নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কিছু মানুষ অন্য মানুষকে মুগ্ধ করার অসীম ক্ষমতা নিয়ে জন্মায়। আর কিছু মানুষের ভিতর এই ক্ষমতা কখনই আসে না। আমি দ্বিতীয় দলের মানুষ। কাউকে মুগ্ধ করার মত কিছু কখনই করতে পারি না। কেউ অনেক সুন্দর গান গায়, আমি শুধু শুনে যাই। কেউ অনেক সুন্দর নাচে, আমি শুধু হাত তালি দিয়ে যাই। কেউ অনেক সুন্দর লেখে, আমি শুধু ভেবে যাই, কী করে এত ভালো লেখে কেউ? আমিও লিখি। তবে তা কাউকে মুগ্ধ করার মত কিছু না। আমার লেখায় আমার ভালোবাসা ছাড়া কিছুই নেই। পড়াশুনা শেষ, বুটেক্স থেকে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার হয়ে বের হয়ে চাকরি, বিয়ে, পেশা পরিবর্তন সব হয়েছে। লেখালেখির ধারাবাহিকতায় চারখানা উপন্যাস অমর একুশে বইমেলায় বেরিয়েছে। টুকরো ছায়া টুকরো মায়া (২০১৫) – সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার । একা আলো বাঁকা বিষাদ (২০১৬) – সামাজিক উপন্যাস । মধ্য বৃত্ত (২০১৮) – ডিটেকটিভ সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার । অভিসন্ধি (২০২০) – ক্রাইম থ্রিলার । দেশটাকে ভালোবাসি অনেক। অনেক মায়া কাজ করে। মাঝে মাঝে ভাবি, সব বদলে দিতে পারতাম। স্বপ্নের মত না, বাস্তবের মত একটা দেশ গড়তে পারতাম …………………………
- তুমি কোথায়?
- বসে আছি। পার্কে।
- কি কর?
- একটা চোরের সাথে কথা বলছি।
- মানে কি?
- মানে আমার সামনে একটা চোর বসে আছে। আমি তার সাথে লেকের পাড়ে বসে কথা বলছি।
- তাই?
- হ্যাঁ। জানো, আমি এই প্রথম আমি কোন চোরকে স্বীকার করতে দেখলাম সে চোর। আচ্ছা আমার চেহারার মধ্যে কি কোন জজ সাহেব রকম ভাব আছে, যে এই লোককে আমি যখন জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কি করেন? সে বলে দিল, চুরি করে।
- না, তোমার চেহারায়ও চোর চোর ভাব আছে। সহজাতির কাছে, স্বীকার করতে তার অসুবিধা ছিল না।
- অর্পা তুমি কি আমার উপর রেগে আছ?
- নাহ। তোমার উপর আমি খুব খুশি।
- আচ্ছা। তাই বল। আমি ভাবলাম, তুমি আমার উপর রাগ করে আছ। আচ্ছা শোন, এই চোর লোকটা কাল কি চুরি করছে জানো? সে চুরি করছে, জুতা। কোথা থেকে শোন? মসজিদ থেকে। মসজিদ থেকে এক বড় লোকের জুতা নিয়ে, নিজের ছেঁড়া জুতা রেখে আসছে। এ নাকি এমন ছোট ছোট চুরি করে। এর নাকি কোন টাকা পয়সার অভাব নাই। চুরি করতে তার ভাল লাগে।
- আর কি কি বলল?
- আরও অনেক কিছু বলল। সে তার মোবাইল দেখাল। আমার থেকে অনেক দামী মোবাইল। আমার মোবাইলে তো ছবি উঠে ঘোলা ঘোলা। আর মোবাইলে ফ্ল্যাশ আছে। আমার একটা ছবি তুলে দিয়েছে। একদম চকচকা ছবি। সে বলেছে, তোমার সাথেও একটা ছবি তুলে দিবে।
- আমার সাথে মানে? আমাকে চিনে কি করে?
- না তার সাথে প্রেম ভালবাসা নিয়েও কথা হল। তারও একটা ভালবাসার মানুষ আছে। আমার যেমন তুমি। তার ভালবাসার মানুষটার নাম তিতলি। কত সুন্দর নাম। তার নামটাও সুন্দর। তার নাম ধ্রুব। একটা চোরের নাম ধ্রুব, এটা কিছু হয়?
- হুম বুঝলাম।
- আর শোন, আর ভালবাসার মানুষ জানে না সে চুরি করে। ভালবাসার মানুষের কাছে নাকি কখনও, খারাপ দিকের কথা বলতে হয় না। সবসময় নিজেকে অন্য সবার থেকে, ভাল দেখাতে হয়।
- একটা চোর তোমাকে ভালবাসা শেখাচ্ছে?
- কেন, চোরদের কি ভালবাসার অধিকার নাই?
- হ্যাঁ আছে।
- আমি তার মোবাইল নাম্বার নিলাম। মাঝে মধ্যে কথা বলব।
- কি কথা?
- তাকে আমি জিজ্ঞেস করলাম, ভাই আপনি ভদ্র মানুষ। দেখতে শুনতেও ভাল মানুষ। চুরি করেন কেন? নিজেরে চোর ভাবতে ভাল লাগে? সে বলে, চুরি করা নাকি খুব আনন্দের বিষয়। চুরি করা একটা আর্ট। আমাকে নিয়ে একদিন সে চুরি করতে যেতে চায়। চুরি যে খুব আনন্দ দায়ক জিনিস সেটা দেখাবে। আমি রাজি হয়েছি, একদিন তার সাথে চুরি করতে যাব। সেই ব্যাপারে যোগাযোগ করব। তবে সমস্যা হল ধরা পড়লে তো হাত পা ভেঙে দিবে।
- সজীব।
- বল।
- তুমি এসব উল্টাপাল্টা কথা বলা বাদ দিবে?
- আচ্ছা যাও বাদ।
- তোমার মনে আছে, তুমি কি বলছিলা?
- কি বলছিলাম?
- আজ বিকেলে কি করার কথা?
- ও ও তোমার সাথে দেখা করতে যাবার কথা।
- তা তুমি এখন কি করতেছ?
- না মানে তুমি তো......
- আমি তো কি? আমার সাথে বিকাল বেলা দেখা করতে আসার কথা। তা বাদ দিয়ে তুমি বসে বসে একটা চোরের সাথে গল্প করতেছ। তার সাথে ছবি তুলতেছ। আবার নিজে চুরি করার পরিকল্পনা করতেছ।
- আমি তো আসতাম। তুমিই তো বললে যে, আসতে হবে না।
- আমি কি বলছিলাম?
- আমি বললাম, দেখা করব। তুমি বললে, পারব না করতে দেখা।
- আমি না করছি আর আসবে না? আমি সেই কখন থেকে রেডি হয়ে বসে আছি। আশা করে আছি তুমি এসে বলবে, আমি তো আসছি, তুমি কি দেখা করবে? তুমি আসলে আমি না দেখা করে থাকতাম? আমি না করছি, আর আসবে না? আমি রাগ করে বলছি, তাও বুঝ না?
- আচ্ছা। সরি। বুঝতে পারি নাই। এখন আসছি, আচ্ছা?
- না। আমি তোমার সাথে দেখা করব না। তুমি থাক ঐ চোর নিয়ে।
- অর্পা।
এপাশ থেকে অর্পা অর্পা করে যায় সজীব। ওপাশে নীরবতা। লাইন কেটে দিয়েছে অর্পা। আবার রাগ করল। এতক্ষণ বসে বসে কথা শুনল ধ্রুব। চোর মানুষটা। সজীবের দিকে তাকিয়ে বলল, ভাই সমস্যা কোন?
- রাগ করছে ভালবাসার মানুষ।
- ব্যাপার না। করতেই পারে। ঠিক হয়ে যাবে। যত দূরে রাখতে চাইবে তত কাছে থাকবেন। কত দূরে রাখবে বলেন? ভালবাসে তো। কেউ অনেক কাছে থাকলে, একসময় তার প্রতি এমনিই ভালবাসা চলে আসে।
- ভাই, কোন পর্যন্ত পড়াশুনা করছেন?
- অনার্স করেছি পদার্থ বিজ্ঞানে।
- আপনি পদার্থ বিজ্ঞানে অনার্স করে চুরি করেন?
- ভাল লাগে ভাই। আমার কথা বাদ দেন। যা বললাম মাথায় রাখবেন। যান, ভালবাসার মানুষটাকে ঠিক করেন।
- আচ্ছা ভাই দেখি। আসি তাহলে চোর ভাই। আপনি কি আমার সাথে যাবেন?
- না, আপনার সাথে গিয়ে আমি কি করব? আমি একটু পর সামনের দোকানে ভিড় হলে, সিঙ্গারা খাব চুরি করে। খেতে ইচ্ছা করছে খুব।
সজীব হাঁটতে শুরু করল। অর্পার কাছে যাবে। রাগ ভাঙাতে যাবে। কাছে কাছে থাকলে ভালবাসা এমনিই বাড়বে। রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতেই দেখল, এক পিচ্চি রাস্তার ময়লার মধ্যে গড়াগড়ি খাচ্ছে।সজীব সেই পিচ্চিটার কাছে গিয়ে বলব, কি ব্যাপার কি করিস রে?
- গড়াগড়ি খাই।
- কেন?
- ভাল লাগে।
- এর মধ্যে ভাল লাগার কি আছে?
- খেয়ে দেখেন। তাহলেই বুঝবেন।
সজীব একবার ভাবল, একটু গড়াগড়ি খেয়ে দেখবে নাকি? ভাল লাগতেই পারে। আবার ভাবল, না থাক অর্পার রাগ ভাঙাতে যাক। হাঁটতে হাঁটতে যেতে দেখল, তিন চারটা কুকুরের বাচ্চা নিজেদের মধ্যে কামড়া কামড়ি করছে। ঝগড়া করছে। হয়ত ভাল লাগছে। আসলেই চারপাশে ভাল থাকার কত উপাদান। ইচ্ছে করলেই একটা জিনিস নিয়ে ভাল থাকাই যায়। শুধু শুধু মন খারাপের জায়গা দেবার কি দরকার মনে? আজ অর্পার রাগ ভাঙার পর অর্পাকেও বলবে, ভাল থাকার জিনিস গুলোর কথা। অর্পা মেয়েটা হুটহাট রাগ করে মন খারাপ করে বসে থাকে। সজীবের তাতে মন খারাপ হলেও, একটু পরেই কিছু না কিছু দিয়ে ভাল হয়ে যায়। ঠিক না। ভালবাসার মানুষের মন খারাপে নিজেরও মন খারাপ করে থাকা উচিৎ। কিন্তু সজীব পারে না। কেন যেন মন খারাপ করে বেশিক্ষণ থাকতে পারে না। তাই ভেবে নিল, নিজের মন ভালর ব্যাপারটা ছড়িয়ে দিবে অর্পার মাঝে। দল বেধে মন খারাপ করে থাকার চেয়ে, দল বেধে মন ভাল করে থাকা ভাল। দুজন মিলে মুখ গোমড়া করার চেয়ে, দুজন মিলে হাসবে। সেই তো বেশ।
চুপিচুপি মেঘেদের আনাগোনা শুরু হয়ে গিয়েছে আকাশে। ঝিরিঝিরি বা ঝুম বৃষ্টি হবে হয়ত। সজীব সেই বৃষ্টির মাঝেও খুঁজবে ভাল লাগার কিছু। অর্পার রাগ ভাঙাবার কিছু। একটা ছাতার নিচে গুটিসুটি মেরে দুজন হাঁটলে হয়ত অর্পার মন ভাল হবে। নয়ত অর্পাকে বলবে, চল কাদায় গড়াগড়ি খাই। কিংবা দুজন মিলে একটু ঝগড়া করি, বা এক দোকান থেকে চা খেয়ে পালিয়ে যাই। একটু চল ভাল থাকি। ভাল থাকার কত কিছু চারপাশে।
ভাল থাকার জিনিস গুলো চারপাশে থাকেই। একেক জনের ভাল থাকার ধরণ গুলো একেক রকম। এই অনেক রকম ভাল থাকা গুলো থেকে, একটা নিয়ে ইচ্ছা করলেই ভাল থাকা যায়। মন খারাপের গুমোট অন্ধকার সরিয়ে দেয়া যায়। আঁধার সরাতে শুধু রোদ লাগে তা না। চাঁদের আলোও অনেক মিষ্টি। রাস্তার পাশের ল্যাম্পপোস্টেও আঁধার সরে যায়। কিংবা ছোট একটা মোমবাতি, দেয়াশলাইয়ের কাঠির আগুনে, সরিয়ে দিতে পারে আঁধার। মন খারাপের আঁধার। রোদের অপেক্ষায় সময় গুলো শুধু আঁধারে কাটে না। ইচ্ছা করলেই আঁধার গুলো সরিয়ে দেয়া যায়। ইচ্ছা করলেই ভাল থাকা যায়।
( সজীব সিরিজের গল্প গুলোতে কিছু নেই, সেটা আমিও জানি। থাকার কথাও নয়। তবুও কোন এক অকারণ কারণে সেই সিরিজের গল্প গুলো লেখার সময়, মনটা ভাল থাকে। সে ভাল থাকাটা আমার কাছে বড় দামী। বড্ড বেশীই দামী। এটি ছিল সজীব সিরিজের প্রথম গল্প। )
০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:৫৪
রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) বলেছেন: এই বুঝটুকু আসুক সবার মাঝে। ধন্যবাদ।
২| ০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:০৭
অপূর্ণ রায়হান বলেছেন: পদার্থ বিজ্ঞানে অনার্স করে মসজিদ থেকে জুতো চুরি করে !! :-&
শুভেচ্ছা ।।
০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:৫৫
রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) বলেছেন: নানা রকম মানুষ। নানা রকম সখ, ইচ্ছে আর ভাল থাকার রকম ফের।
©somewhere in net ltd.
১| ০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৫২
বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: অনেক রকম ভাল থাকা গুলো থেকে, একটা নিয়ে ইচ্ছা করলেই ভাল থাকা যায়। মন খারাপের গুমোট অন্ধকার সরিয়ে দেয়া যায়। আঁধার সরাতে শুধু রোদ লাগে তা না। চাঁদের আলোও অনেক মিষ্টি। রাস্তার পাশের ল্যাম্পপোস্টেও আঁধার সরে যায়। কিংবা ছোট একটা মোমবাতি, দেয়াশলাইয়ের কাঠির আগুনে, সরিয়ে দিতে পারে আঁধার। মন খারাপের আঁধার। রোদের অপেক্ষায় সময় গুলো শুধু আঁধারে কাটে না। ইচ্ছা করলেই আঁধার গুলো সরিয়ে দেয়া যায়। ইচ্ছা করলেই ভাল থাকা যায়।
কথা সত্য। যদি বুঝে আসে
++