নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কিছু মানুষ অন্য মানুষকে মুগ্ধ করার অসীম ক্ষমতা নিয়ে জন্মায়। আর কিছু মানুষের ভিতর এই ক্ষমতা কখনই আসে না। আমি দ্বিতীয় দলের মানুষ। কাউকে মুগ্ধ করার মত কিছু কখনই করতে পারি না। কেউ অনেক সুন্দর গান গায়, আমি শুধু শুনে যাই। কেউ অনেক সুন্দর নাচে, আমি শুধু হাত তালি দিয়ে যাই। কেউ অনেক সুন্দর লেখে, আমি শুধু ভেবে যাই, কী করে এত ভালো লেখে কেউ? আমিও লিখি। তবে তা কাউকে মুগ্ধ করার মত কিছু না। আমার লেখায় আমার ভালোবাসা ছাড়া কিছুই নেই। পড়াশুনা শেষ, বুটেক্স থেকে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার হয়ে বের হয়ে চাকরি, বিয়ে, পেশা পরিবর্তন সব হয়েছে। লেখালেখির ধারাবাহিকতায় চারখানা উপন্যাস অমর একুশে বইমেলায় বেরিয়েছে। টুকরো ছায়া টুকরো মায়া (২০১৫) – সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার । একা আলো বাঁকা বিষাদ (২০১৬) – সামাজিক উপন্যাস । মধ্য বৃত্ত (২০১৮) – ডিটেকটিভ সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার । অভিসন্ধি (২০২০) – ক্রাইম থ্রিলার । দেশটাকে ভালোবাসি অনেক। অনেক মায়া কাজ করে। মাঝে মাঝে ভাবি, সব বদলে দিতে পারতাম। স্বপ্নের মত না, বাস্তবের মত একটা দেশ গড়তে পারতাম …………………………
হাতের ভিতর ২০ টাকার নোটটা আর একবার দেখল সোহাগ। নোটের গায়ে লেখা, "একটা মন হবে?সুহাগ- ০১......"
হাতের লেখা খুবই বিচ্ছিরি।সোহাগের হাতের লেখা এতো খারাপ না। আর ওর নামও সুহাগ না।ওর নাম সোহাগ।সোহাগ, শুনতেই জানি কেমন একটা আদর আদর ভাব আসে। আর সুহাগ, শুনলে মনে হয় কত কুরুচিপূর্ণ ইঙ্গিত। সোহাগের মাথায় সুহাগ নিয়ে চিন্তা নেই, নাম্বার নিয়েও না।ওর মাথায় অন্য চিন্তা।এই ২০ টাকা কিছুক্ষণ আগে রাস্তায় কুড়িয়ে পেয়েছে।নিবে কি নিবে না ভাবতে ভাবতে , এদিক ওদিক তাকিয়ে ময়লা প্যান্টে মুছে টাকাটা জামার পকেটে রেখে দিল।একটু পর বের করে হাতে নিল। জামা, প্যান্ট বা হাতে, টাকা বলতে এই ই আছে।কিন্তু কিছুক্ষণ আগেও জামার পকেটে ১৫০ টাকা ছিল, প্যান্টের পকেটে ছিল ইরার দেয়া মোবাইল ফোনটা, আর এক জোড়া ছোট কানের দুল, ইরাকে দেবার জন্য।কানের দুলটা গতকাল গাউছিয়া থেকে কিনেছে, ৬০ টাকা দিয়ে।এই মুহূর্তে এই কানের দুল আর কুড়িয়ে পাওয়া ২০ টাকা ছাড়া, আর কিছু নেই।আজ প্রায় দুই মাস পর ইরার সাথে দেখা হবে।সন্ধ্যা সাতটার দিকে TSC তে আসতে বলেছে ইরা।একসাথে ফুচকা খাবে।
অনেকটা নির্জন গলির ভিতর দিয়েই হেঁটে যাবার সময় ,একটা ছেলের ডাকে পিছনে তাকায় সোহাগ।
- এই শোন।
- জ্বি আমাকে বলছেন?
সোহাগ দেখল, সাথে আরও চার জন আছে। সন্ধ্যাবেলা চোখ মুখ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। চোখগুলো প্রায় সবগুলো ছেলেরই লাল। সোহাগের গায়ে হাত দিয়ে বলল,
- হ্যাঁ তোকেই বলছি।
পাঁচ জন ঘিরে দাঁড়াল সোহাগকে।যেই ছেলেটা সোহাগকে ডেকেছিল, ও ছোটখাটো একটা ছুরি বের করে বলল, চুপচাপ থাকবি। কেউ যেন বুঝতে না পারে কিছু। একটু চিৎকার করলে পেটের ভিতর ঢুকিয়ে দিব।
- ভাই আমি কি কোন অপরাধ করছি?
- অবশ্যই করছিস।এখন পকেটে যা যা আছে দে, নয়ত......
- ভাই আমার কাছে তো কিছু নাই।
এর মধ্যে একজন প্যান্ট জামা চেক করতে শুরু করল। মোবাইল পেল, টাকা পেল।হাতে নিয়ে বলল, এই যে। বাহ অনেক দামী মোবাইল দেখি। এতো দামী মোবাইল, আর পকেটে মাত্র ১৫০ টাকা।ঐ ভালমত দেখ তো কোন জায়গায় টাকা লুকাই রাখছে নাকি?
ভিতরে বাহিরে সবজায়গায় দেখল।দেখা শেষে সোহাগকেই জিজ্ঞেস করল, আর টাকা আছে?
- না, ভাই।আমার কাছে টাকাই আছে এই ১৫০ টাকা। আর মোবাইলটা আমার গার্লফ্রেন্ড আমাকে দিছে। ভাই, আজকে বহুদিন পর দেখা হচ্ছে,এই টাকাটা না থাকলে হবে না। আর মোবাইলটাও তো ওর গিফট।
- বাহ তোর গার্লফ্রেন্ড দেখি বহুত বড়লোক। ভালই তো টাকাওয়ালা মেয়ে পটাইছিস।মোবাইল দেয়, সাথে আরও কত কিছু পাস।পার্কে রাতের অন্ধকারে বসে.........
হাসতে হাসতে কিছু নোংরা কথা বলল ছেলেগুলো।সোহাগের খুব রাগ হচ্ছে।একটু নড়েচড়ে উঠতেই, পেটের কাছে ভালমতো ছুরিটা ধরল আবার।মোবাইলের সিমটা খুলে সোহাগের হাতে দিয়ে, মোবাইল আর টাকা নিয়ে ছেলেগুলো চলে গেল।যাবার আগেও কয়েকটা বাজে বকা দিয়ে গেল। এই নোংরা কথাগুলো, সোহাগের মুখ দিয়ে কখনই বের হবে না। ও চুপচাপ দাঁড়িয়ে নিজের সব ছিনতাই হতে দেখল। কিছুই করার নেই। আশেপাশে এখনও কোন লোক নেই। সোহাগ অসহায় ভাবে হাঁটছে। খুব একটা মন খারাপ তা না। যা হারিয়েছে তার কিছুই ওর না।এক বন্ধুর থেকে ২৩০ টাকা ধার করেছিল। যদিও সোহাগের দাবী ছিল ৩০০। তবে সেই বন্ধুর থেকে, আগেও নানা সময় ধার মিলিয়ে, ২৭০ টাকা হয়েছে।কাল সোহাগ যখন টাকা চাইল। তখন ওর বন্ধু একটা ছোট খাতা বের করল। খাতার উপর লেখা, "সোহাইগগার ধার"। নিজের নামের বিকৃতি দেখে খুব রাগ হলেও ,চুপ করে রইল। সব জায়াগায় সব রাগ দেখানো ঠিক না। এখন রাগ দেখালে টাকা পাওয়া যাবে না।সোহাগের বন্ধু খাতা খুলে দেখাল, সোহাগের কাছে আগের ২৭০ টাকা পায়। তাই এবার সে ২৩০ টাকা দিয়ে ৫০০ মিল করল।২৩০ টাকার মধ্যে ৬০ টাকা দিয়ে এক জোড়া কানের দুল কিনেছে, ২০ টাকা দিয়ে দুই টা বেলি ফুলের মালা কিনেছে, ইরার অনেক পছন্দ বেলি ফুল। যদিও সেই মালা ভুলে রুমে রেখে এসেছে। আর ১৫০ টাকা ছিনতাই হয়ে গেল, সাথে ইরার দেয়া মোবাইলটা। মোবাইলটা গত জন্মদিনে ইরা দিল,তার তিন দিন আগেই নিজের মোবাইলটা বিক্রি করে দিয়েছিল সোহাগ, ৮০০ টাকায়।হাতে টাকা নেই।পাস করে বের হয়ে বেকার বসে আছে। টাকা না থাকলে মোবাইল দিয়ে কি হবে?বরং এই ৮০০ টাকায় বেশ কয়েকদিন ভালভাবেই চলা যাবে।সেদিন ইরা সোহাগের সামনে এসে ,মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বলল, ইশ তোমাকে অনেকক্ষণ দাড় করিয়ে রাখলাম, সরি।
- আরে এ আর কি?আমি সারাদিন আজাইরাই বসে থাকি।
- ওহ, আবার এসব কথা? তোমাকে এসব বলতে না করছি না?
- হাহা, আমি যা তাও বলা যাবে না?
- না বলা যাবে না।
- আচ্ছা বললাম না।
ইরা ওর বাম কাঁধে ঝুলানো ব্যাগ থেকে, একটা প্যাকেট বের করে, সোহাগের হাতে দিল। সোহাগ ইরার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল, কি এটা?
- জন্মদিনের উপহার। একটা মোবাইল।
সোহাগ প্যাকেট খুলে মোবাইল বের করে দেখল।ইরার মুখের দিকে আবার তাকিয়ে বলল,তোমার জন্মদিন ছিল আজকে? একদম মনে ছিল না।শুভ জন্মদিন।আসলে মাথায় এতো চিন্তা ,সব ঠিক মনে থাকে না।
ইরা ব্যাগ হাতে নিয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। কিছু বলছে না। এটার মানে কি হতে পারে, সোহাগ এখনও বুঝতে পারছে না। রাগ করছে না তো? কিছু আবেগি কথা বলে মনের মোড় অন্য দিকে ঘুরাতে হবে। আবেগি কথা বলা শুরু করল সোহাগ, মুখে একটা অসহায় ভাব ফুটিয়ে,
" তুমি আমাকে অপমান করছ? তোমার জন্মদিনে আমার কিছু দেবার সাধ্য নেই, তাই উল্টা আমাকে উপহার দিয়ে , মোবাইল দিয়ে, আমাকে ইনসাল্ট করছ?আমি না হয় টাকার অভাবে মোবাইলটা বিক্রি করে দিছি, তাই বলে এভাবে অপমান করবা আমাকে? "
- এই চুপ। আমার জন্মদিন হবে কেন? আজকে আপনার জন্মদিন। বুঝলেন? নিজের জন্মদিন ভুলে যাও, ছাগল যেন কোথাকার।
- আমার জন্মদিন? হায় আল্লাহ, আমার তো একদম মনে ছিল না। আসলে মোবাইল নেই তো, তাই কেউ মেসেজ পাঠিয়ে পাঠিয়ে মোবাইল ভরিয়ে দেয় নি। আর তুমিও রাত ১২ টায় কল করে, সুন্দর ঘুমটা ভাঙিয়ে দাও নি।
কথাটা বলে আবার ইরার দিকে তাকাল সোহাগ। আবার ভুল কিছু বলে ফেলল না তো? কথা ঘুরাবার জন্য বলল, যাই হোক। মোবাইলটা সুন্দর। এতো দামী মোবাইল তো আমি চাকরি পেলেও, ২-৩ মাসের বেতন দিয়েও কিনতে পারব না।কিন্তু আমি এটা নিব না।
- কেন?
- এটা কিছু হল? আমি তোমার থেকে মোবাইল নিব কেন?লোকে কি বলবে? গার্লফ্রেন্ড এর থেকে আমি মোবাইল নিয়েছি।
- লোকের কথায় কি? আর লোককে তুমি বলে বেরাবে নাকি, এটা আমার গার্লফ্রেন্ড আমাকে দিছে?
- এহ খাবার টাকা নাই। দামী মোবাইল নিয়ে ঘুরব।
- চুপ, এতো বুঝ কেন? মোবাইল না থাকলে আমরা যোগাযোগ করব কি করে? এই যে আমাকে বাহির থেকে কল করলা, নয়ত আজও তো আমাদের ফোনে কথা হত না। আর এমন তো না আমাদের প্রতিদিন দেখা হয়।
- তাও।
- তাও কিছু না। আমাদের আগামী মাস খানেক দেখা হচ্ছে না। তাই যোগাযোগ রক্ষার জন্য হলেও, মোবাইলটা রাখতে হবে। প্লিজ একটু বোঝার চেষ্টা কর।
- কোথায় যাবে তুমি?
- আম্মুর শরীর খারাপ। ছোটখাটো একটা অপারেশন করাতে হবে।মাদ্রাজে। আব্বুও যাবে। আমাকে তো একা রেখে যাবে না বাসায়। আসতে আসতে দেরী হবে।
- ও ও ও ও।
- হুম তাই আমার সাথে কথা বলার জন্য, এটা রাখতে হবে, বুঝলে?
- বুঝলাম।
সোহাগ মোবাইলটা হাতে নিয়ে, ইরার দিকে হাসিমুখে তাকাল।কিন্তু ইরার চোখ ছলছল করছে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে, অনেক কষ্টে কান্না আটকে রেখেছে।এখানে কান্নার কি আছে, সোহাগ বুঝতে পারে না। এই মেয়েটাকে কখনই বুঝে উঠতে পারে না সোহাগ। এই কথা ভাল করে বলতে বলতে, হঠাৎ কেঁদে দেয়। আর সোহাগ, সেই ভাবলেশহিন ভাবে তাকিয়ে থাকে। মাঝে মাঝে খুব রাগ করে ইরা। কথা বলা বন্ধ করে দেয়। আর সোহাগ, সেই কয়েকদিন দরজা লাগিয়ে সারাদিন ঘুমায়।এরপর একদিন হুট করে ফোন দিয়ে আবার কাঁদে ইরা, তুমি এমন কেন? আমার রাগটাও একটু ভাঙাতে আসো না।
ইরার রাগ অনেক ভয় পায় সোহাগ। ভাবে সবসময় রাগটা না উঠুক মেয়েটার। তবুও রেগে যায় ইরা। কেঁদে যায় ইরা। কষ্ট পেয়ে যায় ইরা। আর সোহাগ, চুপচাপ বসে থাকে। রাগ ভাঙাতে পারে না। ইরা রাগ করে বলে, আমার সাথে কথা বলবে না।
সোহাগ ঠিকই আর কথা বলে না। কখন কি করবে, এই বোধটা মনে হয় সোহাগের একটু কম।একটু কম না, বেশ কম। এই যে এখন ইরার চোখের জলের ভাষা বুঝতে পারছে না। তবুও মুখে একটু কষ্ট ভাব ফুটিয়ে বলল, কি হইছে ইরা?
- কিছু না।
- বল না,প্লিজ।
- কিছু না।
- ওওও।
সোহাগের মুখে ওওও শুনে আরও কষ্ট হয় ইরার। গাল বেয়ে পানি পড়ছে। সোহাগ হা করে তাকিয়ে চোখের জল দেখে। বুকের ভিতর কেমন যেন করে উঠে। কি বলে চোখের জল থামানো যায়, সোহাগ জানে না। ইরাই সোহাগের দিকে তাকিয়ে, চোখের জল ঝরাতে ঝরাতে বলে, তুমি কি কখনই সিরিয়াস হবে না, আমাদের সম্পর্কের ব্যাপারে?
- ইয়ে, মানে। আমি তো সিরিয়াসই।কেন কি হইছে?
-কি হইছে জানো না? একটু চেষ্টা কর, চাকরি যোগার করার। আর কতদিন বেকার থাকবে? অন্তত একটা চাকরি থাকলে, আব্বু আম্মুকে বলতে পারব, ছেলে উচ্চ শিক্ষিত, চাকরি করে। চাকরি বড় ছোট যাই হোক। বেকার ছেলের সাথে আমার মা বাবা বিয়ে দিবে?
- আমি তো চেষ্টা করি। এখন আমাকে চাকরি না দিলে কেউ, আমি কি করব? আমি তো মেরে মুরে চাকরি নিতে পারব না। এই দেখো পকেটে কতগুলো চাকরির বিজ্ঞপ্তি।রাস্তার পাশের দেয়ালে লাগানো পেপার থেকে, ছিঁড়ে নিয়ে আসছি।
পকেট থেকে বের করে কতগুলো, চাকরির বিজ্ঞপ্তির কাগজ দেখায় সোহাগ। ইরা মাথা নিচু করে বলে, তোমাকে আমার বাবা মা কখনই পছন্দ করবে না। অন্তত একটা ভাল চাকরি থাকলে যদি, বুঝাতে পারি।
- মানুষ কি সারাজীবন বেকার থাকে? যারা কোনদিন পড়ালেখা না করছে, তারাও তো চলতেছে। আর আমি শিক্ষিত। জানি তোমার বাবা মা আমাকে পছন্দ করবে না। তবুও দেখো, জীবন তো আর সিনেমা না যে, বেবি ট্যাক্সি চালিয়ে ইন্ড্রাস্টির মালিক হয়ে যাব। আর এক কাজ কর না, ইরা। আমি আসলেই তোমার লেভেলে যাবার মত, কোনদিন হতে পারব না। তুমি আমার সাথে সব সম্পর্ক ক্লোজ করে দাও তার চেয়ে।
ইরা মাথা তুলে তাকায়। সোহাগের কাছ থেকে এই কথা আশা করে নি। আরও কষ্ট হচ্ছে ইরার। সোহাগের হঠাৎ করেই মনে হল , কথাটা বলা ঠিক হয় নি। ইরা বলল, যা বলছ, যথেষ্ট বলছ। আর একটা উল্টা পাল্টা কিছু বললে, মাথা ফাটিয়ে দিব তোমার। ফাজলামি পাইছ? তোমার সাথে এতদিন প্রেম করে, অন্য একজনকে বিয়ে করব? এই এই, সত্যি কথা বল, অন্য কোন মেয়েকে ভালবাসছ তুমি?
ইরা রেগে গেছে। সোহাগ চুপ করে মাথা নিচু করে বলল, ভুল হয়ে গেছে, সরি। আর বলব না। আর আমার মত আজাইরারে কে ভালবাসবে?
- কে ভালবাসবে মানে? অন্য মেয়ের ভালবাসা পাবার খুব শখ, না?
- না একদম না।
- তাহলে?
- তোমার ভালবাসা পাবার শখ।
ইরার রাগে রাগেই সোহাগের দিকে তাকিয়ে রইল। সোহাগ মুখ তুলে তাকাতেই ইরা বলল, আমি উঠবো।
- কেন? বেশি দেরী করলে,বাসায় সমস্যা হবে।
- আচ্ছা। রাগ করে নাই তো তুমি?
- না।
ইরা উঠে চলে যাচ্ছে। একটা রিকশা নিল। সোহাগ তাকিয়ে দেখে। খানিক পরেই আবার রিকশা থেকে নেমে চলে আসে। সোহাগের সামনে এসে দাড়ায়।সোহাগ বলে,
- কি হল, গেলে না?
- যাব।
ইরা ব্যাগের ভিতর হাত ঢুকিয়ে, কিছু টাকা বের করে। সোহাগের হাতে দিয়ে, হাতটা চেপে ধরে।
- টাকাটা রাখো। তাও প্লিজ, আমার দেয়া মোবাইলটা বিক্রি করে দিও না। আর দেখো না একটা চাকরি পাও কিনা।
সোহাগের মনে হল এই কথাটায় ,বুকের ভিতর কেমন একটা চিন চিন ব্যথা হল। ইরা হাত ধরে বলল, আমি তোমাকে অনেক ভালবাসি। ভাল থেকো।
ইরা আবার রিকশা করে চলে যায়। সোহাগ হাতে টাকা নিয়ে ইরার চলে যাওয়া দেখে। এই প্রথম বুকের ভিতর ভালবাসায় কষ্টের অনুভূতি হচ্ছে। সোহাগের অনুভূতিশুন্য, ভাবলেশহীন মনে, অনেক কথা জমতে শুরু করেছে। ইরাকে সামনা সামনি সেগুলো বলতে ইচ্ছা করছে। চোখের কোণে জল নিয়ে, আর একবার হাত ধরতে ইচ্ছা করছে। কিন্তু ইরা তো চলে গেল। আর কিছুক্ষণ থাকতেও বলতে পারল না। নিজেকে বড় ছোট লাগছে। ভালবেসে একটা উপহার দিল ইরা। সেই উপহার যেন বিক্রি করে, খাবার টাকা না যোগার করি, তাই হাতে কিছু টাকা ধরিয়ে দিয়ে গেল।হয়ত টাকাগুলো না দিলে, সত্যিই একদিন মোবাইলটা বিক্রি করে দিত।ইরাকে ভেবে প্রথম বারের মত চোখ দিয়ে জল পড়ছে। কাউকে ভালবাসি বোঝার, সবচেয়ে বড় অনুভূতি হল, তাকে ভেবে কান্না করা। যার জন্য কখনও চোখে জল আসে না। তার প্রতি কখনই কোন ভালবাসা থাকে না। জোর করে হাসা যায়, কাঁদা যায় না। কারও জন্য চোখের জল, তার প্রতি ভালবাসার অনেকখানি বুঝিয়ে দেয়।
সেদিন চলে গেল। আর দেখা হয় নি। আজ প্রায় এই ২ মাস পরে দেখা হচ্ছে।টাকার অভাবে পড়েছে, তবুও কখনও মোবাইলটা বিক্রি করে নি। ধার করেছে টাকা। অন্যজনের কাছে থেকে টাকা নিয়ে, আবার তা শোধ করেছে।বন্ধুর থেকে নিজের নামের বিকৃতি দেখেছে।তবুও না। কিন্তু কি একটা কাজ হয়ে গেল। ছিনতাইকারী গুলো মোবাইলটা নিয়ে গেল। কিইবা করার ছিল? বাঁধা দিলে মরে যেতাম। ইরা জানতও না। মোবাইলের কথাটা ভেবে এখন একটু একটু কষ্ট হচ্ছে।হাতের ভিতর ২০ টাকা। ভাবতেছে এই ২০ টাকায় কি ফুচকা পাওয়া যাবে? হয়ত যাবে না। TSC এর যেখানটায় আসবার কথা, ওখানে ইরা দাঁড়িয়ে আছে।আজ ইরাই আগে আসল। দূর থেকে অল্প অল্প দেখা যাচ্ছে ইরাকে। কাছে যেতে একদম স্পষ্ট।গত ২ মাসে মেয়েটা দেখতে আরও বেশিই সুন্দর হয়ে গেছে। চোখে খুব লাগছে, সুন্দরটা। ভাসা ভাসা চোখগুলো দেখতে খুব ভাল লাগছে। ইরার সামনে গিয়ে হাসি দিয়ে বলল, কেমন আছ? কতক্ষণ হল আসলে?
- ভাল আছি। এইতো একটু আগে। তোমার মোবাইল বন্ধ কেন?
কথাটা এড়িয়ে যেতে চাইলেও পারল না। কি বলবে না বলবে বুঝতে পারছে না।
- সত্যি কথা বলব? রাগ করবে না তো?
- না রাগ করব না। বল।
- মোবাইল ছিনতাই হয়ে গেছে।
- মানে?
- মানে রাস্তায় আসার সময়, মোবাইল আর টাকা নিয়ে গেছে। কিছু ছিনতাই কারী।
ছোট একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে , সোহাগের দিকে তাকাল ইরা।
- সত্যি কথা বলতো? আমার দেয়া মোবাইলটা কি তুমি বিক্রি করে দিছিলা?
- আরে না সত্যি বিশ্বাস কর, বিক্রি করি নায়। বিক্রি করলে ,আমার সাথে এতদিন কথা বলছ কি দিয়ে?
- তুমি ঐটা বিক্রি করে ,একটা সস্তা মোবাইল কিনতেই পারো।
- বিশ্বাস কর না , প্লিজ। কেন বুঝতেছ না?
- আমি কি বুঝব? তোমাকে যাবার আগে হাত ধরে বলে গেলাম, অনুরোধ করে গেলাম, মোবাইলটা বিক্রি কইর না। আর তুমি?
- সত্যি বলতেছি আমি।
- বিক্রি না করলে মোবাইল দেখাও।
- ছিনতাই হয়ে গেছে।
-ধ্যাৎ, মিথ্যুক। থাকো তুমি। তোমার সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই। আমি গেলাম।
- কই যাবা? ফুচকা খাবা না?
- ঘোড়ার আন্ডা খাব। সরো, আমি যাব।
ইরা রাগ করে চলে গেল। বুঝতেই চাইল না। বিশ্বাসও করল না। এতোটাই খারাপ নাকি সোহাগ। টাকার জন্য, ইরার দেয়া উপহার বিক্রি করে দিবে? সোহাগ একবার শুধু পিছন থেকে বলল, ইরা তোমার জন্য এক জোড়া দুল এনেছিলাম।
ইরা ফিরেও তাকাল না। হয়ত শুনেও নি। সোহাগ নিজের মত হাঁটছে। ইরার রাগ ভাঙবে কিনা, সোহাগ জানে না। এতো শখ করে একটা জিনিস দিল।হারিয়ে ফেললাম। রাগ তো হবেই। সোহাগের আজও কষ্ট লাগছে। পকেটে হাত দিয়ে ২০ টাকার নোটটা বের করল।বিচ্ছিরি হাতের লেখায় লেখা, "একটা মন হবে?সুহাগ- ০১......" । এভাবে মন পাওয়া যায় না। ভালবাসাও না। ভালবাসা কিছু ছাড়াই হয়ে যায়। অনুভবে অনুভবে হয়ে যায়। মনের টানে হয়ে যায়। ইরার রাগ ভাঙবে কিনা জানে না। তবে ভালবেসে যাবে। এতো রাগ করেও ঠিকই কাঁদবে। ভাল না বাসলে, সোহাগের জন্য চোখে জল আসত না। বালিশে চোখ মুছত না। আর সোহাগও অনুভূতিহীন মনের কোণেও, ইরার জন্য কষ্ট পেত না।ভাবতে ভাবতে পায়ের কাছে কিছু একটার অস্তিত্ব অনুভব করল। দুই পা ছাড়া একটা বাচ্চা কাতরাচ্ছে। হাত দিয়ে সোহাগের পা ধরে, টাকা চাচ্ছে, মাটিতে শুয়ে শুয়ে। ছেলেটার চোখের দিকে তাকিয়ে, সোহাগের চোখেও পানি চলে আসল। এর জন্যও কি তাহলে, ভালবাসা এসেছে? হয়ত এসেছে। হাতের কুড়িয়ে পাওয়া, ২০ টাকার নোটটা ছেলেটাকে দিয়ে দিল সোহাগ। টাকাটা দিয়ে, আবার ফিরে আসল, যেখানে ইরার সাথে দেখা হয়েছিল।মনে মনে ভেবে বসে আছে, ইরা ফিরে আসবে। আবার অমন করে হাতটা ধরবে। সামনাসামনি অনেক কিছু বলার বাকি।ইরা ভালবাসে খুব সোহাগকে। সোহাগ এটা জানে। যাকে ভালবাসে, তার প্রতিই অভিমান হয়। ইরা রাগ করেনি। অভিমান করেছে। একটু চোখের জল পড়লেই অভিমান ভেঙে যায়।আকাশে মেঘ করেছে। দেখা যাচ্ছে না অন্ধকারে।তবুও মেঘের ডাকে ঠিকই বুঝতে পারছে সোহাগ। বুকের ভিতরে কষ্ট বাড়ছে। অপেক্ষা করছে, শুধু একটু বিশ্বাসে। ইরা ফিরে আসবে। বৃষ্টি পড়া শুরু করেছে। ঝুম বৃষ্টি। সবাই দৌড়ে বৃষ্টি থেকে নিজেকে বাচাচ্ছে। কিন্তু সোহাগ সেই, ওয়ালের উপর ঠায় বসে আছে। বৃষ্টিতে ভিজে যাচ্ছে। অপেক্ষা করে যাচ্ছে। একটু পরেই, আবছা আলোতে খানিক দূরে কাউকে দেখল সোহাগ। এটা ইরাই হবে। ভাসা ভাসা চোখ জোড়া দেখা যাচ্ছে। বৃষ্টিতে ভিজে এদিকেই আসছে। সোহাগ জানত, ইরা ফিরে আসবে। এসে হাত বাড়িয়ে বলবে, "কই আমার কানের দুল দাও।"
সোহাগ বোকা বোকা চোখে হাতে কানের দুল দিয়ে দিবে। ইরা এরপরেই বেলি ফুলের মালার আবদার করবে। সোহাগ ভয়ে ভয়ে বলবে, "ভুলে রুমে রেখে এসেছি।"
কিন্তু ইরা এবার রাগ করবে না। বৃষ্টি ভেজা চুলে হাত বুলিয়ে বলবে, "পাগল একটা। চল ফুচকা খাই।"
আর সোহাগ সাহস করে হাতটা ধরে বলবে," একটু পরে যাই? তোমার হাতটা একটু ধরে থাকি? কিছু বলব তোমাকে। "
ইরা সোহাগের হাতটা চেপে বলবে, বল।
সোহাগ বুকের জমানো কথাগুলো বলে যাবে, আমি তোমাকে ভালবাসি। অনেক ভালবাসি। আমাকে ছেড়ে যেও না। আমি ঠিক একটা চাকরি যোগার করে নিব। কয়েক জায়গায় এপ্লাই করেছি। হয়ে যাবে চাকরি। আমি শিক্ষিত ছেলে।আর বিশ্বাস কর, আমি মোবাইলটা বিক্রি করিনি। ছিনতাই হয়েছে।
ইরা চোখের জল ঝরিয়ে বলবে, আমি জানি। তুমি আমার সাথে মিথ্যা বলনি। আমি তোমাকে বিশ্বাস করি।অনেক বেশি। তাইতো এতো ভালবাসি। চল এখন ফুচকা খাই।
সোহাগও চোখের জল ঝরিয়ে , ইরার হাত ধরে হাঁটবে। বন্ধ থাকা ফুচকার দোকানের বেঞ্চে বসে থাকবে। বৃষ্টি থামার অপেক্ষা করবে।
সোহাগের ধারণাই ঠিক। ইরাই এসেছে। বৃষ্টিতে কেঁপে কেঁপে সোহাগের সামনে হাতটা বাড়াল। কেন বাড়িয়েছে সোহাগ জানে।বিশ্বাসের ভালবাসা হারায় না। বৃষ্টি জলে ধুয়ে যায় না। চোখের জলে অভিমান দূরে চলে যায়। চোখের জলে ভালবাসা প্রকাশ পায়। চোখের জলে ভালবাসা গভীর হয়।টাকায় লিখে মন পাওয়া যায় না।কোন কারণ দেখিয়ে ভালবাসা হয় না। মনের কোণে টান, মনের কোণের ভালবাসা, অভিমানে, চোখের জলে, কারণ ছাড়া হয়ে যায়।
০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৪:৪১
রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) বলেছেন: ধন্যবাদ। দোয়া করবেন। চেষ্টা চালাচ্ছি।
২| ০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৪:৫৪
মুনেম আহমেদ বলেছেন: আবেগি লেখা। প্রেম ভালবাসার প্রতি আগ্রহ আমার একটু কমই তাই এসব আবেগ কে ছেলেমানুষি মনে হয়।লেখা ভাল হইছে
০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ৮:৫৩
রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই
৩| ০৯ ই জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ১১:২৫
মামুন রশিদ বলেছেন: গল্পটা খুবই সুন্দর । প্রথম দিকের বর্ণনা খুব গতিময়, এক নিঃশ্বাসে পড়ার মত । মাঝ খানে এসে গতিটা কমে গেছে, গল্পটা চলেছে থেমে থেমে । শেষটা ভালো হয়েছে ।
১১ ই জানুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৫:১০
রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) বলেছেন: ধন্যবাদ। আমি নিজেও এটা ধরতে পেরেছি, মাঝখানে এসে ধমকে যাচ্ছিল গল্পটা। চেষ্টা করব পরবর্তীতে ভালো কিছু লিখতে।
©somewhere in net ltd.
১| ০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৪:৩০
অন্ধকারের আলোকিত বাসিন্দা বলেছেন: যদিও একটু প্যানপ্যানানি গতানুগতিক হয়ে গেছে। তবু আমি বলব ভালই হইছে। চেষ্টা চালিয়ে যান , এসবের থেকে বাইর হইতে পারলেই কেল্লা ফতে । আর আবেগের ব্যাপারটা ইকটু কমায় দিয়েন । বেশি আবেগ ভালা নাহ ! শুভকামনা রইল