নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সায়েমা খাতুনঃ নৃবিজ্ঞানী, গবেষক ও লেখক
প্রসঙ্গ রূপান্তরঃ
ট্রান্সজেন্ডার, সমকামিতা এবং যৌনতা বিষয়ক কিছু আবশ্যিক আলাপ
১।
যৌন প্রাকৃতিক, জেন্ডার নয়।জেন্ডার মানুষের সৃষ্টি (social, cultural construction)। যৌনকে বিভিন্ন সমাজ বিভিন্ন সময়ে যেভাবে ডিল করে, তাঁকে ঘিরে যেসব মতাদর্শ, মূল্যবোধ সৃষ্টি করে, সামাজিক অনুশাসন গঠন করে, প্রাতিষ্ঠানিক পলিসি ও সাংস্কৃতিক চর্চা করে - সব মিলিয়ে জেন্ডার সমাজ ও কাল নির্দিষ্ট। মানুষের ইতিহাসে এই প্রথম বোধ হয় দুনিয়াতে যৌন চর্চার কিছু বৈশ্বিক স্ট্যান্ডার্ড তৈরির চেষ্টা দেখা যাচ্ছে, গ্লোবালাইজেশনের এই এক বিস্ময়কর সমরূপীকরণের ঢেউ।স্থান-কাল নির্দিষ্ট প্র্যাকটিসগুলোকে নিও-লিবেরেল পুঁজিবাদের এক ছাতার তলায় ঢুকানোর চাপ ক্রমশ বেগবান হচ্ছে। ফলে প্রতিরোধও গড়ে উঠছে বিচিত্র ফ্রন্টে।
LGBTQ আন্দোলন গোটা পশ্চিমা দুনিয়াতে একটা গতি লাভ করেছে, যার ঢেউ বাংলাদেশেও পড়েছে।Lesbian Gay Bi-sexual Transgender Queer - বিষয়গুলো প্রত্যেকটি আলাদা আলাদা। এর মধ্যে যে বিষয় নিয়ে সম্পূর্ণ ধর্মীয় নিষেধাজ্ঞা তা মূলতঃ সমকামী চর্চার জন্যে প্রযোজ্য; হিজড়া নয়, ব্রিহন্নলা নয়, এমনকি যাদের রূপান্তর আবশ্যিক তাদের জন্যেও নয়।আপত্তি স্পষ্টতই দুটো বিষয়েঃ এক। সমকামী চর্চা, দুই। স্বেচ্ছা রূপান্তর। বাদবাকি দশা বা চর্চাগুলো নিয়ে নেগশিয়েট করবার সুযোগ আছে, এই দুইটা নন-নেগশিয়েবল। বাংলাদেশে হিজড়াসহ ভিন্ন লিঙ্গের মানুষের সব সময়েই ছিল, কিন্তু তাদের সামাজিক মর্যাদা এবং মানুষ হিসাবে অধিকার, ন্যায্য জীবনের সুযোগ ছিল না।এই মানুষদের সামাজিক, রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় যে আলাপ শুরু হয়েছে, তা ভীষণ দরকারি।এই আলাপে একদিকে দেশের কনজারভেটিভ মহল থেকে বিপুল অস্বস্তি ও অসন্তোষ প্রকাশ করা হচ্ছে, অপরদিকে প্রগ্রেসিভ মহল এক চোটে পুরা স্পেকট্রামকেই স্বাগত জানাতে প্রস্তুত বলে আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। কিন্তু কেন আশা করছেন ব্যাপারগুলো এত সহজ?
২।
আমেরিকাতে ঘোরতর ডেমোক্রাটরাও দলে দলে ট্রাম্পের রিপাবলিকান শিবিরে ঢুকে যাচ্ছেন সমকামিতা এবং LGBTQ আন্দোলনের সকল ইস্যুতে একমত হতে না পেরে। দেশে এই ইস্যুটাকে পশ্চিমা আইডিয়ার অনুপ্রবেশ হিসাবে আলাপ করা হচ্ছে, অথচ, প্রাক-ব্রিটিশ ভারতের সমাজ সংগঠনে যৌন বৈচিত্র্যের স্থান ছিল। ঐতিহাসিক দলিল এবং প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন বিচিত্র যৌন চর্চার সাক্ষ্য দেয়। যৌন বৈচিত্র্যের চর্চা, সেলেব্রেশন পশ্চিম থেকে শেখার কোন প্রয়োজন আছে বলে সেসব বলে না। এখানকার সমাজ শরীর, যৌনতার প্রতি নেতিবাচক অবস্থানে ছিল বলে সাক্ষ্য দেয় না, বরং, ছিল উর্বরতার প্রতীক হিসাবে যৌনতার প্রতি ইতিবাচক। ইতিবাচক মানে যথেচ্ছ নয়, স্থানিক অনুশাসনের অধীন।
এক নারী এক পুরুষের মনগামি বাইনারি লিঙ্গ ব্যবস্থা পশ্চিমা পুঁজিবাদের ঝাণ্ডাবাহী। সমাজে পরস্পর বিপরীত-জোড়ার সৃষ্টি আধুনিক বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের মধ্যে।বাইনারি জিনিসটাই পশ্চিমা দর্শনের উৎপাদন।এখন ইসলামসহ আব্রাহামিক ধর্মগুলো সমকামিতাকে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করেছে। ফলে, প্র্যাকটিসিং মুলসলমান বা আইডেন্টিটি-ভিত্তিক মুসলমানরা স্পষ্টতই সমকামিতাকে সমাজ ও রাষ্ট্রে অনুমোদন করতে পারবে না।
এখন কথা হচ্ছে, তারা সমকামীকে ঘৃণা করবে কিনা। ধর্মের চোখে যা পাপ, তার থেকে দূরে থাকাই মুসলমান হিসাবে তার কর্তব্য। ব্যক্তি জীবনে ইসলামের অনুশাসন যে মানছে না, সুদ গ্রহণ করছে, ওজনে কম দিচ্ছে, টাকা আত্মসাৎ করছে, তাদের শাসনের, বিচার বা শাস্তির দায়িত্ব কোন মুসলমান নাগরিক কি নিতে পারবে? না, বিচার নাগরিক মুসলমানের কাজ না।কিন্তু সমাজের অনুশাসনের স্বর নিশ্চয়ই ব্যক্ত করবে।রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলো কি পলিসি অনুসরণ করবে, তা নিয়ে নিশ্চয়ই কথা বলবে।সে ক্ষেত্রে স্পষ্টতই, সমকামিতাকে প্রোমোট করার কোন পলিসি তারা মেনে নিতে পারবে না।এই পর্যন্ত কারো সমস্যা হওয়ার কথা না।যতক্ষণ না সমকামী ব্যক্তি বা সম্প্রদায় প্রত্যক্ষভাবে আক্রান্ত হচ্ছে, যতক্ষণ মতাদর্শ ও বিশ্বাসের জায়গা থেকে আলাপ-বাহাস চলছে, নাগরিকের স্বাধীনতার সীমা লঙ্ঘন না করছে, ততক্ষণ একে গণতন্ত্রের চর্চার মধ্যেই গণ্য করা সম্ভব নয় কি? দেখা যাচ্ছে, উগ্র সেকুলার গোষ্ঠী এই ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রতি এক রকম অসহিষ্ণুতাই প্রকাশ করে যাচ্ছেন।LGBTQ এর প্রেক্ষাপটে ইসলামে সমকামিতা নিয়ে প্রচুর গবেষণা, লেখা অলরেডি বাজারে এসে গেছে।ইসলামিক স্কলারদের মতামত তাদের ভেতরেও বিভিন্ন বাহাস আছে।এই বাহাসগুলোকে টেবিলে নিয়ে আলোচনা হতে পারে।মরাল-এথিকাল বাউণ্ডারিগুলো এই দফায় নতুন করে ঝালাই করে দেখা যেতে পারে।
৩।
এত কথার অবতারণা রূপান্তর নাটকের তীব্র সামাজিক প্রতিক্রিয়া প্রসঙ্গে।ওয়ালটনের স্পন্সর করা জোভান অভিনীত "রূপান্তর" নাটকটি দেখলাম।লিঙ্গীয় অস্পষ্টতা এবং পরিচয়ের সংকট নিয়ে একটি নাটক যেখানে সমকামিতার প্রসঙ্গটা ঠিক কোথায় বুঝতে পারলাম না।বুঝলাম না কেন, পরিচালক, অভিনেতা, স্পন্সর - সবাইকে ক্ষমা চাইতে হয়েছে, সমকামিতা প্রমোট করবার জন্যে।নাটকটি কি এরা দেখেছেন? পুরুষের মত দৈহিক অবয়ববিশিষ্ট একজন তরুণ শিল্পী সৌরভ শেষ পর্যন্ত জৈবিক বৈশিষ্ট্যের কারণেই নারীতে রূপান্তরিত হয়।এই রূপান্তরের ফলে সৌরভ শেষ পর্যন্ত আরেকজন পুরুষকে বিয়ে করবে কিনা, এমন কোন ইঙ্গিত এই নাটকে দেয়া হয় নাই।যদি অনুমান করে নেই, ভবিষ্যতে আরেকজন পুরুষকে সৌরভ বিয়ে করবে, সেক্ষেত্রে সে নারী রূপেই পুরুষকে বিয়ে করছে। যেটা কমনসেন্সে সমকামিতার অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কথা নয়। এই সম্ভাব্য বিয়ে নারী ও পুরুষের মধ্যে সংঘটিত "নরমাল" বিয়ে।তাহলে নাটকটির আলোচ্য বিষয় প্রচলিত মূল্যবোধের সাথে কেন সংঘর্ষ ঘটাবে? প্রকৃতিতে রূপান্তরিত মূল, রূপান্তরিত কাণ্ড যেমন থাকতে পারে, তেমন, রূপান্তরিত মানুষও থাকতে পারে।রূপান্তরিত প্রাণ, প্রকৃতির স্বাভাবিক খেলা।প্রকৃতির বিচিত্র রূপকে গ্রহণ করবার নীতি-নৈতিক সমস্যা কোথায়, সেটা আলোচনা করা যেতে পারতো।
আবার এটাও মনে রাখতে হবে যে, রূপান্তর কেবল প্রাকৃতিক হবে না।মানুষের এজেন্সি বা তৎপরতা দিয়ে প্রকৃতি সদা-সর্বদা সংস্কৃতিতে রূপান্তরিত হয়ে থাকে।তাই, রূপান্তরিত মানুষের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক জীবন সব সময়ই মানুষের সমাজের রীতি-রেওয়াজের ফ্রেমওয়ার্কে তৈরি হবে।কেবল বায়োলজি রূপান্তরিত মানুষের জীবনের নির্ধারক নয়।মেডিকেল সায়েন্স, মনোবিজ্ঞান, প্রতিষ্ঠানের পলিসি, রাষ্ট্রের আইন এই রূপান্তরকে একটি সামাজিক-সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক ঘটনা করে তুলবে।স্পষ্টভাবে যারা নারী নয়, কিম্বা পুরুষ নয়, কিম্বা মধ্যবর্তী কোন অবস্থায় আছে, তাদের বিষয়ে সমাজকে, রাষ্ট্রকে নিশ্চয়ই নাগরিকদের ঐক্যমতের ভিত্তিতে কোন না কোন নীতিমালার ভেতর আসতে হবে, যাতে সকলের মানবিক মর্যাদা নিশ্চিত করা যায়।
এপ্রিল ১৯, শুক্রবার
উইস্কন্সিন
#সায়েমারলেখা
২| ২০ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:০৪
মুহাম্মদ মামুনূর রশীদ বলেছেন: মানুষ হলো মূর্খ। তাদের ৯০% ই নিজের চোখে নাটকটি দেখেনি।
নাটকে দেখানো হলো প্রাকৃতিক ভাবে রূপান্তরিত হওয়া এক মানুষের ঘটনা। প্রশ্ন হল প্রাকৃতিক ভাবে রূপান্তর আর জোর জবরদস্তি করে রূপান্তর এই দুটো কি এক হতে পারে?
কিন্তু মূর্খ মানুষের দল চিলের পেছনে দৌড়াতেই ভালোবাসে। আগে হাত দিয়ে তো দেখুক, যে কানের জায়গায় সত্যি সত্যিই কানটা আছে কিনা? উত্তেজিত মূর্খ জনতার তা যাচাই করে দেখারও সময় নেই।
ঠিক তাই, ফ্যাক্ট চেকিং এর বিন্দু মাত্র তোয়াক্কা মানুষ করে না। গন মানুষের এই মনস্তত্বকে পুজি করে যারা দৃষ্টি আকর্ষন করতে চায়, যারা ভাইরাল হতে চায় তারা চটকদার রংবাহারী বয়ান পেশ করে। আর আমরা বেকুবের দল সেই বয়ান নাক, চোখ বন্ধ করে সমানে গিলি।
শেষ ফলাফল যা দাড়ায় তা হলো মিথ্যার জয় হয়।
নিরপরাধ মানুষকেও ক্ষমা চাইতে হয় ঐ অপরাধের জন্য, যা সে কখনো করেনি।
DW রিপোর্ট
https://www.dw.com/bn/অনুভূতিতে-আঘাতের-কথা-বললেই-নাটক-প্রত্যাহার/a-68851771?maca=ben-VAS-RSS-Somewherein-Headlines-12717-xml-mrss&utm_source=pocket_mylist
৩| ২০ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:০৮
মুহাম্মদ মামুনূর রশীদ বলেছেন: আগের মন্তব্যের DW রিপোর্টের লিংকটা কাজ করছে না। তাই,
অনুভূতিতে আঘাতের কথা বললেই নাটক প্রত্যাহার!
৪| ২০ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৭
জ্যাক স্মিথ বলেছেন: এই দেশের মানুষ এখন পর্যন্ত জ্বীন, পরিতেই পরে রয়েছে LGBTQ এর মত জটিল একটি বিষয়ে আলোচনা এই দেশে আপরাধ।
৫| ২০ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১০
প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন বলেছেন:
বাংলাদেশে হিজড়াসহ ভিন্ন লিঙ্গের মানুষের সব সময়েই ছিল, কিন্তু তাদের সামাজিক মর্যাদা এবং মানুষ হিসাবে অধিকার, ন্যায্য জীবনের সুযোগ ছিল না।এই মানুষদের সামাজিক, রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় যে আলাপ শুরু হয়েছে, তা ভীষণ দরকারি। । আপনার এই বক্ত্যব্যের সাথে একমত। তবে যেটা বললেন, এই আলাপে একদিকে দেশের কনজারভেটিভ মহল থেকে বিপুল অস্বস্তি ও অসন্তোষ প্রকাশ করা হচ্ছে, ।এর সাথে একমত নয়, অন্ত্যত আমি শুনিনি কনজারভেটিভ কেউ হিজড়াদের অধিকারের ব্যাপারে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। বরং দেখেছি প্রত্যকেই হিজড়াদের অধিকারের ব্যাপারে একমত।
আর একটা কথা বলা দরকার, একটা মানুষ যদি প্রতিবন্ধি হয় তাহলে চিকিৎসা করবেন নাকি ওভাবেই রেখে দেবেন? শরীর পুরুষের চিন্তাভাবনায় নারী, বা শরীর নারীর চিন্তাভাবনায় পুরুষ, এটা হরমোনাল সমস্যা, এর চিকিৎসা আছে, চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ হওয়া সম্ভব। সেটা না করে একটা মানুষকে রোগী অবস্থায় রেখে দেওয়াটা অমানবিক।
৬| ২১ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:১৭
ফিনিক্স পাখির জীবন বলেছেন: যৌন প্রাকৃতিক, জেন্ডার নয়।
এই কথাটা আমি বুঝতে পারিনি।
আমার ধারনা, জেন্ডার ও যৌন উভয়েই প্রাকৃতিক। মানুষ প্রাকৃতিক ধারনা ও অবস্থান থেকে এই দুটোকে বের করে আনতে চাইছে।
©somewhere in net ltd.
১| ২০ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১২:১৬
কামাল১৮ বলেছেন: দেহ আমার অধিকার আমার।অন্যের ক্ষতি না হলেই হলো।