নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ফেসবুকে আমি - রিয়াদুল রিয়াদ (শেষ রাতের আঁধার)

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার )

কিছু মানুষ অন্য মানুষকে মুগ্ধ করার অসীম ক্ষমতা নিয়ে জন্মায়। আর কিছু মানুষের ভিতর এই ক্ষমতা কখনই আসে না। আমি দ্বিতীয় দলের মানুষ। কাউকে মুগ্ধ করার মত কিছু কখনই করতে পারি না। কেউ অনেক সুন্দর গান গায়, আমি শুধু শুনে যাই। কেউ অনেক সুন্দর নাচে, আমি শুধু হাত তালি দিয়ে যাই। কেউ অনেক সুন্দর লেখে, আমি শুধু ভেবে যাই, কী করে এত ভালো লেখে কেউ? আমিও লিখি। তবে তা কাউকে মুগ্ধ করার মত কিছু না। আমার লেখায় আমার ভালোবাসা ছাড়া কিছুই নেই। পড়াশুনা শেষ, বুটেক্স থেকে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার হয়ে বের হয়ে চাকরি, বিয়ে, পেশা পরিবর্তন সব হয়েছে। লেখালেখির ধারাবাহিকতায় চারখানা উপন্যাস অমর একুশে বইমেলায় বেরিয়েছে। টুকরো ছায়া টুকরো মায়া (২০১৫) – সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার । একা আলো বাঁকা বিষাদ (২০১৬) – সামাজিক উপন্যাস । মধ্য বৃত্ত (২০১৮) – ডিটেকটিভ সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার । অভিসন্ধি (২০২০) – ক্রাইম থ্রিলার । দেশটাকে ভালোবাসি অনেক। অনেক মায়া কাজ করে। মাঝে মাঝে ভাবি, সব বদলে দিতে পারতাম। স্বপ্নের মত না, বাস্তবের মত একটা দেশ গড়তে পারতাম …………………………

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছোটগল্পঃসান্ত্বনা

২৮ শে মার্চ, ২০১৪ বিকাল ৪:১১

- কিরে বল্টু ব্যাটারি? কি খবর? লিমার খবর কি?



রোদ একটু অবাক হয়ে মিজানের দিকে তাকাল। কথাগুলো দাঁত বের করে মিজান বলছে। বিশ্বাসই হচ্ছে না রোদের। বন্ধুদের মধ্যে, সবচেয়ে চুপচাপ আর ভদ্র ছেলে থেকে থাকে, তা হল মিজান। আর মিজান কিনা, রোদকে বল্টু ব্যাটারি ডাকছে। আবার প্রাক্তন প্রেমিকার কথাও জিজ্ঞেস করছে। রোদ একটু খাটো, আর চোখে চশমা পরার কারণে, ক্লাসের সবাই বল্টু ব্যাটারি ডাকে। প্রথম প্রথম অনেক খারাপ লাগত। পরে শুনতে শুনতে ঠিক হয়ে গেছে। আর রাগ লাগে না।

- তুই আমারে এগুলা বলতেছিস? কি হইছে তোর?

- হাহা, কি হবে বল? তুই বল্টু ব্যাটারি তোরে কি বলব?

-ভাল হইছে।

- তোর লিমার কি খবর? মেয়েটা কিন্তু সেই সুন্দর ছিল। কেন যে ব্রেক আপ করলি। আমার ঐ মেয়ের সাথে প্রেম থাকলে, সারাদিন হাত ধরে বসে থাকতাম। আইসক্রিম খেয়ে, ওড়না দিয়ে মুখ মুছতাম। হাহা।

- ঐ চুপ।



রোদ ধমক দিয়ে মিজানের দিকে তাকায়। ছেলেটার হল কি? কারণ ছাড়াই হাসছে। মেয়ে ঘটিত ব্যাপার নিয়ে, নানা কথা বলছে। এই ছেলেই সারাদিন রুমের এক কোণে বসে থাকে, মন খারাপ করে। হাসে না, কারও সাথে কথা বলে না। মাঝে মাঝে বাসায় ফোন দিয়ে কাঁদে। বাবাকে কি সব বলে আর কাঁদে। কেউ ফোনে, কাঁদার সময় তার আশেপাশে থাকতে হয় না। ওর পাশেও থাকে না কেউ। ভার্সিটি পড়ুয়া একটা ছেলে, প্রতিদিন বাবাকে ফোন দিয়ে কাঁদে। কেমন যেন লাগে। হাস্যকর লাগে। তাই, মিজানকে নিয়ে সবাই হাসাহাসি করেও। ক্লাসের সবাই হাসাহাসি করে মিজানকে নিয়ে। ভার্সিটিতে হাবিব স্যার ক্লাস নেন। অনেক কড়া শিক্ষক। কেউ কথা বললেই, বাহিরে বের করে দেন, ক্লাস থেকে। প্রতিদিন ক্লাসের বাহিরে দাড়িয়ে থাকে, মিজান। হাতে খাতা নিয়ে, দাড়িয়ে দাড়িয়ে স্যার এর লেকচার তুলে। কেউ কথা বললেই স্যার বলেন, এই কে কথা বলল?

সবাই আঙ্গুল তুলে মিজানকে দেখায়। আর মিজান বলদের মত তাকিয়ে থাকে। ক্লাস থেকে বের করে দেয়। বের হয়ে চলে যায়। রোদের মাঝে মাঝে খারাপ লাগে। কিন্তু কিছু করার নেই।

সারাদিন মন খারাপ করে থাকা ছেলেটা আজ হাসছে। ভদ্র ছেলেটা দুষ্টামি করছে। মিজান আবার বলে যাচ্ছে, তোরা পারিস ও। ব্রেক আপ হয়ে গেছে। তাও ফুছুর ফুছুর করে সারাদিন কথা বলিস। লিমাও কেমন, তোর মত বল্টুর সাথে এখনও কথা বলে। আচ্ছা তোরা কি হিসেবে কথা বলিস? বন্ধু? তোরা তো বন্ধুও না।

- চুপ। পেট ফাটাইয়া দিব। আমার এক্স গার্লফ্রেন্ডের সাথে কথা বলি, তাতে তোর কি?

- হাহা, কেউ তার এক্স গার্লফ্রেন্ডের সাথে সারাদিন কথা বলে? যে চলে যায়, তার জন্য থাকে রাগ, ঘৃণা। হাহা।

- আমি বলি।

- বল বল। দোস্ত, আমি যদি একটা চান্স নেই, লিমা কি রাজি হবে?

- আচ্ছা তোর হইছে কি? ফাজলামি করতেছিস কেন? মন ভাল আজ এতো?

- হাহা আসলেই রে,অনেক ভাল। মনটা অনেক ভাল হাহা।



পাগলের মত শব্দ করে হাসছে মিজান। রোদের কেমন যেন লাগছে। পাগল হয়ে যায় নায় তো আবার? হাসছে তো হাসছেই। হাসতে হাসতে রোদকে হঠাৎ জড়িয়ে ধরল। জড়িয়ে ধরেই কাঁদছে মিজান। শব্দ করে হাসি, এখন শব্দ করে কান্না।

- দোস্ত, মনটা অনেক ভাল। অনেক ভাল। আমার আর কাঁদতে হবে না। তোরা ট্যাগরা মিজু ডাকলেও আর কাঁদতে হবে না।



মিজানের এক চোখে একটু সমস্যা আছে। তাই ক্লাসের সবাই ট্যাগরা মিজু ডাকে। মিজান কখনও কিছু বলে না। কারও কথার উত্তর দেয় না। চুপ করে বসে থাকে। কারও সাথে কথা বলে না। মিজান বলেই যাচ্ছে, রোদকে জড়িয়ে। কেঁদে কেঁদে বলে যাচ্ছে, তোরা দেখতি না, আমি আমার বাবার সাথে ফোন করে কাঁদতাম। তোরা হাসাহাসি করতি আমাকে নিয়ে। কেন কাঁদতাম জানিস? তোরা আমাকে ট্যাগরা মিজু ডাকতি। তোরা আমাকে নিয়ে সবসময় ঠাট্টা করতি। সব কিছুতেই আমাকে দোষ দিতি। আমার অনেক কষ্ট হত। অনেক বেশি। আমার সহ্য হত নারে। আমি তাই বাবাকে ফোন দিতাম। আমার ভাল আব্বুকে। ফোন দিয়ে, কাঁদতাম। সব বলতাম বাবাকে। বাবা ঠিক আমার মন ভাল করে দিত। আমি অনেক বার বলেছি, "আব্বু আমি হলে থাকব না। আমার এখানে ভাল লাগে না।" আমার আব্বু বলে, "ওখানে সবাই বন্ধু। মানুষের সাথে না মিশলে, জীবনকে চেনা যায় না। বোঝা যায় না। কোন কিছুতে কষ্ট পাবার দরকার নাই। হাসবে সবসময় হাসবে। দেখবে কষ্ট নেই।" আমার তাও কষ্ট হত। কিছু হলেই,আব্বুকে কল দিয়ে কাঁদতাম। রোদ আমি এখন কাকে কল দিয়ে কাঁদব? তোরা ট্যাগরা মিজান ডাকলে, আমার কষ্ট হলে আমি কি করব তখন? ক্লাসের সামনে স্যার দাড় করিয়ে রাখলে, আমি কি করব তখন? তোরা বিছানায়, ময়লা ফেলে রাখলে, আমি কি করব তখন? আমার আব্বু যে আর কল ধরবে না। কতবার কল দিলাম, বার বার বড় ভাইটা ধরে। আব্বু ধরে না। আর কখনও ধরবে না। আব্বু হারিয়ে গেছে। অনেক দূরে হারিয়ে গেছে। আমাকে একা রেখে চলে গেছে। একটু বুকে হাত দিয়ে দেখ, কত কষ্ট হচ্ছে। অনেক কষ্ট রে। এতো কষ্ট কখনও হয় নায়। আমাকে কষ্টে রেখে আব্বু চলে গেল। আমাকে আব্বু বলছে কষ্ট হলে হাসতে। আর কষ্ট হবে না। সবার সাথে মিশতে। আমি আব্বুকে ছাড়া থাকব কি করে?



গলা ধরে আসছে মিজানের। এখনও কি যেন বলছে। তবে বুঝা যাচ্ছে না। হাউ মাউ কান্নার সাথে, ঐ শব্দগুলো পেরে উঠছে না। তবুও কষ্ট থেকে রেহাই চাচ্ছে। কষ্ট থেকে রেহাই পাওয়া এতো সহজ হয়ত না। রোদ মিজানকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে। রোদেরও চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। ব্যথা করছে বুকে। মানুষ যে কষ্ট পায় নি, তা নাকি কখনও অনুভব করতে পারে না। কিন্তু রোদ অনুভব করছে। মিজানের বাবা হারাবার কষ্ট। সান্ত্বনার ভাষা রোদের জানা নেই। এই অবস্থায় সান্ত্বনা দেয়া যায় না। আমরা কিছু হলেই, সান্ত্বনা দেই, সব ঠিক হয়ে যাবে। কিছু জিনিস কখনই ঠিক হবার না। হয় না কখনও। কিছু ক্ষেত্রে সান্ত্বনার ভাষা আমরা জানি না। ব্রেক আপ হল, বলে দিতে পারি, ধুর ওর চেয়ে ভাল একটা পাবি। পরীক্ষার ফল খারাপ হল। বলে দিতে পারি, একটা পরীক্ষা খারাপ হলে কিছু হয় না। আর এতো পড়ে কি হবে? কষ্টে আছে, বলে দিতে পারি, সব একসময় ঠিক হয়ে যাবে। তবে বাবা মা বা আপনজন হারাবার কি সান্ত্বনা হতে পারে। তা বোধহয় জানা নেই কারও। রোদেরও নেই। রোদ মিজানকে কাঁদতে দিচ্ছে। কাঁদুক ছেলেটা। হাসুক ছেলেটা। পাগলামি করুক ছেলেটা। কষ্ট গুলো কেঁদে কেঁদে ধুয়ে ফেলুক। ঝুম বৃষ্টির পর, রোদ উঠবেই। একটু অপেক্ষা আর একটু চাওয়া। কিছু জিনিস হারালে ,আর কখনও ফিরে পাওয়া যায় না। তবুও হারিয়ে যাওয়া জিনিসের প্রতি ভালবাসা থেকে যায়। মরে গেলে ভালবাসা যায় না। তাই বেঁচে থেকে ,হারিয়ে যাওয়া জিনিসকে ভালবাসতে হয়। ভালভাবে বেঁচে থেকে, ভাল ভাবে ভালবাসতে হয়।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে মার্চ, ২০১৪ রাত ১১:৫৭

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: গল্পের পরিণতি কষ্টকর। ভাল লিখেছেন।

২৯ শে মার্চ, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৫৩

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই,

২| ১০ ই জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ১১:১০

রাব্বি মিয়াজী বলেছেন: বাই আমার চোখে সমস্যা আছে পোস্ট টা পরে নিজেকে সাম্লাতে পারতেছি না খোব কান্না পাছে। আমার জিবন টা আসলে ব্রিথা।

২০ শে জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ১১:১২

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) বলেছেন: জীবন হয়ত এমনই, কখনও থমকে যায়, কখনও হাসায় কখনও কাঁদায়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.