নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সায়েমা খাতুনঃ নৃবিজ্ঞানী, এথনোগ্রাফার এবং গল্পকার

সায়েমার ব্লগ

সায়েমা খাতুনঃ নৃবিজ্ঞানী, গবেষক ও লেখক

সায়েমার ব্লগ › বিস্তারিত পোস্টঃ

মঙ্গল শোভাযাত্রায় কি মাছ, মাংস ও চাউলের স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করা যাবে?

১৫ ই এপ্রিল, ২০২৩ সকাল ৯:২৯

মঙ্গল শোভাযাত্রা থেকে যদি মুদ্রাস্ফীতি, অর্থ পাচার, ক্রসফায়ার, গুমখুন, ধর্ষণ, গণতন্ত্রকে স্থবির করে রাখা, বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক নিয়ন্ত্রণের অধীনতার চরম অমঙ্গল নিয়ে আর্ট, আর্টিফ্যাক্ট বহন করে প্রতিরোধী মিছিল হত, তাহলে শহুরে নাগরিকেরা হয়তো দেশের সর্বসাধারণের মঙ্গলচিন্তায় সামিল হতে পারতেন। কৃষক-শ্রমিক-আদিবাসী-নারী-উদ্বাস্তু-সর্বহারার চৈতন্যের সাংস্কৃতিক প্রকাশ যদি ধারণ করতো, সেই শিল্প-সাহিত্য- সংস্কৃতির চিহ্ন যদি ধারণ করতো, তবেই তা হত সার্বজনীন উৎসব। এখন এই শোভা, এই যাত্রা, এই মঙ্গলের মধ্যে সর্বসাধারণ কোথায়?

সুশীল সাংস্কৃতিক গণবিচ্ছিন্নতা কিছুটা ঘুচাতে পারতো, যদি অন্তত আইসিইউ তে পাঠিয়ে দেয়া নিষ্প্রাণ গণতন্ত্রের প্রাণ প্রতিষ্ঠা নিয়ে দুইটা মুখোশ বানাইত। তার ধারে কাছেও না হাঁটাতে এই শোভাযাত্রা কেবল স্ট্যাটাস কো কেই জারী রাখবার সাংস্কৃতিক হাতিয়ার ছাড়া কিছুই হতে পারল না। সাম্রদায়িক পিশাচ ছাড়াও অনেক বড় বড় অমঙ্গলের কুশীলবদের গায়েব করে ফেলা হয়েছে। সুশীল জাতীয়তাবাদী সেকুলারদের পরাকাষ্ঠা এই এক্সপ্রেশন বর্তমান রেজিমের সাথে গাঁটছড়া বাঁধা। ফলে স্বৈরশাসন, জুলুম, নিপীড়নের বিরুদ্ধে গণমানুষের প্রতিরোধী চৈতন্যের প্রতিনিধিত্ব করবার শক্তি, সাহস, যোগ্যতা কোনটাই নেই চারুকলার শোভাযাত্রার।

কিন্তু এই মঙ্গল শোভাযাত্রাকে গোটা জাতির সাংস্কৃতিক এক্সপ্রেশন হিসেবে দেখাবারই বা দরকার কি? দেশের একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা বিভাগ যেভাবে ইন্টারপ্রেট করেছে, এটা তারই বহিঃপ্রকাশ মাত্র। আবার তাই বলে একে বন্ধ করবার পায়তারাটাও তো শুভ নয়। চারুকলার শোভাযাত্রা সমালোচনা করতে পারেন, তাই বলে পহেলা বৈশাখ, নববর্ষকেই অস্বীকার করে বসবেন, সেটাও তো ফ্যাসিবাদী চিন্তা। আপনার নতুন বছরকে যেভাবে প্রকাশ করবার খায়েস, সেভাবে করুন! চারুকলার শোভাযাত্রা স্পষ্টতই একটা ইনভেন্টেড ট্র্যাডিশন। ট্র্যাডিশন তো কখনও না কখনও কেউ না কেউ ইনভেন্টই করেছে। সেটাকে সেই ঐতিহাসিক প্রেক্ষিতে দেখেন, পাঠ করেন, অংশগ্রহণ করেন নিজ নিজ বুঝ মত। আর না হলে অংশগ্রহণ কইরেন না। ল্যাঠা চুকে যায়।


ইনভেন্টেড হইলেই কি ইনভ্যালিড হয়ে যাবে নাকি? কল্পনা থেকেই তো সব কিছুর সৃষ্টি। যেমন, জাতি হচ্ছে একটা কল্পিত সম্প্রদায়। আধুনিক জাতি একটা যৌথ কল্পনা। একটা আবিষ্কার। "চিরকাল", "শাশ্বতকাল ধরে", "হাজার বছর ধরে" কোন জাতি একই রকমভাবে চলে এসেছে, এটা নিতান্তই জাতীয়তাবাদী সাহিত্যিকদের কল্পনা। "বাঙালি জাতির ইতিহাস" (ধরা যাক নীহার রঞ্জন রায় ) জাতীয় গ্রন্থগুলোও এক ধরনের প্রিমরডিয়াল ফ্রেমওয়ার্কে জাতির ইতিহাস লিখেছে, আর এই ধরনের ভাবনা বাঙালি জাতীয়তাবাদী বলয়ে কমনসেন্সে পরিণত হয়েছে। সুশীল সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে এমনভাবে আত্মীকৃত হয়েছে যে এর বাইরে কিছু ভাবা অথবা ভিন্ন বয়ানকে গ্রহণযোগ্য করে তোলা প্রায় অসম্ভব মনে হয়। আধুনিক জাতীয়তাবাদের বিকাশ মোটেই হাজার বছরের ঘটনা নয়। আধুনিক জাতিরাষ্ট্রগুলো পুরানো সাম্রাজ্যগুলোর পতনের মধ্য দিয়ে আবির্ভূত হয়েছে মাত্র কয়েকশ বছর। এই জাতিরাষ্ট্রগুলো যে আচার-অনুষ্ঠান, ঐতিহ্যকে হাজার বছর বলে পরিবেশন করে আসছে, আর আধুনিক রাষ্ট্রের নাগরিকেরা যে উৎসব- অনুষ্ঠানগুলো জাতির উদযাপন হিসেবে পালন করে আসছে, সেসব আসলে কৃষক সমাজের উৎসবগুলোর এক ধরনের বাছাইকৃত নাগরিক আত্তীকরণ। রমনার বটমূলের পহেলা বৈশাখ, চারুকলার মঙ্গলশোভা অথবা আনন্দ শোভাযাত্রা সেই নাগরিক আত্তীকরণ ছাড়া আর কিছু নয়। এই প্রসঙ্গে চমৎকার ব্যাখ্যা দিয়েছেন নরওয়েজিয়ান সাংস্কৃতিক নৃবিজ্ঞানী থমাস হাইল্যান্ড এরিক্সেন। জাতি পরিচয় গড়ে তোলার সময় কিভাবে তখনকার জাতির আধুনিক শিক্ষিত মধ্যবিত্ত সমাজ নরওয়ের গ্রামীণ জীবনের বিভিন্ন অনুষঙ্গ, আচার-অনুষ্ঠানকে নতুন করে নাগরিকদের জন্যে পরিবেশন করে এবং জাতীয় সংস্কৃতি বলে আকার আকৃতি দেয়, সেটা দেখান। ব্রিটিশ ইতিহাসবিদ এরিক হবসবম এবং টেরেস রেঞ্জার ইনভেনশন অব ট্র্যাডিশনের কথা বলেছেন যে, যাকে আমরা যুগ যুগ থেকে চলে আসা বলে ভেবে আসছি, তা আসলে নতুন করে আবিষ্কার করা জিনিস। শাহবাগ-ধানমণ্ডি এলাকায় যে নাগরিক বর্ষবরণ তা স্পষ্টতই একটা বিশেষ সময়, ষাটের দশকে পাকিস্তান বিরোধী আন্দোলনের সাংস্কৃতিক আত্মপ্রকাশ হিসেবে ব্যাপকভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বাঙালি জাতিসত্তার পরিচয় বাহক হিসেবে প্রচারিত হয়েছে। যা আজকের অনির্বাচিত স্বদেশীয় স্বৈরশাসনকালীন অমঙ্গলকর রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক চর্চাগুলোকে অ্যাড্রেস করতে ব্যর্থ হয়ে প্রায় অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে।

তাই বলে আমাদের জীবনে নববর্ষ আসবে না, জীর্ণ জীবনের গ্লানিকে উড়িয়ে দিয়ে আমরা মঙ্গল ও কল্যাণকে আবাহন করে নেব না, তা কখনও মেনে নেব না। আমরা নিশ্চয়ই ব্যর্থ প্রাণের আবর্জনা জ্বালিয়ে দিয়ে নতুন জীবনের আগুন জ্বেলে নেব।

মন্তব্য ১৩ টি রেটিং +৮/-০

মন্তব্য (১৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৩ সকাল ৯:৩২

রানার ব্লগ বলেছেন: ইহা কোন ধর্মীয় বা রজনৈতিক শোভা যাত্রা না। এখানে সকল দাবি প্রকাশ করা যাবে যা মানুষের জন্য জরুরী।

২| ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৩ সকাল ১১:১৪

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: কিসের মধ্যে কি পান্তা ভাতে ঘি। মঙ্গল শোভাযাত্রার মত একটা আনন্দ উৎসবে মধ্যে চাউল, ডাইল, মাছ, মাংস আর গণতন্ত্র চাওয়াটা তো ফৌজদারি অপরাধের পর্যায়ে পড়ে। চাউল, ডাইল, মাছ, মাংসের দাম অন্য কোন দেশে বাড়ে নাই? তাই বলে কি তারা আনন্দ আর রাজনীতিকে একসাথে মিশিয়ে খিচুড়ি বানিয়েছে? স্বৈরশাসন, জুলুম, নিপীড়ন, গণতন্ত্রহীনতার বিরুদ্ধে দরকার হলে শাহবাগে গিয়ে অনশন করেন। রমনায় পান্তাভাত খাওয়ার সাথে না মেশালে চলে না? এত বেরসিক হলে চলবে? এ রকম একটা সার্বজনীন উৎসবের মধ্যে অর্থপাচার, ক্রস ফায়ার, গুম, ধর্ষণকে মিশানোর উদ্দেশ্যটা কি বলা যাবে? দেশের জনগণ সুখে আছে দেখেই তো মঙ্গল শোভাযাত্রায় শরিক হয়। এই সুখ ভালো লাগছে না, তাই না। ভালো না লাগলে মঙ্গল শোভাযাত্রায় না গেলেই হয়।

মঙ্গল শোভাযাত্রার হাতি, পেচা, বাঘ, ভাল্লুক, ইঁদুর, বিড়াল এগুলিকেই আপামর জনগণের রুপ দেয়া হয়েছে। এভাবেই সর্ব সাধারণ জনগণ এই শোভাযাত্রায় শরিক হয়েছে বলে ধরে নেয়া হয়। চারুকলার শোভাযাত্রা পছন্দ না হলে কৃষক-শ্রমিক-আদিবাসী-নারী-উদ্বাস্তু-সর্বহারারারা আলাদা শোভাযাত্রা করলেই পারে। চারুকলার পিছে লাগার কি দরকার।

যুগে যুগে সময়ের সাথে সাথে নতুন নতুন প্রথার উদ্ভব হয়েছে। এটা খুবই স্বাভাবিক একটা ব্যাপার। গ্রামের দরিদ্র কৃষকের টাকা পয়সা কম তাই তারা পান্তা ভাত লবণ, পিয়াজ আর মরিচ পোড়া দিয়ে খায়। তাই বলে শহরের সুশীলদেরও তাই খেতে হবে। এটা নিয়ে প্রশ্ন তোলাটাই তো একটা ধৃষ্টতা। ব্যর্থ প্রাণের আবর্জনাকে পুড়িয়ে ফেলে আগুন জ্বালাতে হলে পিয়াজ, মরিচ দিয়ে পান্তা ভাত খেলে চলবে না। বুদ্ধিজীবী সুশীলদের মত পান্তা-ইলিশ খাওয়ার মাধ্যমেই ব্যর্থ প্রাণের আবর্জনাকে পুড়িয়ে ফেলা সম্ভব। যাদের পান্তা-ইলিশ খাওয়ার টাকা নাই তাদের জীবন আগের বছরের মতই ব্যর্থতা আর আবর্জনায় পূর্ণ থাকবে। তাই ধার করে হলেও পান্তা-ইলিশ খাওয়া খুব জরুরী। আর মঙ্গল শোভাযাত্রার মধ্যে চাউল, ডাইল, গণতন্ত্র, ক্রস ফায়ার আর স্বৈরাচারকে মেশানো যাবে না। একটা দিন অন্তত দেশের মানুষকে শান্তিতে নির্মল আনন্দ উপভোগ করার সুযোগ দেন। রাজনীতি তো সব সময়ই করা হয়, একটা দিন না হয় ছেড়েই দিলেন।

৩| ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৩ সকাল ১১:২১

মিরোরডডল বলেছেন:



কিন্তু এই মঙ্গল শোভাযাত্রাকে গোটা জাতির সাংস্কৃতিক এক্সপ্রেশন হিসেবে দেখাবারই বা দরকার কি? দেশের একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা বিভাগ যেভাবে ইন্টারপ্রেট করেছে, এটা তারই বহিঃপ্রকাশ মাত্র। আবার তাই বলে একে বন্ধ করবার পায়তারাটাও তো শুভ নয়। চারুকলার শোভাযাত্রা সমালোচনা করতে পারেন, তাই বলে পহেলা বৈশাখ, নববর্ষকেই অস্বীকার করে বসবেন, সেটাও তো ফ্যাসিবাদী চিন্তা। আপনার নতুন বছরকে যেভাবে প্রকাশ করবার খায়েস, সেভাবে করুন! চারুকলার শোভাযাত্রা স্পষ্টতই একটা ইনভেন্টেড ট্র্যাডিশন। ট্র্যাডিশন তো কখনও না কখনও কেউ না কেউ ইনভেন্টই করেছে। সেটাকে সেই ঐতিহাসিক প্রেক্ষিতে দেখেন, পাঠ করেন, অংশগ্রহণ করেন নিজ নিজ বুঝ মত। আর না হলে অংশগ্রহণ কইরেন না। ল্যাঠা চুকে যায়।
তাই বলে আমাদের জীবনে নববর্ষ আসবে না, জীর্ণ জীবনের গ্লানিকে উড়িয়ে দিয়ে আমরা মঙ্গল ও কল্যাণকে আবাহন করে নেব না, তা কখনও মেনে নেব না। আমরা নিশ্চয়ই ব্যর্থ প্রাণের আবর্জনা জ্বালিয়ে দিয়ে নতুন জীবনের আগুন জ্বেলে নেব।


কথাগুলো সম্পূর্ণরূপে সমর্থন করি। এই শোভাযাত্রাতো কারও কোন ক্ষতি করছে না। কিছু মানুষ নতুন বছরকে আনন্দের সাথে সেলিব্রেট করছে তাদের মতো করে। ভালো লাগলে অংশগ্রহন করবে, না হলে করবে না। এপ্রিশিয়েট যদি নাও করে, এতো সমালোচনা করারও কিছু নেই।


৪| ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৩ সকাল ১১:৪২

জ্যাক স্মিথ বলেছেন: এখানে সবকিছুরই মঙ্গল কামনা করা হয়।
শুভ নববর্ষ।

৫| ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৩ সকাল ১১:৪৯

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: অনেক সুন্দর লিখেছেন। চিরটাকাল, হাজার বছরের ইতিহাস সংক্রান্ত ডেফিনিশন যুক্তিযুক্ত মনে হয়েছে। আমরা যে-কোনো বিষয়কে 'হাজার বছরের' অভিধায় অভিষিক্ত করার রোগে ভুগছি, তা থেকে বেরিয়ে আসা জরুরি।

আনন্দ শোভাযাত্রা বা মঙ্গল শোভাযাত্রা কোনোকালেই বাঙালি সংস্কৃতি ছিল না। উইকিপিডিয়া থেকে জানা যায় যে, ১৯৮০’র দশকে স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের ঐক্য এবং একইসঙ্গে শান্তির বিজয় ও অপশক্তির অবসান কামনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইন্সটিটিউটের উদ্যোগে ১৯৮৯ খ্রিষ্টাব্দে সর্বপ্রথম আনন্দ শোভাযাত্রার প্রবর্তন হয়। ঐ বছরই ঢাকাবাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয় এই আনন্দ শোভাযাত্রা। সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইন্সটিটিউটের শিক্ষক-শিক্ষার্থীগণ পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে এই আনন্দ শোভাযাত্রা বের করার উদ্যোগ প্রতি বছর অব্যাহত রাখে।

শোভাযাত্রার অনতম আকর্ষণ - বিশালকায় চারুকর্ম পুতুল, হাতি, কুমীর, লক্ষ্মীপেঁচা, ঘোড়াসহ বিচিত্র মুখোশ এবং সাজসজ্জ্বা, বাদ্যযন্ত্র ও নৃত্য। পহেলা বৈশাখ উদ্‌যাপন উপলক্ষে আনন্দ শোভাযাত্রা শুরু থেকেই জনপ্রিয়তা পেয়ে আসছে। পরের বছরও চারুকলার সামনে থেকে আনন্দ শোভাযাত্রা বের হয়। তবে সংবাদপত্রের খবর অনুযায়ী জানা যায়, ঐ বছর চারুশিল্পী সংসদ নববর্ষের সকালে চারুকলা ইন্সটিটিউট থেকে বর্ণাঢ্য আনন্দ মিছিল বের করে। শুরু থেকেই চারুকলার শোভাযাত্রাটির নাম মঙ্গল শোভাযাত্রা ছিল না।

মাহবুব জামাল শামীম নামক শুরুরদিকের একজন অংশগ্রহণকারীর কাছ থেকে জানা যায়, পূর্বে এর নাম ছিল বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা। সেই সময়ের সংবাদপত্রের খবর থেকেও এমনটা নিশ্চিত হওয়া যায়। সংবাদপত্র থেকে যতোটা ধারণা পাওয়া যায়, ১৯৯৬ সাল থেকে চারুকলার এই আনন্দ শোভাযাত্রা মঙ্গল শোভাযাত্রা হিসেবে নাম লাভ করে।

১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দে চারুপীঠ নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান যশোরে প্রথমবারের মতো নববর্ষ উপলক্ষে আনন্দ শোভাযাত্রার আয়োজন করে। যশোরের সেই শোভাযাত্রায় ছিল - পাপেট, বাঘের প্রতিকৃতি, পুরানো বাদ্যযন্ত্রসহ আরো অনেক শিল্পকর্ম। শুরুর বছরেই যশোরে শোভাযাত্রা আলোড়ন তৈরি করে। পরবর্তীতে যশোরের সেই শোভাযাত্রার আদলেই ঢাকার চারুকলা থেকে শুরু হয় বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম মঙ্গল শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয় ২০০৮ সালে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম মঙ্গল শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয় ২০১৪ সালে।

গণ্ডমূর্খের দল এই ৩০-৩২ বছরের ইতিহাসকে হাজার বছরের ঐতিহ্য বানিয়ে ফেলেছে।

আপনি যে-বিষয়টার উপর জোর দিয়েছেন, আনন্দ শোভাযাত্রার ব্যাকগ্রাউন্ড পর্যালোচনা করলে তা বাস্তবায়নের শতভাগ যৌক্তিকতা পাওয়া যায়। সময়ের দাবি হিসাবে এর উন্মেষ ঘটেছিল স্বৈরাচার বিরোধী প্রতিবাদ হিসাবে। বর্তমানে দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন উর্ধ্বগতি, রাষ্ট্রযন্ত্রের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি, বিশুদ্ধ নির্বাচনহীনতা, গণতন্ত্রচর্চাহীনতা, গুম, হত্যা, নির্যাতন থেকে নিষ্কৃতি, ইত্যাদি বিষয়গুলো অনায়াসেই আনন্দ শোভাযাত্রার বিভিন্ন ব্যানার, ফেস্টুনে উঠে আসতে পারে। কিছু কিছু ব্যানার অলরেডি দেখা গেছেও, যার একটি আপনার পোস্টেও অ্যাটাচ করেছেন।

পোস্টের মূল বক্তব্যকে শতভাগ সমর্থন করছি।

৬| ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৩ দুপুর ১২:২৭

প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন বলেছেন:




এইসব লেখা নিয়ে মঙ্গলশোভাযাত্রায় অংশ নেওয়া যাবে না। এটাই আয়োজক কমিটির প্রধান সমন্বয়কের বক্তব্য। আমি আর কি বলবো, বুদ্ধিমানরা বুঝে নেবেন।

৭| ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৩ দুপুর ১:০২

ভুয়া মফিজ বলেছেন: বর্ষবরণ নিয়ে যতগুলো লেখা ব্লগে এখন পর্যন্ত এসেছে, তার মধ্যে এটাই সেরা এবং যুক্তিযুক্ত। দুই-একটা বিষয়ে হাল্কার উপরে ঝাপসা দ্বি-মত থাকলেও সেটা ধর্তব্যের মধ্যে পড়ে না।

জ্ঞানী গুনী ব্লগারেরা তাদের সুচিন্তিত মন্তব্য দিয়েছেন দেখলাম। এই ভুয়ার আলোচনা সেখানে লবন ছাড়া পান্তাভাতের মতো লাগবে। তাই আর কিছু বললাম না।

চমৎকার একটা লেখার জন্য জেনুইন শুভেচ্ছা নিন। :)

৮| ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৩ দুপুর ১:১৫

রাজীব নুর বলেছেন: মঙ্গল শোভা যাত্রায় কি ধর্মীয় বিষয় গুলো ঢুকিয়ে দেওয়া যাবে?

৯| ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৩ দুপুর ১:৩৩

গেঁয়ো ভূত বলেছেন: জাতি হিসেবে আমরা সর্বদাই অতিরঞ্জন দোষে দুষ্ট, এক পক্ষের মঙ্গল শোভাযাত্রা নিয়ে বাড়াবাড়ি আর এক পক্ষের এই শোভাযাত্রাকে ব্যর্থ করার প্রচেষ্টায় হুড়োহুড়ি, দুটোকেই পরিত্যজ্য মনে করি।

১০| ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৩ বিকাল ৪:৩৬

সৈয়দ তাজুল ইসলাম বলেছেন:

বর্ষবরণ নিয়ে অনেকটা আলাদা রকমের পোস্ট। ভালো লাগার মতই। আপনার চিন্তাকে মোবারকবাদ।


আপনি যে বললেন, অর্থ পাচার, খুন, ঘুম, ধর্ষণ ইত্যাদির বিরুদ্ধে গন মানুষ মাটে নামবে এবং সেটা বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে। অদ্ভুত ভাবে যদি এমনটা ঘটত তবে সেটা হয়ে যেত রাজনৈতিক আন্দোলন। যদিও সেই শোভাযাত্রার উদ্দেশ্য থাকতো অশোভ থাবা দেকে দেশ, দেশের মানুষ ও গণতন্ত্রকে রক্ষা করা। কিন্তু তখন শোভাযাত্রার পরিচয় পালটে যেত মুহূর্তেই।

দেখুন, আমারা হয়তো দু'একটা কথা বলতে পারছি। তার মানে এই না যে, আমরা সত্যিকার অর্থেই অনেক কথা বলার অধিকার পেয়ে গেছি। এটা মরীচিকা ছাড়া কিছু নয়। তবে হ্যা, বর্তমান এই সময়ে এমন একটা আন্দোলনের খুব প্রয়োজন।

১১| ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:৩৫

জটিল ভাই বলেছেন:
আমার পূর্ববর্তী মহামান্য বক্তাগণের জ্ঞাণগর্ভ মতামতের পর আমার আর কিছুই বলার বাকি থাকে না।
তাই লেখিকাকে অন্তর হতে বিশাল এক জটিলবাদ জানিয়ে আমার বক্তব্য শেষ করছি।

১২| ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:৫১

নিমো বলেছেন: বাংলা বসন্ত আসবেই!

১৩| ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৩ রাত ১:৩২

সায়েমার ব্লগ বলেছেন: আপনাদের সকলের সুচিন্তিত মন্তব্যের জন্যে অশেষ ধন্যবাদ! মঙ্গল হউক সকলের!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.