোপলিটানে বিশ্বসাহিত্যের একটি সভা বসতে পারবে না কেন? ইংরেজি কি সংগ্রামে ভাষা হতে পারে না? ইংরেজি ভাষায় পৃথিবীতে যে লেখা হচ্ছে, তা না জেনে-বুঝে কেমনে গ্লোবাল ক্যাপিটালের সাথে প্রতিরোধ হবে?
নিম্নবর্গ কি ক্যাপিটাল পড়ে?
১৫ বছর ধরে ভোটবিহীন নিপীড়নমূলক স্বৈরাচারী শাসন ব্যবস্থায় বাস করে, যে শাসন-পীড়নের যে তীব্রতা, সারভেলেন্সের যে পরিব্যাপ্ততা, রাষ্ট্রের সকল প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দেয়া যে দুর্নীতির গ্রাস জনমানুষের জীবনকে বিপর্যস্ত করে ফেলেছে, তার মধ্যে যে কোন রূপান্তরের সম্ভাবনাকেই দুরূহ দেখায়। নাগরিক হিসেবে নিজেদের স্বাধীন সত্তা বজায় রাখবার এক অসম্ভব মুহূর্ত এটা। এই সময় মানুষজন যে কঠিন পরিস্থিতিতে প্রতিবাদ-প্রতিরোধ জারী রেখেছে, তা অকল্পনীয় ও অবিশ্বাস্য।দেশে থেকে সরাসরি এই আন্দোলন সংগ্রামে না থাকবার জন্যে অনেক সময় এক ধরনের বিযুক্ত-বিচ্ছিন্নতা ঘিরে ধরে।কিন্তু এই রাষ্ট্র সংস্কারের নানা কলা কৌশল নিয়ে পরিবর্তনকামী অ্যাকটিভিষ্টদের মধ্যে আলাপচারিতায় একটা জায়গায় যখন বই পড়ার বিরোধিতা, সাহিত্য চর্চার বিরোধিতা বেশ জনপ্রিয় হইতে দেখি, তখন আমি সত্যি কোন আশা দেখি না। সাহিত্যকে, কল্পনাকে, আনন্দকে বাহুল্য মনে করা, খালি ভাত-কাপড়ের সংগ্রামে মনুষ্যত্বকে নামিয়ে আনা, অতি নীচ চিন্তা। সন্দেহ হয়, এই জাতি তবে শেষ পর্যন্ত এক ডাণ্ডা হইতে আরেক ডাণ্ডারর শাসনই রাইখা দিতে চায় কিনা? সাহিত্যের বিরোধিতায় আনন্দ বিরোধী ভয়ের সংস্কৃতিরই আবাদ চলবে কিনা? একজন লেখক-বুদ্ধিজীবী লিখলেন, ফেস্টে ঢুকে সেখানে শাড়ি পরার কায়দা, পোশাক-আশাক দেখে উনি অস্বস্তি বোধ করেছেন।কি তাজ্জব! একটা দেশে সবাইকে একটি ভাষায় সাহিত্য করতে হবে, এক রকমের পোশাক পরতে হবে! তবে বিচিত্র পোশাক, ভাষা আচরণ, হাইব্রিড সংস্কৃতি গ্রহণের জন্যে পশ্চিমের শহরগুলোর কাছে প্রত্যাশা করেন ক্যান? তিনাদের বর্ণবাদী আখ্যায়িত করেন কিভাবে? আপনার ঢাকা শহরে কেবল আপনার ঢাকাইয়া ভাষায় কথা বলতে হবে, আপনার মত করে শাড়ি পরতে হবে, এটাই কি পরমত সহিষ্ণুতা?
সব কিছু আম জনতার ভাষায় লিখতে হবে, সর্বদা গণসঙ্গীত আর গণসাহিত্য করতে হবে, এই প্যাড়াও আমি নিতে রাজী না।নৃবিজ্ঞানের লেখা নাকি এমনভাবে লিখতে হবে, যাতে আমার আম্মা থেকে শুরু কইরা বাড়ির বুয়ার সাথে গ্রামশির হেগিমনি নিয়া কমিউনিকেট করা যায়।কোরআন শরীফ কি আমজনতার ভাষায় লেখা হইছিল? এই দেশের সর্বাধিক পঠিত গ্রন্থটি কী বিদেশী ভাষায় লিখিত না? ক্যাপিটাল কি নিম্নবর্গ পড়ে? ভাগ্যিস মার্ক্স সেই দায় নেন নাই।জার্মান বা ইংরেজি ভাষায় আমজনতা কি মার্ক্স-এঙ্গেলসের লেখাগুলা পড়তেছে? ভাগ্য যে, ফিলসফি, ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি, ম্যাথ, বায়োলিজি, ইকনমিক্স, জ্যোতির্বিজ্ঞান, চিকিৎসা বিজ্ঞানকে জনতার ভাষায় লিখার আব্দার এখনও চোখে পড়ে নাই। নিউটন, আইনস্টাইন, হকিং সেই চাপ থেকে বাইচা গেছেন। সাহিত্য আর নৃবিজ্ঞান কিভাবে জানি ফাইসা গেছে মাইনকার চিপায়। দেশের আমজনতার ভাষায় প্রকাশ করতে না পারলে এই শাস্ত্রগুলাকে প্রায় বাতিল কইরা দেয় আরকি।
ঢাকা লিট ফেস্ট এলিট, কর্পোরেট, পুঁজিবাদী সংস্কৃতির আগ্রাসন, ভারতীয় পুঁজি এবং পশ্চিমা পুঁজির জয়েন ভেঞ্চার, সব ঠিক আছে। জেমকন-ট্রিবিউন গ্রুপের স্বার্থ, বাংলা একাডেমীর জনবিচ্ছিন্নতা সবই সত্য। কিন্তু এরই মধ্যে নিজেদের স্বর ও অবস্থান তৈরির রাস্তাই তো খুঁজতে হবে। এখন ঢাকার রাস্তায় যে হাঁটেন, তার প্রতিটা ইঞ্চিই তো কর্পোরেটের দখলে! নিজেদের এই স্পেস থেকে কেবল প্রত্যাহার করেই গ্লোবাল ক্যাপিটালিজম প্রতিরোধের স্ত্রাটেজি ঠিক করতে পারবেন মনে হয়?
জনমানুষের হওয়ার জন্যে, গণমানুষের হওয়ার জন্যে, রাষ্ট্রসংস্কার আন্দোলনের জন্যে প্রথমে যেটা বাদ দিয়ার বানী দেয়া হইতেছে, সেটা হইল বই পড়া বাদ দেয়া, সাহিত্যের আলাপকে এলিট বইলা বাতিল কইরা দেয়া। বিষয়টা আমার মোটা মাথায় ঠিক ঢুকে না।দেশে বই পড়ার অভ্যাস বেশী হওয়ার কারণে, জনগণ বইয়ে মুখ গুইজা থাকার কারণেই, সাহিত্য চর্চা বেশী বেশী হওয়ার কারণেই, ইংরেজি সাহিত্যে প্রবল পাণ্ডিত্যের কারণেই ঠিক রাষ্ট্র সংস্কার করা সম্ভব হইতেছে না।কয়দিন আগে রাষ্ট্র সংস্কার করতে ইচ্ছুক এক লেখক, চিন্তুকের দেয়ালে "বইয়ে মুখ না গুঁজে অন্ধকারের মোকাবেলা করবার" বানী খোদিত পাইলাম। কি দিয়া ইনারা অন্ধকারের মুখামুখি হবেন, মোকাবেলা করবেন, আই হ্যাভ নো ক্লু!
ইনারা যখন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করবেন, সেখানে যদি বই বাদ পড়ে, বিশ্বসাহিত্য চর্চাকে নিরুৎসাহিত করা হয়, হাল জমানার বাংলা ও ইংরেজি সাহিত্যকে বাহুল্য জ্ঞান করা হয়, তো সেই মূর্খের রাষ্ট্রে আমি নাই।
এ আমার সাফ কথা।
১৩ জানুয়ারি, ২০২৩
ঢাকা
#DhakaLitFest
২| ১৫ ই জানুয়ারি, ২০২৩ সকাল ১১:৪৬
সেলিম আনোয়ার বলেছেন: সত্যি কবি গুরুর যেমন দরকার ছিল শরৎচন্দ্রেরও দরকার ছিল। সাহিত্য পাঠ পাঠককে দেশ দেশের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সম্পর্কে সম্যক ধারণা দিয়ে থাকে। বাংলা ভাষায় ঋদ্ধ সমৃদ্ধ হতে হলে বাংলা সাহিত্য পাঠের বিকল্প নেই। একটা দেশকে সমাজকে বদলে দিতে হলে বই তথা সাহিত্য চর্চা বিজ্ঞান চর্চা বাঞ্ছনীয়। আবার বাংলা একাডেমীর জনবিচ্ছিন্নতা কাম্য নয়।
৩| ১৫ ই জানুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১২:৪০
শেরজা তপন বলেছেন: চমৎকার লিখেছেন। এই সময়ে এসে এমন সাহিত্যানুরাগী সন্তান পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার- তাও অন্য হাওয়া কালচারে বড় হওয়া।
তবে আপনার সন্তানের ব্যাপারে জেনেটিক নিশ্চিত।
ঠিক বলেছেন তাঁরা বড্ড বাঁচা বেঁচে গেছেন গণমানুষের ভাষায় লিখার দাবি না ওঠায়।
৪| ১৫ ই জানুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১:৪৯
রাজীব নুর বলেছেন: ছোট একটা পোষ্টে অনেক গুলো বিষয় নিয়ে এসেছেন।
একজন বলল, ঢাকা লিট ফেস্ট এলিট শ্রেনীর জন্য। কিন্তু আমি যে এলিট হতে পারিনি। তাই যাইনি।
৫| ১৫ ই জানুয়ারি, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:৩৬
আলাপচারী প্রহর বলেছেন: আপনি যে নব্য এলিট এইটা বুঝাইয়া দিলেন আর কি।
“ডু সাম থিং নিউ ড্যুড”!
প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর কে? চেনেন? আইজ থাইকা দুই’শ বছর আগের কোটিপতি। ব্রিটিশ-বাংলায় বানিয়া বা দালাল, মুৎসুদ্দি (ইংরিজিতে খুব সোন্দর কইরা কয় ‘কান্ট্রি/লোকাল রিপ্রেজেন্টেটিভ বা এজেন্ট), বঙ্গালদের মইধ্যে শিল্প-বাণিজ্য উদ্যোগের পয়লা প্রজন্ম পয়দা করেছিলেন। দ্বারকানাথের ব্যবসা বাণিজ্যের মধ্যে আইন-ব্যবসা, জমিদারি তো ছিলই, আফিম, কয়লা, নীল, রেশম থাইক্যা লবণ, চিনি, জাহাজের ব্যবসায়ও আছিলেন একচেটিয়া কারবারি। সুদের কারবার করতে করতে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ব্যাংক। ‘কার অ্যান্ড ট্যাগোর’ কোম্পানির ছিলেন অর্ধেক অংশীদার।
ঠাকুর জি আছিলেন তার বাপের পালক পোলা। বাপের থাইকাই পাইছিলেন প্রচুর সম্পত্তি। তয় হ্যেই সম্পত্তি থাইকা যেইটা আয় হইত হ্যাইটা নাকি যথেষ্ট আছিলো না। ঠাকুরজি ঠিক খুশি ওইতে পারতাছিলেন না। কারণ মানুষ হিসেবে তিনি আছিলেন উচ্চাভিলাসী, স্বপ্নবাজ আর ব্যতিক্রমী স্বভাবের। এরলাইগাই যৌবন পার ওইতে না ওইতেই ব্যাপক ট্যাকা-পয়সা, ধন-সম্পদ কইরা হ্যাই সময়ের আর সব ধনীগো ডিফিট দিয়া দেন। তার এই ট্যাকা-পয়সা, ধন-সম্পদ কামাই সব সময় যে ঠিক মানুষের উপকার কইরা বা অপকার না কইরা অইছে তা না। ইতিহাস তো বড়লোকরা নিজেরাই লিখেন, তাই সত্যটা সব সময় লেখ থাকে না। তারপরও নানান জায়গায় ঠাকুরজির সফল ব্যবসা-বাণিজ্যের ‘গোমর’ ছিটে-ফোটা পাওন যায়।
আপনেরা ভাবতাছেন আৎকা ধইরা আমি এই প্রিন্স ঠাকুরের কিচ্ছা কই কিল্যাইগা? খাড়ান কইতাছি। তার আগে কইয়া লই, এই কাবিল ঠাকুরের সম্পর্কে আমরা এতো কম জানি ক্যান? কারণ হইল উনার আপন নাতি। দাদা-ঠাকুর ট্যাকা-পয়সা ধন-সম্পত্তি কামাই কইরা যা করতে পারেন নাই, নাতি-ঠাকুর তার চেয়ে হাজারগুণ বেশী করছেন। এই ভূ-ভারতের শত কোটি মানুষের এমন কেউ নাই যে নাতি-ঠাকুরের একটা কবিতা জানে না। নাম জানুক আর নাই জানুক কবিতা ঠিকই জানে, মুখস্ত কইতে পারে। ইন্ডিয়া আর বাংলাদেশ দুইটা স্বাধীন দেশের জাতীয় সঙ্গীত তিনি লিখছেন। এই তো বুদ্ধিমান আপনেরা, ধইরা লাইছেন কার কথা কইতাছি, উনার নাম শ্রী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। সর্বকালের মহান বঙ্গালদের মধ্যে আমাদের শ্রী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নাকি দুই নম্বার।
এইবার কই এই প্যাঁচাল পাড়তাছি কিয়ের লাইগা। কারণ হইল, গত সপ্তায় ‘ঢাকা লিট ফেস্ট’ নামে যে সার্কাস হইল, হ্যেইটা দেইখাই দুই’শ বছরের পুরান এই কিচ্ছাটা মনের মধ্যে ফালাইতাছি। আপনারাও দেখেন তো মিল পান কি না? ব্যবসায়ী-শিল্পপতি, রাজা-জমিদারগো নাতিপুতি-পোলাপাইন, ট্যাকা-পয়সার অভাব নাই। মগর দুঃখ একটাই, ট্যাকাওয়ালা ছাড়া আর কোন পরিচয় নাই। এতো ট্যাকা দিয়া করবো কী? ইতিহাসে যদি নাম না থাকে? এতো দিন টিভি-পত্রিকা কইরা সংবাদিক-সম্পাদক অইতো। সোশালমিডিয়া আইসা হ্যেই সব ইনভেস্টমেন্টেরও ‘বেইল-ক্ষয়’ কইরা দিছে।
কিছু একটা না করলে, খালি ট্যাকা দিয়া ইজ্জত পাওন যাইতাছে না। আবার গরিব-গোরবাগো মতন কইরা শিল্প-সাহিত্য করনেরও টাইম নাই। এক কাপ চা খাইয়া ঘণ্টার পর ঘণ্টা কবিতা আলোচনা করা! “হাউ কাম ম্যান”? “টাইমের কি দাম নাই”? মেইনস্ট্রিম শিল্প-সাহিত্যে কম্পিটিশনও বেশী, ওইটা অলরেডি মিডল-ক্লাস দখল কইরা রাখছে। “ডু সাম থিং নিউ ড্যুড”!
‘ঢাকা লিট ফেস্ট’ হইল হ্যেই ‘নিউ থিং’। বিলাত-আম্রিকায় পড়াশোনা করায় কিছু কানেশন/রিলেশন তো আছেই। ‘ক্যাপিটালিজড ইট”!!! ট্যাকা-পয়সা লাগে? ব্যাপার না! দুই-চাইর জন ‘ইন্টারন্যাশনাল’ নিয়া আসো। তাদের পাশে ঠাকুরদের নাতিরা বইলেই শিল্পপতি থাইকা ডাইরেক্ট শিল্প-সাহিত্য বোদ্ধা অইয়া যাইবেন। দেড়-দুই’শ বছর আগে এক ঠাকুরের নাতি বাংলা সাহিত্যরে প্রথম ইন্টারন্যাশনাল বানাইছিলেন। এইবার আমাদের নব্য ঠাকুরদের পুতেরা বাংলা সাহিত্যকে অন্য-লেভেলে নিয়ে যাবেন। চোখে আঙ্গুল দিয়া দেখাইয়া দিবেন বিলাত-আম্রিকার তুলনায় বাংলা সাহিত্য-শিল্প ক্যামন ‘ফকিন্নি’ টাইপ। তাই দেশে যারা বড় সাহিত্যিক তাদের ‘লিট ফেস্টে’ ডাকা যাবে না।
আপনি হয় তো বলবেন, অসুবিধা কী? “ট্যাকার জোরে যদি সাহিত্যের ভালো কিছু হয়, তো লিট ফেস্টই ভালো”। আমিও বলি অসুবিধা কিছু নাই। খালিই ধরেন ঠাকুরদের নাতিরা যখন 'ইংরাজি ইস্টাইলে বাংলা সাহিত্য' করে বিশ্ব-দরবারে নাম কামান, তখন কাজী নজরুল জেল খাটেন, জীবনানন্দ আত্মহত্যা করেন, সুকান্ত মারা যান যক্ষ্মায়।
৬| ১৫ ই জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ৯:০৮
ঢাবিয়ান বলেছেন: এই প্রথম শুনলাম লিট ফেস্ট এর কথা।
৭| ১৫ ই জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ১০:৩০
এমজেডএফ বলেছেন: 'ঢাকা লিট ফেস্ট'-এর ব্যাপারে এ দেশের গণমানুষের কোন উৎসাহ নাই। বাংলাদেশে এখন শিক্ষার হারের সাথে সাথে উচ্চশিক্ষার হারও বেড়েছে। তাই সাধারণ উচ্চশিক্ষিতদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করে একটি বিশেষ এলিট শ্রেণী ঢাকা লিট ফেস্ট নিয়ে মাতামাতি করে। অর্থাৎ যারা আন্তর্জাতিক মান সম্পন্ন এলিট, তারা ঢাকা লিট ফেস্টে যায়! -সেটাই বুঝাতে চেয়েছেন।
যাই হোক, 'ঢাকা লিট ফেস্ট' আপনাদের ভালো লাগে তাতো কারো কোন ক্ষতি নেই। কিন্তু পোস্টে অপ্রাসঙ্গিকভাবে একটু রাজনীতির লবণ চিটালেন কেন?
"১৫ বছর ধরে "১৫ বছর ধরে ভোটবিহীন নিপীড়নমূলক স্বৈরাচারী শাসন ব্যবস্থায় বাস করে, যে শাসন-পীড়নের যে তীব্রতা, সারভেলেন্সের যে পরিব্যাপ্ততা, রাষ্ট্রের সকল প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দেয়া যে দুর্নীতির গ্রাস জনমানুষের জীবনকে বিপর্যস্ত করে ফেলেছে, তার মধ্যে যে কোন রূপান্তরের সম্ভাবনাকেই দুরূহ দেখায়। নাগরিক হিসেবে নিজেদের স্বাধীন সত্তা বজায় রাখবার এক অসম্ভব মুহূর্ত এটা। এই সময় মানুষজন যে কঠিন পরিস্থিতিতে প্রতিবাদ-প্রতিরোধ জারী রেখেছে, তা অকল্পনীয় ও অবিশ্বাস্য। দেশে থেকে সরাসরি এই আন্দোলন সংগ্রামে না থাকবার জন্যে অনেক সময় এক ধরনের বিযুক্ত-বিচ্ছিন্নতা ঘিরে ধরে।" "
'ভোটবিহীন' নির্বাচন কোথায় দেখলেন? নির্বাচনে সরকার বিরোধী কোন দল অংশগ্রহণ না করলে নির্বাচন একতরফা হবেই। একতরফা নির্বাচনে ভোট দিতে যাওয়ার দরকার নেই তাই কেউ যায় না। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সবাই অংশগ্রহণ করে তাই সেখানে ভোটারও যায়, প্রতিদ্বন্ধিতা হয় এবং সব দলের প্রার্থীও নির্বাচিত হয়।
বর্তমান শাসনকে 'নিপীড়নমূলক স্বৈরাচারী শাসন ব্যবস্থা' বললে জিয়া ও এরশাদের শাসনামলকে কী বলবেন! হরতালের নামে ভাংচুর ও পুলিশের সাথে মারামারি করার কারণে কদাচিৎ পুলিশ গুলি চালালে যদি স্বৈরাচার হয় তবে আমেরিকায় পুলিশের গুলিতে প্রতি বছর হাজার হাজার লোক মারা যাচ্ছে তাহলে তারা কী?
পুলিশের গুলিতে ২০১৯ সালে মারা গেছে এক হাজারের বেশি - সূত্র: বিবিসি
সরাসরি আন্দোলন সংগ্রামে আপনাদের মতো তথাকথিত এলিটদের থাকার দরকার নেই। যখন আন্দোলন-সংগ্রামের প্রয়োজন হবে তখন এ দেশের সাধারণ মানুষেরাই রাজপথে নেমে আসবে। আপনারা পারলে তথাকথিত মানবতাবাদী আমেরিকার পুলিশের গুলিতে নিহত বাংলাদেশি শিক্ষার্থী সৈয়দ ফয়সাল আরিফের জন্য সেখানে আন্দোলন করেন।
আপনাদের মতো তথাকথিত এলিটরা আমেরিকাকে মনে করেন 'মোটা ও তাজা', তাই ওদের সমালোচনা করেন না। আর নিজের জন্মভূমি বাংলাদেশকে মনে করেন 'চিকন ও মরা'! যত দোষ শুধু বাংলাদেশের দেখেন। ঐদিন শেষ, বাংলাদেশ এখন আগের সেই 'চিকন ও মরা' অবস্থায় নাই।
৮| ২৬ শে জানুয়ারি, ২০২৩ সকাল ১১:০০
জুল ভার্ন বলেছেন: আমাদের পরিধেয় কাপড়ের মতো শব্দ বাক্যও কিভাবে সংক্ষিপ্ত হয়ে যাচ্ছে- তার প্রমাণঃ ফেস্টিভাল থেকে ফেস্ট!
©somewhere in net ltd.
১| ১৫ ই জানুয়ারি, ২০২৩ সকাল ১১:৩০
গেঁয়ো ভূত বলেছেন: অনেক সুন্দর ও গভীর লিখা। আমিও আপনার লেখার সাথে প্রতিধ্বনি করতে চাই, বই হোক সমাজ পরিবর্তনের হাতিয়ার।