![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি কেউ না।একদা পথ শিশু ছিলাম। বড় হয়ে এখন পথ মানব হয়েছি। বাবা এক দিন স্বপ্ন দেখানোর সুরে বলেছিলেনঃ দেখিস, এক দিন আমাদেরও....! আমার দেখা হয়নি কিছুই । এখনো অপেক্ষায় আছি কিছু একটা হবো, কিছু একটা দেখবো।
স্কুলে আর কলেজে পড়ার সময়ে বাংলা প্রথম পত্রে নামকরণে সার্থকতা বিষয়ক একটি প্রশ্ন থাকতই । যেমন- মেজ দিদি কিংবা হৈমন্তী গল্পের নামকরণের সার্থকতা আলোচনা কর। উচ্চ নম্বরের সিঁড়ি কিংবা পুঁথি ঘরের নোট থেকে মুখস্ত করে করে আমরা বুঝাতে চেষ্টা করতাম যে, লেখক যে মেজ দিদি কিংবা হৈমন্তী নামকরণ করেছেন তা কেবল সার্থকই নয় অনেক সুন্দরও বটে।
কানা ছেলের নাম নাকি পদ্মলোচন হতে নেই। তাতে নামের সার্থকতা থাকে না। তাই নাম অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এক নোট বইয়ে পড়েছিলাম: নাম মানুষকে বড় করে না মানুষই নামকে জাকাইয়া (নাকি জাগিয়ে) তুলে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এসএসসি-র সনদে যে নাম দেয়া হয় সেটাই তার আসল নাম। সারা জীবন সেই নামের বানান অনুসরণ করতে হয়। তবে পরবর্তী জীবনে অনেকেই তাদের নামকে অনেক ভাবে প্রকাশ করে। সে এক বিরাট কাহিনী।
একটি বিষয় বাংলাদেশে বেশী দেখা যায়। তা হলো কর্মজীবনের পদ অর্থাৎ পেশাগত পরিচয়টাকেই নামের আগে জুড়ে দেয়া হয়। তবে সব পেশার ক্ষেত্রে নয়। কিছু কিছু পেশার লোক এটা করেন। অন্যরা করেন না। তবে করলে যে কি ক্ষতি আমি বুঝি না। যেমন কোন লোক যদি ডাক্তার হয় তার নাম হতে পারে – ডা: আবুল হোসেন, ডা: আ: রহমান মিয়া। কেউ যদি উকিল হয় তার নাম হবে- এডভোকেট আব্দুল করিম, আব্দুল হামিদ, এডভোকেট। আবার কেউ যদি আরো বড় উকিল হয় তবে তার নাম হতে পারে – ব্যারিস্টার আব্দুল করিম, ব্যারিস্টার আব্দুল হক ।
যারা শিক্ষকতা করেন তাদের নামের আগে একটা কিছু লাগানো প্রয়োজন। কিন্তু স্কুলের কোন শিক্ষক এটা পারছেন না। তবে কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা যখন প্রমোশন পেয়ে সব চেয়ে বড় শিক্ষক হয়ে যান তখন তারা অনায়াসে নির্বাচনের সময় পোস্টারে নামে এটা বাহারী আমেজ আনতে পারেন। সেটা হতে পারে এই রকম- অধ্যাপক কালাম আজাদকে ভোট দিন। প্রফেসর আসাদ উল্যাহকে ভোট দিন। তবে আমি বেশ কয়েক জন লোককে বিখ্যাত হতে দেখেছি যারা অধ্যাপক নন। যেমন আহসান উল্লাহ মাস্টার। তিনি এক জন জনপ্রিয় নেতা ছিলেন। তবে তার পেশা শিক্ষকতা ছিল কিনা আমি নিশ্চিত নই। এছাড়া কলেজের প্রিন্সিপাল না হতে পারলেও কেউ যদি উপাধ্যক্ষ হন সেটা ব্যবহার করেও বিখ্যাত হতে পারেন। ১৯৯১ সালের নির্বাচনের পর এক জন উপাধ্যক্ষ মো: ইউনুস নামে এক জন এমপি ছিলেন। তিনি সম্ভবত শিক্ষাপ্রতিমন্ত্রী ছিলেন। বর্তমান জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ এক জন উপাধ্যক্ষ। তাই যারা স্কুলে সহকারী শিক্ষক বা কলেজে প্রভাষক তারা হতাশ না হয়ে নামের আগে বা পরে সহকারী শিক্ষক কিংবা প্রভাষক শব্দটির ব্যবহার শুরু করতে পারেন। দেখবেন এক সময় হয়তো এটাই চালু হয়ে গেছে।
তবে সমস্যা হবে যারা শ্রমজীবী মানুষ তাদেরকে নিয়ে। যারা খেটে খায় তারা যদি নামের আগে বা পরে পেশাগত শব্দ ব্যবহার করতে চায় তা বেশী জুতসই হবে না। যেমন জেলে, কুমার, কামার, কৃষক, রিক্সাওয়ালা ইত্যাদি। তবে এক জন কৃষক অবশ্য অনেক বিখ্যাত ছিলেন। তিনি হলেন কৃষক মো: সাদেক। অসংখ্য নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন এই কৃষক সাহেব এবং হেরেছিলেন। হারলেও বিখ্যাত হওয়া যায় তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ এই কৃষক সাহেব।
(উচ্চ আদালতের মাননীয় বিচারপতিগণের প্রতি ক্ষমাপ্রার্থনাপূর্বক বলছি) বিচার বিভাগে যারা কাজ করেন তারা অনেকেই শেষ কর্মজীবনে উচ্চ আদালতে বিচারপতি নিযুক্ত হন। কর্মজীবনে তারা বিচারপতি এতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু তারা অবসরে গেলেও তাদের নামের শেষে বিচারপতি শব্দটি রেখে দেয়া হয়। কিন্তু বিচারপতি শব্দটি যদিও তার নামের অংশ নয়। এই বিচারপতি যদি কখনো আবার রাষ্ট্রপতি হয়ে যান তখন পতি শব্দটি আবার দু’বার ব্যবহার করতে হয়। যেমন রাষ্ট্রপতি বিচারপতি জনাব সাহাব উদ্দিন আহমেদ।
সেনাবাহিনীর লোকেরা অবশ্য একটু ব্যত্ক্রিম। তারা তাদের পদবী নামের সাথে ব্যবহার করলেও বেশীর ভাগ সময়ই (অবঃ) কথাটি ব্যবহার করেন। এটা আমি অনেক ভাল দিক মনে করি। তারা যে এক এক সময় এটা ছিলেন তা বুঝনো হয়।
স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের পর কেউ কেউ যদি বেশী পড়াশোনা করতে চায় তাহলে পিএইচডি করে। যারা কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন তাদের কর্মজীবনে প্রমোশনের জন্য এই পিএইচডি অনেক দরকারী একটি জিনিস । একটি নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর গবেষণা করে অভিসন্দর্ভ বা থিসিস রচনা করার পর এক জন লোক পিএইচডি ডিগ্রী লাভ করেন। এই পিএইচডি-র এমনই গুণ যে এটা পাবার পরপরই মানুষ তার নামের আগে ডঃ লিখতে শুরু করে। যদিও ডঃ তার নামের কোন অংশ নয়।
এক সময়ে তারা এই পদে ছিলেন বলে সারা জীবনই কি এই পদ তার নামের সাথে ব্যবহার করা উচিত? কেউ যদি তার নাম লিখেন প্রফেসর আবুল হোসেন। তাহলে কি আমাদের মনে প্রশ্ন আসতে পারে না যে প্রফের শব্দটা তার নামেরই অংশ কিনা? এক সময় শিক্ষকতা করতেন এবং প্রফেসর ছিল তার চাকরির .ব্যাংক। তাই বলে কি এই .ব্যাংকটা সারা জীবনই সবাইকে বলে বেড়াতে হবে? অথচ এটাই তো চলছে। চলবে হয়তো অনন্তকাল।
আমাদের আমলাকুল শিরোমণি সচিবগণ এই ঝামেলা থেকে মুক্ত। তারা তাদের নামের আগে বা পরে কোন সচিব শব্দ ব্যবহার করেন না। প্রফেসর, উকিলরা পারলে সচিবরা কেন পারেন না আমি বুঝি না। তাদেরও নামের আগে বা পরে উপসচিব, যুগ্মসচিব, অতিরিক্ত সচিব ইত্যাদি শব্দ ব্যবহার করা উচিত। তা না হলে কি ভাবে মানুষ বুঝবে যে তারা এক সময় সচিব ছিলেন কিংবা এখন সচিব।
বড় বড় পদ ধারীরা না হয় তাদের নামের আগে বা পরে পেশাগত পরিচয় লিখে নামের সৌন্দর্য বাড়ালেন । কিন্তু ছোট ছোট পদে যারা চাকরি তারা কি করবেন? তারাও করতে পারেন। তবে র্ব্তমান বাজারে মানুষ বড় শেয়ানা। তাই ইচ্ছে করলেই আর ছোট পদবী নামের আগে পরে ব্যবহার করে বাহার বাড়াতে পারবেন না। তবে আমাদের দোহারে কাজেম পেশকার নামে এক জন লোক ছিলেন। তিনি তার নামের শেষে পেশকার লিখতেন। এক সময় তিনি মাহমুদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হয়েছিলেন সম্ভবত। বর্তমানে কোন লোক কি আর পারবে নামের আগে পেশকার, মোক্তার, দফাদার কেরাণী ইত্যাদি শব্দ ব্যবহার করতে? পারলে তিনি যে পরবর্তী জীবনে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কিংবা পৌরসভার মেয়র হবেন এতে কোন সন্দেহ নেই।
অনেক খারাপ পেশার লোক আছে যেমন মাস্তানী যারা করে তাদের নামের আগে বা পরে আবার নানা ধরনের বাহারী শব্দ ব্যবহার করতে হয়। যেমন কানকাটা রমজান, ঠোট কাটা মিঠু, মুরগী মিলন, নাক কাটা কুদ্দুছ ইত্যাদি। কে কত বড় মাস্তান সেটা বুঝাতে হলে একটা টাইটেল থাকা প্রয়োজন। তা না হলে মানুষ ভয় পাবে কেন? বর্তমান সমাজে মাস্তানরা অনেক ক্ষেত্রেই সমাজের প্রভাবশালী মানুষ। সমাজের যে কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তাদের জড়িত থাকা এক কমন বিষয়।
তবে নামের আগে বা পরে এই সব শব্দ লাগানো হলেও তা কিন্তু অবশ্যই কারণ তার নামের বানান সহ জন্ম তারিখের বড় একটা প্রমাণ দেবে তার এসএসসি-র সনদ। তাই ব্যবহার করলেও এই সব নাম যুক্তি সিদ্ধ নয়। জানি অনেকেই আমার সাথে এক মত হবেন না। কিন্তু বাস্তবতা তো এটাই । কারণ আমাদের বেশীর ভাগ মানুষেরই জন্ম সনদ নেই। জাতীয় পরিচয়পত্র নেই এমন মানষের সংখ্যা কিন্তু নেহায়েত কম নয়।
এক জন মানুষের নামের শেষে খান, মোল্লা ইত্যাদি লাগানো হয়। এটাকে কি বলে? উপাধি কিংবা পদবী এই ধরনের কিছু একটা হয়তো হবে। মূল নামের সাথে কিছু একটা উপাধি জাতীয় শব্দ কেবল বাংলাদেশেই নয় পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও প্রচলিত রয়েছে। তবে এই পদবী বা উপাধি নামের শেষে না বসে প্রথমেও বসতে পারে।
আমি এই ধরনের পদবী বা উপাধি কি ভাবে এলো তা আমি নিজে নিজে কিছুটা চিন্তা করে বের করেছি। ব্যাপারটা এই রকম। অনেক অনেক আগে যদি কোন লোক বড় জমিদারের বাড়িতে জসা-খরচের হিসাব তথা লেখালেখির কাজ করত তার পদ ছিল সরকার। পরবর্তীতে ঐ লোকের ছেলে জন্ম নিলে তার নামের পাশেও লাগানো হল সরকার। এক লোকে চৌকিদারদের প্রধান ছিল। পরে তার পদবী অনুসারে ছেলেরাও ব্যবহার করতে থাকে দফাদার উপাধি। বড় নবাব কিংবা জমিদারের বাড়িতে দোয়া দরুত পড়ত তাকে বলা হত মোল্লা। এই ভাবে তার ছেলেরাও মোল্লা উপাধি ব্যবহার করতে থাকে। যদি কেউ সঠিক জানেন তিনি আরো ভাল বলতে পারবেন। এ ব্যাপারে পাঠকের মন্তব্য আশা করছি।
এই উৎপত্তি বিষয়ে আমি আর যাচ্ছি না। বে আমি দেখাব যে, বাংলাদেশে এই ধরনের উপাধি অনেকটাই আঞ্চলিকতার দোষে দুষ্ট। ব্যতিক্রম যে নেই তা কিন্তু নয়। আসুন, কয়েকটা দেখি।
যেমন: ১। বিক্রমপুর অঞ্চলে ঢালি উপাধিটা বেশী প্রচলিত- সোলেমান আলী ঢালী, বেলায়েত হোসেন ঢালী ইত্যাদি।
২। উল্লাহ কিংবা উল্যাহ- এটি নোয়াখালী অঞ্চলে বেশী প্রচলিত। যেমন – ওয়ালী উল্লাহ, নেয়ামত উল্লাহ, মুহাম্মদ উল্যাহ ইত্যাদি।
৩। জমাদার কিংবা জমাদ্দার- এটি বরগুণা অঞ্চলে বেশী প্রচলিত। যেমন – জাহাঙ্গীর জমাদ্দার, হোসেন আলী
জমাদ্দার।
৪। চৌধুরী – বৃহ্ত্তর সিলেট বিশেষ করে মৌলভী বাজারে বেশী প্রচলিত- আবু লেইচ মো: মবিন চৌধুরী।
৫। শেখ – এটি বৃহত্তর ফরিদপুরে বেশী প্রচলিত- শেখ হারুন, শেখ জব্বার ইত্যাদি।
৬। মীর- এটি বেশী প্রচলিত কুষ্টিয়া অঞ্চলে। যেমন – মীর মশাররফ হোসেন, মীর আবুল কাসেম ইত্যাদি।
ছেলে হোক না সে কানা। তার নাম পদ্মলোচন রাখুন।
এই রকম আরো মেলা আছে। পাঠকরা আরো যোগ করতে পারেন। স্নাতকোত্তর শ্রেণীতে ভর্তি হবার পর আমি এক জন সহপাঠী পেয়েছিলাম যার নাম ছিল ফারুক হোসেন ডাকুয়া। সম্ভবত তার পূর্বপুরুষের কেউ ডাকু, ডাকাত কিংবা এই জাতীয় কিছু একটা ছিল। ২০০২ সালে বাকৃবি ক্যাম্পাস ছাড়ার পর আর ফারুক হোসেন ডাকুয়ার সাথে আর দেখা হয়নি। গাইবান্ধার বাসিন্দা ফারুক হোসেন ডাকুয়া এখন কোথায় আছে আমি জানি না। তবে ডাকুয়া উপাধিটি আমার কাছে ছিল অনেক নতুন। তাই আজো মনে পড়ে ফারুক হোসেন ডাকুয়াকে।
২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১০ সকাল ৭:৪০
মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন: আমার নিজ উপজেলায় এক নেতা আছেন মন্ত্রীর ছোট ভাই। কিন্তু অনেক বড় নেতা। তার ভয়ে বেড়ালে কুকুরে (এলাকায় কোন বাঘ নেই তো! ) এক খালের ঘাটে জল খায়।
ভয়াবহ এই নেতার নাম মুতা খান!
আপনার বিশ্বাস না হলে দোহারের যে কোন লোককে কল করুন।
২| ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১০ বিকাল ৫:২৪
সান্তনু অাহেমদ বলেছেন: সুন্দর পোস্ট।++
২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১০ সকাল ৭:৪১
মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন: আপনার ফটুক খানা দারুণ সুন্দর তো!
সুন্দর ছবির জন্য +++।
©somewhere in net ltd.
১|
২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১০ বিকাল ৩:৫০
হাম্বা বলেছেন: আমার নিজের দেখা কিছু নাম
মোছাঃ মহিলা খাতুন। (অনেক কয়জন)
মোঃ হাগু শেখ। ( কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায়)
ডাকু (কুষ্টিয়ার হরিপুরে)
ভুটু (কুষ্টিয়ার হরিপুরে)
পাদু (বেশ কয়েকজন)
হাম্বা (বিভিন্ন ব্লগে)