নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ফেসবুকে আমি - রিয়াদুল রিয়াদ (শেষ রাতের আঁধার)

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার )

কিছু মানুষ অন্য মানুষকে মুগ্ধ করার অসীম ক্ষমতা নিয়ে জন্মায়। আর কিছু মানুষের ভিতর এই ক্ষমতা কখনই আসে না। আমি দ্বিতীয় দলের মানুষ। কাউকে মুগ্ধ করার মত কিছু কখনই করতে পারি না। কেউ অনেক সুন্দর গান গায়, আমি শুধু শুনে যাই। কেউ অনেক সুন্দর নাচে, আমি শুধু হাত তালি দিয়ে যাই। কেউ অনেক সুন্দর লেখে, আমি শুধু ভেবে যাই, কী করে এত ভালো লেখে কেউ? আমিও লিখি। তবে তা কাউকে মুগ্ধ করার মত কিছু না। আমার লেখায় আমার ভালোবাসা ছাড়া কিছুই নেই। পড়াশুনা শেষ, বুটেক্স থেকে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার হয়ে বের হয়ে চাকরি, বিয়ে, পেশা পরিবর্তন সব হয়েছে। লেখালেখির ধারাবাহিকতায় চারখানা উপন্যাস অমর একুশে বইমেলায় বেরিয়েছে। টুকরো ছায়া টুকরো মায়া (২০১৫) – সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার । একা আলো বাঁকা বিষাদ (২০১৬) – সামাজিক উপন্যাস । মধ্য বৃত্ত (২০১৮) – ডিটেকটিভ সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার । অভিসন্ধি (২০২০) – ক্রাইম থ্রিলার । দেশটাকে ভালোবাসি অনেক। অনেক মায়া কাজ করে। মাঝে মাঝে ভাবি, সব বদলে দিতে পারতাম। স্বপ্নের মত না, বাস্তবের মত একটা দেশ গড়তে পারতাম …………………………

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমার বাবা, আমার মা

০৯ ই জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ২:৪৪

মানুষের জীবন আসলেই কেমন। কত রঙের। কত ঢঙের। মাঝে মাঝে চুপ করে ভাবি, আসলেই কেমন ছিলাম। আসলেই এখন কেমন আছি। নিচের লাইন গুলো আমার অনুসারী বা সামুর গল্প পাঠকদের পড়া। আমার একটা গল্পের কয়েকটা লাইন।তবুও আর একবার পড়তে বললাম। এরপর আমার পরের কথাগুলো বলি।





"বেশ কয়েকদিন ধরেই শার্ট ইন করে স্কুলে যেতে পারে না নাসিফ। প্রতিদিন স্কুলে কান ধরে দাড়িয়ে থাকে। স্যার বলে শার্ট ইন কর না কেন?

নাসিফ চুপচাপ দাড়িয়ে থাকে। কিছু বলে না।

প্যান্টটা পিছন থেকে ছিঁড়ে গেছে অনেক খানি। আম্মু তালি লাগিয়ে দিছে। ইন করলে তালি দেখা যাবে। সবাই হাসাহাসি করবে। আব্বু অসুস্থ। এখন নতুন প্যান্ট শার্ট কিনে দিতে পারবে না। নাসিফ অনেক বুঝে এখন। অনেক বেশি। আজ সকালেও তালি দিয়ে দিয়েছে আম্মু আর একটু প্যান্টে। অল্প একটু ছিঁড়ে গেছিল।

ক্লাসে কান ধরে দাড়িয়ে আছে।স্যার জিজ্ঞেস করে যাচ্ছে, " তুমি প্যান্ট ইন কর না কেন?"

নাসিফ চুপ।

" কথা কানে যায় না? প্যান্ট ইন কর এখন।"

নাসিফ তাও চুপ।

স্যার খুব রাগি। নাসিফের গালে একটা ঠাস করে চড় মেরে বলে,

"প্যান্ট ইন কর।"

নাসিফ গালে হাত দিয়ে, কাঁদতে কাঁদতে বলে,

" স্যার আমার প্যান্ট ছেড়া পিছন দিয়ে।"

ক্লাসের সবাই হো হো করে হেসে উঠে। যেন কত মজার কথা বলেছে নাসিফ।স্যার সবাইকে ধমক দিয়ে থামিয়ে নাসিফকে বসিয়ে দেয়। আর বলে, " হেড স্যারের থেকে অনুমুতি নিয়ে এস। "

নাসিফ বসে যায়। গালে হাত দিয়ে থাকে।

ক্লাস শেষে সবাই কি যেন পরামর্শ করছে। নাসিফকে বাদ দিয়ে। কিছুক্ষণ পর নাসিফকে ডাকে সবাই।একজন বলে, " নাসিফ তুই চোখ বন্ধ কর। একটা জিনিস দেখাবো তোকে। "

নাসিফ সরল মনে চোখ বন্ধ করে। একটু বোকাই নাসিফ।ও চোখ বন্ধ করার পর। সবাই ওর জামা উচু করে প্যান্ট দেখে। তালি দেয়া প্যান্ট। দেখে হাসে। হো হো করে হাসে। সবাই হাসে। শুধু নাসিফ মুখ গোমড়া করে থাকে। ক্লাস ফোরের সহপাঠীদের কাছে এটা ছিল মজার জিনিস। নাসিফ সেদিনও বাসায় গিয়ে কেঁদেছে।আব্বু আম্মুকে কিছু বলেনি। সহপাঠীরা ওকে নিয়ে হাসাহাসি করেছে। স্যার মেরেছে।পায়ের কাছে খুব ব্যথা।মোজা ছিঁড়ে গেছে। খালি জুতা পরতে কষ্ট হয়। তবুও বলে না কিছু। বললেই বাবা অসুস্থ শরীর নিয়ে, কাজ করতে চলে যাবে।সেদিন রাতে আব্বু আম্মুর মাঝে শোয় নাসিফ, আব্বু আম্মুকে বলে। দু জনের গায়ে দুটা হাত দিয়ে ঘুমায়। ঘুমাবার আগে কাঁদে। চোখ বেয়ে পানি কানের পাশ দিয়ে পরে যায়। বাবা মা বুঝে নাসিফ কাঁদছে। কিছু বলে না। দু পাশ থেকে দুজন জড়িয়ে ধরে। নাসিফের অনেক শান্তি লাগে তখন। কিছু স্পর্শে অনেক সুখ। কিছু না পাওয়ার মধ্যেও ভালবাসা পাওয়া যায়।সুখ শুধু বিলাসিতায় না।ভালবাসায় শুধু বিলাসিতা থাকে না। ভাঙা ঘরের মধ্যেও থাকে। বাবাকে কষ্ট থেকে বাঁচানোর জন্য, একটা বাচ্চা ছেলের অনেক কিছু বুঝে যাওয়াতে থাকে। মায়ের হাতের তালি দেয়া প্যান্টেও থাকে। কিছু নীরব জল কান ঘেঁষে ঝরে পড়তে পারে। তবুও কিছু মায়ার হাত যে জল মুছে দেবার জন্য থাকে। আঁকড়ে ধরার জন্য থাকে। ভালবাসার জন্য থাকে। কষ্ট সারাজীবন দানা বেঁধে বসে থাকে না। কষ্টের অবসান হয়। ভালবাসা অন্তহীন। কষ্ট অন্তহীন না।



- এই ছোঁয়া ভালবাসার(অংশবিশেষ )"






কত সহজ করে লেখাগুলো লিখে ফেলেছিলাম। পাঠক ও বন্ধুরা সহজ মনে পড়ে নিয়েছিল। তবে আমার কথা বলি। আমি এই লেখাটুকু লেখার সময়, টানা ১৫ মিনিট কেঁদেছি।টপটপ করে পানি পড়েছে চোখ দিয়ে। অনেকের কাছে লাগতে পারে, এহ কি আমার লেখক হয়ে গেছে। আমি লেখক হই নি। উপরের ঘটনটা আমার জীবনের। ক্লাস ফোরের ঘটনা। কত মজার ঘটনা একটা।সহপাঠীদের কতখানি আনন্দের যোগাড় দিতে পেরেছিলাম, ভাবতেই এখন ভাল লাগে। মাঝে মাঝে এখনও এই বন্ধুদের সাথে দেখা হয়।ওরা হয়ত সব ভুলে গেছে, মজা করে করেছে কাজ একটা, এতো মনে রাখার কি আছে? কিন্তু আমার মনে ঠিকই আছে। থাকবে হয়ত সারাজীবন। ভাগ্যের কোন এক এলোমেলো হিসেবে, এখন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছি।হাতে করে অনেক নতুন জামা কাপড়, বের হয়ে যাবে। ৫ বছর হোক, ১০ বছর হোক। একদিন টাকাও হবে। নতুন জামা কাপড় পরব সসবসময়। পুরনো গুলো ফকির মিসকিনদের দিয়ে দিব। তবুও বার বার চোখের সামনে ভেসে উঠবে, একটা তালি দেয়া প্যান্টের কারণে, কতটা হাসির পাত্র হয়েছিলাম।ফকির মিসকিন রকমের ব্যবহার পেয়েছিলাম। আমার ওদের উপর কোন রাগ নেই।আমি কোন মানুষের উপর কখনও রাগ করে থাকিও না। তবে বাবা মায়ের প্রতি, অনেক শ্রদ্ধা আছে। ভালবাসা আছে। এতো কষ্টের ভিতরও এই পর্যন্ত নিয়ে এসেছেন। মাঝে মাঝেই পিছলে পড়ে গেছি। তবুও হাত ধরেছেন। আমি ক্লাস থ্রিতে পড়িনি। টাকার অভাবে স্কুল থেকে নিয়ে এসেছিলেন, আব্বু। খুব মনে আছে।ঐ বছর পুরোটা বাবার পিছনে পিছনে ভ্যান গাড়ি ঠেলেছি। আব্বু মাঝে মাঝেই জড়িয়ে ধরে কাঁদতেন। আমি বলতাম,আব্বু আমার কষ্ট হয় না তো।

পরের বছর আবার গিয়ে ক্লাস ফোরে নিয়ে, ভর্তি করিয়ে দিয়েছিলেন। মাঝে মাঝেই থমকে যেতাম।তবুও আব্বু আম্মু থমকে যাবার সুযোগ দিতেন না। সাহস হয়ে এগিয়ে নিয়ে যেতেন।না খেয়েও ঠিক বই খাতা কেনার টাকাটা দিয়ে দিতেন।কোন ঈদে নতুন জামা কাপড় পরিনি, ঠিকই। তবুও আম্মু ঈদের দিন সকালে, সেমাই রান্না করতেন। আব্বু মাংস নিয়ে আসতেন।

খণ্ড খণ্ড এমন নানা চিত্রে জীবন আমার। মাঝে মাঝে মনে হয়, না আমি ব্যর্থ না। ঠিক জিতে গেছি। জীবনের যুদ্ধে জিতে গেছি।অনেক কষ্টের মাঝেও , পরীক্ষার টাকা হাতে তুলে দিয়ে, বাবা মা চাইতেন, একটু ভাল রেসাল্ট। সবসময় তা বাবা মাকে উপহার দিতে পেরে, নিজেকে বড় ভাগ্যবান লাগে। আমার আব্বু যখন ঘাম ঝরা শরীরে বলেন, আমার ছেলে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে।

আমি জানি তখন ,বুকের ভিতর তার কতটা সুখ কাজ করে। আমি জানতে শিখেছি, মানুষ পারে, চাইলেই পারে। আমি এই মানুষ দুটোকে কষ্ট দিতে চাই না। কখনও না। আমি জানি , তারা সারাজীবন আমার পাশে থাকবেন। আমি বাবা মাকে অনেক বেশি ভালবাসি। বলতে ইচ্ছা করে মাঝে মাঝে খুব, জড়িয়ে ধরে, আব্বু আম্মু অনেক ভালবাসি তোমাদের। বুকের ভিতর এতো এতো ভালবাসা তোমাদের জন্য।

জানি কখনও বলতে পারব না। তাই লিখে একটু হালকা হলাম। অনেক কিছু লিখতে গিয়েও, বার বার হাত আঁটকে আসছিল। চোখ ভিজে আসছিল। বুকের ভিতর দমটা বন্ধ হয়ে আসছিল। তবুও কষ্ট কখনও গায়ে লাগাই না। ছোট বেলা থেকে বাবা মায়ের কাছ থেকে, এটাই শিখেছি।জীবনে কখনও থেমে যেতে নেই।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ৩:২০

অন্তরন্তর বলেছেন:

কি লিখলেন। চোখের পানি ধরে রাখতে
পারলাম না। বাবা মাকে ভালবাসার কথা
বলা লাগে না। তারা এমনিতেই বুঝে যায়।
আপনাকে এবং আপনার মা বাবাকে স্যালুট।
আমি আমার বাবাকে হারিয়েছি অনেক দিন
হয়। যেহেতু বিদেশে থাকি তাই মাকে ফোন
করি প্রত্যেক দিন। মা বাবা যে কি তা যারা
মা অথবা বাবা হারা তারাই জানে।
সৃষ্টিকর্তা আপনার বাবা মাকে দীর্ঘজীবী করুন
এই দোয়া করি। মা বাবাকে জড়িয়ে ধরে
বলে ফেলুন আমি তোমাদের অনেক ভালবাসি।
সাহস করে বলে ফেলুন।আপনি অনেক অনেক
বড় হন ভাই এই দোয়া রইল।

০৯ ই জানুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ১:১৯

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) বলেছেন: আমি নিজেও লেখার সময় কেঁদেছি। একটু হালকা হলাম। আরও কিছু লিখতে গিয়েও, থেমে গেছি। বের হয় নি, ভিতর থেকে।

দোয়া করবেন, আমার জন্য, আমার ভালবাসার বাবা মার জন্য। একদিন ঠিক বলে ফেলব, বাবা মা কে ভালবাসার কথা।

আপনার জন্য শুভ কামনা। মা যেন কখনও কষ্ট না পান, দীর্ঘজীবী হন, দোয়া রইল।

২| ০৯ ই জানুয়ারি, ২০১৪ সকাল ৯:৩৬

মামুন রশিদ বলেছেন: লিখে লিখে কষ্ট ভাগ করা যায় । লিখে দায়বদ্ধতা অনুবাদ করা যায় । আমাদের সবার জীবনেই আছে এমন কষ্টের গল্প, ভালোবাসার গল্প । আপনার লেখাটা ছুঁয়ে গেল । আপনার বাবা মায়ের জন্য দোয়া ।

০৯ ই জানুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ১:২২

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) বলেছেন: হ্যাঁ ভাই, একটু হালকা হবার জন্য, অনেক লেখায় নিজেকে হুট করে মিশিয়ে দেই। চোখের জল পড়ে, মনের কোণ পরিশুদ্ধ হয়। কষ্ট কমে যায়। আর একটু খানি হেসে হেসে বলে ফেলি তখন, আসলেই জীবনে জিতেছি। হেরে যায় নি। আমার বাবা মা হারতে শেখান নি। :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.