নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ফেসবুকে আমি - রিয়াদুল রিয়াদ (শেষ রাতের আঁধার)

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার )

কিছু মানুষ অন্য মানুষকে মুগ্ধ করার অসীম ক্ষমতা নিয়ে জন্মায়। আর কিছু মানুষের ভিতর এই ক্ষমতা কখনই আসে না। আমি দ্বিতীয় দলের মানুষ। কাউকে মুগ্ধ করার মত কিছু কখনই করতে পারি না। কেউ অনেক সুন্দর গান গায়, আমি শুধু শুনে যাই। কেউ অনেক সুন্দর নাচে, আমি শুধু হাত তালি দিয়ে যাই। কেউ অনেক সুন্দর লেখে, আমি শুধু ভেবে যাই, কী করে এত ভালো লেখে কেউ? আমিও লিখি। তবে তা কাউকে মুগ্ধ করার মত কিছু না। আমার লেখায় আমার ভালোবাসা ছাড়া কিছুই নেই। পড়াশুনা শেষ, বুটেক্স থেকে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার হয়ে বের হয়ে চাকরি, বিয়ে, পেশা পরিবর্তন সব হয়েছে। লেখালেখির ধারাবাহিকতায় চারখানা উপন্যাস অমর একুশে বইমেলায় বেরিয়েছে। টুকরো ছায়া টুকরো মায়া (২০১৫) – সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার । একা আলো বাঁকা বিষাদ (২০১৬) – সামাজিক উপন্যাস । মধ্য বৃত্ত (২০১৮) – ডিটেকটিভ সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার । অভিসন্ধি (২০২০) – ক্রাইম থ্রিলার । দেশটাকে ভালোবাসি অনেক। অনেক মায়া কাজ করে। মাঝে মাঝে ভাবি, সব বদলে দিতে পারতাম। স্বপ্নের মত না, বাস্তবের মত একটা দেশ গড়তে পারতাম …………………………

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছোটগল্পঃ দুঃখ সুখের ভালবাসা

০১ লা মার্চ, ২০১৪ রাত ১১:০৪

মাহিন অনেক মনোযোগ সহকারে, টেলিভিশন দেখছে। টেলিভিশনে কিছু লোক হাত নেড়ে কিছু বলছে। কিন্তু মাহিনের কানে কিছুই আসছে না। কানে কোন সমস্যা নেই মাহিনের। আর অনুষ্ঠানটা যে খুব মজার, খুব উপভোগ্য তাও না। তবুও মাহিনের ভালো লাগছে। কানে শব্দ না আসার কারণ, মাহিন টেলিভিশন দেখছে একটা শো রুমের বাহিরে দাড়িয়ে। মাহিনের মত কারও কারও দেখার সুবিধার্থে , শো রুমের কিছু টেলিভিশন রাস্তার দিকে ঘুরিয়ে রাখা। মাহিন প্রাণহীন ঐ অনুষ্ঠানে প্রাণ পাচ্ছে। কিছু না বুঝেই হাসছে। আর আশেপাশের লোকজন, একটু পর পর আগ্রহ নিয়ে মাহিনকে দেখছে। আর চলে যাবার আগে একবার করে উঁকি দিয়ে যাচ্ছে, আসলেই কি মজার জিনিস দেখে এভাবে হাসাহাসি। হাসির কিছু না পেয়ে, হতাশ হয়ে লোকজন ফিরে যাচ্ছে। মৌরি আপু বলেছে, হাসবি, বেশি বেশি হাসবি। হাসলে আয়ু বাড়ে।

তাই মাহিন হাসছে। বেঁচে থাকা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় পাওয়া। এই পাওয়া যদি, একটু হাসিতে আরও সহজ হয়। তবে হাসাই তো ভালো। মৌরি আপুটাও সারাদিন হাসে। দাঁত গুলো অনেক সুন্দর আপুর। হাসলে সামনে দিয়ে কয়েকটা দাঁত বের হয় মাত্র। আর মাহিন হাসলে, মাড়িসুদ্ধ বের হয়ে যায়। কি বিচ্ছিরি লাগে দেখতে। সবাইকে হাসলে সুন্দর লাগে না। মাহিনকেও লাগে না, মাহিন জানে। সেদিন তো কেয়া ধরতে গেলে, মুখের উপর অপমান করে দিল। বলে কি, এভাবে হাসছ, কেন?

-আরে দেখো না, লোকটার মাথায় কত বড় টাক। তারপরও চিরুনি দিয়ে মাথা আঁচড়াচ্ছে, একটু পর পর।

- এতে হাসির কি? আর টাক তাতে কি?

- হাহা, হাসব না? মাথায় চুল নেই একটা, চিরুনির কি দরকার?

- এভাবে বিচ্ছিরি ভাবে হাসবে না। মাড়ি সুদ্ধ দেখা যায়। কি নোংরা হাসি তোমার। আর লোকটার মাথায় টাক তাতে তোমার কি? আর এসব নিয়ে কিছু বলবে না। আমার আব্বুর মাথায়ও চুল কম।

- আচ্ছা বলব না। তাই বলে আমাকে এভাবে বলবে? আমার হাসলে মাড়ি দেখা যায়।

- মুচকি হাসি হাসবে। যেন দাঁত না দেখা যায়।





কেয়া বলল, মুচকি হাসি হাসতে। আর মৌরি আপু, কোনদিন হাসার সময় উল্টাপাল্টা কিছু বলে নি। হাসলে , মৌরি আপুও হেসেছে। হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খেয়ছে বিছানার উপর। বিছানা প্রতিদিন গুছিয়ে যায় সকালে মৌরি আপু। আর এসে বলে, এতো নোংরা তুই। রুমে আসলে বমি আসে। এখানে মানুষ থাকে? তুই তো একটা গরু, আর রুম বানিয়ে রাখিস গোয়াল ঘর।

- দেখো আপু, আমার আর গরুর রুমের ভিতর পার্থক্য আছে। অনেক বড় একটা পার্থক্য আছে।

- কি?

- গরুর রুমের ভিতরেই গোবর থাকে। কিন্তু আমার......

- চুপ চুপ, ফাজিল। এতো দুষ্ট তুই।





মৌরি আপু রাগ করে আস্তে আস্তে কিল দেয় পিঠে। কয়েকটা। ব্যথা লাগে না। বরং ভালো লাগে। মৌরি আপুটা পড়ালেখায় এতো ভালো। আর মাহিন গাধার গাধা। গাধাদের মধ্যে পড়ালেখার চল থাকলে, সেখানে মাহিনকে নিয়ে গেলে, তাও আন্ডু মারত। আর মৌরি আপু, কত সুন্দর মেডিকেলে ভর্তি হয়ে গেল। সরকারী মেডিকেল। ঢাকা মেডিকেল কলেজ। বাবা সেদিন বাসায় অনেক মিষ্টি নিয়ে আসল। মা সেগুলো সবাইকে দিল। মেয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজে চান্স পেয়েছে। মাহিন সেদিন মন মতন মিষ্টি খায়, অনেক মিষ্টি খায়। বাবার অবশ্য একটা কথায় সেদিন খুব কষ্ট লেগেছে। মাহিন মিষ্টি খাচ্ছে, আর বাবা এসে বলেন, খাওয়া ছাড়া তো আর কোন যোগ্যতা নেই। বোন মেডিকেলে চান্স পেল। পড়াশুনা করে। আর তুমি তো সারাদিন আছ, শয়তানি নিয়ে। খাওয়া নিয়ে। ভাল কিছুই পার না।





মিষ্টি রেখে উঠে যায় মাহিন। মুখের ভিতর যা থাকে, তাও ফেলে দেয়। চুপচাপ দাড়িয়ে থাকে বারান্দায় একা একা। মৌরি এসে বলে, কি হইছে আমার ভাইটার? একা একা কেন?





কাধে হাত রাখতেই , এক ঝটকায় সরিয়ে দেয়। অন্য দিকে মুখ নিয়ে বলে, আপু, যাও তুমি। তোমাকে আমার সহ্য হচ্ছে না।

- কি হইছে রে ভাইয়া?

- কিছু না। বললাম তো যাও।





মৌরি চলে যায়, মাথা নিচু করে। মাহিনের কষ্ট লাগে, খুব কষ্ট। আসলেই খাওয়া ছাড়া আর কিছু পারে না। চোখ ভিজে আসে, তবে কাঁদে না। আপুকে কষ্ট দিয়েও খুব একটা ভালো লাগছে না। তাই মৌরি আপুর ঘরে যায় মাহিন। আপুকে সরি বলতে। ঘরে গিয়ে দেখে ঠিক খিল খিল করে হাসছে আপু। একটু আগে তাড়িয়ে দিল, তাও কষ্ট নেই। মাহিনকে ডেকে বলে, ভাইয়া, এই দিকে আয়। মুখ এমন গোমড়া কেন? নে তোকে দিলাম।





হাতে একটা ডেইরি মিল্কের প্যাকেট ধরিয়ে দেয় মৌরি আপু। খাওয়া বলতেই মাহিন পাগল। মিষ্টি চকলেট হলে তো কথাই নেই। আপুর হাত থেকে একটু হেসে প্যাকেট নিয়ে বলল, আপু তুমি অনেক ভালো। এতো ভালো কেন তুমি?

- পাম দিতে হবে না। যা এখন। কথা বলব, মোবাইলে।





মৌরি আপুকে আস্তে করে একটা চিমটি দিয়ে, দৌড়ে চলে আসে মাহিন। মন হুট করেই ভাল হয়ে গেল। মৌরি আপু এখন কথা বলবে মোবাইলে। কার সাথে কথা বলবে, মাহিন জানে। শুভ ভাইয়া। এই একটা মানুষকে ঘিরেই সব প্রেম ভালবাসার জগৎ আপুর। মাঝে মাঝে মনে হয়, মাহিনের থেকেও বেশি ভালবাসে ঐ মানুষটাকে। হ্যাঁ, প্রেমিক বলতে যা বুঝায় তাই শুভ মৌরির। একটা মানুষকে ঘিরে, এত ভালবাসা খেলা করে কি করে, মাহিন জানে না। মাহিনের তো অনেককেই ভাল লাগে। সেদিন মৌরি আপু এসে চুপ করে বসে, মাহিনের পাশে। শাসন করার ছলে বলে, যা বলব সোজা সোজা উত্তর দিবি।

মাহিন মাথা নেড়ে বলে বলে, আচ্ছা।

- আজ রিকশায় কার সাথে ছিলি?





একটু ভয় পেয়ে যায় মাহিন। ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে, তোতলাতে তোতলাতে বলে, কখন?

- এই, সত্যি কথা বল। আমি তোকে রিকশায় দেখছি, একটা মেয়ের সাথে।

- ইয়ে, ওটা নিশি।

- নিশি টা কে?

- আপু, আব্বু আম্মুকে বইল না প্লিজ।

- ওটা পরের ব্যাপার। আগে বল কে।





মাথা নিচু করে আস্তে করে মাহিন বলে, গার্লফ্রেন্ড।

মৌরি আপু হাসতে হাসতে আবার, বিছানায় গড়াগড়ি খায়। মাহিন ভয়ে ভয়ে তাকিয়ে আপুকে দেখে। হাসতে হাসতেই মৌরি বলে, এতো বড় হয়ে গেছিস? গার্লফ্রেন্ডও আছে তোর? আবার জামাই বউ এর মত, রিকশা করে ঘুরে বেড়ান?

লজ্জা পায় মাহিন। মুখ লাল হয়ে যায় লজ্জায়। আপুর হাসির সাথে ভয়টা কেটে গেছে। আপুটা অনেক ভাল। হয়ত বাবা মার কাছে বিচার দিবে না। হেসে হেসে উড়িয়ে দিবে। খেতে বসে, এক লোকমা খেয়েই মাহিনের দিকে তাকিয়ে হাসবে। বাবা মা হয়ত কারণ জানতে চাইবেন। কিন্তু আপু বলবে না। হেসেই যাবে। আর মাহিন এক মনে, ভাত মুখে পুরতে থাকবে। আপুর মুখের দিকে তাকাবে না। একদম না। ভয় কাঁটিয়ে মাহিন বলল, আমি এখন আর ছোট না।

- তাই? তা কতদিন ধরে প্রেম চলছে?

- বলব না।

- বলবি না?

- না।

- আমার লক্ষ্মী ভাই, বল। আমি তোর আপু না। এখন তোর বন্ধু। বেস্ট বন্ধু। বল বল।

- আচ্ছা। তবে হাসতে পারবে না কিন্তু।

- আচ্ছা হাসব না।

- নিশি আমার ৩য় গার্লফ্রেন্ড।





চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে মৌরি আপু বলে, বলিস কি?

- হ্যাঁ। প্রথম গার্লফ্রেন্ড সুমি। ক্লাস নাইনে হয়। এরপর রিমু এস এস সি এর সময়। আর শেষে নিশি, কলেজের প্রথম বর্ষ থেকে।





মৌরি আগ্রহ নিয়ে ছোট ভাইয়ের প্রেম কাহিনী শুনছে। কাছের বন্ধুটার প্রেম কাহিনী শুনছে। বয়সের পার্থক্য খুব কম হওয়াতে হয়ত, বন্ধুত্ব বন্ধুত্ব একটা ভাব চলে এসেছে, ভাই বোনের মাঝে। তাই মাহিন বলতে পারছে, আর মৌরি অবাক হয়ে শুনতে পারছে। মৌরি বলে, এতো প্রেম করলি কি করে? তুই এইটুকু একটা বাচ্চা ছেলে।

- এহ আমি বড় হইছি।

- আন্ডা হইছিস।

- আপু, তুমি কারও সাথে রিকশায় ঘুর না?

- এই, আমি তোর বড় আপু। সাবধানে কথা বল।

- বলনা আপু।

- না ঘুরি না।

- তবে ঐ যে কয়েকদিন পর পর ড্রেস, পায়েল, কানের দুল এগুলো কে দেয়?

- কে দিবে? আমি কিনি।

- এহ আমি জানি। তুমি যেন কার সাথে কথা বল মোবাইলে।

- চুপ চুপ চুপ।





মাহিনের পিঠে দুই তিনটা কিল মেরে চলে যায় মৌরি। সেদিন বলে না। পরে একদিন ঠিকই জানিয়ে দেয় মাহিনকে। শুভর কথা। ভালবাসার কথা। শুভকে ঘিরে স্বপ্নের কথা। আর কয়েক বছর পরই বাসায় বিয়ের প্রস্তাব পাঠাবে, সেই কথা। আর মাহিন ঘুরে ঘুরে, এই সুমি, এই রিমু, এই নিশি, এই কেয়া নিয়ে আছে। আপুর মত কাউকে ভালও বাসতে পারে না।





মাহিন আর যাই হোক, অন্য কারও কষ্ট কেন যেন সহ্য করতে পারে না। সেবার রাকিব এসে মাহিনের হাত ধরে বলে, বন্ধু আমি পরীক্ষা দিতে পারব না।

মাহিন রাকিবের চোখের দিকে তাকিয়ে দেখে জল। খুব একটা ভাল ছাত্র না রাকিব। মাহিনও না। তাই বন্ধুত্ব মোটামুটি ভাল। খারাপ ছাত্র, খারাপ ছাত্র হিসেবে। টেস্টের রেসাল্ট দিয়েছে। মাহিন ধরে নেয়, এই ব্যাটা নিশ্চিত ২-৩ টায় ফেল। ১ বিষয়ে ফেল গুলোকে অভিভাবক ডেকে ঝাড়ি মেরে, পরীক্ষা দেবার সুযোগ দেয়া হচ্ছে। জরিমানা দেবার পর। তবে ২-৩ বিষয়ে ফেল মানা হচ্ছে না। মাহিন রাকিবের হাত ধরে বলে, কয়টায় গেল তোর?

- মানে?

- কয়টায় ফেল?

- একটাও না। পাস সবগুলো।





মাহিন হাত ছেড়ে দেয়। ব্যাটা বেঈমান। পরীক্ষা দিয়ে বলেছিল, সবগুলোতে ফেল করবে। এখন সবগুলোতে পাস করে বসে আছে। আবার এসে ঢং করে বলছে, পরীক্ষা দিতে পারবে না। নিজে ফেল করলে কষ্ট লাগে, তবে সাথে আরও কাউকে ফেল করতে দেখলে, সুখ লাগে। সান্ত্বনা পাওয়া যায়। মাহিন ঝাড়ি মেরে বলে, তবে পরীক্ষা দিতে পারবি না কেন? পরীক্ষার দিন ডাইরিয়া হবে তোর?

- না। বাবা স্ট্রোক করছে। মোটামুটি অচল এখন। নড়তে চড়তে পারে না। বুঝিস তো। দিন মজুর মানুষ। প্রতিদিনের উপার্জনে প্রতিদিন চলে। এখন বাবা অসুস্থ। ফরম ফিল আপের টাকা পাব কই? ফরম ফিল আপ না করতে পারলে, পরীক্ষা দিব কি করে? আমি কয়দিন ধরে একটা ইট ভাটায় কাজ করি। তাতে সংসারের খাবার টাকা হয়। ফরম ফিল আপের টাকা হবে না। স্যার কে বললেও লাভ হবে না। টাকা মাফ করে ভাল ছাত্রদের। আমার টাকা মাফ করবে না। আমি পরীক্ষা দিতে চাই বন্ধু।





মাহিনের সামনে দাড়িয়ে রাকিব কাঁদে। মাহিনেরও কষ্ট হচ্ছে খুব। জানে রাকিব কষ্ট করে পড়ে। টাকার অভাবে বই কিনতে পারেনি সবগুলো। ক্লাসে মাহিনের বই থেকে খাতায় তুলে নিত। তাই বই হিসেবে পড়ত। কি সান্ত্বনা দিবে মাহিন জানে না। তবুও আস্তে করে রাকিবের হাত ধরে বলে, ধুর পাগলা, চিন্তা করিস না। আমরা আছি না? তুই পরীক্ষা দিবি।





বাসায় এসে ঘরের মধ্যে বসে থাকে মাহিন। কি করবে ভেবে পায় না। নিজেই ফেল করল এক বিষয়ে। জরিমানা করল, আবার বাবাকে নানা কথা শুনিয়েও দিল। এই নিয়ে বাবা খুব রেগে আছেন। এর ভিতর অন্য কারও জন্য টাকা চাওয়া যায় না। চাইলে আরও রাগ বেড়ে যাবে। কিছু না পেয়ে অবশেষে মৌরি আপুর কাছে যায়। আপুর মেডিকেলের ক্লাস শুরু হয়ে গিয়েছে। নতুন ভার্সিটিতে যায়। আব্বু আম্মু ভাল টাকা দেয়। যদি কিছু পাওয়া যায়। আপুর ঘরের ভিতর গিয়ে, আপুর সামনে চুপচাপ বসে থাকে মাহিন। মৌরি মাহিনকে ধাক্কা দিয়ে বলে, কিরে কি হইছে? বকার ডোজ কি বেশি পড়ছে? আব্বু আবার বকা দিছে?

- না।

- তবে? ফেল করছিস বলে গারলফ্রেন্ড ভাগছে? হিহি।





মৌরি আপু হাসে আবার। এটা হাসির কোন ঘটনা না। মাহিন বলে, আপু হেসো না তো। খুব বিপদে আছি। আমার এক বন্ধু খুব বিপদে আছে। পরীক্ষা দিতে পারবে না। টাকা লাগবে কিছু।





সব বলে মাহিন। রাকিবের সব কথা বলে। আপুর কাছে বলা শেষে মাহিন বলে, আপু দেখো না। টাকাটার ব্যাবস্থা করতে পার কিনা। আমি ধার নিচ্ছি। প্রতিদিনের টিফিনের টাকা দিয়ে শোধ করে দিব।

মৌরি আপুর মুখের হাসি এখনও আছে। এতো কষ্টের একটা ঘটনা শুনবার পরও। হেসে হেসেই বলল, এই কথা?

ড্রয়ার খুলে কিছু টাকা বের করে মাহিনের হাতে দিল। হাসি মুখেই বলতে লাগল, ধর। রাকিবকে ছাড়া যদি পরীক্ষা দিছিস, তোর খবর আছে। এটা দিয়ে রাকিবের ফরম ফিল আপ করবি। আর ওর বাবার জন্য কিছু ফলমূল কিনে নিয়ে যাবি। আবার নিশিকে নিয়ে রিকশায় ঘুরো না। ঠিক আছে? আর আব্বু আম্মুকে বলবি না টাকা দিছি তোকে। আমাকে এই টাকা নতুন বই কেনার জন্য দিল। নীলক্ষেত গেলেই ফটোকপি করা পুরাতন সস্তা বই। বাকি টাকা বেঁচে যেত। শুধু এনাটমি রঙিন বই দরকার। ওটা পরে দেখা যাবে। নে। আর তুই অনেক ভাল একটা ছেলে। এতো ভাল আমার ভাইটা আমি জানতাম না।





মাহিনের আবার কান্না পাচ্ছে। এবার কান্নার কারণ জানে না। কাঁদতে কাঁদতে বলল, আপু তুমিও অনেক ভাল।





পরের দিন রাকিবের ফরম ফিল আপ হল। বাবাকে দেখতেও গেল। আগের থেকে অবস্থা ভাল। হয়ত কয়েকদিনেই সুস্থ হয়ে যাবেন।

মাহিনের বোনের প্রতি ভালবাসা সেদিন অনেক বেড়ে যায়। ভালবাসার সাথে শ্রদ্ধাও।





তবে সেদিনের ব্যাপারটা একদম মানতে পারেনি মাহিন। চেষ্টা কম করেনি। চেষ্টার কারণেই এইচ এস সি তে A+ না পেলেও A পেয়েছে। তবে এরপরের চেষ্টা অনেক বেশি থাকার পরও, মেডিকেলে চান্স পেল না। কয়েকটা ভার্সিটিতে পরীক্ষা দিল। তাও হল না। চেষ্টা করার পরও না। রাকিব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা ভাল সাবজেক্ট পেয়ে যাবে। শুনে অনেক খুশি হয়েছে মাহিন। তবে মাহিনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও হল না। পরীক্ষার ফলাফল জঘন্য। মৌরি আপু নেট থেকে প্রিন্ট করে এনেছে রেসাল্ট। মাহিনকে রেসাল্ট বলে শুনাচ্ছে। রসায়নে ২.৭৫, গণিতে ৩, পদার্থে ৫, আর জীববিজ্ঞানে ৪.২৫। মোট ১২০ এ মাহিন পেয়েছে ১৫। মৌরি আপু রেসাল্ট শুনায় আর হাসে। মাহিনের খুব কষ্ট হয়। মন খারাপ চান্স না পাওয়াতে। তারপর মৌরি আপুর হেসে হেসে উপহাস করা সহ্য হয় না মাহিনের। আপু একটু ভাল ছাত্রী, তাই বলে খারাপ রেসাল্ট দেখে হাসবে এভাবে? মাহিনের কষ্ট হচ্ছে আপু বুঝে না? আপু হেসেই যাচ্ছে। অবশ্য আপু তো সবকিছুতেই হাসে। সেদিন বাবা গায়ে হাত তুলল মাহিনের। এতো বড় ছেলের গায়ে হাত তুলল। দুনিয়ার সবাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়য়ে চান্স পাবে, এমন কোন কথা নেই। তবুও বাবা বুঝতে চান না। গায়ের পুরো শক্তি দিয়ে মাহিনকে মারেন। মা ও খাবার খেতে ডাকেন না। আপুও রেসাল্ট নিয়ে হাসে। খুব একা লাগে মাহিনের। এই একাকীত্ব সহ্য হয় না। এই কষ্ট মানা যায় না। মরে যেতে ইচ্ছা করে অনেক। চেষ্টা করেছে মাহিন। পারে নি। এটা মাহিনের দোষ না। তবুও সবাই মাহিনকেই দোষ দিচ্ছে। অন্তত ভেবছিল, মৌরি আপু পাশে থাকবে। না, বাহিরে চলে গেল সেদিন। ক্লাস শেষ করে শুভ ভাইয়ার সাথে ঘুরল। আর এইদিকে বাবা মাহিনকে মারল। কেন যেন ঘুরে ফিরে আপুর উপর অভিমান হচ্ছে।

আপু সেদিন বাসায় আসার পর, মোবাইল নিয়ে অনেক ঘাঁটাঘাঁটি করল মাহিন। অনেক জরুরী একটা কাজে। আপু মোবাইল নিয়ে।





অবশেষে সফল মাহিন। এতো দুঃখের মাঝেও হাসতে পারছে তাই। টেলিভিশনের ঐ প্রাণহীন অনুষ্ঠান দেখেও হাসছে মাহিন। মৌরি আপু যে বিছানায় শুয়ে কাঁদছে তাই। নিজের কষ্ট অন্য কারও মাঝে ছড়িয়ে দেয়ায় সুখ আছে। একা দুঃখী, এটা হয় না। তাইতো মৌরি আপুকে কষ্ট দিল। কাঁদাল। মাহিন পরীক্ষায় কম মার্কস পেল বলে, আর হাসবে না আপু। অনেক হাসির কিছু দেখেও হাসবে না। সেদিন মৌরি আপুর মোবাইল ঘেঁটে, শুভ ভাইয়ার নাম্বার বের করল মাহিন। শুভ ভাইয়াকে কল দিয়ে বলল, তার সাথে দেখা করতে চায়।

শুভ ভাইয়া রাজি। দুজন হাঁটতে হাঁটতে নানা কথা বলছিল। শুভ আর মাহিন। মাহিন এক পর্যায়ে বলে, আপু আগে আমাকে নিয়ে আসত, কারও সাথে দেখা করতে আসলে। এখন আর আমাকে আনে না। ভাইয়া, তুমি কি না করছ?

- না তো।

- মনির ভাইয়া, অনেক ভাল ছিল। তোমার মত পচা না। আপুর সাথে যেদিন দেখা হত, সেদিনই আমাকে আইস ক্রিম খাওয়াত। আর তোমার সাথে বলে বলে দেখা করতে হল। মনির ভাইয়ার সাথে আপুর, ঝগড়া না হলেই হত। প্রতি ২ দিন পর পর আইস ক্রিম। অবশ্য রিকশায় চরলে দুজন, তখন আর আমাকে নিত না। বাসায় পাঠিয়ে দিত। সাথে হাতে দিত ১০০ টাকা। তুমি অনেক কিপ্টা।





কথাগুলো শুনে শরীর কাঁপছে শুভর। মাথা ঝিম ধরে আছে। বিশ্বাস হচ্ছে না। এসব কি বলছে? শুভর আগে অন্য কোন ছেলের সাথে, মৌরির এতো ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল, শুভর তা বিশ্বাস হয় না। তবুও মুখে হাসি ফুটিয়ে, মাহিনকে আইস ক্রিম খাইয়ে, হাতে ২০০ টাকা ধরিয়ে দেয়। মাহিন চলেও আসে। এসে মৌরি আপুর ঘরে গিয়েই দেখে, আপু কাঁদছে। মাহিন বুঝে ফেলেছে কি হয়েছে। আপুকে কাঁদতে দেখে ভাল লাগছে। ভার্সিটিতে চান্স না পাওয়ার কষ্ট নিমিষেই হাওয়া হয়ে গিয়েছে। মনের সুখে তাই হাঁটছে মাহিন। আর শো রুমের বাহিরে দাড়িয়ে প্রাণহীন অনুষ্ঠান দেখছে। এর আগে মৌরি আপুকে কখনও কাঁদতে দেখেছে মাহিন? মনে হয় না। স্মৃতির খাতার পাতা একটু একটু করে উল্টাচ্ছে মাহিন। ভেজা চোখে মৌরি আপু, এই দৃশ্যটা বড় পরিচিত লাগছে। তবে পরিচিত লাগার কথা না। তবে কোথায় দেখেছে? আবছা কিছু দৃশ্য চোখের সামনে ভাসছে মাহিনের। ম্যালেরিয়া জ্বরে কাঁপছে মাহিন। বেশ কয়েক বছর আগের ঘটনাই সেটা। চোখ মুখ লাল হয়ে আছে। খুব কষ্ট মাহিনের। বার বার চোখ বন্ধ হয়ে আসে। আবার চোখ বুজলেই, এলোমেলো স্বপ্ন দেখে, জ্বরের ঘোরে। মাথায় কাছে বসে কেউ একজন পানি দিয়ে যাচ্ছে। মাথায় ঠাণ্ডা পানি পড়ছে মাহিনের, আর কপালে একটু পর পর, এক ফোঁটা, দুই ফোঁটা হালকা উষ্ণ জল। মাথায় যে মানুষটা জল ঢালছে, সে কাঁদছে। অঝোরে কাঁদছে। মাহিনের খুব জ্বর তাই কাঁদছে। জ্বরের ঘোরেও অস্পষ্ট দেখতে পারছে, মাথার কাছে থাকা মানুষটা মৌরি আপু। মিষ্টি একটা মুখ, যা হাসি ছাড়া ভাল লাগে না। তাতেই জলের ছড়াছড়ি।

তার কয়েক বছর আগে। বাই সাইকেল চালাতে গিয়ে, পড়ে গেল মাহিন। ডান হাত ভেঙে গেল। অনেক ব্যথা অনেক কষ্ট। অপারেশন করতে হবে। মাহিনের কষ্ট হয়, বাবা মা এসে মাহিনকে দেখে কাঁদে। সাথে মৌরি আপুও। মৌরি আপুটাই বেশি কাঁদে। কেঁদে কেঁদে কয়েকবার অজ্ঞান হয়ে যায়। ছোট ভাইটার হাত ভেঙেছে, এই কষ্টে চোখ দিয়ে জল পড়ছে। অপারেশন শেষে, মাহিন রেস্টে থাকে। ঘুমের ওষুধ দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখে। ঘুম ঘুম চোখে, বুঝতে পারে মাহিন, বিছানায় কেউ বসে আছে। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে বলছে, ভাইয়া, সুস্থ হ তাড়াতাড়ি। আমি আর তোকে মারব না। হাত বাকিয়ে বাকিয়ে মারব না। তোকে কষ্ট দিব না। তুই ছাড়া আমি দুষ্টামি কার সাথে করব? কার সাথে খেলবো?

ওটা যে মৌরি আপু, সেটা চোখ না খুলেও বুঝা যায়। মাহিন সুস্থ হয়ে যেদিন ফিরে আসল। সেদিনও মৌরি আপু কাঁদল। মাহিনকে পেয়ে খুশিতে কাঁদল। মাহিন সুস্থ হবার জন্য, রোজা রেখেছিল মৌরি। বয়স তখন মৌরির খুব একটা বেশি না। ভাই ফিরে আসাতে বাসায়, একসাথে ইফতারি করল। হাতে ব্যথা মাহিনের, তাই মুখে তুলে খাইয়ে দিল।

এটাও মৌরি আপুই ছিল। যে মাহিনের একটু কষ্টে কাঁদতে কাঁদতে চোখ ভিজিয়েছিল। অনেক করে কেঁদেছিল। অনেক করে ভালবেসেছিল। সারাটা জীবন ভালবেসেছে। কখনও দূরে সরিয়ে দেয় নি। সবচেয়ে কাছের বন্ধু হিসেবে পাশে থেকেছে, ভালবেসেছে। কারণে, অকারণে হেসে হেসে মাহিনকে হাসাতে চেয়েছে। হাসা খুব একটা অপরাধ না। তবুও মাহিনের কেন যেন, এতো হাসি সহ্য হল না। কাঁদাতে ইচ্ছা করল। কাঁদাল মৌরি আপুকে। এখন হাসতে হাসতে হঠাৎ বুকের ভিতর মোচড় দিয়ে উঠল। কাকে কাঁদাল মাহিন? সবচেয়ে কাছের মানুষটাকে। সবচেয়ে আপন মানুষটাকে। হাসতে কেন যেন আর ইচ্ছা করছে না। চোখ জ্বালাপোড়া করছে। ঐ যে ম্যালেরিয়া হবার সময়, যেভাবে জ্বলছিল। মাথার কাছে মৌরি আপু কাঁদছিল। বুকের ভিতর ব্যথা করছে। খুব ব্যথা। বাই সাইকেল থেকে পড়ে, হাত ভাঙার পর যেমন ব্যথা করেছিল, তেমন ব্যথা। ভুল করেছে মাহিন। একটু হাসির জন্য ,সবচেয়ে কাছের মানুষটাকে কাঁদান ঠিক হয়নি। শো রুমের সামনে থেকে চলে আসল মাহিন। ঢলতে ঢলতে চলছে। আপুর কাছে মাফ চাইতে হবে। এতো বড় অপরাধের জন্য মাফ চাইতে হবে। রাস্তায় অনেক গাড়ি চলছে, সেসব তোয়াক্কা না করেই রাস্তা পাড় হচ্ছে মাহিন। আপুর কাছে দ্রুত যেতে হবে যে।





মৌরি এখনও বিছানায় শুয়ে কাঁদছে। শুভ এতগুলো বাজে কথা বলতে পারল? মনির না কার কথা বলল। ঐ নামে কাউকে চিনেই না মৌরি। তার সাথে নাকি, মৌরির প্রেম ছিল। শুভ ছাড়া ভালবাসার মানুষ, প্রেমিক হিসেবে, অন্য কাউকে কখনও ভাবে নি, কল্পনা করে নি, মৌরি। আর বলল, কার সাথে নাকি মৌরি রিকশা করে ঘুরেছে। আরও নানা বাজে কথা। এতো খারাপ কথা কেউ কখনও বলে নি। মৌরির চরিত্রে এমন কালিমা, লাগাবার সাহস কখনও কারও হয় নি। শুভর উপর খুব অভিমান হচ্ছে। ভালবাসার মানুষের থেকে, চরিত্র নিয়ে খারাপ কথা সহ্য হয় না। হবার কথা না। মৌরির একটা কথাও বিশ্বাস করল না, শুভ।

দরজা খুলে হুড়মুড়িয়ে ঘরে ঢুকল মাহিন। চেহারা একদম বিধ্বস্ত লাগছে। হাঁপাচ্ছে। ঘরে এসেই মৌরির পায়ের কাছে পড়ে কাঁদছে।

- আপু আমাকে মাফ করে দাও। আপু মাফ করে দাও। আমি খারাপ, অনেক খারাপ। আপু, তুমি মাফ না করলে আমি মরে যাব। আপু মাফ কর।





মৌরি বুঝছে না আসলে কি ঘটছে। মাহিন এমন পাগলের মত করছে কেন? তুলে নিয়ে বিছানায় বসাল মৌরি।

- কি হইছে তোর? পাগলামি করছিস কেন?





মাহিন চোখের জল ঝরিয়ে বলছে, আপু আমি অপরাধ করছি। তোমার নামে শুভ ভাইয়ার কাছে উল্টা পাল্টা কথা বলছি। যাতে তোমাদের ঝগড়া বাধে।





মৌরি অবাক হয়ে মাহিনের কথা শুনছে।

-এসব করলি কেন?

- তুমি সবসময় হাস। সবসময়। আমার খারাপ লাগে না। তবে আমি রেসাল্ট খারাপ করছি, তখনও তুমি হাসছ। আব্বু আমাকে মারল সেদিন। তুমি দেখো নি। তুমি আমার রেসাল্ট নিয়ে হাসাহাসি করলে। আমার কষ্ট লাগছে, তাই তোমাকে কষ্ট দিতে চেয়েছিলাম। কাঁদাতে চেয়েছিলাম। আমি যেমন কেঁদেছি। তেমন। আর আমার মনে হত, তুমি আমার চেয়ে শুভ ভাইয়াকে বেশি ভালবাস। আপু, আমি ভুল করছি। আমাকে মাফ করে দাও। আমাকে শাস্তি দাও। তুমি বড় বোন, আমাকে যা ইচ্ছা শাস্তি দিতে পার। আমি খারাপ আপু। অনেক খারাপ। তুমি আমাকে ভালবাস, এটা আমি দেখিনি। আমার কাছে, আমার জেদ, হিংসা, এটা বড় লেগেছে।





মাথা নিচু করে বসে আছে মাহিন। মৌরি আপু, মাহিনের পিঠে কয়েকটা কিল দিল। মুখ তুলে গালে আস্তে করে একটা চড় দিয়ে, কাঁদতে কাঁদতে বলল, এমন করলি কেন? তোকে ভালবাসি জানিস না? তুই আমার কত কাছের কেউ বুঝিস না?

- জানি, আপু, আমাকে মাফ করবে না? আমি কথা দিচ্ছি, সব ঠিক করে দিব আমি। শুভ ভাইয়ার পায়ে ধরে মাফ চাইব। তোমার আর শুভ ভাইয়ার সব আবার ঠিক করে দিব। তবে আমার থেকে বেশি তাকে ভালবাসতে পারবে না।





হঠাৎ করে হাসতে লাগল মৌরি। এতো সহজে মাফ করে দিবে মাহিন ভাবতে পারে নি। এতো বড় অপরাধের পরও কেউ, এতো সহজে হেসে হেসে মাফ করতে পারে, এটা মৌরি আপু ছাড়া আর কারও পক্ষে সম্ভব না।

- হুম মাফ করে দিলাম। তুই ছোট, ভুল করতেই পারিস। আর কেন তুই বার বার, শুভর ভালবাসার সাথে, তোর ভালবাসার তুলনা করছিস। ভালবাসা নানা রকম। তোর প্রতি ভালবাসা এক রকম, শুভর প্রতি এক রকম, মা বাবার প্রতি একরকম। এক ভালবাসার সাথে অন্যটার তুলনা হয় না। তবে তুই আমার সবচেয়ে কাছের মানুষ।





চোখের জল বাধ মানছে না মাহিনের। কাঁদার মত কিছু ঘটেনি। মৌরি আপু যেমন কারণ ছাড়া হাসে, মাহিন তেমন কারণ ছাড়া কাঁদছে। মৌরি আপুকে জড়িয়ে ধরল, মাহিন।

- আপু, অনেক ভালবাসি তোমাকে।





মৌরি চুপচাপ বসে আছে। ছোট ভাইটা হঠাৎ করেই, অনেক বাচ্চা বাচ্চা হয়ে গেছে। আর নিজেকে হঠাৎ করেই, অনেক বড় মনে হচ্ছে। বড় বোন মনে হচ্ছে। এই ভাবনায় দুজনের মাঝের বন্ধুত্ব আরও গভীর হচ্ছে। মৌরিরও অনেক কান্না পাচ্ছে। ছোট ভাইটার কান্না দেখে। টপটপ করে পানি গড়িয়ে পড়ছে, মাহিনের পিঠে। হালকা উষ্ণ জল। মাহিন আপুর চোখের দিকে তাকাল। নাহ, কাঁদলে ভাল লাগে না আপুকে। হাসাতে হবে। হাসলে সবাইকে ভাল লাগে না। তবে মৌরি আপুকে লাগে। মৌরি আপুকে হাঁসানো দরকার। মাহিনকে দেখতে ভাল লাগে না, হাসলে। তবুও মাহিন হাসবে। হাসলে আয়ু বাড়ে। অনেক দিন বেঁচে থাকতে চায় মাহিন, মৌরি আপুর হাসি দেখবার জন্য, আপুর ভালবাসা পাবার জন্য।





ভালবাসা নানা রকম। বাবা মায়ের ভালবাসা, প্রেমিক প্রেমিকার ভালবাসা, ভাই বোনের ভালবাসা, বন্ধুত্বের ভালবাসা, সুখের ভালবাসা, দুঃখের ভালবাসা। এক ভালবাসার সাথে অন্য ভালবাসার তুলনা হয় না। কিছু ভালবাসা হারিয়ে যায়, বদলায়, জনে জনে পাল্টায়। তবে মৌরি মাহিনের ভালবাসা, বদলায় না, পাল্টায় না। দুঃখ সুখের গানগুলোর মত, ভাললাগার অনুভূতি দেয়। দুঃখ ছুঁয়েও সুখ, সুখ ছুঁয়েও সুখ। এই ভালবাসা হারাবার না।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা মার্চ, ২০১৪ রাত ১২:০১

বেলা শেষে বলেছেন: তবে মৌরি মাহিনের ভালবাসা, বদলায় না, পাল্টায় না। দুঃখ সুখের গানগুলোর মত, ভাললাগার অনুভূতি দেয়। দুঃখ ছুঁয়েও সুখ, সুখ ছুঁয়েও সুখ। এই ভালবাসা হারাবার না।
Beautiful, suitable, sensible, touchable.....
i like it , i feel it .....

০২ রা মার্চ, ২০১৪ রাত ১২:২৩

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ। :)

২| ০২ রা মার্চ, ২০১৪ রাত ১১:৫৯

মামুন রশিদ বলেছেন: পড়লাম, অনেক বড় গল্প । মাঝে মাঝেই খেই হারিয়ে ফেলেছি ।

০৩ রা মার্চ, ২০১৪ সকাল ১০:১৬

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) বলেছেন: পড়ার জন্য এবং আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। :)

ভুল শুধরে পরের বার লেখার চেষ্টা করব। :)

৩| ০৮ ই মার্চ, ২০১৪ সকাল ১১:৫১

আমি ইহতিব বলেছেন: ভাই বোনের বন্ধুত্ব ও ভালোবাসা অসাধারণ সুন্দর।

আমি ও আমার ভাই ও পিঠাপিঠি বয়সের, ভাইয়া আমার চেয়ে বছর তিনেকের বড়। একটা সময় খুব ভালো বন্ধু হয়েছিলাম দুজন, এখনও আছি তবে নাগরিক ব্যস্ততায় আর আগের মত কথা বা গল্প হয়না। মিস করি সেই সুন্দর সময়টাকে।

আপনার গল্প কিছু সময়ের জন্য আমাকে সেই দিনগুলোতে ফিরিয়ে নিে গেলো যেন।

গল্পে ভালো লাগা, তবে মামুন ভাইয়ের মত মাঝে মাঝে আমিও তাল হারিয়ে ফেলছিলাম অবশ্য।

০৮ ই মার্চ, ২০১৪ দুপুর ১২:৪০

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) বলেছেন: ধন্যবাদ।

ভাই বোন, ভাই ভাই, বোন বোন ভালবাসা গুলো অন্যরকমই।
আমার নিজের বোন নেই, তবুও লেখা। একটা বোনকে কল্পনায় এনে।

আপনাদের ভাই বোনের সম্পর্ক মধুর থাকুক, সারাজীবন।

আর চেষ্টা করব, পরের বার ভুল ত্রুটি সামলে লিখতে। :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.